বিজ্ঞান ব্লগ

ঈশ্বর সমীকরণ:- কী এবং কেন?

“If the universe is the answer, then what is the question?”-
মহাবিশ্ব কে সৃষ্টি করেছেন? এই সমগ্র মহাবিশ্ব কীভাবে সৃষ্টি হলো?- সেই গুহাবাসী মানুষকে আজকের হাই-টেক মানুষে পরিণত করার পেছনে এই একটা প্রশ্নের অনেক বড় ভূমিকা আছে।
মহাবিশ্বের সৃষ্টির কারণ ঈশ্বরকে নিয়ে নানা ধর্মমত-ধর্মপথের সৃষ্টি হলেও সেই প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ ঈশ্বরকে নিয়ে দুইটি প্রধান দলে ভাগ হয়ে আছেন।

একদল ঈশ্বরে বিশ্বাসী তো আরেক দল তার অস্তিত্বকে অস্বীকার করে। বিশেষত বিজ্ঞান ও দার্শনিক মহলে এই মতভেদটি বেশি দেখা যায়।অনেক বিজ্ঞানীইই ঈশ্বরে প্রবল বিশ্বাস রেখেছেন, তো অনেকেই স্টিফেন হকিংয়ের মতো জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত কঠোর নাস্তিক ছিলেন।
কেউ কেউ তো আবার শেষ বয়সে ঈশ্বরভক্তি দেখিয়েছেন। তাই হয়তো হাইজেনবার্গ বলেছেন ” The first glup from the glass of natural science will turn you into anatheist, but at the bottom of the glass God is waiting for you…”

কিন্তু তাদের মধ্যে কেউই স্যার অয়লারের মতো ঈশ্বর অস্তিতের এমন গাণিতিক প্রমাণ দেখাতে পারেননি। অয়লার একবার বলেছিলেন,”যেহেতু e^iπ +1=0, তাই ঈশ্বর আছেন।”
e^iπ +1=0; সমীকরণটি নিঃসন্দেহে তাৎপর্যপূর্ণ। রিচার্ড ফাইম্যানের মতে “গণিতশাস্ত্রের, কাল্পনিক এবং বাস্তব সংখ্যার মাঝে সম্পর্ক স্থাপনকারী এই সমীকরণটি গণিতের সবচেয়ে সুন্দর সসমীকরণ ।”
কিন্তু কীভাবে এই সমীকরণটি ঈশ্বরের অস্তিত্ব প্রমাণ করে? এই নিয়ে একটি বিখ্যাত গল্প প্রচলিত আছে। আগে গল্পটি বলা যাক।
” ঘটনাটি অষ্টাদশ শতাব্দীর। বিখ্যাত দার্শনিক এবং কুখ্যাত নাস্তি ডেনিস ডেডরট তখন ঈশ্বরের অস্তিত্বহীনতার কথা ব্যাপকভাবে প্রচার করছেন এমন কথা কানে যায় সম্রাট ক্যাথেরাইনের। তখনকার সময়ে সম্রাটকে ঈশ্বরের প্রতিনিধি মনে করা হতো।অর্থাৎ, ঈশ্বরকে অস্বীকার করা মানে স্বয়ং “ক্যাথেরাইন দ্য গ্রেট”- অস্বীকার করা।
যথারীতি সম্রাট ডেনিস ডেডরটকে দেকে পাঠালেন এবং তাকে বলা হলো তিনি যেন ঈশ্বরের অস্তিত্বহীনতা কথা সম্রাটের রাজদরবারে যুক্তিতর্কের মাধ্যমে প্রমাণ করেন। ডেডরট এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করলেন এবং নির্দিষ্ট দিনে দরবারে হাজির হলেন। নাস্তিক ডেডরটকে তর্কে পরাজিত করার জন্য সম্রাট বেশ কয়েকজন পণ্ডিতকে তার দরবারে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন।

এই পণ্ডিতদের মধ্যে একজন ছিলেন গণিতজ্ঞ স্যার অয়লার। অয়লার তর্কের শুরুতেই ডেনিস ডেনরটকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “যেহেতু আমরা জানি e^iπ +1=0, তাই ঈশ্বর আছেন। এই যুক্তি খণ্ডন করার মতো কোনো প্রতিযুক্তি থাকলে আমাদের বলুন।”
এমন গাণিতিক যুক্তির জন্য মনে মনে ডেডরট প্রস্তুত ছিলেন নাহ। তাই যুক্তি খণ্ডনে তিনি অসংলগ্ন কথা বলার চেষ্টা করলেন। কিন্তু দরবারে উপস্থিত বাকি ব্যক্তিদের বিদ্রূপের কোলাহলে তার কোনো কথাই কারো কানে গেল না। ফলে ডেডরট রণে ভঙ্গ দিয়ে দরবারে ত্যাগ করলেন।”

ড্রাইভ / ড্রপবক্সের ডেটাগুলো কি আকাশে (ক্লাউড) থাকে?-Click Here

গল্প এই পর্যন্তই। কিন্তু ঈশ্বরের অস্তিত্ব প্রমাণে এই সমীকরণ কীভাবে প্রমাণ করে তা নিয়ে অয়লার তার বাকি জীবনে বিশদভাবে আর কিছুই বলেননি। কিন্তু আমরা সমীকরণে একটু লক্ষ্য করলেই দেখতে পাই,
সমীকরণের বাম পাশে ব্যবহৃত দুটি সংখ্যা π ও e দুটিই অসীম।
π=3.1415926535…………..
e=2.71828818284…………
কোনো অসীম সংখ্যাকে যদি ঈশ্বরের অসীমতার সাথে তুলনা করে আমরা ঈশ্বরের নাও বলি তবুও অসীম সংখ্যাকে ঈশ্বরিক বলাই যায়। কাজেই e ও π দুটোই ঈশ্বরিক।
আরো থাকা “i” বা √-1 হলো কাল্পনিক সংখ্যা। এই i এর সাথেও দার্শনিকেরা ঈশ্বরের তুলনা করেন। কেননা i যেমন কাল্পনিক, ঈশ্বরও তেমনি কাল্পনিক। [ প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, i বা কাল্পনিক সংখ্যাএ প্রবক্তাও স্যার অয়লার।]
বামপাশে আরো যে সংখ্যা আছে তা হলো 1। ঈশ্বর তো এক এবং অদ্বিতীয়ই। কাজেই অয়লারের সমীকরণের বামপক্ষে সর্বত্রই ঈশ্বর বিরাজিত। এবার সমীকরণের ডানদিকে লক্ষ্য করলেই যে একমাত্র অঙ্কটি দেখা যায় তা হলো “শূণ্য”। “শূণ্য” মূলত “অনুপস্থিতির উপস্থিতি”।
[ প্রাচীন ভারতীয় গণিতজ্ঞ আর্যভট্ট তাই বলেছেন।] ঈশ্বর তাও দৃশ্যত কোথাও নেই অথচ সর্বত্রই আছেন। অর্থাৎ, “শূণ্য” তেও ঈশ্বর বিরাজমান।
কাজেই, “”যেহেতু e^iπ +1=0, তাই ঈশ্বর আছেন।”- অয়লারের এই উক্তিকে কি একেবারেই ভূল বলা যায়?
Exit mobile version