গুহা, প্রাচীনকালের মানুষ এবং অন্যান্য প্রাণীদের একমাত্র প্রাকৃতিক আবাসস্থল। ভ্রমণ পিপাসুদের অন্যতম প্রিয় জায়গা হলো গুহ। গুহা অনেক বেশি রহস্যময়। এই পর্যন্ত অনেক প্রাচীন কঙ্কাল থেকে শুরু করে বিভিন্ন চিত্রকর্ম ইত্যাদি অনেক কিছু পাওয়া গেছে পৃথিবীর বিভিন্ন গুহায়। সবচেয়ে বড় গুহা থেকে ঘুরে আসি-
গুহা, ছোট থেকে বড় বিভিন্ন আকারের আছে। কিন্তু আজকে আমি আপনাদেরকে পৃথিবীর সবথেকে বড় গুহা সম্পর্কে বলবো এবং তার সাথে থাকছে এমন আশ্চর্যজনক তথ্য যা আপনার পিলে চমকে দিবে।
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় গুহা, নাম, হ্যাং সন ডুং (Hang Son Doong); ভিয়েতনামের কোয়াং বিন (Quang Binh) প্রদেশের ফোং নহা কে বাং (Phong Nha-Ke Bang) নামক জাতীয় উদ্যানে অবস্থিত। এটি ক্যাম্ব্রিয়ান থেকে পার্মিয়ান জিওলজিক্যাল যুগে অর্থ্যাৎ ৪০০-৪৫০ মিলিয়ন বছর আগে তৈরী হয়েছিলো।এই ইউনেস্কো সংরক্ষিত গুহাটি লম্বায় প্রায় ৩ মাইল (৫ কিলোমিটার) এবং প্রায় ৬৫০ ফুট উঁচু।
এই গুহাটির ব্যাপারে সবথেকে বিষ্ময়কর ব্যাপার হচ্ছে, এটির নিজস্ব আবহাওয়া সিস্টেম আছে যার মাধ্যমে গুহার মধ্যে মেঘ তৈরী হয়। আপনাদের যাদের গুহা সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা আছে, তারা জানেন গুহার মধ্যে সাধারণত চুন (ক্যালসিয়াম কার্বোনেট) নির্মিত লম্বা দন্ড দেখা যায়।
এগুলোকে স্ট্যালাগমাইট (Stalagmite) বলে। এই গুহাতে পৃথিবীর সবথেকে বড় স্ট্যালাগমাইট খুঁজে পাবেন যেগুলা প্রায় ২৬২ ফুট (৮০ মিটার) লম্বা এবং এর ফসিলগুলো মিলিয়ন বছরেরও বেশি পুরনো। গুহার ছাদের অনেক জায়গায় ফানেল আকারের বড় ছিদ্র আছে যেগুলোকে ডোলাইনস (Dolines) বলে। এ ছিদ্রগুলো দিয়ে সূর্যের আলো গুহার ভেতরে প্রবেশ করে, গুহার ভেতরের অংশ উজ্জ্বল করে তোলে। এ যেন এক অপরূপ দৃশ্য!
Have you read these? ১।পৃথিবীর পরমাণু সংখ্যা থেকে তাসের শাফল সংখ্যা বেশি। কিন্তু কীভাবে? ২।কোয়ারেন্টাইনে স্যার আইজ্যাক নিউটনের যতো আবিষ্কার ৩।(সায়েন্স ফিকশন) ড্যাজল-২: অন্য একটা পৃথিবী -পর্ব ১ |
এই গুহার ভেতরে নিজস্ব জঙ্গল দেখবে পাবেন। এছাড়া রয়েছে জঙ্গলের পাশে দিয়ে বহমান নদী। চারিদিগে কুয়াশাছন্ন মেঘ, এবং বিভিন্ন ধরণের অনুজীব। এ যেন পৃথিবীর ভেতর আরেকটি পৃথিবী! যারা জুল ভার্ণের, ‘এ জার্নি টু সেন্টার অফ দ্য আর্থ’ উপন্যাসটি পড়েছেন তারা অনেক মিল খুঁজে পাবেন। হয়তো ডাইনোসরও পেয়ে যেতে পারেন!
গুহাটি প্রথম আবিষ্কার হয় ১৯৯০ সালে হো খাঁন (Ho Khanh) নামক একজন স্থানীয় দ্বারা। লোকটি জঙ্গলে ঘুরে বেড়াতেন খাবার ও কাঠ সংগ্রহের জন্য। এগুলো বিক্রি করে তিনি সংসার চালাতেন। একদিন খাবারের সংগ্রহে যখন হোই ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন তখন হঠাৎ বড় একটা গুহার মুখ দেখতে পায়। সে মুখের ভিতর তাকিয়ে দেখে বিশাল বড় একটা গুহা, যেখানে মেঘ রয়েছে, নদী রয়েছে। বিষয়টাকে আরও তদন্ত করার জন্য সে তার বাসায় ফিরে যায়। তারপর সে ভুলে যায়, গুহাটিকে কোথায় দেখেছিলো।
এরপর কেটে যায় ১৮ বছর। অবশেষে একই লোক দ্বারা ২০০৮ সালে গুহাটি পুনারায় আবিষ্কৃত হয়। সে গুহাতে যাওয়ার পথটিকে লিখে রাখে। পরবর্তীতে ব্রিটিশ গুহা সংস্থার দুই লোক হাওয়ার্ড এবং ডেব লিমবার্টকে পথ দেখিয়ে গুহাতে নিয়ে যায়।
অক্সালিস একমাত্র কোম্পানি যাদের লিগ্যাল পারমিট আছে এখানে পর্যটক পাঠানোর। তবে এজন্য আপনাকে গুনবে হবে প্রায় ৩০০০ মার্কিন ডলার! মনে রাখবেন, এ গুহাটি সবথেকে বেশি ব্যবহৃত হয় বিভিন্ন ধরণের বৈজ্ঞানিক গবেষণায়।
আরেকটা আশ্চর্যের ব্যাপার কি জানেন? এ গুহায় যতজন মানুষ প্রবেশ করতে পেরেছে, তার চেয়েও বেশি মানুষ এভারেস্টের চূড়ায় উঠতে পেরেছে!
গুহায় যেতে চান? আপনাকে প্রচন্ড ফিট হতে হবে আর খুবই বেশি পরিমাণে ধৈর্য থাকতে হবে। কারণ, আপনাকে ২ বছর বা তারও বেশি সময় অপেক্ষা করা লাগতে পারে, যতক্ষণ না আপনার সিরিয়াল আসে।
কি? যাবেন নাকি? ভিয়েতনামের সেই বড় গুহায়। পৃথিবীল সবথেকে বড় গুহা, হ্যাং সন ডুং – যার নাম।