বিজ্ঞান ব্লগ

আপনি কি নার্সেসিস্ট? : চলুন দেখে আসি গভীরে

“নার্সেসিস্ট” শব্দটার সাথে কম বেশি সব মানুষ ই পরিচিত। মুলত যারা নার্সেসিস্টিক পার্সোনালিটি ডিসওর্ডার এ ভোগে তাদের কে নার্সেসিস্ট বলা হয়।

এখন আপনাদের মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে, “নার্সেসিস্টিক ডিসওর্ডার কি?”। আসুন নার্সেসিস্টিক ডিসওর্ডার  সম্পর্কে একটু বিস্তারিত আলোচনা করা যাক।

নার্সেসিস্টিক ডিসওর্ডারঃ নার্সেসিস্টিক ডিসওর্ডার হলো বিভিন্ন ব্যক্তিত্বজনিত ব্যাধিগুলোর মাঝে একটি – যেখানে একজন ব্যক্তি নিজের গুরুত্বকে সবচাইতে বেশি প্রাধান্য দিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন।এর ভেতর আছে অন্যের প্রতি সহানুভূতির অভাব, নিজেকে বড় মনে করা, নিজের দোষ ঢাকতে অন্যকে দোষারোপ করা ইত্যাদি। Self admiration, Egocentrism, Arrogance, Envy, Lack empathy এই প্রতিটি শব্দের বাহক একজন নার্সেসিস্ট। চার প্রকারের নার্সেসিজম এই পৃথিবীতে খুব বেশি লক্ষ্য করা যায়।

নার্সেসিজম এর প্রকারভেদঃ মুলত চার প্রকার নার্সেসিস্ট মানুষদের সংখ্যা পৃথিবীতে বেশি।যেমনঃ

1. Grandiose narcissist: যারা মুলত সবার মনোযোগ আকর্ষন (Attention seeking) করতে নিজেদের ব্যস্ত রাখে। তারা একটু অহংকারী স্বভাব এর হয়। তারা কারো কথা শুনতে চায় না, তারা সর্বদা নিজেকে সবার উপরের সন্মান দিতে ব্যস্ত থাকে।

2. Malignant narcissist:  Grandiose narcissist-দের সব গুনাগুন এদের মধ্যে রয়েছে। তারা কিছুটা মানসিক ভাবে বিকারগ্রস্থ। তারা আপনার ক্ষতি করতে পিছপা হবে না। তারা নিজেদের স্বার্থের জন্য সব কিছু করতে পারে। তারা তাদের জীবন সঙ্গীর কে ধোকা দিয়ে পরকিয়ায় লিপ্ত থাকলেও এটা তারা তাদের নিজেদের দোষ হিসেবে বিবেচনা করবে না। তারা প্রচন্ডভাবে মিথ্যাবাদী হয়ে থাকে।

3. Covert narcissist: এদের মধ্যেও Grandiose narcissist-দের সব গুনাগুন রয়েছে কিন্তু এদের মধ্যে এমন একটি গুন রয়েছে যেই গুন তাদেরকে Grandiose narcissist এবং Malignant narcissist থেকে আলাদা করেছে। তারা পৃথিবীকে দোষারোপ করে তার সফল না হবার জন্য। তারা দোষারোপ করে তাদের জীবনকেও। একটি উদাহরন এ আসা যাকঃ “আমাকে কেউ খেয়াল করে না, আমি এত ভাল কাজ করেছি , সবাই দেখেও না দেখার ভান করে।” তখন তারা মনে করে এই পৃথিবীর মানুষজনের যোগ্যতা নেই তার কাজ বিচার করার।

4. Communal narcissist: এরা সবার থেকে একটু আলাদা! তারা নিজেকে সবচাইতে বেশি শো অফ করে। যেমনঃ কোন অসহায় এর সাহায্য সহযোগিতা করার পর ছবি তুলে সোশ্যাল  মিডিয়াতে পোস্ট করে নিজেকে বড় করার জন্য। তারা নিজেদের কে সোশ্যাল মিডিয়াতে বসবাস করা যোদ্ধা দাবী করে।

এতক্ষন নার্সেসিজম এর প্রকারভেদ দেখার পর আপনাদের মনে একটি প্রশ্ন আসা খুব স্বাভাবিক। যেমন আপনি বা আপনার সঙ্গী কি কোন প্রকারের মধ্যে পড়ে? উত্তরটি খুব সোজা আপনি নার্সেসিজম এর প্রকারভেদ দেখেই বুঝতে পারবেন আপনি নার্সেসিস্ট নাকি না ! কিন্তু আপনি আপনার জীবন সঙ্গীকে দেখে কিভাবে বুঝবেন, আপনির জীবন সঙ্গী নার্সেসিস্ট কিনা?  আজ্ঞে হ্যা! কিছু কিছু বৈশিষ্ট্য এর মাধ্যমে আপনি বুঝতে পারবেন আপনার জীবন সঙ্গী নার্সেসিস্ট কিনা

আপনার নার্সেসিস্ট জীবন সঙ্গীর বৈশিষ্ট্যঃ

  1.  তারা প্রচন্ড ঈর্ষান্বিত বৈশিষ্ট্য বহন করে,                                                                                                                                  
  2. সে আপনাকে আপনার নিজের অস্তিত্বকে মিথ্যে প্রমাণ করতে চাইবে,                                  
  3. সে কখনও আপনার সাথে সৎ ভাবে আচরণ করবে না,                                                        
  4. সে কোন দিন কোন ভুল কাজ করলে পরবর্তীতে যে তার দোষ স্বীকার করতে অনিচ্ছা প্রকাশ করবে। যেমনঃ “নাহ আমি এই কাজ কখনই করি নাই” অর্থাত সে নিজের দোষ স্বীকার করবে না।    

যদি দুজন নার্সেসিস্ট এক সাথে প্রেমের বন্ধনে যুক্ত হয় তাহলে কি হবে?  

উত্তরটি খুব সহজ, আসুন উদাহরন দিয়ে বিশ্লেষন করা যাক ব্যাপার টা। যেমনঃ দুটি বাচ্চা একই সময় একই জায়গায় বসে দুজন দু ধরনের গেম খেলছে। তারা কেউ একসাথে খেলছে নাহ। তারা দুজন দুজনকে বিশ্বাস করে না, তাদের মধ্যে যে কেউ একজন আরেকজনের সাথে প্রতারণা করতে পারে। এটি একধনের সাইকোলজিকাল যুদ্ধ এর রূপ নিবে। তাদের সম্পর্ক দীর্ঘায়িত না হবার সম্ভাবনা বেশি।  

নার্সেসিস্ট বাবা-মা তারা তাদের সন্তানের পর্যাপ্ত খেয়াল রাখে না। যদি তাদের সন্তানরা তাদের সাথে একসাথে কিছুটা সময় কাটাতে চায় তখন তারা প্রায় সময়ই  অবহেলা করে থাকে। নার্সেসিস্ট গুনাবলী সম্পন্ন মানুষজন তারা অভিভাবক হিসেবে সম্পূর্নভাবে যোগ্য না।

কিন্তু যখন কোন প্রতিযোগিতামুলক খেলা হয়ে থাকে তখন তারা তাদের সন্তানকে পন্য হিসেবে বিবেচনা করে। অর্থাৎ তখন তারা মনে করে তাদের সন্তানকে যেভাবেই হোক প্রথম হতে হবে। তাহলেই তারা তাদের সন্তানকে ব্যবহার করে সমাজে সবার থেকে বেশি মান সন্মান অর্জন করতে পারবে। সন্তানের যখন এই বিষয় গুলো বোধগম্য হয়,  অর্থাৎ যখন তারা বুঝতে পারে তাদের নার্সেসিস্ট পিতা-মাতা তাদেরকে পন্য হিসেবে ব্যবহার করেছে তখন ই শুরু হয় তাদের মাঝে পারিবারিক কলহ ।

 পারিবারিক কলহের  কারণে কেন সন্তানরা মানসিক ও আচরণগত দিক থেকে বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ ধরনের পরিবারের সন্তানরা তাদের মা-বাবাদের কলহের জন্য নিজেকে দোষী ভাবতে শুরু করে। ছেলে-মেয়েরা নার্সেসিস্ট বাবা-মাকে দেখে নার্সেসিজম বৈশিষ্ট্য শিখতে থাকে এবং পরবর্তীতে তাদের নার্সেসিস্ট হবার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে।

নার্সেসিস্ট হবার কিছু ভাল দিক নিয়ে আলোচনা করা যাকঃ                                                          

নার্সেসিস্টরা পরিষ্কার-পরিছন্ন থাকতে পছন্দ করে থাকে। তারা সবসময় তাদের বসবাস এর স্থল যথেষ্ট পরিষ্কার করে রাখে যাতে সমাজে তাদের নামে ভাল মন্তব্য এর আদান-প্রদান হয়। কিন্তু কিছু কিছু আক্রান্তের চিন্তাভাবনা একটু আলাদা হয়ে থাকে। মূলত এটি তাদের চিন্তার উপর নির্ভর করে যে , তারা কি পরিষ্কার থেকে সামাজিক সুনাম অর্জন করবে নাকি অন্য কোন উপায়ে। কিন্তু তাদের ভাল দিক থেকে খারাপ দিক লক্ষ্য করলে তাদের ভাল দিক খারাপ দিকের বড় চাদরে ঢাকা পড়ে যাবে।  

এগুলো পড়তে ভুলবেন না !!! 

টাইম ট্রাভেল নিয়ে মাথা নষ্ট করে দেওয়া কিছু প্যারাডক্স

পেঙ্গুইন: বিবর্তনের উলটো পথে চরম পরিণতি

জীবন সঙ্গীর একজন নার্সেসিস্ট হলে অন্যজন নিজেকে নিয়ে ভাবা শুরু করে দেয়।যেমনঃ আমি যদি আরেকটু সুন্দর হই তাহলে হয়ত সে আমাকে ভালবাসবে, আমি যদি একটু চিকন হই তাহলে হয়ত সে আমার দিকে লক্ষ্য করবে। এ ধরনের কথা ভাবতে ভাবতে সে নিজেকে পরিবর্তনের নামে মানসিক ভাবে নিজেকে অত্যাচার করতে থাকে। যখন তার মাঝে বিষয়টা বোধগম্য হয় যে নিজের পরিবর্তন হবার বিষয়টা ভুল সিদ্ধান্ত ছিলো, তখন থেকেই শুরু হয় তাদের মাঝে কলহ। আর এই কলহ থেকেই একটি সম্পর্কের বিসর্জন হয়।

যেখানে একজন মানুষের ব্যক্তিগত স্বাধীনতা থাকে না এবং সবার থেকে বেশি সম্মান অর্জনের জন্য জীবন সঙ্গীর সাপেক্ষে নিজেকে পরিবর্তন করতে হয় সেখানে সম্পর্ক নামক পবিত্র শব্দের বিসর্জন দেয়া উচিত বলে আমি মনে করি। 

Exit mobile version