বিজ্ঞান ব্লগ

আইনস্টাইন-ও তার সূত্রে বলে গেছেন ভূত সম্পর্কে!

রাত তখন বাজে ৩টা। শীতকাল। চারিদিকে শুনশান নিরবতা। এরই মাঝে সময় অসময়ে রাস্তায় কুকুরগুলো ডেকে ওঠছে। এরকম ভৈতিক পরিবেশে রুমের লাইট নিভিয়ে কম্বলের তলে ঢুকলাম। সারাদিনের খাটনি, পড়াশোনা, খাওয়া-দাওয়ার পর এখন মোবাইলটা নিয়ে বসলাম একটু গুতাবো বলে৷ রাত জাগা আমার নিত্যদিনের অভ্যাস। আর সাথে প্রাণপ্রিয় মোবাইল থাকলে তো কথাই নেই। কিন্তু ভূতে আবার আমার তীব্র ভয়। রাতে সেই ভয় আরো বাড়ে! কিন্তু রাত জাগাও বাদ দিতে পারিনা। উভয় সংকট।

আজকে বসেছি ফেসবুক ঘাটতে। নতুন নতুন তথ্য শিখে বন্ধুদের সামনে ভাব নেওয়ার ধান্দা করছি আসলে। আমার অনেক দিনের অভ্যাস। পানির বোতলে চুমুক দিয়ে ফেসবুকের হোমপেইজ স্ক্রল করতে করতে একটা লেখায় চোখ আটকে গেল! রাত ৩টায় নাকি সবচেয়ে বেশি ভৌতিক ঘটনা ঘটে। এই সময় ঘুম ভাঙলে অশরীরি আপনার দিকে তাকিয়ে বসে থাকে!……..

লেখাটা পড়ে শেষ না করতে করতেই ঘড়ির দিকে আমার নজর গেল। এখনও ঠিক রাত ৩টা৷ কথায় আছে, যেখানে ভূতের ভয় সেখানে সন্ধ্যা হয়। পড়বি তো পড়বি এই রাতের অন্ধকারেই খবরটা আমার সামনে পড়লি! ভয়ে আমার মরো মরো অবস্থা। এরই মাঝে হঠাৎ চারিদিকের শুনশান নিরবতা ভেঙে মচমচ করে আমার রুমে আওয়াজ হলো। অশরীরি যেন নৃত্য শুরু করেছে। আওয়াজ শুনে আমার প্রাণ যায় যায় অবস্থা। আজ বোধ হয় আর রক্ষে নেই। মা-বাবা,পাড়া-প্রতিবেশী সবার কথা মনে পরতে লাগলো! সাথে ভালোবাসার মানুষটার কথা না বললেই নয়৷ এত রাতে তো সেও নেই। নক দিয়ে যে সাহায্য চাইবো সেই সুযোগও যে নেই। আহা! ওর সাথে বোধ হয় এই জন্মে আর কথা হচ্ছে না।

ছোট বেলার এক জনপ্রিয় পত্রিকার কথাও মনে পরে গেল। সেখানে বলেছিল আইনস্টাইন নাকি তার সূত্রে ভূতের কথা বলেছেন। আইনস্টাইন বললে মিথ্যা হওয়ার কথা নয়৷ ভয় গেল আরো বেড়ে। এই যখন আমার অবস্থা তখনই মনে পড়লো সায়েন্স বী’র কথা! ওখানে তো ভূত নিয়ে আর্টিকেল দেখেছিলাম। আইনস্টাইন ভূত নিয়ে কী বলেছেন সেটা ওখানে ব্যাখ্যা করা আছে! মরবোই যখন ওটা পড়েই না হয় মরি। যেই ভাবা সেই কাজ। বসে গেলাম পড়তে৷ সেখানে কী লেখা ছিল জানেন? দাঁড়ান আপনাদেরকেও পড়ে শোনাই-

আইনস্টাইন ভূত

অনেকেই ভূতের অস্তিত্ব থাকার প্রমাণ দেখানোর কথা বললে বলেন যে আধুনিক পদার্থ বিজ্ঞানেই নাকি ভূতের অস্তিত্বের কথা লেখা আছে৷ সবচেয়ে মজার বিষয় হলো অনেকে এটা দাবি করেন যে স্বয়ং আইনস্টাইন নাকি তাপগতিবিদ্যার প্রথম সূত্রের মাধ্যমে ভূতের অস্তিত্ব প্রমাণ করেছেন। বিভিন্ন প্যারানরমাল গ্রুপে সদস্যরা যারা ভূত ধরার কাজ করে বেড়ান তারা ভূতের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দিতে আইনস্টাইনের সহায়তা নিয়ে থাকেন। এরকম একজন একটা উদাহরণ যদি দিতে হয় তাহলে আমরা ভূত গবেষক জন কাচুবারের কথা বলতে পারি। তিনি ২০০৭ সালে ‘ঘোস্ট হান্টার‘ বইয়ে বলেন- আইনস্টাইনের মতে শক্তির সৃষ্টি বা ধ্বংস থাকে না বরং এক রূপ থেকে কেবল অন্য রূপেই পরিবর্তন করা যায়। তাহলে আমাদের মৃত্যুর পর আমাদের শরীরের সেই শক্তি কোথায় হারিয়ে যায়? তাহলে আমরা কি সেটা দ্বারা ভূতের অস্তিত্ব প্রমাণ করতে পারি না?

এরকম যুক্তি দিয়ে প্যারানরমাল গবেষণার সাথে যুক্ত ব্যক্তিরা ভূতের অস্তিত্বের প্রমাণ দেন৷ গুগলে আইনস্টাইন এবং ভূতের মধ্যে সম্পর্ক খুঁজলে ৮ মিলিয়নের ওপর আর্টিকেল বা তথ্য খুঁজে পাবেন।

এখন হয়তো আপনারা গভীর চিন্তায় পরে গেছেন! আসলেই তো আমরা মরলে শক্তিটা যায় কোথায়! আইনস্টাইন কী তাহলে আসলেই ভূত সম্পর্কে উচিত কথা বলে গেছেন? না থামেন। আপনি যদি পদার্থ বিজ্ঞানে নূন্যতম জ্ঞানটুকুও রাখেন তবে এই ধরণের প্রশ্ন মাথায় আসারই কথা নয়৷ কারণ এই প্রশ্নের উত্তরটাও কিন্তু খুব সোজা।

যখন কোনো ব্যক্তি মারা যায় তখন তার শক্তি সেখানেই যায় যেখানে অন্যান্য প্রাণিরা মৃত্যুর পর যায়। হ্যাঁ ঠিক ধরেছেন পরিবেশ। আমাদের শরীরের শক্তি তাপ হিসেবে নির্গত হয়। যদি মৃত্যুর পর আমাদের মাটি চাপা বা পোড়ানো না হয় তাহলে বন্য প্রাণিরা আমাদের খেয়ে ফেলতে পারে। আর যদি মাটি চাপা দেওয়া হত সেক্ষেত্রে ব্যক্টেরিয়ার এবং অন্যান্য বিয়োজক কর্তৃক আমরা মাটিতে মিশে যাই এবং মাটিতে পুষ্টি উপাদান হিসেবে ফিরে যায়৷ যেখানে উদ্ভিদ আমাদের পুষ্টি উপাদান হিসেবে গ্রহণ করে। এরপর উৎপাদ ও খাদকের মাধ্যমে এই চক্র চলতেই থাকে৷ অর্থাৎ আসলেই শক্তি কোনো সৃষ্টি বা ধ্বংস হচ্ছে না কেবল এক রূপ থেকে অন্য রূপে পরিবর্তিত হচ্ছে। ফলে এর মাধ্যমে ভূতের অস্তিত্বের প্রমাণ করা বোকামি ছাড়া আর কিছুই না।

যাক বাবা! তাহলে ভূত বলে কিছু নেই। মনে হঠাৎ করে একটা সাহস ফিরে এল। আজ বোধ হত বেঁচেই যাবো! এই সাহসে ভর করেই মোবাইলের ফ্ল্যাশ লাইট অন করলাম৷ এরপর আস্তে আস্তে করে মশারির ফাক দিয়ে শব্দের উৎসের দিকে নজর দিলাম। লাইট ফেলতেই যা দেখলাম তাতে আমার আক্কেলগুড়ুম! ওমা একি! এযে দেখি নেংটি ইঁদুর মহাশয়। পলিথিন কাটছে! আর তার আওয়াজ শুনেই আমি ভূতের ভয়ে মরি মরি অবস্থা! নিজের ওপর হাসবো না কাদবো ভেবেই কুল পাচ্ছিলাম না৷ যাই হোক সায়েন্স বী’র আর্টিকেলটা অন্তত কাজে দিল। ফ্ল্যাশলাইট অফ করে কম্বল মুড়ি দিয়ে দিলাম এক ঘুম৷ আপনারাও ঘুমান। ভূতের সাথে দেখা হলে জানাতে ভুলবেন না! ততক্ষণে বিদায় নিলাম। ও হ্যাঁ বলতে ভুলে গেছি! আজ কিন্তু আমার মরার ১০ বছর পূর্ণ হলো!😂

Exit mobile version