পৃথিবীর ভর হচ্ছে 5.972 ×10^24 kg এবং একটি এক কেজির লোহার বলের ওজন হচ্ছে এক কেজি।
এই যে বললাম এর ওজন এক কেজি, সবসময় আমরা এভাবে বললেও এতে একটা ভুল আছে, kg হচ্ছে ভর প্রকাশের একক এবং ওজনের একক হচ্ছে N। আমরা বাজার থেকে আনা এক কেজি আলু বলতে আসলে সেই পরিমাণ আলুর ভরকেই বোঝাই, কিন্তু প্রচলিতভাবে একে ওজন বলে প্রকাশ করা হয়। কিন্তু বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যায় ভর এবং ওজনের তফাত টা ধরা হয়।
প্রতিটি বস্তুরই নিজস্ব ভর আছে, কিন্তু ভর থাকলেও ওজনও অবশ্যই থাকবে এরকম না।
ওজন= ভর × g (অভিকর্ষজ ত্বরণ)
মানে,অভিকর্ষজ ত্বরণ শুন্য হলে বস্তুর ভর থাকা সত্বেও ওজন থাকবে না।
যদি মহাকাশে পৃথিবীকে একটা বস্তু হিসেবে ধরা হয়, এবং মহাশূন্যে সকল বস্তুই ওজনহীন যতক্ষণ না পর্যন্ত সেটা কোন অভিকর্ষ বলের প্রভাব আছে এমন স্থানে না যাচ্ছে।
তাই ভর থাকা সত্বেও মহাকাশে অন্যান্য বস্তুর মত পৃথিবীরও ওজন নেই।
এখন বুঝতেই পারছেন, আসলে পৃথিবীর ওজন নয় পৃথিবীর ভর হচ্ছে 5.972 ×10^24 kg।
বস্তুর ভর অপরিবর্তনশীল, কিন্তু ওজন পরিবর্তন হয় স্থানের অভিকর্ষজ ত্বরণ এর উপর ভিত্তি করে। এক কেজি ভরের আলুর ওজন পৃথিবীতে হবে একে 9.807 m/s² দিয়ে গুণ দিলে যত হবে তত। কারণ বস্তুর ভরকে অভিকর্ষজ ত্বরণ দিয়ে গুণ দিলে যা বের হয় তা হচ্ছে তার ওজন। সুতরাং এক কেজি ভরের আলুর ওজন পৃথিবীতে ৯.৮N এবং মঙ্গল গ্রহে ৩.৫N।
এখন ভাবেন পৃথিবীর ওজন কত হতে পারে, যেহেতু আমরা পৃথিবীর ভর জানি, তাহলে একে অভিকর্ষজ ত্বরণ দিয়ে গুণ দিলেই ওজন বের হবে তাই না? কিন্তু কার সাপেক্ষে অভিকর্ষজ ত্বরণ গুণ দিব, পৃথিবী আছে মহাশূন্যে আর পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ মহাকর্ষ বল হিসাব করা হয়েছে এর ভর নির্ণয়ের ক্ষেত্রে (নিচেই বলব), যদি পৃথিবীকে বিশাল বড় একটি গ্রহে নেয়া হয় এবং সেখানে পৃথিবীর ওজন মাপা হয় তখন এর ওজন সমান হবে পৃথিবীর ভর গুণন সেই বিশাল গ্রহের অভিকর্ষজ ত্বরণ।
বিভিন্ন স্থানের আলাদা অভিকর্ষজ ত্বরণের কারণে এর ওজন ভিন্ন হবে, তবে ভরটা জানলে সহজেই সেই ওজন বের কর যাবে।
এখন দেখা যাক কিভাবে এই পৃথিবীর ভর বের করা হয়েছে
আমরা এটা জানি যে, মহাবিশ্বের প্রতিটি বস্তু একে অপরকে আকর্ষণ করে, যে পদার্থের মধ্যে অনুগুলোর ঘনত্ব যত বেশি তার ভর তত বেশি, এবং ভর যত বেশি তার আকর্ষণ বলও ততটাই প্রবল হয়ে থাকে।
নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে দুটি লোহার বলকে যদি পাশাপাশি রাখা হয় তাহলে একটা সময় পর বল দুটি একে অপরের কাছে এসে পরবে, এর কারণ বল দুটির নিজস্ব আকর্ষণ বল, লোহার বলের আকার এবং ঘনত্ব তুলনামূলক কম হওয়ায় এদের আকর্ষণ বলও অনেক নগন্য।
দুটি বস্তু একে অন্যকে নিজেদের দিকে কত বলে টানবে সেটা বের করার জন্য নিউটন একটি সূত্র দিয়েছিলেন যেটি হচ্ছে –
F={G(M1XM2)}/r^2
এখানে, F হচ্ছে বল , এবং G হচ্ছে ইউনিভার্সাল মহাকর্ষীয় ধ্রূবক যা ১৭৯৮ সালে হেনরি কেভেন্ডিস একটি পরীক্ষার মাধ্যমে নির্ণয় করেছিলেন, ধরি M1 হচ্ছে পৃথিবীর ভর, এবং M2 বস্তুটি এক কেজি ভরের লোহার বল, r হচ্ছে বস্তু দুটির মধ্যবর্তী দূরত্ব (কেন্দ্র থেকে কেন্দ্র)।
এগুলা পড়তে ভুলবেন না !!
রেললাইনের ফিশ প্লেট : জানার আছে যেসব তথ্য ভালবাসার ব্যবচ্ছেদ: মস্তিষ্কের নিউরোট্রান্সমিটার হরমোন ফটোগ্রাফি সম্পর্কিত বৈজ্ঞানিক খুঁটিনাটিঃ সুন্দর ছবির ভেতরের কথা |
যদি M2 বস্তু বা লোহার বলটিকে ১০০ মিটার উচু থেকে পৃথিবীর দিকে ছাড়া হয় তবে r হবে পৃথিবীর ব্যাসার্ধ (কেন্দ্র থেকে পৃষ্ঠের দূরত্ব)+১০০ মিটার।
(পৃথিবী গোল, মানুষ পৃথিবীর পরিধি জানে তাই ব্যাসার্ধ সহজেই বের করা যায়)।
এখন M1 অর্থাৎ পৃথিবী, M2 বা এক কেজি ভরের লোহার বলকে অভিকর্ষজ ত্বরণের টানে 9.807 m/s² বেগে পৃষ্ঠের দিকে টানলে বস্তুটি পৃষ্ঠে 9.8N বলে এসে পড়বে, এটা জানা যায় কারণ, পৃথিবীর অভিকর্ষজ ত্বরণ আমরা জানি।
এখানে, সবগুলোর মান যেহেতু জানা আছে শুধু M1 অর্থাৎ প্রথম বস্তু বা পৃথিবীর ভর জানা নেই, বাকি মান গুলো বসালে এর মান এমনিতেই বের হবে।
F=9.8N, M2=1kg, r=6.371 million মিটার।
এই মান গুলো উক্ত সমীকরণে বসালে M1 এর মান পাওয়া যাবে যা হচ্ছে প্রথম বস্তু বা পৃথিবীর ভর 5.972 ×10^24 kg।
যেহেতু ভর বস্তুর ঘনত্বের উপর নির্ভর করে, ১৬০০ সালের দিকে মানুষ ঘনত্বের হিসাব করে পৃথিবীর ভর বের করেছিল, কিন্তু সেটা ছিল পৃথিবীর আসল ভরের তিন ভাগের এক ভাগ মাত্র। পৃথিবীর ঘনত্বকে তখন তারা অনেক কম ধরেছিল। ভেবেছিল পৃথিবীর বেশির ভাগ অংশ পানি আর পাথর দিয়ে ভর্তি হবে। কিন্তু পৃথিবীর কেন্দ্র লোহা দিয়ে ভর্তি, এবং ৮০% ভর তার কেন্দ্রে অবস্থিত।
ঘনত্ব নিয়ে বিজ্ঞানী আইজাক নিউটনের আনুমান সবচেয়ে কাছাকাছি ছিল। তিনি বলেছিলেন পৃথিবীর ঘনত্ব পানির ঘনত্বের চেয়ে পাঁচ গুণ বা ছয় গুণ বেশি। আসলে পৃথিবীর গড় ঘনত্ব হল ৫.৫১৫ (গ্রাম/ ঘন সেমি)।
পৃথিবী অনেক ধরনের আলাদা পদার্থ দিয়ে গঠিত এবং এর সব জায়গায় ঘনত্ব এক না তাই পুরো পৃথিবীর সঠিক ঘনত্ব বের করা অনেক কঠিন, তাই এর ঘনত্ব বের করে তা থেকে ভর নির্ণয় করা প্রচুর ঝামেলার কাজ। অবশেষে নিউটনের সমীকরণের সাহায্যে পৃথিবীর আসল ভর বের হয়েছিল।