মন ভাল করে দেয়ার জন্য যেইনা চকোলেটের একটি টুকরো মুখে পুরে খেতে বসলেন, সেই হুট করে জিহবায় কি যেন একটা ঠেকল। মুখ থেকে বের করে আনতেই দেখলেন বাদামী রঙের কোন এক পোকার পা এর একটি ছোট্ট অংশ।
এহহহে!!! ভাবতেই গা গুলিয়ে যাচ্ছে, তাইনা? কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে আপনার কেনা প্রতিটা চকোলেটেই কিন্ত থাকতে পারে তেলাপোকার অংশ। আর সেটা বৈধও!
কেন চকোলেটে তেলাপোকা পাওয়া বৈধ?
আসলে আমরা যা-ই খাইনা কেন, তার কমবেশী সবগুলোতেই কিন্তু পোকামাকড়ের আক্রমণ হয়ে থাকে। বাজার থেকে ফুলকপি নিয়ে আসলে দেখবেন ফুলের মাঝে কোন এক জায়গায় ঘুপড়ি মেরে এক পোকা বসে আছে। গমের রুটি খাচ্ছেন? তাতেও কিন্তু পোকার সংক্রমণ হয়ে থাকে। আচ্ছা, পোকা নাহয় বাদই দিলাম, সবার পছন্দের পিজ্জা তৈরী করতে যে ডো বানানো হয় তাতে কিন্তু ইস্টের ব্যবহার করা হয় আর সেই ইস্ট কি জানেন? সেটা কিন্তু একটা ছত্রাক, আর সেই ছত্রাকের আক্রমণেই ময়দা ফারমেন্টেড হয়ে ডোটা ফুলে নরম হয়ে ওঠে।
ঠিক তেমনি চকোলেট বানানোর জন্য কোকো ট্রি বা কোকো গাছ থেকে সংগৃহীত কোকো ফল থেকে বীজ আলাদা করার পরে সেই বীজ প্রায় ৫-৭ দিন ফারমেন্টেশনের জন্য রেখে দেয়া হয়, আর এই প্রক্রিয়া চলাকালে যদি কিছু পোকা ঢুকে যায় সেটা এই বিশাল পরিমাণ বীজের মধ্যে থেকে বের করা প্রায় অসম্ভব। প্রায় গাছপাকা আমের মতো, গাছে আম থাকলে দুই একটা পোকা আপনি আমের মধ্যে পাবেনই, ব্যাপারটা ঠিক এমনই।
আরেকটা ব্যাপার আছে, যেহেতু পোকামাকড়ের শরীর অন্যান্য জীব প্রোটিন এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের উৎস হিসেবে ব্যবহার করে থাকে তাই এটাও ধরা হয় যে হয়তোবা এই ক্ষুদ্র পরিমাণ তেলাপোকার অংশ আপনার খাওয়া চকোলেটের পুষ্টিমান বৃদ্ধি করছে। তাই FDA (Food and Drug Administration) চকোলেটে পোকা পাওয়াকে বৈধতা প্রদান করেছে।
এগুলা পড়তে ভুলবেন না ! আমাদের অজ্ঞতা এবং উদাসীনতা: অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স গল্পে গল্পে মমি নিয়ে কিছু অদ্ভুত আবিষ্কার (১ম পর্ব) অ্যান্টার্ক্টিকা: চলুন ঘুরে আসি পৃথিবীর দক্ষিণ প্রান্ত থেকে! |
ঠিক কতটুকু তেলাপোকা পাওয়া বৈধ?
FDA অনুযায়ী প্রতি ১০০ গ্রাম চকোলেটে ৬০ টির বেশী পোকার টুকরো থাকা বৈধ (প্রায় ২ টি চকোলেট বারের সমান) । কিন্তু এখানেও একটা কথা আছে, সব মানুষ যেমন সমান উচ্চতা ও ওজনের হয়না,সব তেলাপোকাও কিন্ত তেমন হয়না। তাই হতেই পারে কোন চকোলেটে অনেক কম বা ছোট টুকরোর ব্যবহার হয়েছে আর কোনটায় বড়। তাই ষাট সংখ্যা শুনেই ঘাবড়ে যাবার কিছু নেই।
এভাবে তেলাপোকার অংশ খেলে কি স্বাস্থ্যে কোন প্রভাব পড়বে?
বেশীরভাগ মানুষের জন্যই চকোলেটের মধ্যেই খেয়ে ফেলা তেলাপোকার একটা ছোট্ট অংশ খেলে শরীরে কোন বিরূপ প্রভাব দেখা দেয়না। কিন্তু কিছু মানুষের জন্য এটা ভিন্ন হতে পারে।
১৯৪৩ সালে প্রথম ককরোচ এলারজি রিপোর্ট করা হয় এবং ত্বকের জন্য এই এলারজির টেস্টিং শুরু করা হয় ১৯৫৯ সালে। তেলাপোকার ট্রেস পরিমাণ উপাদান দিয়ে এলারজি শটের মাধ্যমে এই এলারজির চিকিৎসা করা যায়।
প্রায় ৫০ বছর ধরে তেলাপোকাকে এজমার জন্যও দায়ী করা হয়। যদিও অনেক সময় ধরে তেলাপোকার শরীরের কোন অংশ যদি শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে নেয়া হয় তখনি এমন এজমার সূচনা ঘটে।
এমন কোন চকোলেট কি আছে যেটায় একেবারেই পোকা নেই?
দুঃখের হলেও সত্য এমন কোন ব্র্যান্ড নেই যারা একদম পোকাবিহীন চকোলেট বানাতে পারে। তবে হ্যাঁ, কঠোর নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে প্রক্রিয়াজাতকরণের কারণে সর্বনিম্ন পরিমাণ পোকার উপস্থিতি নিশ্চিত করা হয়ে থাকে বাজারজাতকারী চকোলেটে।
এত কথার পরে শেষ কথা একটাই, পোকার ভয়ে যদি গাছের লিচু খেতে ভয় না পাই তাহলে চকোলেটই বা বাদ যাবে কেন!