বিজ্ঞান ব্লগ

কোয়ারেন্টাইনে স্যার আইজ্যাক নিউটনের যতো আবিষ্কার

কোয়ারেন্টাইন সময়ে বাড়িতে বসেই করে ফেলা সম্ভব পৃথিবীকে চমকে দেওয়ার মতো কোনো কাজ। এর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্যারআইজ্যাক নিউটন।

ইংরেজি বর্ষে তখন সময় ১৬৬৫ সাল। বরেণ্য বিজ্ঞানী আইজ্যাক নিউটন তখন একেবারে তাগড়া জোয়ান। ক্যাম্ব্রিজে সবেমাত্র ক্লাস শুরু করেছিলেন তিনি। কিন্তু প্লেগের ধাক্কায় পুরো শহর কোয়ারেন্টাইনে যেতে বাধ্য হয়। ক্যাম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় সহ আশেপাশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষনা করা হয়। দীর্ঘ ১৮ মাস পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম বন্ধ থাকে। নিউটন ওলসথর্প ম্যানরে নিজ বাড়িতে ফিরে আসেন। সেখানে মোটামুটি গৃহবন্দি অবস্থায় দিন কাটতে থাকে তার।মহামারির এই সময়টাই ছিল নিউটনের জন্য আবিষ্কারের বছর। বছরই ক্যালকুলাস, অপটিকস এবং মহাকর্ষের তিনটি সূত্র আবিষ্কার করেন নিউটন।

নিজের শোবার ঘরের জানালার শাটারে নিউটন একটি ছিদ্র করেন যাতে জানালার শাটার বন্ধ থাকার পরও ছিদ্র দিয়ে সূর্যের আলো ঘরে ঢুকতে পারে ঘরে। কৌতুহল বসত সেই আলোর সামনেই একদিন তিনি একটি প্রিজম ধরেন। তিনি খেয়াল করেন যে ত্রিভুজাকার প্রিজমের মধ্য দিয়ে যাওয়া আলোর বিক্ষেপণের মাধ্যমে দৃশ্যমান বর্ণালির সৃষ্টি হয়েছে।

নিজের শোবার ঘরে রাখা প্রিজম নিয়ে ঘাটাঘাটি করে নিউটন আবিষ্কার করে ফেলেন অপটিকস নিয়ে দেওয়া তাঁর গুরুত্বপূর্ন সব থিওরি। যা কিনা বিজ্ঞানকে একধাক্কায় এগিয়ে নিয়েছে অনেকদূর। এই বিষয়টিই জনপ্রিয় ব্যান্ড পিঙ্ক ফ্লয়েড তাদের একটি অ্যালবামের কভারে দিয়েছিল।

A descendant of the apple tree whose fruit helped Isaac Newton discover gravity grows on the campus of the National Institute of Standards and Technology in Gaithersburg, Md. (Calla Kessler/The Washington Post)

নিউটনের ঘরের জানালা দিয়ে তার বাগানের আপেল গাছ দেখা যেত। ঘরে বসে বসে তিনি প্রায়ই গাছ থেকে টুপটাপ আপেল পড়া দেখতেন। আপেলটি কেন মাটিতে পড়ল এই নিয়ে চিন্তাভাবনা করেই তিনি মহাকর্ষ সম্পর্কে ধারণা লাভ করেন এবং সেই ঘটনা ধরে এগুতে গিয়ে তিনি আবিষ্কার করেন মহাকর্ষ বলের তিনটি সূত্র। জানালা দিয়ে দেখার বিষয়টি নিয়ে অবশ্য দ্বিমত আছে। অনেকের মতে আপেল গাছের নিচে বসে ছিলেন নিউটন। তখন আপেল তার মাথার উপর পড়ে এবং তার মাথায় মহাকর্ষ বিষয়টি আসে।

মহামারীর কারণে অবসর পাওয়া সময়টাতে নিজের লাইব্রেরিতে গবেষণায় মত্ত থাকতেন নিউটন। নিজেকে ঘরে আবদ্ধ করে সময়টাতে দারুন জিনিস আবিষ্কার করে বসেন নিউটন। গণিতের জগতে আমূল পরিবর্তন এনে দেওয়া ক্যালকুলাস এর আবিষ্কার হয় এসময়েই।ক্যালকুলাস এর কিছু মৌলিক ধারণা তিনি এসময় লিপিবদ্ধ করেন যেগুলো পরবর্তীতে ১৬৬০ থেকে ১৬৭০ এর মাঝামাঝি ক্যামব্রিজে থাকাকালীন সময়ে পুনরায় গবেষণার মাধ্যমে পূর্ণতা লাভ করে।

নিউটন বেঁচে থাকলে হয়তো বর্তমান সময়ের কোয়ারেন্টাইন জীবনে আরও অনেক কিছুই আবিষ্কার করতে পারতেন।কোয়ারেন্টাইনের এই অলস সময়কে আপনিও চাইলে নানা ভাবে কাজে লাগাতে পারেন। এই বরেণ্য ব্যক্তির কর্মকান্ডে উদ্বুদ্ধ হয়ে নিজেই করে ফেলতে পারেন তাক লাগিয়ে দেওয়ার মতো কোনো কাজ।   

Exit mobile version