বিজ্ঞান ব্লগ

এরিয়া ৫১ঃ রহস্য,সম্ভাবনা, ষড়যন্ত্র ,তত্ত্ব ও বাস্তবতা!

অজানাকে জানার আগ্রহ মানুষের অনেক আগে থেকেই প্রবল। আর অজানা বিষয়টির সাথে যদি রহস্য যোগ করা হয় তাহলে মানুষ হুমড়ি খেয়ে পরে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে। রহস্য ব্যাপারটা আমাদের মস্তিষ্ককে একটু বেশিই আকর্ষণ করে।

পৃথিবীতে বেশ কিছু স্থান রয়েছে যার রহস্য আজও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। এমনই একটি স্থান এরিয়া ৫১ । বেশ কিছু দাবি ও অনুমান ছাড়া এরিয়া ৫১ সম্পর্কে বিস্তারিত জানা আজও সম্ভব হয়নি।

কী রয়েছে এর ভেতরে? কেনই বা এর আশেপাশের গ্রামের লোকজন UFO দেখেছেন বলে দাবি করেন? কেন এখানে জনসাধারণ তো দূরে থাক উচ্চপদস্থ মার্কিন সামরিক কর্মকর্তারাও প্রবেশাধিকার পান না?
এরিয়া ৫১ একটি বিশাল সামরিক বাহিনীর অপারেশন ঘাটি, যার আয়তন ২৬,০০০ বর্গকিলোমিটার। এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমে নেভাডা অঙ্গরাজ্যের দক্ষিণাঞ্চলে এবং লাস ভেগাস থেকে প্রায় ১৫০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিম রেকেল গ্রামের কাছে অবস্থিত।
এটি একটি বিরাট গোপনীয় সামরিক বিমান ঘাঁটি যা ঠিক গ্রুম হ্রদের দক্ষিণ তীরে অবস্থিত। এটির প্রাথমিক উদ্দেশ্য হল পরীক্ষামূলক উড়োজাহাজ তৈরি, অস্ত্রশস্ত্রের সিস্টেমের পরীক্ষাকরণ এবং উন্নতিসাধন করা। অস্থায়ী ভাবে একে বলা হয় নেইলস এয়ার ফোর্স রেঞ্জ(NAFR)।
এই ঘাঁটি পরিচালনা করে নেইলস এয়ার ফোর্স বেসের ৯৯ এয়ার ফোর্স উইং। এই স্থানের চারদিকের আকাশ সবার জন্য নিষিদ্ধ।

যে ৬ টি কারণে প্রতিমাসে একটি করে বই পড়া উচিত

১৯৮৯ সালের কথা। বব লাজার নামের এক দাবী করে বসেন যে, তিনি কিছুদিনের জন্য এরিয়া ৫১ এরই একটি অংশে কাজ করেছিলেন, যার নাম এস-৪। সেই জায়গাটি এতটাই গোপনীয় যে, ঐ প্রজেক্টে তিনি এবং তার অন্যান্য সহকর্মীদের যে বাসে করে নেয়া হয়েছিলো, তার জানালাগুলো বন্ধ ছিলো যাতে করে তারা যাতায়াতের রাস্তা মনে রাখতে না পারেন।
এস-৪ এর বিমান ছাউনিতে লাজার এমন সব ফ্লাইং সসার দেখতে পেয়েছিলেন, যেগুলো কোনোভাবেই পৃথিবীতে তৈরি হতে পারে না বলে দাবী লাজারের।

সেগুলোর শক্তি সরবরাহ করা হচ্ছিলো এন্টিম্যাটার রিঅ্যাক্টরের মাধ্যমে, জ্বালানী হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছিলো লালচে-কমলা বর্ণের একটি পদার্থ যার নাম ‘এলিমেন্ট-১১৫’। সসারটি এতটাই শক্তিশালী গ্র্যাভিটি ওয়েভ তৈরি করছিলো যে, সেটার উদ্দেশ্যে কোনো গলফ বল ছুঁড়ে মারলে সেটাও ফিরে আসছিলো!

লাজারের মতে, সামরিক খাতে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সরকার রিভার্স ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে তৈরি করছিলো ইউএফও (আনআইডেন্টিফাইড ফ্লায়িং অবজেক্ট)!
দুর্ভাগ্য বলতে হবে লাজারের। একবার বন্ধুদের নিয়ে তিনি লুকিয়ে সেসব সসারের টেস্ট ফ্লাইট দেখতে গিয়ে ধরা পড়ে যান। এরপরই তার চাকরি চলে যায়। এরকম হাজারটা কন্সপিরেসি থিওরি প্রচলিত আছে এরিয়া ৫১ নিয়ে।

বব লাজার আরও দাবি করেন যে সেখানে এলিয়েনদের বন্দী করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
বব লাজারের ভাষ্যমতে একবার তিনি এস-৪ এর একটি হলওয়ে ধরে যাচ্ছিলেন,
তখন পাশের একটি ঘরের ছোট জানালা দিয়ে সামান্য সময়ের জন্য উঁকি দেন। তখন ঘরের ভেতরে ছোট, ধূসর বর্ণের একটি প্রাণীকে সাদা কোট পরিহিত দুজন মানুষের মাঝে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছিলেন তিনি!

এরিয়া ৫১ নিয়ে এমনও বলা হয় যে এখানে নাকি এলিয়েনদের শরীরের ময়নাতদন্ত করা হয়। গত শতকের নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি দিককার কথা। হঠাৎ করে সতের মিনিটের একটি ভিডিও টেপ ছড়িয়ে পড়েছিলো যেখানে দেখা যায় বায়ো-হ্যাজার্ড প্রোটেকশন স্যুট পরিহিত একদল মানুষ ছোটখাট একটি এলিয়েনের দেহ নিয়ে গবেষণা করছেন।
তবে ভিডিওটি নিয়ে সন্দেহ পোষণ করে অনেকেই জানান যে, গবেষক দলের অস্ত্রোপচারের যন্ত্রপাতি নড়াচড়ার ধরনটা ছিলো বেশ আনাড়ি রকমের, যা একে ভুয়া হিসেবে প্রমাণিত করে!

কনস্পিরেসি লেখক বিল কেসিং বলেন চাঁদে মানুষের অবতরণ সাজানো নাটক ছাড়া কিছু নয়। তার মতে, ষাটের দশকের শেষের দিকে নাসার বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারেন যে, তীব্র তেজষ্ক্রিয়তার জন্য চাঁদের বুকে অবতরণ করা কোনো মানুষ আর বেঁচে ফিরতে পারবে না! কিন্তু এতদিন ধরে চালানো এই প্রোগ্রামও বাতিল করা সম্ভব ছিলো না। তাই তারা আশ্রয় নেয় ইতিহাসের অন্যতম সেরা জালিয়াতির! এজন্য অ্যাপোলো-১১ জনগণের দৃষ্টিসীমার বাইরে চলে যাওয়ার পরই গোপন একটি মিলিটারি এয়ারক্রাফটে করে ক্রুদের নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো পূর্বপ্রস্তুত একটি মুভি স্টেজে! এর কিছুদিন পরে সেখানেই স্থাপন করা সব ক্যামেরার সামনে অভিনয় করেন নীল আর্মস্ট্রং এবং বাজ অলড্রিন। এরপর সেই ভিডিওই বিশ্বজুড়ে প্রচারের ব্যবস্থা করা হয় নাসার পক্ষ থেকে। কনস্পিরেসি থিওরিস্টদের কল্পনার গতি যে এক্ষেত্রে রকেটকেও হার মানিয়েছিলো, তা বোধহয় না বললেও চলে।

উপরের সব ধারণাই ছিল কন্সপিরেসি থিওরিস্টদের। আসলে এরিয়া ৫১ এ হয় টা কী? কেনই বা এরিয়া ৫১ তৈরি করা হলো? দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সোভিয়েত ইউনিয়ন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে প্রযুক্তির উন্নতি নিয়ে দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়। মার্কিন বিমান বাহিনী গবেষণা শুরু করে স্পাই বিমান তৈরি করা নিয়ে যাতে অনেক উঁচু আকাশ থেকেও নজরদারি করা যায়।
এজন্য সেসময়কার মার্কিন প্রেসিডেন্ট অনুমোদন দেন এক গোপন প্রজেক্টের। এই প্রজেক্টের অংশ হিসেবে আবিষ্কার হয় ইউ-২ স্পাই প্লেনের। এ প্লেনগুলোর চালনার প্রশিক্ষণ ও পরীক্ষানিরীক্ষা চালানোর জন্য দরকার ছিলো লোকালয় থেকে দূরবর্তী গোপন কোনো জায়গা। শেষ পর্যন্ত নেভাডা মরুভূমির দক্ষিণে গ্রুম লেকের কাছাকাছি এলাকায় সন্ধান মেলে পছন্দনীয় সেই জায়গার। এ জায়গাটিই আজ সকলের কাছে এরিয়া ৫১ নামে পরিচিত।
১৯৫৫ সালের জুলাই থেকে ইউ-২ স্পাই প্লেনের টেস্ট ফ্লাইট শুরু হয়। মজার ব্যাপার হলো, এর অল্প কিছুদিনের মাঝেই যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন জায়গা থেকে ‘ইউএফও’ দেখার দাবি করতে শুরু করে লোকজন। এর পেছনের কারণটা অবশ্য বেশ মজার। ইউএফও দেখতে পাওয়ার দাবি করা মানুষগুলোর অধিকাংশই ছিলো কমার্শিয়াল এয়ারলাইনের পাইলট। তৎকালে এরোপ্লেনগুলো সাধারণত ১০,০০০ থেকে ২০,০০০ ফুট উচ্চতা দিয়ে উড়তো।
মিলিটারি এরোপ্লেনগুলো উড়তো আরো উঁচু দিয়ে, প্রায় ৪০,০০০ ফুট। অনেকেই ধারণা করতো যে, ‘মানুষের তৈরি’ কোনো এরোপ্লেন এর বেশি উঁচু দিয়ে উড়তে পারবে না! আর ঠিক এ জায়গাতেই লেগে গেলো যত গোলমাল। কারণ ইউ-২ প্লেনটি উড়ে যেত ৬০,০০০ ফুটেরও বেশি উচ্চতা দিয়ে।


ব্যাস, এখানেই মানুষের মনে ঢুকে গেলো অবিশ্বাস। “এটা মানুষের বানানো হতেই পারে না। এটা অবশ্যই এলিয়েনদের বানানো কোনো ইউএফও!” বিমান বাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অবশ্য জানতেন যে, ইউএফও দাবি করা জিনিসগুলো আসলে তাদের গোপন প্রোজেক্টের ইউ-২ স্পাই প্লেন। কিন্তু এ সত্যটি জনসম্মুখে বলা বারণ ছিলো তাদের জন্য।
কারণ এটি ছিলো একটি টপ সিক্রেট প্রোজেক্ট। ফলে লোকমুখে ছড়াতেই থাকে ইউএফও দেখতে পাওয়ার সেসব ভিত্তিহীন দাবি। কী মনে হয় আপনার? কনস্পিরেসি থিওরিস্টদের মতো আপনিও কি মনে করেন ইউএফও, এলিয়েন, ওয়ান-ওয়ার্ল্ড গভর্নমেন্ট নিয়ে কাজ চলছে এরিয়া ৫১ এ?
Exit mobile version