বিজ্ঞান ব্লগ

পৃথিবীর ভয়ংকর মৃত্যুর বিপদ সংকেত

পৃথিবীর মৃত্যু, এটা কি আসলেই সম্ভব? হ্যাঁ, এটা সম্ভব। শুধু পৃথিবীর মৃত্যু নয়, পৃথিবীর সাথে সাথে মৃত্যু ঘটবে সমস্ত প্রাণীকুলের। ধ্বংস হয়ে যাবে এই সুন্দর পৃথিবীর সমস্ত বৈচিত্র্য। বৃহৎ পাহাড়-পর্বত, সাগর-মহাসাগর, সবুজ বৈচিত্র্য, বায়ুমন্ডল সহ পৃথিবীর সব কিছু ধ্বংস হয়ে একাকার হয়ে যাবে। আর পৃথিবীর এই মৃত্যুর জন্য দায়ী থাকবো আমরা মানবজাতি।

পৃথিবীর সংক্ষিপ্ত ইতিহাসঃ
বর্তমান বিজ্ঞান কার্বন-১৪ ডেটিংয়ের মাধ্যমে কোন কিছুর বয়স নির্ধারণ করে থাকে। এই কার্বন-১৪ দিয়ে কোন বিশেষ প্রকারের তেজস্ক্রীয় কার্বন কোনো বস্তু কতটুকু ধারন করেছে, তার ভিত্তিতে প্রত্নবস্তুর বয়স নির্ধারণ করা হয়।

কিন্তু পৃথিবীর শুরুর দিকের কোন পাথর টিকে নেই, তাই সঠিক করে বলা সম্ভব নয় কখন পৃথিবী সৃষ্টি হয়েছিল। তবে ধারণা করা হয় সৌরজগৎ সৃষ্টির মোটামুটি ১০০ মিলিয়ন বছর পর একগুচ্ছ সংঘর্ষের ফল হলো পৃথিবী। আজ থেকে ৪.৪৫ বিলিয়ন বছর আগে পৃথিবী নামক গ্রহটি আকৃতি পায়, পায় লৌহের একটি কেন্দ্র এবং একটি বায়ুমন্ডল।

পৃথিবী সৃষ্টির পরে ‘থিয়া’ নামের মোটামুটি মঙ্গলের আকৃতির একটা গ্রহানুর সাথে পৃথিবীর সংঘর্ষে ধ্বংস হয়ে যায় গ্রহাণুটি, আর সেই ধ্বংসাবশেষ থেকে জন্ম নেয় চাঁদ। কিন্তু থিয়ার সংঘর্ষে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পৃথিবীর বায়ুমন্ডল। তৈরী হয় বিরাট এক জ্বলন্ত টগবগে আগুনের মহাসাগর।

ধীরে ধীরে উত্তাপ কমতে থাকে, লাভা জমাট বেধে পাথরে পরিনত হয়। তৈরী হয় প্রথম প্রাচীনতম খনিজ ‘জিরকন’।ধীরে ধীরে কালের পরিবর্তনে প্রানের আবির্ভাব ঘটে। কিন্তু উল্কাপিন্ড পৃথিবীতে আছড়ে পড়ার কারনে ধ্বংস হয়ে যায় এই বিবর্তন, ধ্বংস হয়ে যায় ডাইনোসর যুগের।

নেমে আসে ৫টা দীর্ঘ বরফযুগ। পুনুরায় কালের বিবর্তনে প্রানের আবির্ভাব ঘটে, আবির্বাব ঘটেছে মানবজাতির এবং এই সুন্দর আধুনিক পৃথিবীর। এখনো আমরা একটি বরফযুগের মধ্যে বাস করছি। আজ থেকে প্রায় ১১৫০০ বছর পূর্বে শুরু হয়েছিল এই বরফযুগ।

যা ধীরে ধীরে শেষ হতে যাচ্ছে, আবার বৃদ্ধি পাচ্ছে এই পৃথিবীর তাপমাত্রা। কিন্তু যে মানবজাতি এই আধুনিক পৃথিবী গড়ে তুলেছে, সেই মানবজাতিই পুনুরায় পৃথিবীকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।

পৃথিবীর মৃত্যুঃ
সাধারনত পৃথিবীর মৃত্যু বলতে পৃথিবীর তাপীয় মৃত্যুকে বোঝানো হয়। আধুনিকতার প্রতিযোগীতায় মানবজাতি পাল্লা দিয়ে তৈরী করছে বৃহৎ কলকারখানা। যার বর্জ্যে দূষিত হচ্ছে বায়ুমন্ডল, বারিমন্ডল ও ভূমন্ডল। মানুষ নিজের প্রয়োজনে গাছ কেটে পরিষ্কার করছে বনাঞ্চল, কিন্তু গাছ লাগানোর পদক্ষেপ খুবিই ক্ষীণ।

বায়ুমন্ডলে অক্সিজেনের পরিমান বর্তমানে ২০.৯৪৬% এবং কার্বন-ডাই- অক্সাইডের পরিমান ০.০৩৫%। ধীরে ধীরে অক্সিজেনের পরিমান কমছে এবং পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে কার্বন-ডাই- অক্সাইডের পরিমান। যার ফলে বায়ুমন্ডেল তাপ বেড়ে চলেছে অনবরত। এছাড়াও মানুষের বিভিন্ন কর্মকান্ড এবং বিলাসবহুলতার কারনে সৃষ্টি হচ্ছে মারাক্তক ক্ষতিকারক গ্যাস, যার ফলে গ্রীণ হাউজ প্রভাবে অনেক পরিবর্তন ঘটছে।

ইতিমধ্যে অত্যাধিক মাত্রায় তাপমাত্রা বাড়ার কারণে অনেক জনবসতিপূর্ন এলাকায় বসবাস করা প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠেছে। ভয়ংকর দাবানল সৃষ্টি হয়ে কেড়ে নিয়েছে হাজার হাজর প্রাণ, আগুনে পুড়ে গেছে বহুলাংশ সবুজ বনাঞ্চল। যার ফলে অক্সিজেন উৎপন্নের মাত্রা ক্রমস হ্রাস পাচ্ছে এবং ক্রমাগত বেড়ে চলেছে তাপমাত্রা।
প্রযুক্তির বরপুত্রঃনতুন পৃথিবী আনছেন এলন মাস্ক
– এ সম্পর্কে জানতে ক্লিক করো এখানে

শুধু এখানেই শেষ নয়, এন্টার্টিকা সহ বিভিন্ন পর্বতের বরফ গলে সমুদ্র পৃষ্টের উচ্চতা ক্রমস বৃদ্ধি পাওয়ার কারনে পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে সমুদ্র-উপকূলবর্তী অঞ্চল। হিমালয়ের বরফ গলে যাওয়ার কারনে ব্যাপক ক্ষতিসাধন হচ্ছে উত্তরাঞ্চলের। প্রায় সংঘটিত হচ্ছে মারাক্তক প্রাকৃতিক বিপর্যয়।

ভেবে দেখুন, এভাবে চলতে থাকলে পৃথিবীর অবস্থার কিরুপ পরিবর্তন ঘটবে? ধীরে ধীরে বিভিন্ন ভাবে ধ্বংস হয়ে যাবে আমাদের এই সুন্দর সবুজ পৃথিবী।

আর পৃথিবীর এই মৃত্যু হবে যখন এনট্রপি বা পরিবর্তনের মান শূন্য হবে। তাপমাত্রার পরিবর্তনের কারনেই এনথালপির পরিবর্তন হয়, যার ফলে কাজ সংঘটিত হয়। কিন্তু যদি তাপমাত্রান পরিবর্তন না ঘটে তাহলে কি হবে? তাপমাত্রার পরিবর্তন না হলে এনট্রপি বা পরিবর্তনের মান শূন্য হবে, যার ফলে কোন কাজ সংঘটিত হবে না। এই অবস্থাকে বলা হয় তাপীয় সাম্যবস্থা।

যেমন, পানি পূর্ন একটা বালতির সাথে একটা খালি বালতির সংযোগ করলে যত সময় পানির আদান প্রদান চলবে তত সময় কাজ সংঘটিত হবে। আর যখন পানি সাম্যবস্থায় আসবে অর্থাৎ দুপাশের পানি আর যাওয়া আসা করবে না তখন আর কোন কাজ সংঘটিত হবে না।

তেমনি বায়ুমন্ডলে তাপের পরিবর্তন ঘটছে বলেই পৃথিবীর ক্রিয়া হচ্ছে। পৃথিবীর ঘূর্নণ সহ পৃথিবীর বাহ্যিক, অভ্যন্তরীন সমস্ত ক্রিয়াকলাপ সংঘটিত হচ্ছে। কিন্তু যখন তাপমাত্রা বাড়তে বাড়তে সাম্যবস্থায় বিরাজ করবে অর্থাৎ তাপের আর কোন পরিবর্তন হবে না তখন বন্ধ হয়ে যাবে পৃথিবীর সমস্ত ক্রিয়াকলাপ।

ধ্বংস হয়ে যাবে এই পৃথিবী, একাকার হয়ে যাবে পৃথিবীর সমস্ত কিছু। আর এভাবেই ঘটবে পৃথিবীর মৃত্যু। যার জন্য আমরা মানবজাতি নিজেরাই দায়ী। অচিরেই আমরা এই সবুজ পৃথিবীকে বর্জ্যে ভরা দূষিত গ্রহে পরিণত করতে চলেছি।

সুতারাং, আমাদের উচিৎ বেশি বেশি গাছ লাগানো, বর্জ্য পরিশোধন করা এবং ক্ষতিকর অনবায়নযোগ্য পদ্ধতি বাদ দিয়ে নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার করে পৃথিবীকে সুরক্ষিত রাখা।
Emdadul Haque Emu
University of Barishal
Exit mobile version