বিজ্ঞান ব্লগ

ইলেক্ট্রনিক্সে রেজিস্টরের গল্পসল্প (পর্ব ২)

ইলেক্ট্রনিক্স এ রেজিস্টরের গল্পসল্প এর ২য় পর্বে স্বাগতম। ইতিমধ্যে পূর্বের ব্লগে রেজিস্টর নিয়ে অনেক কাহিনী বর্ণনা করেছি। এই লেখাটিতে রেজিস্টরের আরও কিছু জিনিস নিয়ে আলোচনা করবো।
এখনও ১ম পর্ব যদি না পরে থাকেন অতি শীঘ্রয়ই পরে ফেলুন – ইলেক্ট্রনিক্সে রেজিস্টরের গল্পসল্প পর্ব ১।

আচ্ছা গত পর্বে রেজিস্টর নিয়ে জানলাম, রেজিস্টর এর ব্যাবহার সম্পর্কেও জানলাম। এখন আপনাদের মাঝে ১টি প্রশ্ন থেকে যেতে পারে – কিভাবে বুঝবো কোন রেজিস্টরের মান কত?

রেজিস্টরের মান দুইভাগে নির্ণয় করা যায় :

  1. ওহম মিটার / এনালগ মাল্টিমিটার / ডিজিটাল মাল্টিমিটার ব্যবহার করে।
  2. কালার কোড এর সাহায্যে।

মিটারের মাধ্যমে :

ওহম মিটার এবং এনালগ মাল্টিমিটার:
প্রথমে দেখে নেই মিটারের কাটাটি জিরো এডজাস্টমেন্ট এ আছে কিনা। না থাকলে মিটারের জিরো এডজাস্টমেন্ট স্ক্রু সাহায্যে কাটাকে জিরো পজিশনে আনি।

এরপরে মিটারের সিলেক্টিং নবকে ওহম পজিশনে নিতে হবে। মিটার দুটি ক্যাবল কে রেজিস্টরের দুই প্রান্তে সংযুক্ত করতে হবে। এতেই মিটারটির কাটা একটি পাঠ দিবে যেটিই হবে রেজিস্টরের মান।

ডিজিটাল মাল্টিমিটারের সাহায্যেঃ
এটি বর্তমান যুগে বহুল ব্যবহিত মিটার। এর সাহায্যে খুব সহজে মান পাওয়া যায়। প্রথমে সিলেক্টিং নবকে ওহমে নিই । এরপরে রেজিস্টরের দুই প্রান্ত মিটারের দুই প্রান্তের সাথে স্থাপন করলে যে পাঠ পাওয়া যাবে তাই হবে রেজিস্টরের মান।


আমরা এই যুগে সবাই ডিজিটাল মাল্টিমিটার ব্যবহার করে থাকি। ডিজিটাল মাল্টিমিটারের সাহায্যে সহজে ভ্যালু পাওয়া যায় এবং এর একুরেসি ও অনেক ভালো।

কালার কোড এর সাহায্যে মান নির্ণয়ঃ

কালার কোড দ্বারা খুব সহজেই আমারা রেজিস্টরের মান নির্ণয় করতে পারি। এখন আপনারা বলতে পারেন কালার কোড কি?
রেজিস্টরের গায়ে বিভিন্ন প্রকার রঙ দ্বারা চিহ্নিত করা থাকে এগুলোকে কালার কোড বলে। কালার কোড এক একটি প্যাচকে ব্যান্ড বলে।

রেজিস্টরে সাধারণত সর্বনিম্ম চার ব্যান্ড থাকে। এছাড়া ৫ ও ৬ ব্যান্ডের কালার কোড রেজিস্টর পাওয়া যায়। এতে সর্বমোট ১২ প্রকার কালার ব্যবহিত হয়ে থাকে।  প্রতিটি কালারে মান আছে তা চার্টের মাধ্যমে দেওয়া হলো।

 

Resistor color code মনে রাখার বিশেষ পদ্ধতি:

মানগুলো ক্রমিক অনুসারে মনে রাখার বিশেষ পদ্ধতি

বাংলাতেঃ কা, বা, লা, ক, হ, স, নী, বে, ধূ, সা।

ইংরেজিতেঃ BB ROY Good Boy Very Good Worker

BB    B = Black (কালো) B=Brown()

ROY    R=Red, O=Orange, Y=Yellow

Good    G=Green

Boy    B=Blue

Very    V=Violet

Good    G=Gray

Worker    W=white

এগুলো পড়েছেন?

এবার অতি সহজে মান নির্ণয় পদ্ধতি দেখবো

১ম কালারের মান লিখব { চার্ট এর ১ম ব্যান্ড এর মান }, ২য় কালারের মান লিখব { চার্ট এর ২য় ব্যান্ড এর মান }, ৩য় কালারের জন্য যা দিয়ে গুন করতে হবে { চার্ট এর ৩য় ব্যান্ড দ্রষ্টব্য } তা দিয়ে গুন করবো। আমাদের কাজ শেষ। [ না বুঝলে নিচের উদাহরণ দেখুন ]
তাহলে ৪র্থ ব্যান্ডের কি হল?
৪র্থ কালার ব্যান্ড কে টলারেন্স হিসেবে ধরা হয়। এখন প্রশ্ন আসতে পারে টলারেন্স কি???


কালার কোডের শেষ ব্যান্ড হলো টলারেন্স  যা রেজিস্টরের মানের ভারসম্য রক্ষা করে।  আমরা অনেকে ইরর সম্বন্ধে পরিচিত। কোন একটি মান যখন আমরা পেয়ে থাকি তখন সেটা যেকোন কারনে হুবহু নাও হতে পারে।

ঠিক তেমনি রেজিস্টরের ক্ষেত্রে মান তাপমাত্রার কারনে কম বেশি হতে পারে। এই টলারেন্সের রেঞ্জ কোন মানের +,- বুঝায়।  আশা করি উদাহরন টি দেখলে আমরা পুরোপুরি বুঝতে পারবো।

উদাহরনঃ ধরি একটা রেজিস্টরের গায়ের কালার যথাক্রমে বাদামী, কালো, বাদামী, সোনালী

তাহলে বাদামী এর জন্য লিখবো ১ [ আমাদের রেজিস্টরের মান কেবল ১ Ohm হল ]

কালোর জন্য লিখবো ০ < আমাদের রেজিস্টরের মান এখন ১০ Ohm হল >

বাদামীর জন্য ১০ দিয়ে গুন করতে হবে , < আমাদের রেজিস্টরের মান এখন ১০ * ১০ = ১০০ Ohm হল >

সোনালী টলারেন্স (+-৫%)

রেজিস্টর এর মান আসবে ১০০ ওহম। { টলারেন্স (+-৫%) }

তাহলে আশা করি বুঝতে পেরেছেন কিভাবে রেজিস্টর এর মান বের করতে হয়। আবার বেশি Power Rating এর রেজিস্টর গুলোতে তার মান লেখাই থাকে। যেমন-

এখন রেজিস্টর এর শেষ আলাপ “ রেজিস্টরের সমবায় ” নিয়ে আলোচনা করবো।

রোধের সমবায় :

একাধিক রেজিস্টর ১ টি বর্তনীতে ২ভাবে যুক্ত করা যায়। যথা-

সমান্তরাল সমবায়ঃ
এক্ষেত্রে রেজিস্টর গুলো চিত্রের মত সমান্তরাল ভাবে যুক্ত থাকে।

সমান্তরাল সমবায় বর্তনীর বৈশিষ্ট্যঃ

১। সমান্তরাল সমবায় বর্তনীতে ( রোধকের মান যাই হোক না কেন ) প্রত্যেক রোধকের বিভব পার্থক্য সমান থাকে ।

২। এই বর্তনীতে বিদ্যুৎ প্রবাহ বিভক্ত হয়ে যায় এবং প্রত্যেক রোধকে আলাদাভাবে প্রবাহিত বিদ্যুতের সম্মিলিত যোগফল বর্তনীতে প্রবাহিত মোট বিদ্যুতের সমান। অর্থাৎ এখানে প্রত্যেকটি রোধের তড়িৎ প্রবাহ ভিন্ন।

এগুলো পড়েছেন?

সমান্তরাল সমবায় বর্তনীর তুল্যরোধঃ

আচ্ছা প্রথমে বলে নেই, তুল্যরোধ হল একটি বর্তনীতে ব্যবহারিত সকল রোধকের সামগ্রিক মান।
ধরি, R1, R2 ও R3 সমান্তরাল সমবায়ে আছে। এদের তুল্যরোধ Rp হলে,
Rp = [ R1-1 + R2-1 + R3-1 ]-1

শ্রেণি সমবায়ঃ

এক্ষেত্রে রেজিস্টর গুলো চিত্রের মত একটির পর একটি একই শ্রেণিতে যুক্ত থাকে।

শ্রেণি সমবায় বর্তনীর বৈশিষ্ট্যঃ

১। শ্রেণি সমবায় বর্তনীতে ( রোধকের মান যাই হোক না কেন ) প্রত্যেক রোধকের বিভব পার্থক্য ভিন্ন থাকে ।

২। এখানে প্রত্যেকটি রোধের তড়িৎ প্রবাহ সমান থাকে ।

শ্রেণি সমবায় বর্তনীর তুল্যরোধঃ

ধরি, R1, R2 ও R3 শ্রেণি সমবায়ে আছে। এদের তুল্যরোধ Rs হলে,
Rs = [ R1 + R2 + R3 ]

আচ্ছা এইটা জেনে আপনার লাভ কি হল। আপনি তো মিটার দিয়েই রেজিস্টরের মান নির্ণয় করতে পারেন।
বলছি,
ধরুন আপনার ১ টি 200 Ohm মানের রেজিস্টর লাগবে। কিন্তু আপনার কাছে 100 Ohm মানের ৫ টা রেজিস্টর ছাড়া আর কোন রেজিস্টর নেই। আপনি যদি ব্লগটি পড়ে থাকেন তাহলে আপনি দেড়ি না করে সাথে সাথে ২ টি 100 Ohm এর রেজিস্টর শ্রেণি সমবায়ে যুক্ত করে কাজ চালিয়ে যাবেন। কারণ আপনি জানেন যে ২ টি রেজিস্টর শ্রেণি বর্তনীতে যুক্ত করলে তাদের তুল্য রোধ কি হবে।
ঠিক এই জন্যই এই ২ টি সমবায় সম্পর্কে জ্ঞান থাকা জরুরি।

তাহলে আশা করি রেজিস্টর সম্পর্কে খুব ভালো ১ টি ধারণা পেয়েছেন।
এখন আপনি একা পেলেই তো হবে না, অন্যদেরকেও জানাতে হবে । তাই এখনই Share করুন।


Exit mobile version