বিজ্ঞান ব্লগ

পৃথিবীর পরমাণু সংখ্যা থেকে তাসের শাফল সংখ্যা বেশি। কিন্তু কীভাবে?

অণু পরমাণুর কথা মাথায় আসলেই মনে হয় এত বড় বড় সংখ্যা নিয়ে হিসাব করাটা না জানি কত কঠিন। আবার প্রথম দেখায় মনে হতেই পারে এ আবার কেমন আজগুবি কথা। পৃথিবীর পরমাণু কিনা তাসের শাফলের কাছে হার মানবে। কোথায় শাফল সংখ্যা আর কোথায় পরমাণু। সেতো এক এলাহি ব্যাপার। কিন্তু শুনতে অবাক করার মত হলেও ঘটনা কিন্তু সত্যি৷ হ্যাঁ, আপনি ঠিকই শুনেছেন যে শাফল সংখ্যা বেশি হবে। চলুন যথাসম্ভব সহজ করে বোঝানো সম্ভব তত সহজ করেই বোঝাই। ভয় পাবেন না। এটা আসলেই অনেক সহজ হিসাব।

আগে তাসের কথায় আসি। তাসে মোট কার্ড থাকে ৫২টি (জোকার বাদ দেওয়া হয়েছে)। এখন যদি বলা হয় কার্ড গুলোকে শাফল করা লাগবে তাহলে আমরা কতভাবে সেটা করতে পারবো? আচ্ছা আগে বলেনি শাফল মানে কী! শাফল মানে সহজ বাংলায় অদলবদল করা। এই ক্ষেত্রে প্রথমে যেকোনো একটি কার্ড যেমন ডায়মন্ডের কুইন স্থির হিসেবে ধরেনি। তাহলে বাকি থাকে ৫১টি কার্ড৷ এই ৫১ টি কার্ড কে আগে পিছে করে ৫১! উপায়ে সাজানো যাবে। তাহলে মোট ৫২ টি কার্ডকে আমরা ৫২! উপায়ে সাজাতে পারবো। এর মান কত?
৫২*৫১*৫০*………….১= ৮*১০^৬৭ প্রায়।
তাহলে তাসের ব্যাপারটা ক্লিয়ার।

এবার আসি পৃথিবীর কথায়। এখানে শুধু পৃথিবী নিয়ে কথা হবে। এর মধ্যে গাড়ি, বিল্ডি, মানুষ, পশু, পাখি যা আছে সবগুলোকে আপাতত জাদুঘরে পাঠানো যাক। এগুলোকে হিসাব করা সম্ভব নয়। এখন আসি মূল কথায়। আমরা জানি পৃথিবীর ওজন হচ্ছে প্রায় ৬*১০^২৭ গ্রাম৷ একই সাথে পৃথিবী তৈরি হয়েছে প্রায় ৩২% আয়রন, ৩০% অক্সিজেন, ১৫% ম্যাগনেসিয়াম, ১৩.৯% সালফার, ৩% নিকেল, ২% ক্যালসিয়াম, ২% অ্যালিমিনিয়াম দিয়ে৷ ( বায়ুমন্ডল কে উপেক্ষা করে ), আরো অনেক উপাদান আছে কিন্তু সেগুলোর পরিমাণ মাত্র ১%। তাই তাদেরকে গনণা করা হয়নি।
সুতরাং, এখন আমাদের কাছে আছে
১.৯৬*১০^২৭ গ্রাম আয়রন
১.৮৬*১০^২৭ গ্রাম অক্সিজেন
৯*১০^২৬ গ্রাম ম্যাগনেসিয়াম
৮.৩*১০^২৬ গ্রাম সালফার
১.৮*১০^২৫ গ্রাম নিকেল
১.২৫*১০^২৫ গ্রাম ক্যালসিয়াম
৮.৪*১০^২৪ গ্রাম অ্যালুমিনিয়াম

এগুলো পড়েছেন?

এখন যেহেতু আমরা প্রত্যেকের এটমিক ভর জানি তাই খুব সহজেই আমরা পৃথিবীর পরমানু সংখ্যা বের করতে পারবো।
প্রত্যেকের ১ মোল সমান
আয়রন= ৫৫.৮ গ্রাম
অক্সিজেন = ১৬ গ্রাম
ম্যাগনেসিয়াম= ২৪.৩ গ্রাম
সালফার= ৩২.১ গ্রাম
নিকেল = ৫৮.৭ গ্রাম
ক্যালসিয়াম= ৪০.১ গ্রাম
অ্যালিমিনিয়াম= ২৭ গ্রাম
সুতরাং এখন মৌল গুলোর যত পরিমানে আছে তাকে তাদের গ্রাম পারমানবিক ভর দিয়ে ভাগ দিলেই আমরা পেয়ে যাব তাদের মোল সংখ্যা।
মোল সংখ্যাঃ
আয়রনঃ ৩.৪*১০^২৫
অক্সিজেনঃ ১.১*১০^২৬
ম্যাগনেসিয়ামঃ ৩.৭*১০^২৫
সালফারঃ ২.৬*১০^২৫
নিকেলঃ ৩.১*১০^২৪
ক্যালসিয়ামঃ ৩*১০^২৪
অ্যালুমিনিয়ামঃ ৩.১*১০^২৪
এবার সবগুলো যোগ করে পাই প্রায় ২.১৬*১০^২৬ মোল
এই সংখ্যাকে ৬.২৩*১০^২৩ দিয়ে গুন করে পাই ১.৩*১০^৫০ পরমাণু।
যত দূর জানি এটা ৮*১০^৬৭ থেকে বড় নয়। সুতরাং, তাসকে শাফল করার উপায় পৃথিবীর মোট পরমাণু থেকে বেশিই হবে।

এখনো কি আছেন? থাকলে বুঝলাম আপনাকে বোঝানো সার্থক হয়েছে। পরমাণুর হিসাব তেমন একটা কঠিন নয় তাহলে৷ কি বুঝলেন?

Exit mobile version