“হে প্রজাপতি তোমার
ডানায় দেখি
নানান রঙের সমাহার,
রূপের জৌলুস ছড়িয়ে তুমি
মাতিয়ে তোলো গুলবাহার!”
-আবু সাইদ
নানা বর্ণের নানা গরনের প্রজাপতি পুরো পৃথিবী জুড়েই রয়েছে। ফুলে ফুলে ঘুরে বেড়ানো রঙিন প্রজাপতির প্রকৃতির সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে জুড়ি নেই। মাত্র অল্প কিছুদিনের জীবন চক্রের প্রজাপতি সম্বন্ধে মজার ও আকর্ষণীয় অনেক তথ্য রয়েছে, না জানা থাকলে যেগুলো আপনাকে সম্ভবত মুগ্ধ করবে পতঙ্গটির রূপের মতোই।
পা দিয়ে স্বাদ গ্রহণ, কাঁদা থেকে পানি পান কিংবা আত্মরক্ষার জন্য ছদ্মবেশের কৌশল ইত্যাদি, সব মিলিয়ে সৌন্দর্যের বাইরেও পতঙ্গটির জীবন দারুণ মনোমুগ্ধকর। প্রথম পর্বে সংক্ষেপে আমরা উত্তর আমেরিকার বহুল পরিচিত ১৩টি প্রজাপতি সম্বন্ধে জেনে নেবো মজার অজানা কিছু তথ্য, যেগুলো আপনাকে পতঙ্গটির ব্যাপারে নতুন করে ভাবনার খোরাক যোগাবে।
শুরুতেই প্রজাপতি সম্বন্ধে বেশকিছু খুঁটিনাটি জেনে নিই:
সহজ কথায় বলতে গেলে, প্রজাপতি আর্থ্রোপোডা পর্বের লেপিডপ্টেরা নামক বৃহৎ গোষ্ঠীভুক্ত বর্গের অন্তর্গত একটি ইনসেক্ট বা পতঙ্গ। প্রকৃতির দেবদূত এই প্রজাপতির জীবনচক্রে সাধারণত চারটি ধাপ দেখা যায়। জীবনচক্রের প্রথমে লার্ভ অবস্থা, তারপর শুঁয়োপোকা বা ক্যাটারপিলার, তারপর পিউপা এবং সর্বশেষ পূর্ণাঙ্গ একটি প্রজাপতি। পরিণত প্রজাপতির দেহ আবার তিনটি অংশে বিভক্ত যথা: মস্তক বা মাথা, বক্ষ বা বুকের অংশ এবং উদর বা পেট।
প্রজাপতি কয়দিন বাঁচে তা নিয়ে অনেকের মধ্যেই রয়েছে অনেক গুজব এবং কেউ কেউ মনে করেন, মাত্র সাতদিনেই প্রজাপতির জীবনকালের সমাপ্তি ঘটে! কিন্তু না, প্রজাপতির জীবনচক্রের চারটি ধাপ শেষ হতে প্রায় এক মাস সময় লাগে অর্থাৎ এরা সাধারণত এক মাস বাচে।
প্রজাপতির রঙের উৎস: অনেকেই হয়তো ধারণা করছেন যে, শরীরে নানা ধরণের রাসায়নিক উপাদান থাকার কারণেই এদের এরকম রঙিন ডানা থাকে! আসলে তা-না, প্রকৃত কারণ হচ্ছে আলোর বিচ্যুতি। কোন বর্ণের আলো কিভাবে বিচ্ছুরিত হবে এবং কিভাবে আমাদের চোখে তা ধরা দেবে তার পুরোটাই নির্ভর করে কিসের ওপরে আলোকরশ্মি আপতিত হচ্ছে তার ওপর। আলোর এই ধর্ম কে Iridescence বা চিত্রাভা বলে। মূলত প্রজাপতির ডানায় আলোর বিচ্ছুরণের দরুন আমরা বিভিন্ন উজ্জ্বল রঙের প্রজাপতি দেখে মুগ্ধ হই।
প্রজাপতির রঙের কারণ:
আমাদের বাসযোগ্য এই সুন্দর ধরণিতে যা কিছু ঘটছে সবকিছুর পেছনেই কোনো না কোনো কারণ রয়েছে, ঠিক তেমনি প্রজাপতির এমন রঙিন ডানা থাকার পেছনেও একাধিক কারণ রয়েছে। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু কারণ হলো:
★ বিপরীত লিঙ্গকে আকৃষ্ট করা।
★ বিপরীত লিঙ্গের সদস্যকে চিনতে পারা।
★ শিকারি প্রাণীদের হাত থেকে বাঁচা ইত্যাদি।
রঙবেরঙের প্রজাপতিরা খুবই নিরীহ প্রজাতির হয়ে থাকে, কামড়ানো বা হুল ফোটানো এদের স্বভাবে নেই। কিছু কিছু প্রজাতি যদিও বাগানের বিভিন্ন সৌন্দর্যবর্ধক গাছপালার ক্ষতিসাধন করে থাকে; তবে এ ঘটনা খুবই বিরল। কেননা কিছু প্রজাতি ব্যতীত প্রাপ্তবয়স্ক কোনো প্রজাপতি কখনোই বাগানের গাছপালার ক্ষতিসাধন করবে না।
যাহোক, প্রজাপতি দেখে এর সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়নি এমন মানুষ মেলা ভার। তবে শুধু এর সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হলেই কিন্তু চলবেনা, এদের শনাক্ত করতে পারাটাও অনেকটা নিজ দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে।
উত্তর অ্যামেরিকাতে প্রজাপতির প্রায় ৭০০টিরও অধিক প্রজাতি রয়েছে এবং অনেকগুলি নির্দিষ্ট বাস্তুতন্ত্রে বাস করে বলে সাধারণ মানুষ এদের খুব কম প্রজাতিই দেখতে পায়। যেসকল প্রজাপতি পার্ক বা বাগান ইত্যাদি এরিয়ার বাস্তুতন্ত্রের সাথে নিজেদের খাপ খাইয়ে নিতে পেরেছে, তাদেরই আমরা সচরাচর অধিক দেখে থাকি। এর মধ্যে বেশিরভাগই বেশ সুন্দর এবং রোদের মধ্যে এদের উজ্জ্বল বর্ণিল দেহ খুবই আকর্ষণীয় এবং মনোমুগ্ধকর লাগে। তবে হ্যাঁ, প্রজাপতিটি দেখবার সময় তা শনাক্ত করতে পারলে মনোমুগ্ধকর অভিজ্ঞতাটি আরো বেশি সমৃদ্ধ হবে।
তো চলুন, এই পর্বে দেখে নিই উত্তর অ্যামেরিকার কমন ১৩টি প্রজাপতি ও তাদের বিস্তারিত খুঁটিনাটি বর্ণনা:
১. The Monarch (Danaus plexippus)
Monarch হলো সর্বাধিক সুপরিচিত এবং মানুষের নিকট অধিক প্রিয় একটি প্রজাতি। এর আকার, গড়ন, গায়ের উজ্জ্বল রং এবং উড়বার পদ্ধতি সবকিছুই দারুন রোমাঞ্চকর। Monarch বা “সম্রাট” নামকরণটি খুব সম্ভব তার গাত্রের ডোরাকাটা দাগের কারণেই করা হয়েছে। এই প্রজাতির প্রতি মুগ্ধ হবার অনেক কারণ রয়েছে;
তন্মধ্যে অন্যতম একটি কারণ হলো: Monarch মিল্কউইড বা অ্যামেরিকান এক প্রজাতির উদ্ভিদের রস খেয়ে জীবনধারণ করে, আর এই উদ্ভিদের রস অনেকটা তেতো স্বাদযুক্ত হওয়ায় Monarch অনেকটাই বিষাক্ত প্রজাতির হয়।
আর তাই প্রজাপতি শিকারি অন্যান্য প্রাণীরা একে যথেষ্ট পরিমাণে এড়িয়ে চলে। রাজার মত ভাব আর গায়ের উজ্জ্বল রঙের কারণেই একে “Monarch” বা সম্রাট হিসেবে সম্বোধন করা হয়। এরা বাগানের গাছপালার কোনো ক্ষতিসাধন করে না। যদিও আমেরিকার উত্তর প্রদেশে এদের যথেষ্ট পরিমাণে দেখতে পাওয়া যায়; তবুও উল্লেখযোগ্য হারে এদের শিকার করবার ফলে বিলুপ্ত হবার দ্বারপ্রান্তে এ প্রজাতি শীঘ্রই পৌঁছে যাবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।
২. The Viceroy (Limenitis archippus)
সবচে মজার ব্যাপার এই যে, Monarch প্রজাতির সাথে Viceroy প্রজাতি অনেকটাই সাদৃশ্যপূর্ণ, উভয়েরই ছবি দেখে হয়ত এ ব্যাপারটা আপনারা আন্দাজ করতে পেরেছেন। সামান্য কিছু পার্থক্যের মাধ্যমেই প্রজাতি দুটিকে আলাদাভাবে শনাক্ত করা সম্ভব। Monarch মিল্কউইড ভক্ষণ করে নিজের বডিতে এক প্রকার বিষাক্ত তেতো অবস্থা সৃষ্টি করে বিধায় সব রকমের পাখিরা একে শিকার করাতো দূরে থাক, এড়িয়ে চলতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে।
ঠিক তেমনি, এই প্রজাতিও Monarch এর মতো দেখতে একই রকমের হওয়ায় শিকারি পাখিরা কমলা রঙের এই প্রজাতিকেও শিকার করবার আগে দু’বার ভাবে। উত্তর অ্যামেরিকায় উইলো নামক এক প্রকার উদ্ভিদে এরা সবথেকে বেশি বিচরণ করে থাকে এবং এর পাতার রস ভক্ষণ করে জীবিকা নির্বাহ করে। তবে এরা উদ্ভিদের কোনো গুরুতর ক্ষতিসাধন করেনা। পৃথিবীতে এই প্রজাতি সংখ্যায় অনেক রয়েছে। তবে সাধারণত পূর্ব আমেরিকায় এই প্রজাতি সবচে বেশি দেখতে পাওয়া যায়।
৩. Red-Spotted Purple (Limenitis arthemis astyanax)
বডির ডিজাইনের দিক থেকে এই প্রজাতি The Viceroy-এর সাথে অনেকটাই সাদৃশ্যপূর্ণ। দেখতে কিন্তু এটি Monarch বা Viceroy থেকেও অনেক আকর্ষণীয় এবং মনোমুগ্ধকর। কমলা-লাল রঙের জায়গায় নীল-কালো রঙের মিশ্রণের উপর আবার লাল লাল ছোপ দেখতে আসলেই চমকপ্রদ।
ধারণা করা হয় Monarch এর মত এই প্রজাতিও বিষাক্ত বিধায় অন্যান্য শিকারীরা সাধারণত এই প্রজাতি ভক্ষণের ব্যাপার নিতান্তই এড়িয়ে চলে। কখনো সৌভাগ্যবশত এই প্রজাতি আপনার ধারেকাছে এসে পড়লে সামনাসামনি এর সৌন্দর্য দেখে আপনি মুগ্ধ হতে বাধ্য। এটি Viceroy প্রজাতির মতোই উইলো এবং এজাতীয় উদ্ভিদের ডালপালায় বিচরণ করে এবং এর পাতার রস ভক্ষণ করে থাকে। পূর্ব আমেরিকায় এই প্রজাতি সবচে বেশি পাওয়া যায়।
৪. Great Spangled Fritillary (Speyeria cybele)
এই উজ্জ্বল কমলা রঙের প্রজাপতি সাধারণত গ্রীষ্মের পুরো মাসজুড়ে বন্য অঞ্চলে খুব বেশিই পরিভ্রমণ করে বলে তখনই এদের দেখা যায়। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, অনেকটা Monarch এর মতো দেখতে এর উজ্জ্বল-কমলা রঙ পূর্বের প্রজাতিদের মতই ছদ্মবেশ ধারণ করার উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়। যদি ধারণাটি আদৌ সত্য হয়ে থাকে তবে এ প্রজাতিকে আলাদা ক্যাটাগরিতে বিভক্ত করে একই রকমের দেখতে অন্যান্য প্রজাতিদের এই ক্যাটাগরিভুক্ত করা হবে বলে বিশেষজ্ঞরা মত দিয়েছেন।
এর গায়ের উজ্জ্বল-কমলা রঙের সাথে সিলভার রঙের আভা অনেকটাই বর্ণিল শোভা ছড়িয়ে দেয়। উত্তর অ্যামেরিকার বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে এই প্রজাতি প্রচুর পরিমাণে রয়েছে, যার মধ্যে বেশিরভাগ প্রজাতিই বিরল এবং পার্বত্য পশ্চিম রাজ্যের নির্দিষ্ট অঞ্চল জুড়েই এরা সীমাবদ্ধ। সাধারণত এরা ভায়োলেট এবং নিম্নশ্রেণীর উদ্ভিদের পাতার রস ও ফুলের মধু ভক্ষণ করে থাকে। এ প্রজাতি উত্তর অ্যামেরিকায় অধিক পরিমাণে পাওয়া যায়।
৫. Tiger Swallowtail (Papilio glaucus)
বাঘের গায়ের রঙের মত দেখতে এই সুন্দর প্রজাপতির ডানার গাঢ় কালো এবং হলুদ রঙের মিশ্রণ দেখেই চেনা যায়। এরা গ্রীষ্মের মাঝামাঝি সময়ে চেরি গাছের ওপরে খুব বেশি বিচরণ করে এবং স্ত্রী প্রজাতিরা সেখানেই ডিম পাড়ে। ক্যাটারপিলার বা শুঁয়োপোকা অবস্থায় থাকাকালীন এদের গাত্রে চোখের মত গাঢ় সবুজ রঙের এক প্রকার আভা বিদ্যমান থাকে বলে ঐঅবস্থায়ও এদের শনাক্ত করা যায়।
তবে বড় হবার সাথে সাথে এরা পিউপেট এবং পরবর্তীতে পূর্ণাঙ্গ প্রজাপতিতে রূপান্তরিত হয়। এ প্রজাতির আরেকটি শনাক্তকারী বৈশিষ্ট্য হলো, দক্ষিণ আমেরিকায় বসবাসকারী এই প্রজাতির মধ্যে স্ত্রী প্রজাপতি সাধারণত গাঢ় ধূসর কিংবা বাদামি বর্ণেরও হয়ে থাকে। মূলত এর সমপ্রজাতি Pipevine Swallowtail এর বর্ণের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। এরা উইলো, বন্য চেরি এবং এপ্রজাতির অন্যান্য উদ্ভিদের পাতা বা ফুল থেকে রস গ্রহণ করে জীবনধারণ করে। পূর্ব আমেরিকায় এই প্রজাতি অধিক পরিমাণে পাওয়া যায়।
৬. Pipevine Swallowtail (Battus philenor)
সৌন্দর্যে ভরপুর এই প্রজাতিটি গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে অধিক পাওয়া যায়; বিশেষ করে দক্ষিণ মেক্সিকো এবং দক্ষিণ ম্যানিটোবায় এরা অধিক বিচরণ করে। তবে গ্রীষ্মের পরই এরা অন্যান্য ঋতুতে দক্ষিণ অঞ্চলে গমন করে। Pipevine Swallowtail বেশ কয়েকটি প্রজাতির সংমিশ্রণ বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। বিশেষ করে এর গায়ের নীল-কালো রঙের সাথে অন্য বেশ কয়েকটি প্রজাতি খুবই সাদৃশ্যপূর্ণ।
এদের লার্ভ এবং পূর্নবয়স্ক উভয় অবস্থাতেই এরা অত্যন্ত বিষাক্ত বিধায় শিকারীরা এদের এড়িয়ে চলতে অধিক পছন্দ করে। অনেকেই মনে করেন প্রাণীর গায়ে বিভিন্ন রঙের সমাহার থাকলেই এরা যেমন দেখতে রোমাঞ্চকর এবং আকর্ষণীয় হয়, ঠিক তেমনি খেতেও বিষাক্ত হয়ে থাকে। বিয়ার গ্রিলস এর মত হতে হলে হয়তো আপনি অনেক অখাদ্য কুখাদ্য খেতে চাইবেন, কিন্তু Pipevine Swallowtail? ভুলেও না!
এরা সাধারণত অ্যারিস্টোলোকিয়া গ্রুপের লতাপাতা জাতীয় উদ্ভিদের পাতার রস ভক্ষণ করে। অ্যামেরিকার দক্ষিণপূর্ব অঞ্চলে এদের উপস্থিতি সর্বাধিক।
৭. Giant Swallowtail (Papilio cresphontes)
Pipevine Swallowtail এর মতো অনেকটাই দেখতে এপ্রজাতি সাধারণত দক্ষিণাঞ্চল থেকে কখনও কখনও কানাডা পর্যন্ত উত্তর দিকে বিচরণ করে। এদের ক্যাটারপিলারের আকার অন্যান্য প্রজাতি থেকে তুলনামূলক বড় হয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এরা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র উদ্ভিদের ক্ষতিসাধন করতে পারে। সাইট্রাস উদ্ভিদে এরা অধিক বিচরণ করে থাকে এবং এরা ঐ উদ্ভিদেরই পাতা ভক্ষণ করে। এ প্রজাতির ক্যাটারপিলারের আকার অত্যধিক বড় হওয়ায় বাগানে এদের বিচরণ অনেকটাই শোভাবর্ধক নয়। আর আমেরিকার দক্ষিণপূর্ব অঞ্চলে এদের অধিক পাওয়া যায়।
৮. Zebra Swallowtail (Protographium marcellus)
মনোমুগ্ধকর এই প্রজাতির গায়ের সাদা রঙের মধ্যে কালো ডোরাকাটা দাগ অনেকটা জেব্রার গায়ের রঙের মত বলেই একে Zebra Swallowtail নামকরণ করা হয়েছে। Giant Swallowtail এর মতোই এ প্রজাতিও দক্ষিণাঞ্চল থেকে মাঝেমধ্যে উত্তর দিকেও পরিভ্রমণ করে থাকে। তবে মিসিসিপি নদীর বিভিন্ন উপত্যকার পাশেও এদের বিচরণ করতে দেখা যায়।
এদের গায়ের রং দেখে খুব সহজেই শনাক্ত করা সম্ভব, অন্তত এ প্রজাতির গায়ের রং সম্বন্ধে কারো সুস্পষ্ট ধারণা থাকলে নিমিষেই একে শনাক্ত করা কোনো কষ্টসাধ্য ব্যাপার হবে না। অন্যান্য Swallowtail প্রজাতিদের মত এরাও উড্ডয়নে অধিক পারদর্শী। তবে এদের অনন্য একটি বৈশিষ্ট্য হলো, প্রায়শঃই এরা বিভিন্ন নিউট্রিয়েন্টস বা পুষ্টি উপাদান সংগ্রহের পাশাপাশি জলপানের জন্য কাদামাটিতে ডুবে থাকে। এ প্রজাতি লার্ভা অবস্থায় পাউপাউ নামক উদ্ভিদের পাতা থেকে রস ভক্ষণ করে। এদেরও আমেরিকার দক্ষিণপূর্ব অঞ্চলে অধিক পাওয়া যায়।
৯. Black Swallowtail (Papilio polyxenes)
এই প্রজাপতি পুরো উত্তর আমেরিকায় বিভিন্ন আকার এবং আকৃতির পাওয়া যায়। পুরুষদের ক্ষেত্রে পেছনের ডানাগুলোয় গাঢ় হলুদ ছোপছোপ দাগ বিদ্যমান থাকে, আর স্ত্রী প্রজাপতিগুলো আকারে পুরুষ প্রজাপতির তুলনায় বড় হয় এবং ডানায় নীল রঙের ছোপছোপ দাগ অধিক পরিমাণে থাকে। Pipevine Swallowtail এর মত এরাও বিষাক্ত প্রকৃতির হয়ে থাকে।
এই প্রজাতি শুঁয়োপোকা বা ক্যাটারপিলার অবস্থায় অনেক আকর্ষণীয় থাকে। এদের অনেকেই “গাজর কৃমি” নামে অভিহিত করে থাকেন, কেননা এরা ক্যাটারপিলার অবস্থায় জমিতে গাজর এবং এর উদ্ভিদের রস ভক্ষণ করে বিধায় ফসলের নিদারুণ ক্ষতি সাধিত হয়। সাধারণত এদের আমেরিকার উত্তর প্রদেশে এবং দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলেও দেখতে পাওয়া যায়।
১০. Cabbage White (Pieris rapae)
ছবি দেখে হয়ত ভাবতে পারেন এই প্রজাতি তেমন আহামরি সুন্দর না, তবে প্রজাপতিটি উত্তর আমেরিকার সবচে সমৃদ্ধ প্রজাতির অন্তর্গত। এটি বহু বছর আগে ইউরোপ থেকে প্রবর্তিত হয়েছিল এবং বর্তমানে উত্তর আমেরিকার প্রায় সব অঞ্চলেই এদের দেখতে পাওয়া যায়। এ প্রজাতি দেখতে অনেকটাই ফ্যাকাশে সাদা রঙের এবং ডানার নিচে হালকা সবুজ রঙের আবরণ থাকতে পারে।
এগুলো পড়তে ভুলবেন না !!
ধাঁধা:সুখ-নগর ও দুঃখ-নগর ও ফাইনম্যানের আবদ্ধ আঁকাবাঁকা তার |
এরা ক্যাটারপিলার অবস্থায় বাঁধাকপি এবং এর উদ্ভিদের পাতার নিম্নাংশে বসবাস করে এবং পাতার রস ভক্ষণ করে থাকে। নির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে এরা ক্রুসিফেরাস জাতীয় উদ্ভিদের পাতার রস ভক্ষণ করে থাকে। বুঝাই যাচ্ছে যে, উল্লেখযোগ্যহারে এরা সবজি জাতীয় উদ্ভিদের ক্ষতিসাধন করে থাকে। তবে মজার ব্যাপার হলো, জমিতে এদের লার্ভা খুঁজে পেতে প্রচুর বেগ পোহাতে হয়, কেননা সাদা-ধূসর রঙের হওয়ায় এদের লার্ভা অনেকটাই অদৃশ্য অর্থ্যাৎ খুঁজে পাওয়া কষ্টসাধ্য।
এরা Monarch বা ঐপ্রজাতির মত বিষাক্ত নয় বিধায় প্রায়শঃই বিভিন্ন শিকারি এদের শিকার করে থাকে। এরা সুযোগ পেলে যেকোনো ফসলি উদ্ভিদের পাতাও ভক্ষণ করে।
১১. Orange Sulphur (Colias eurytheme)
Orange Sulphur এবং Clouded Sulphur (উপগোত্র-Coliadinae) উভয় প্রজাতি দেখতে হুবহু একই রকম হওয়ায় এদের আলাদা করা প্রায়ই অসম্ভব হয়ে পড়ে। এমনকি এপ্রজাতি দুটি প্রায়ই একই সাথে উড্ডয়ন এবং বিচরণ করে থাকে। তাই এই অনুচ্ছেদে আমি দুটি প্রজাতিরই একইসাথে অল্পবিস্তর ধারণা দিচ্ছি।
প্রজাপতিদের মধ্যে এরাই একমাত্র প্রজাতি যারা বসন্তকালে পূর্ণাঙ্গরূপে সর্বত্র বিচরণ করে। এছাড়া মানুষদের সাথে খুব ভালোভাবেই খাপ খাইয়ে নিয়েছে বলে প্রায়ই এদের মানুষের সাথে মিশতেও দেখা যায়। উত্তর অ্যামেরিকার গলফ মাঠ কিংবা পার্কে প্রায়ই এদের ঘাসের উপর একদলে বিচরণ করতে দেখা যায়।
Coliadinae উপগোত্রের অন্যান্য প্রজাতিরাও দেখতে প্রায় একই রকম, শুধু কিছু বৈশিষ্ট্য এবং খাদ্যাভ্যাস অন্যান্য প্রজাতি থেকে এদের আলাদা করে দিয়েছে। বিভিন্ন নিম্নশ্রেণীর উদ্ভিদের পাতা এবং পাতার রস এদের প্রিয় খাদ্য। আর হ্যাঁ, এরা একদমই যে উদ্ভিদের কোনো ক্ষতিসাধন করেনা তা কিন্তু নয়, বিশেষ বিশেষ সময়ে এরা উদ্ভিদের ক্ষতিসাধনও করতে পারে। পূর্ব আমেরিকায় এদের অধিক দেখতে পাওয়া যায়।
১২. Clouded Sulphur (Colias philodice)
পূর্বেই বলেছি, Clouded Sulphur এবং Orange Sulphur উভয় প্রজাতি আলাদা করা অনেকটাই কষ্টসাধ্য, শুধু লার্ভা অবস্থা এবং গায়ের কমলা-ধূসর রঙ শনাক্ত করা ব্যতীত এদের পূর্ণাঙ্গ অবস্থায় আলাদা করা দুর্বিষহ। তবে বাস্তুতন্ত্রের দিক থেকে এদের কিছু কিছু বৈশিষ্ট্য ভিন্ন হতে পারে।
১৩. Southern Dogface (Colias cesonia)
এপ্রজাতি সাধারণত অ্যামেরিকার দক্ষিণ প্রদেশেই অধিক পাওয়া যায়। জলবায়ুর পরিবর্তনের জন্যে অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন এই প্রজাতি উত্তরাঞ্চল থেকেই এসেছে। এটা সাধারণত খোলামেলা জায়গা এবং দিনের আলোয় বিচরণ করতে অধিক পছন্দ করে। এরা অনেক দ্রুত উড়তে পারে বিধায় কোনো প্রজাপতি শিকারির নিকট এদের ধরা অনেকটাই কষ্টসাধ্য ব্যাপার।
দুই ডানার প্রান্তে কুকুরের মত মুখাবরণ থাকায় এদের “Dogface” নামকরণ করা হয়েছে। এরা সাধারণত উইলো এবং এজাতীয় উদ্ভিদের পাতার রস খেয়ে জীবিকা নির্বাহ করে। তবে এরা কোনো উদ্ভিদের ক্ষতি করেনা।
দ্বিতীয় পর্বে থাকছে আরো ১৩টি প্রজাতি নিয়ে মজাদার অনেক তথ্য। প্রজাপতি সমাচারের আপাতত এখানেই সমাপ্তি!
তথ্যসূত্র: owlcation, উইকি, রোরবাংলা।