কেমন হবে ২০৫০ সালের মহাবিশ্ব? আমার ধারণা অনুযায়ী কিছু বিষয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির আলোকে তুলে ধরলাম।
⚫“ক্রিং ক্রিং” অনবরত ডেকেই যাচ্ছে আমার মেয়ে কেমির আনা রোবট ডগ ক্রিস্টি। এবার আর ঘুম থেকে না উঠে পারলাম না। উঠতেই ক্রিস্টির চোখ থেকে অনেকগুলো ফোটন বের হয়ে অর্থপূর্ণ কয়েকটি বাক্য তৈরী করলো। বাক্যগুলো তে কেমি আমার মেডিসিনের টাইমিং গুলো ভালো করে বুঝিয়ে দিয়েছে।
আজ ৪ দিন হলো কেমি আর ওর কয়েকজন ফ্রেন্ড মার্স এ স্টাডি ট্যুরে গিয়েছে। যাওয়ার সময় ও ক্রিস্টি কে সব টা বুঝিয়ে দিয়ে গিয়েছে। ক্রিস্টিও সেই অনুযায়ী প্রতি মুহূর্তে চোখ থেকে ইনফরমেশন বের করছে। কিচেনে একবার উঁকি দিয়ে দেখলাম কিচেন রোবট গ্রে বেশ মনোযোগ দিয়েই তার কাজ করে চলেছে।
আজ তের দিন পর কেমির আসার কথা। হাতে থাকা ট্রান্সপারেন্ট স্মার্ট ফোন টার দিকে তাকালাম। এটা এতটাই হালকা যে বলা হয় ওজন নেই বা অনুভব করা যায় না। কিন্তু এটা মনে হয় না কোন কাজেই আসবে।মার্স এর সাথে নেটওয়ার্ক টা তৈরী হয়েছে তবে তা অতটা উন্নত নয়। বেশির ভাগ সময়ই নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় না। তবে কিছুদিনের মধ্যেই নেটওয়ার্ক ব্যবস্থার বেশ উন্নতি ঘটবে বলে শোনা যাচ্ছে।
অনেক জোরে একটা শব্দ হলো। উপরের দিকে তাকিয়ে দেখি কেমি ও ওর বন্ধুরা আমাকে দেখে হাত নাড়ছে স্পেসশীপ থেকেই। কয়েক সেকেন্ড এর মধ্যেই কেমি কে ছাদে নামিয়েই স্পেসশীপ টা ওর বন্ধুদের নামানোর উদ্দেশ্যে চলে গেল। কেমি নেমে এসেই আমাকে জড়িয়ে ধরলো। আমি জিজ্ঞেস করলাম,
– এতদিন হয়ে গেল মিস করিসনি?
– কি যে বলো মা। তুমি কি ভুলে গিয়েছ আমাদের সবার মস্তিষ্কেই স্টিমুলেটর লাগানো এর কারণে আমাদের কখনো স্যাড ফিলিং আসে না। যখনই আমরা কোন কিছুর অভাব বোধ করি এটি আমাদের মস্তিষ্কে এমন অনুভূতি তৈরি করে যে আমাদের মনে হয় সেটি আমাদের সাথেই আছে।
আমার এবার মনে হলো আসলেই তো তাহলে আমার মন খারাপ হচ্ছিলো কেন মাঝে মাঝে। পরক্ষনেই মনে হলো ঘুমের মধ্যে স্টিমুলেটর কয়েকবার সিগনাল দিয়েছিল চার্জ এর জন্য। আমিই ভুলে গিয়েছি পরে।
◾একটা রেস্টুরেন্টে ফোন দিতেই ১০ মিনিটের মধ্যেই একটি মিনি ড্রোন খাবার নিয়ে চলে আসলো। বর্তমানে গরু, ছাগল, হাস, মুরগীসহ অল্পকিছু পশুপাখিই মজুদ আছে সারাবিশ্বে। তাই এদের সংরক্ষণ করা হচ্ছে। তবে ফ্যাক্টরীর মাধ্যমে কৃত্রিমভাবে মাংসের ব্যবস্থা করা হয়েছে যার চাহিদাও ব্যাপক। আজকে কিচেন রোবট গ্রে কে চার্জ দেয়া হয়নি। সে জন্য এই ব্যবস্থা।
কেমির বাবা ছোট ছেলে কৃশানকে নিয়ে এসে বাড়ির সিগনাল প্রেরন করলো। ওর পাঠানো সিগনাল অনুযায়ী আমার রুমের দেয়ালে লাগানো ডিভাইসের মাধ্যমে ওদের ছবি ভেসে উঠলো। রিমোট এর একটি সুইচে চাপ দিতেই দরজা খুলে গেল। তাছাড়া প্রতিটি বাড়িই এখন স্মার্টহোম। রুমের ফ্যান, লাইট, টিভি থেকে শুরু করে প্রতিটি ডিভাইসই চলে রিমোটের সাহায্যে।
ন্যানোটেকনোলজির এতটাই উন্নতি ঘটেছে যে প্রায়ই শোনা যাচ্ছে স্বয়ংক্রিয় রোবট আবিষ্কার হবে। এসব রোবটের আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এতটাই উন্নত হবে যে এসব রোবটকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কোন মানুষের প্রয়োজন হবে না। কিন্তু এক শ্রেণীর মানুষ এটার বিরোধিতা করছে যাদের সংখ্যা নিতান্তই অল্প। তাদের ধারনা এমনটা হলে রোবটই হয়তো মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করবে। যার কারণে মানবসভ্যতার বিলুপ্তিও ঘটতে পারে, আমিও এদের সাথে একমত। আমি ভেবে দেখলাম প্রযুক্তির উন্নতি ঘটেছে ঠিকই কিন্তু মানুষের চিন্তাশক্তি হ্রাস পেয়েছে। তবে একটা ভালো বিষয় যে মানুষ আজ টাইম মেশিনের চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলেছে। কেননা তারা ভালো করেই বুঝতে পেরেছে এর বাস্তববিরোধী বিষয়গুলো।
এগুলো পড়তে ভুলবেন না !!!
পৃথিবীর একমাত্র ফুটন্ত পানির নদী: যত তথ্য অজানা |
বিজ্ঞানের এই উন্নয়নে মানুষ শহরকে দূষণমুক্ত করার অনেক প্রচেষ্টা চালিয়েছে। কিন্তু হিতে বিপরীত হয়েছে। কেমিক্যাল, মেকানিক্স এর ব্যবহার এতটাই বেড়ে গিয়েছে যে দূষণকে নিয়ন্ত্রণে রাখা বেশ কঠিন হয়ে পড়েছে। দারিদ্র্য অনেকাংশেই হ্রাস পেয়েছে যার একটি ছোট উদাহরণ সবাই-ই এখন ধোঁয়াবিহীন গাড়ি ব্যবহার করছে। কিন্তু সাচ্ছন্দ্যকে গুরুত্ব দিতে যেয়ে সিএফসি গ্যাসের বেড়ে যাওয়াকে কেউই চাইলেও নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না এমনকি আমি নিজেও না। ফলে অসুখ বিসুখও বেড়ে গিয়েছে। তবে চিকিৎসা ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন ঘটেছে। সকলেই টেলিমেডিসিন সুবিধা পাচ্ছে। মাঝে মাঝেই মানুষ ভাবে ২০২০ সালের করোনা ভাইরাসের মহামারীর কথা আর আফসোস করে সেই সময়ের চিকিৎসা ব্যবস্থার জন্য।
ঘরে ঘরে এখন ভার্চুয়াল রিয়্যালিটি সাধারণ বিষয়। মানুষের বিনোদনের কোন অভাব রাখা হয়নি। নেটওয়ার্ক ব্যবস্থার অনেক উন্নতি ঘটেছে। ঘরে ঘরে এখন ওয়াইফাই। ইন্টারনেট ছাড়া এক মুহূর্তও কল্পনা করা যায় না। অফিস, স্কুল সকল প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম এখন ভিডিও কনফারেন্স এর মাধ্যমে হয়। তবে প্রযুক্তিনির্ভর মানুষ এখন এতটাই ব্যস্ত হয়ে পড়েছে যে ওদের নিজস্ব বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগানোর সময়টুকুও নেই। মাঝে মাঝে আমিও দুঃখের সাথে চিন্তা করি, এই প্রযুক্তিনির্ভর বিশ্বে আমরা মানুষরাও যেন একেকটা প্রযুক্তি হয়ে উঠেছি।
অনেক লিখে ফেললাম ২০৫০ সালের প্রযুক্তিনির্ভর বিশ্বকে নিয়ে। জানি না কতটা বাস্তবায়ন হবে। তবে আমাদের সবসময়ই ভবিষ্যৎ চিন্তা মাথায় রেখে প্রযুক্তির লাগামহীন ব্যবহার থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করা উচিত। নাহলে অনেক উন্নতির মাঝেও ছোট ছোট ভুলই আমাদের ভবিষ্যৎকে বিপর্যস্ত করে তুলতে পারে।