বিজ্ঞান ব্লগ

ইনফরমেশন আর্কিটেকচার(Information Architecture) Part-2

একটি কার্যকর ওয়েবসাইট ডিজাইন করার জন্য গবেষণা একটি গুরুত্বপূর্ণ পূর্বশর্ত। গবেষণা পর্বটি বিদ্যমান ওয়েবসাইট বা একটি নতুন ওয়েবসাইটের সামগ্রীক পর্যালোচনা এবং কর্ম কৌশল দলের সাথে বৈঠকের মাধ্যমে শুরু হয়। গবেষণার মূল উদ্দেশ্য হ’ল ব্যবসায়িক লক্ষ্য এবং প্রেক্ষাপট, বিদ্যমান তথ্য আর্কিটেকচার(বিদ্যমান ওয়েবসাইট পুনরায় ডিজাইনের ক্ষেত্রে), বিষয়বস্তু এবং ব্যবহারকারীদের চাহিদা সম্পর্কে গভীর জ্ঞান অর্জন করা।

কিন্তু রিসার্চ শুরু করার আগে ইনফর্মেশন আর্কিটেকচার(আই) নিয়ে আরো কিছু জেনে নেই।

কম্পিউটার এবং ইন্টারনেটের আবিষ্কার হওয়ার অনেক আগে থেকেই মানুষ দীর্ঘ সময়ের জন্য তথ্য সংগঠিত করতে সিস্টেম তৈরি এবং ব্যবহার করে আসছে। খ্রিস্টপূর্ব ৩৩০-তে, প্রাচীন মিশরের আলেকজান্দ্রিয়া গ্রন্থাগারটিতে লিখিত বিষয়সমূহ একটি ১২০-স্ক্রোল বিশিষ্ট গ্রন্থপঞ্জিতে তালিকাভুক্ত করা হয়েছিল।

অতি সম্প্রতি, ডিউই দশমিক সিস্টেম(ডিডিসি) এবং লাইব্রেরি অব কংগ্রেসের শ্রেণিবিন্যাস(এলসি) লাইব্রেরির উন্নততর বর্ধমান গ্রন্থাগার সংগ্রহগুলি সুসংহত ও সুলভ করার লক্ষ্যে তৈরি করা হয়েছে। আপনিও হয়তো স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের এবং আপনার ব্যক্তিগত জীবনে তথ্য সংগঠিত করার জন্যে অন্য কোনো কৌশল, বা রূপরেখা অনুসরণ করছেন।

কম্পিউটার নেটওয়ার্কিং, বিশেষত ইন্টারনেট এবং ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবের মাধ্যমে এর বেশিভাগ ব্যবহার। ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবে তথ্য তৈরি হওয়ার প্রক্রিয়াকে ইনফর্মেশন আর্কিটেকচার(আইএ) বেগবান করছে। ফলস্বরূপ, আমাদের কাছে এখন প্রচুর পরিমাণে উপাত্ত আছে, যা প্রতিনিয়ত বেড়েই চলছে। এই নেটওয়ার্কগুলি ডিজিটাল ফর্ম্যাটের শক্তি এবং নমনীয়তা ব্যবহার করে ক্রস-রেফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে কোনো লিঙ্কে প্রবেশ করাকে সহজ এবং দ্রুত করে তুলেছে। তাই তথ্য এবং তথ্যের এই গতির সাথে, তথ্য সহজে খুঁজে পাবার এবং সংগঠিত করে রাখার কাজটি এখন প্রায় অপ্রতিরোধ্য।

এগুলো পড়েছেন?

তথ্যের ফর্ম্যাটটি যখন বিকশিত হয়, মানুষ এটিকে সংগঠিত করার জন্য আরও নতুন এবং আরো ভাল উপায় নিয়ে আসতে থাকে। Technology Entertainment and Design conferences যাকে আমার (TED)

নামে চিনি, এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা হিসাবে পরিচিত স্থপতি রিচার্ড শৌল উর্মান ১৯৭৬ সালে American Institute of Architects (AIA) সম্মেলনে “ইনফর্মেশন আর্কিটেকচার” শব্দটির প্রচলন করেছিলেন।

তিনি ১৯৯৭ সালে এ বিষয়ে একটি বইও প্রকাশ করেন। ওয়ার্মানের কাছে “ইনফর্মেশন আর্কিটেকচার” শব্দটি দ্বারা তথ্য কীভাবে সুলভ করা যায় এবং কীভাবে ব্যবহৃত হয় তার চেয়ে তথ্যের বহির দর্শন কিরূপ তাই বেশি প্রাধান্য পেয়েছিল। আপনি তথ্য আর্কিটেকচারের প্রতিশব্দ হিসাবে ব্যবহৃত কিছু অন্যান্য শব্দের কথা শুনতে পাবেন:
usability engineering, content management, content strategy, user experience (UX) design and interaction design (IxD)।
যাহোক, শব্দের অর্থ গত দিক থেকে ইনফর্মেশন আর্কিটেকচার (আইএ) নির্দিষ্ট কোনো ক্ষেত্রে বা তথ্য সিস্টেমে (যেমন কোনও ওয়েব সাইট) তৈরি এবং পরিচালনা করতে ব্যবহৃত একটি নির্দিষ্ট প্রযুক্তিকে বোঝায়।

ইনফরমেশন আর্কিটেকচার(আইএর) এর মূল উপাদান তিনটি-

১.তথ্য

ক)তথ্যের সমস্ত আকার ও আকৃতি:
ওয়েব সাইট, নথি, সফ্টওয়্যার অ্যাপ্লিকেশন, চিত্র এবং আরও অনেক কিছু।
খ)ইনফরমেশন আর্কিটেকচার(আইএর) মেটাডেটার সাথে সম্পর্কিত:
যে সকল পদ ডকুমেন্টস, ব্যক্তি, প্রক্রিয়া এবং সংস্থাগুলো বর্ণনা ও প্রতিনিধিত্ব করে।
*(মেটাডেটার=যে তথ্য অনেক তথ্যের অর্থ বহন করে)

২.কাঠামো, সংগঠন ও শ্রেণীবিন্যাস

কাঠামো মূলত তথ্যের ইউনিটগুলি কতটা বিশদ হবে তা নির্ধারণ করা এবং কীভাবে তারা একে অপরের সাথে সম্পর্ক স্থান করবে তা নির্ধারণের সাথে জড়িত। সংগঠনের মধ্যেমে সেই ইউনিটগুলিকে অর্থবহ এবং স্বতন্ত্র বিভাগে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। নামকরণের অর্থ হ’ল একটি বিষয়শ্রেণীকে কি নামে ডাকা হবে তা নির্ধারণ করা এবং নেভিগেশন লিঙ্কগুলির সিরিজ কিরূপ হবে তা নির্দেশ করা।

 এই ব্লগগুলোও পড়তে পারেন-

৩.অনুসন্ধান এবং ব্যবস্থাপনা

একটি তথ্যের সন্ধানযোগ্যতা সামগ্রিক ব্যবহারের
ক্ষেত্র একটি গুরুত্বপূর্ণ সাফল্যের কারণ। যদি ব্যবহারকারীরা ব্রাউজিং, সার্চিং এবং জিজ্ঞাসা এ কয়েকটির সংমিশ্রণের মাধ্যমে যদি তাদের প্রয়োজনীয় তথ্য খুঁজে না পায় তাহলে সেই ওয়েবসাইটটি ব্যর্থ। তাছাড়াও, একটি ইনফরমেশন আর্কিটেককে অবশ্যই ব্যবসার লক্ষ্য এবং সাথে ব্যবহারকারীদের প্রয়োজনের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। সেক্ষেত্রে দক্ষ কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্ট এবং পরিষ্কার নীতি এবং পদ্ধতি থাকা অপরিহার্য।

রোজেনফিল্ড এবং মরভিলি “ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবের জন্য ইনফরমেশন আর্কিটেকচার” শীর্ষক একটি বই লেখেন।

২০০২ সালে প্রকাশিত বইটিতে বলা হয় যে ইনফরমেশন আর্কিটেকচার তিনটি ধারণামূলক বৃত্ত নিয়ে গঠিত:
১.বিষয়বস্তু(Content)
২.ব্যবহারকারী(User)
৩.প্রসঙ্গে(Context)

পরের পর্বে ইনফর্মেশন আর্কিটেকচারের তিনটি ভিত্তি নিয়ে বিস্তর আলোচনা করা হবে।

Exit mobile version