বিজ্ঞান ব্লগ

প্রফেসর নাডুস ও হিঞ্চিগুবাসীদের গোপন চুক্তি (বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী)

প্রফেসর নাডুস ও হিঞ্চিগুবাসীদের গোপন চুক্তি

[ বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী ]

লেখকঃ ইউ আর উদয়

▶ জিপ জ্যাপ! জিপ জ্যাপ! (মেসেজ নোটিফিকেশন)

(বিটিএম চ্যাট)

– অই! কি করছো?

– কিছু না। ভালো লাগছে না কিছু।

– কেন?

– জানি না। অনেক রাত হয়েছে, তুমি ঘুমাও।

– তুমি ঘুমাবা না?

– জানি না!

– 😐

– তুমি যাবা?

– কোথায় যাব? কি হইছে তোমার?

– বললাম তো জানি না। আর মেসেজ দিও না এখন। যাও ঘুমাও গিয়ে!

– আচ্ছা, বাই

রিপ্লাইয়ে একটা লাইক সেন্ড করে মোবাইল ড্যাটা বন্ধ করে দেয় সানি। ফিজিক্সের একটা টপিক বুঝতে পারছে না সানি। সন্ধ্যা থেকে লেগে বসে আছে। সলভ হচ্ছে না। তাই মাথা আজকে ভীষণ গরম তার।

সানি অনেকটা আত্মভোলা মানুষ। তার খুব দ্রুত মুড সুইং হয়। এমনকি বাইপোলার ডিসঅর্ডারের মতো সাঙ্গাতিক মেন্টাল কন্ডিশনেরও ভিক্টিম সে। এখন হ্যাপি তো তখন স্যাড। এক্সট্রিম হ্যাপি থেকে জাম্প করে এক্সট্রিম স্যাড, আবার এক্সট্রিম স্যাড থেকে জাম্প করে এক্সট্রিম হ্যাপি। এই হলো অবস্থা!

সানি বর্তমানে জেক্সন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স লেভেলের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে প্রথম বর্ষে অধ্যায়নরত। সে বিজ্ঞানমনা লোক। গবেষণা করা, গেজেট বানানো, পদার্থবিজ্ঞানের এক্সপেরিমেন্ট আর ইলেক্ট্রনিক্স নিয়ে ঘটরঘটর করাই তার পছন্দের কাজ। তার গার্লফ্রেন্ড, মিথিলা এবার এইচএসসি দিয়েছে। একটু আগে উপরের চ্যাটে যার সাথে কথা হয়েছে, সে-ই মিথিলা।

সানি অনেকদিন যাবৎ ডিপ্রেশনে ভুগছে। ডিপ্রেশন খুব মারাত্মক জিনিস। যার হয় সে বোঝে। ঠিক কোন কারণে সে ডিপ্রেশড, তা সে জানে না। অন্যদিকে আজকাল মিথিলাকেও তেমন একটা সময় দিতে পারে না সানি। সানি আর মিথিলা একজন আরেকজনকে খুব ভালোবাসে। মিথিলাকে সময় না দিতে পারলেও সানির প্রতি কোনো রাগ অভিমান নেই তার। কার সে সানিকে জানে, সানিকে ভালো বোঝে। সে জানে সানি ব্যাস্ত মানুষ। এই আরকি!

এখন রাত ৩ টা ৫৬ বাজে। প্রায় আধ ঘন্টা আগে সানির মেজাজের অবস্থা চরম লেভেলের মুডী ছিল। এখন হঠাৎ করে মুড সুইং করেছে। বিটিএমে মিথিলাকে কেন জানি মেসেজ দিতে ইচ্ছে হচ্ছে তার। বিটিএম বা BTM হচ্ছে বল্টু টেক্সটিং মিডিয়া। আজকালকার দিনের সবথেকে জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়ার একটা।

সানি এতক্ষণ পড়ার টেবিলে বসে বসে ভালো একটা জায়গায় মিথিলাকে নিয়ে ভ্রমণ করার কথা ভাবছিল। ট্রাভেলিং হচ্ছে ডিপ্রেশন কাটানোর উত্তম উপায়।মিথিলাকে ট্রাভেলের ব্যাপারে জানানোর বাসনা জাগল সানির মনে।

Have you read?

কিন্তু মিথিলা এখন অনলাইনে নেই। ঘুমিয়ে পড়েছে হয়তো। ফোন দিয়ে ঘুম নষ্ট করা ঠিক হবে না। এর চেয়ে বরং কাল সকালেই বলা যাবে। সানিও বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ল। সকাল হল। সোয়া ৮ টার দিকে এলার্মের শব্দে সানির ঘুম ভাঙ্গল। ব্রাশ-টাশ, হাতমুখ ধুয়া শেষ, ব্রেকফ্যাস্ট সারা হয়ে গেছে। সানি এখন মিথিলাকে নক দিবে বলে মনস্থা করল। ঠিক এই মুহূর্তে মিথিলাও নক করে বসল। হাউ সুইট লাভ! মিথিলাকে ট্রাভেলের কথাটা জানালো সানি। ট্রাভেল প্লেইস হিসেবে “উইটা” নামের একটা রেইনফরেস্ট চ্যুজ করা হলো। উইটা খুব সুন্দর একটা জায়গা। যেন একটা সপ্নপুরী। বোঝাই যাচ্ছে সেই লেভেলের মজা হবে সেখানে। সানি ভালো একটা রিসোর্ট রেন্ট করল। ভ্রমণের ফাইনাল ডেইট হচ্ছে ২৩ এপ্রিল।

সানি আর মিথিলার রিলেশনশিপের ব্যাপারে তাদের পরিবার জানে। প্রায় ১ বছরের রিলেশনশিপ। অবশ্য তাদের বিয়ের ব্যাপারে দুই পক্ষেরই সম্মত আছে। কাজেই মিথিলাকে সানির হবু বউ বললেও খুব একটা ভুল হবে না।

যাহোক, আজকে এপ্রিলের ২১ তারিখ। এটা ৩০৫৬ সাল চলে। আর মাত্র দু’দিন পর ট্রাভেলে যাবে তারা। এমন একটা জায়গায় গার্লফ্রেন্ডকে সঙ্গে নিয়ে ঘুরতে যাওয়ার স্বাদ ঠিক কতটা রোমাঞ্চকর, তা আর নতুন করে বলতে হবে না।

[ভ্রমণের দিন]

(২৩ এপ্রিল, ১২:১৬ AM/ বিটিএম চ্যাট)

– অই তোমার ব্যাকপ্যাক গোছানো শেষ?

– হুম তোমার আগেই শেষ! তুমি ডিনার করেছো?

– করেছি। কিন্তু তুমি কিভাবে জানলা আমার আগেই শেষ?

– এগুলো জানা আমার বা হাতের খেলা 😁

– লুল! তুমি ডিনার করেছো?

– হুম!

– আচ্ছা টাটা! আমার ঘুম পাচ্ছে। ঘুমের দেশে চলে যাই। লাভ ইউ!

– আজকে এত আহ্লাদ কোথা থেকে আসছে 🙄। আচ্ছা টাট্টা! গুড নাইট!

সানি আর কোনো রিপ্লাই না দিয়ে শুয়ে পড়েছিল। এখন নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে। আসলে প্রথমবারের মতো একসাথে কোনো ভ্রমণে যাচ্ছে তারা। মনে একটু উৎফুল্লতা কাজ করারই কথা।

যাহোক সকাল হয়ে গেছে। সাহেবও ঘুম থেকে উঠে পড়লেন। এভাবে বলতে বলতে, চলতে চলতে, দেখতে দেখতে, বাসা থেকে বিদায় নিয়ে সানি মেরামত আলী স্কুল এন্ড কলেজের পাশে একটা জায়গায় গাড়ি পার্ক করে মিথিলার জন্য অপেক্ষা করছে। প্রায় ১৩ মিনিট অপেক্ষা করার পর মহারানী মিথিলার দেখা মিলল। যানজট ছিল তো, তাই আসতে একটু দেরী হয়েছে।

মিথিলা চটজলদি গাড়ির ফ্রন্ট প্যাসেঞ্জার সিটে আহ্লাদীর মতো সানির গা ঘেঁসে বসে পড়ে সিটে। একপর্যায়ে তারা উইটির উদ্দেশ্যে রওনা দিল।

[দুই ঘন্টা পর]

তারা এখন লোকালয় থেকে অনেক দূরে। গন্তব্য থেকে এখনো ৩১২ কি.মি. দূরে। সবে অর্ধেক পথ পাড়ি দিয়েছে, এখনো আরো অর্ধেক পথ বাকি। গাড়ির ইঞ্জিনের শব্দটা একটু ১৯-২০ লাগছে। একটু অস্বাভাবিকভাবে ভ্রুম ভ্রুম করছে। সানি যা সন্দেহ করেছিল তাই হলো, ইঞ্জিন খারাপ হয়ে গিয়েছে। একটু পর গাড়ির ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যায়। তারপর আর স্টার্ট হচ্ছে। কি মুশকিল! এই ঘন জঙ্গলের মাঝে কারো সাহায্যও তো মিলবে না এখন।

সানি আর মিথিলা গাড়ি থেকে নেমে পড়ল। তারপর সানি গাড়ির হুড খুলে ইঞ্জিন চেক করল। সমস্যা খুঁজে পায় নি। কি এক মহা জ্বাল!

( স্ন্যাপ! স্ন্যাপ! )

জাস্ট দুইটা স্ন্যাপ, ব্যাস! অল্পক্ষণেই সানি আর মিথিলা মাটিতে লুটিয়ে পড়ল।

চারজন মুখ ঢাকা এবং কালো পোশাকপরা লোক সানি আর মিথিলাকে জীপে করে একটা গুপ্ত আস্থানায় নিয়ে গেল। তাদের আস্থানা একেবারে রাজকীয়, আসলেই দেখার মতো। খুবই অত্যাধুনিক এবং হাইলী সিকিওরড্ বাড়ি। সানি আর মিথিলাকে নিয়ে ঐ চারজন তাদের বসের কাছে গেল। তাদের বসেরও মাস্ক লাগানো, আধুনিক পোশাক পরিধান করে আছে। কিন্তু তারটা সাদা। সাদা কাপড়ে একটু একটু রক্তের ছিঁটে। বসের বেশ দেখে চেনার কোনো উপায় নেই।

তাদের বসের নাম প্রফেসর নাডুস। জীবনবিজ্ঞানী মানুষ। খুবই ব্রিলিয়ান্ট। কিন্তু ক্রিমিনাল মাইন্ডেড এবং অমানবিক। তার ভেতরে মনুষ্যত্ববোধ বলতে কিছুই নেই। “নাডুস” তার ছদ্মনাম। আসল পরিচয় তার চ্যালাব্যালারাও জানে না। অপহরণ করা তার কাজ। এবং অপহরণের পর নানা পরীক্ষা নিরীক্ষা চালানো। সেটা বৈধ হোক আর অবৈধ হোক, নাডুসের কিছু যায় আসে না। শুধু তাই নয়, আরো হাজারটা ক্রিমিনাল রেকর্ডও আছে তার নামে, এবং সেটা এই ছদ্মনামেই।

যাহোক, চ্যালাদের এই অগ্রিম কাজটা তার খুবই পছন্দ হলো। সে কিন্তু আলগাভাবে অপহরণের কোনো আদেশ দেয়নি। বস চ্যালাদের এই প্রশংসনীয় কাজের জন্য স্পেশাল ট্রিট দিবেন। যাক, এই সুবাদে চ্যালাগুলো বসের প্রশংসনীয় হতে পেরেছে। এই চার চ্যালা তো আহ্লাদে আটখানা!

তাদের মধ্যে একজন বলে উঠল,

– বস এই দুজনকে কত নাম্বার কেবিনে রাখব?

বসের রিপ্লাই,

– এখন কোথাও রাখার কোনো দরকার নেই। তুমি জানো আমি শুভ কাজে দেরী করি না। তাদের দুইজনের এমআরআই কর। তারপর কিউবিটিই-১২০ ক্যাপস্যুলে ঢুকিয়ে QBTE টেস্ট কর।

এদিকে সানি আর মিথিলার জ্ঞান এখনো ফিরে নি। তাদের ট্র‍্যাঙ্কোয়ালাইজার গান (চেতনানাশ করে এমন বন্দুক) দিয়ে স্যুট করে অজ্ঞান করে দেওয়া হয়েছিল।

যাহোক, এখনকার MRI (Magnetic resonance imaging) প্রযুক্তি অনেক উন্নত হয়েছে। পুরো দেহ স্ক্যান করতে মাত্র ৫ মিনিট লাগে এখন। দুজনের এমআরআই টেস্ট সম্পন্ন হয়েছে। এখন QBTE টেস্টের পালা। QBTE মানে হচ্ছে Quotable Bran Test for Exatazrio. এটা ঠিক কিসের পরীক্ষা, তা নাডুস ছাড়া অন্য জানে না। আর এই Exatazrio দিয়ে কি বোঝায়, সেটাও নাডুস জানে।

যারা QBTE পরীক্ষায় টিকবে, তাদের ব্রেইন খুবলিয়ে নেওয়া হবে। QBTE এবং MRI এর রিপোর্ট দেখে প্রফেসর নাডুস খিলখিলিয়ে হাসছে। প্রেমিক যুগল উভয় পরীক্ষাতে উত্তীর্ণ হয়েছে। তাই তাদের ব্রেইন দুটোও নাডুসের ডিমান্ড লিস্টে জায়গা করে নিল। প্রফেসর নাডুসের অধীনে আরো ১২ জন মানুষকে লকআপ করে রাখা হয়েছে। এখন মোট ১৪ জন হলো। রাত বারোটার পর তাদের সবার ব্রেইন অমানবিক পিশাচের মতো খুবলিয়ে নেওয়া হবে।

নাডুস বড়ই অদ্ভুদ মেন্টালিটির মানুষ। এই লোক রক্ত নিয়ে খেলতে ভালোবাসে। পশুপাখিদের উপর অমানবিক পরীক্ষানিরীক্ষা চালায়। সে রক্তও খায়, সে কল্পিত ভ্যাম্পায়ার কিন্তু না। কিন্তু রক্ত খেতে ভালো লাগে তার। সম্ভবত তার কিছু সিরিয়াস টাইপের মানসিক রোগ আছে। কিন্তু তাও তার বুদ্ধির তুলনা হয় না।

নাডুস সেই ১৪ জনের স্মৃতির কিছু অংশ কৃত্রিম উপায়ে ডিলিট করে দিবে। সবাইকে ট্র‍্যাঙ্কোয়ালাইজার দিয়ে অজ্ঞান করা হয়েছে। অজ্ঞান হওয়ার পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত স্মৃতি অক্ষত রাখা হবে, এর পরবর্তী স্মৃতিগুলো স্প্লিট করে মুছে দেওয়া হবে।

একপর্যায়ে নির্দিষ্ট অংশের স্মৃতি মুছে দেওয়া হলো। এই স্মৃতি মুছে দেওয়া প্রযুক্তি প্রফেসর নাডুসেরই আবিষ্কার। যাহোক, কাল সকালে নাডুসের সঙ্গে দুইজন লোক দেখা করতে আসবে। খুব বড়সড় ডিল হবে কালকে। নাডুসের সেই দুইজনের সঙ্গে বড়মাপের চুক্তি আছে। নাডুসকে ঐ দুইজনের হাতে ১২ টা ব্রেইন তুলে দেওয়ার কথা ছিল। এখন ২ টা বেড়ে ১৪ হয়েছে। মানে আরো বেশি লাভ হবে তার। প্রতি ব্রেইনের বিনিময়ে পাবে মোটা মোটা অংকের ডলার।

নাডুসের সেই দুই কন্ট্র‍্যাক্টরের পরিচয় নাডুস ছাড়া অন্য কেউ জানে না। তাদের পরিচয় গোপন রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে নাডুসকে। ঐ দুইজনের মধ্যে একজনের নাম এন্নট, অন্যজনের অন্নট। কি অদ্ভুদ নাম রে বাবা! কিন্তু তাদের ঠিকানা কি?

“হিঞ্চিগু” গ্রহ! তারা হিঞ্চিগু গ্রহের প্রাণী। মানে তারা এলিয়েন? ঠিক ধরেছেন। এলিয়েন দুটো অসৎ। তারা আমাদের মতোই ৪ মাত্রা জগতের ৩ মাত্রার প্রাণী। তারা সালফারকে শ্বাস হিসেবে গ্রহণ করে, নিশ্বাস হিসেবে অক্সিজেন ছাড়ে। তাদের শ্বসনকার্য অনেকটা জটিল টাইপের। দৈহিক গঠনও মানুষ থেকে ভিন্ন। তাদের চোখ ৮ টা, পা ৪ টা, হাত ২ টা। লম্বায় সাধারণত ৮ ফুট হয়। ব্যাস এটুকুই, এদের সম্পর্কে এর চেয়ে বেশি কোনো বায়োলজি প্রফেসর নাডুস জানে না।

এলিয়েন দুটো বদমেজাজি। হুমকি-ধামকি দেয়। এই করবে, সেই করবে, হ্যান ত্যান। নাডুস তাদেরকে ভয় পায়। অবশ্য তাদের সত্যিকারের চেহারা নাডুস দেখে নি। পোশাক এবং মাস্কের বাহির থেকে যা দেখা যায়, তা-ই।

যাহোক, নাডুস তার চ্যালাকে এইমাত্র একটা নির্দেশ দিল। সানি আর মিথিলা এবং অন্য আরো ১২ জনের জ্ঞান যাতে না ফিরে, সেজন্য তাদের একটা সরু বিশেষ ক্যাপস্যুলে রাখতে হবে। তারা যতক্ষণ পর্যন্ত এই ক্যাপসুলে থাকবে, ততক্ষণ পর্যন্ত জাগ্রত হবে না।

রাত বারোটার পর ব্রেইনগুলো দেহ থেকে আলাদা করে ফেলা হবে। এখন বাজে ৯ টা। নাডুস নেশাখোর মানুষ। প্রতিদিন মদ না পান করলে চলে না। মাঝে মাঝে ওভারডোজও হয়ে যায়। সিগারেট তো পারলে একটার পর আরেকটা টানে, চেইনস্মোকার আরকি। সে নিজে একজন বায়োলজিস্ট, অথচ নিজের স্বাস্থ্যের ব্যাপারে উদাসীন। আজকে সে ভীষণ খুশি। কালকে বিশেষ একটা দিন। খুশি তো হবেই। এখন সে মদ পান, চিল করবে, নাচবে, মাতলামো করবে। গ্লাসের পর গ্লাস মদ টানবে।

প্রায় কয়েক গ্লাস টানার পর, তার অবস্থা সিরিয়াস। একজন চ্যালা এসে আর না খাওয়ার অনুরোধ জানালো। নাডুস এখন হাইপার সোশ্যাল অবস্থায় আছে। ভয়ংকরভাবে মাতলামি করছে। অন্য জগতে আছে। চ্যালাগুলো ওয়ার্ণ দিচ্ছে বার বার। নাডুস উল্টে বকা দিচ্ছে। কি যে একটা অবস্থা!

নাডুসের হার্টবিটে অনিয়মিতি দেখা দিচ্ছে। শরীরের তাপমাত্রা অনেকটাই কমে গেছে। বমি করছে। হাত পা কাঁপছে। তারপরও একটু একটু করে চুমুক দিয়েই চলেছে, দিয়েই চলেছে। আজকে কেন এমন করছেন সে? ঠিক কি কারণে? খুশির ঠেলায়? নাকি অন্যকিছু? কে জানে! যদিও সে প্রতিদিনই অতিরিক্ত মদ্যপান করে। কিন্তু আজকে একটু বেশি, অন্যদিনের তুলনায় অনেক বেশি।

প্রফেসর বোধহয় আজকে পাগল হয়ে গেছে। কেউ মনে হয় বুকে এক পাহাড় সমান কষ্ট নিয়েও এত মদ পান করে না, যতটুকু সে করছে।

নাডুস বমি করছে। তার অবস্থা আরো সিরিয়াস এখন। হাত পা কাঁপছে। অদ্ভুতভাবে মাতলামো করছে। এমন পর্যায়ে তার পার্সোনাল কেয়ারে নিয়োজিত ডাক্তাররা তাকে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দেয়।

ওহ নো! আজকে ওভারডোজ হয়ে গেছে। পরিস্থিতি খারাপ। বমির করার সময় দূর্ঘটনাবশত নাডুসের ফুসফুসে মারাত্মক ইন্ট্যারাপশান হয়ে শ্বাসক্রিয়া বন্ধ হয়ে গেছে। অর্থাৎ সে এসফেক্সিয়েশানের স্বীকার হয়ে মারা যায়। এটা এলকোহল পয়েজনিং এর কারণে মৃত্যু ছিল। প্রথমে হার্টবিট বন্ধ হয়ে ক্লিনিক্যাল ডেথ হয় তার, তারপর ব্রেইন ডেথ!

প্রফেসরের মারা যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুরো ঘরের সিকিউরিটি সিস্টেম সহ তার অধীনস্থ ১২০ জন চ্যালা মাটিতে নেতিয়ে পড়ে। তারপর গুণে ১০, ৯, ৮, ৭, ৬, ৫, ৪, ৩, ২, ১ এবং বুম!

নাডুসের নিথর দেহটা বিছানায় পড়ে আছে। আর তার কাজে নিয়োজিত চ্যালাগুলোর দেহের নাম গন্ধও না, শুধু আছে ছাই আর বিস্ফোরণের ফলে সৃষ্ট স্পট!

তার চ্যালাগুলো কিন্তু মানুষ ছিল না, তারা ছিল উন্নত রোবট। তারা এজিআই ধাচের রোবট ছিল। AGI মানে Artificial General Intelligence. এদের আচার-আচরণ, ধ্যান-ধারণা, চিন্তাভাবনা এবং কিছু নির্দিষ্ট দিকে লক্ষণীয় সক্ষমতা মানুষের সমকক্ষ ছিল। এরা মোটেও ঐ হিঞ্চিগু গ্রহের এলিয়েনদের ডেভেলপমেন্ট করা রোবট না। এই যুগে, মানে ৩০৫৬ এ, মানবজাতি AGI এর উপর গবেষণা এবং এর ডেভেলপমেন্টে অনেকটাই সফল হয়েছে। আরো হবে।

এদিকে নাডুসের ঐ অত্যাধুনিক বাড়িটা এলিয়েনদের প্রযুক্তিতে গড়ে তোলা হয়েছে। হিঞ্চিগু গ্রহের প্রাণীগুলোর প্রযুক্তি মানব প্রযুক্তির তুলনায় অনেক অনেক এগিয়ে আছে। তাদের টেলিপোর্টেশনে সক্ষম এমন যন্ত্রপাতিও আছে। তাও আবার এডভান্সড লেভেলের। তাদের বিজ্ঞান অনেক উন্নত।

যাহোক, নাডুসের মৃত্যু হয়েছে, এই খবরটি এলিয়েন দুটো কোনো না কোনোভাবে পেয়ে গেছে। খবরটা তাদের বসের কাছে পৌঁছল। বস বলল অতিবিলম্বে পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে। ধুর ছাই! নাডুসকে দিয়ে কাজের কাজ তো কিছুই হলো না। আর থেকে কি লাভ!
অন্নট আর এন্নট ফুড়ুৎ করে টেলিপোর্টেশন উপায়ে নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে হিঞ্চিগু গ্রহে চলে যায়। এবং পরবর্তীতে তারা পৃথিবীর সঙ্গে সকল কমিউনিকেশন সিস্টেম ডিক্লাইন এবং ধ্বংস করে দেয়। ফলে পৃথিবীবাসী ভবিষ্যতে কোনোদিন তাদের আর ট্র‍্যাক করতে পারবে না।

অন্যদিকে নাডুসের মৃত্যুর প্রায় আধা ঘন্টা পর সানি, মিথিলা ও অন্য ১২ জনের জ্ঞান ফিরে আসে। তারা প্রত্যেকেই রীতিমতো অবাক হয়ে হিমশিম খায়। তারা এখানে কেন, কিভাবে, কখন এবং কতক্ষণ ধরে ছিল, সে ব্যাপারে কিছুই জানে না। জানার কথাও না। শেষ বার ট্র‍্যাঙ্কোয়ালাইজার স্যুটে অজ্ঞান হওয়ার পর থেকে আর কিছুই মনে নেই তাদের। সবার মধ্যে আলাপ আলোচনা হলো।
সানি আর মিথিলা বাদে বাকিরা এখানে ১ মাস ধরে বন্দী ছিল, এবং তারা সেটা জানে না। তাই স্বাভাবিকভাবেই যে যার পূর্বের স্মৃতি অনুযায়ী যতটুকু মনে করতে পেরেছে, এবং যেখানে যাওয়ার কথা ছিল বা যা করার ছিল, যাইহোক না কেন, সবাই যার যার মতো আপন রাস্তা ধরেছে।

সানি এবং মিথিলা বাড়ির ভিতর ত্যাগ করে উঠুনে চলে আসে। কিন্তু তারা রাস্তা চিনে না। কি থেকে কি হয়ে গেল বুঝতে পারছে না। কোথায় আছে তা জানা নেই। একটা মুশকিলে পড়ল তারা। সানি থাকতে চিন্তা কি?

সানির গাড়িতে একটা জিপিএস মডিউল লাগানো আছে। সেটা ট্র‍্যাক করে মোবাইলে রাস্তা মনিটরিং করে গাড়ির কাছে পৌঁছায় তারা। যতটুকু মনে আছে, তারা উইটাতে যাচ্ছিল। তাই এখন আপাতত কি থেকে কি হয়ে গেল চিন্তা না করে উইকির দিকে পুনরায় রওনা দেয়। এদিকে সানি আর মিথিলার বাড়ি থেকে অনেকগুলো কল এসেছে, এখনো আসছে। মোবাইল সাইলেন্ট, তাই টের পায়নি। বাড়ির লোকেরা হয়তো মহা দুশ্চিন্তায় আছে!

সানি আর মিথিলার আজকের ডেইট জানা নেই। তারা জানে আজকে ২৩ এপ্রিল।

যাহোক, সবকিছু উলট পালট হয়ে গেছে। কিছু ব্যাতিক্রম ছাড়া সানি আর মিথিলা উইকিতে কাটানো সময় খুব ইনজয় করল। হাতে হাত রাখা হাটা সহ আরো অনেকগুলো রোমাঞ্চকর মুহূর্ত অনুভব করল এই প্রেমিক প্রেমিকা। বাড়িতে যোগাযোগ হলো। অবশ্য কল ধরেনি কেন এ প্রশ্নের জবাবে নানা অজুহাত দেখিয়ে মিথ্যে বলেছে বাড়িতে। সত্যিটা বললে বাড়ির লোকেরা আরো বেশি চিন্তা করতো।

শেষ পর্যন্ত ট্রাভেলটা শেষ হলো। আজকে ২৯ এপ্রিল। আজকেই ট্রাভেল শেষ। অবশেষে বাড়িতে গিয়ে আবার যে যার মতো স্বাভাবিক জীবন যাপন শুরু করেছে তারা। এবং একটা দিন তারা ঐ আশ্চর্য ঘটনার কথা ভুলে যাবে। মনে পড়লেও পড়তে পারে, কে জানে!

কিন্তু প্রফেসর নাডুসের কূটনীতির রহস্য এখনো অসমাধিত রয়ে গেল। হিঞ্চিগু গ্রহের প্রাণীগুলোর সঙ্গে তার যোগাযোগ কি করে হলো, তারা কেন ব্রেইন নিতে চাইল, QBTE পরীক্ষা ইত্যাদী আরো অনেক কিছু লুকায়িত বিষয় সম্পর্কে মানবজাতি হয়তো কোনোদিনও জানতে পারবে না। মানবজাতি জানতে পারবে না ঐ গোপন চুক্তিটার কথা। জানতে পারবে না হিঞ্চিগু গ্রহ ও ঐ গ্রহের প্রাণীদের সম্পর্কে। এমনকি জানতে পারবে না এই মোস্ট ওয়ান্টেড ক্রিমিনাল এবং ছদ্মবেশী জীববিজ্ঞানী নাডুসের আসল পরিচয়।

প্রফেসর নাডুস যত বড় অমানবিক এবং নিষ্ঠুর মানুষই হোক না কেন, তার জন্য রেস্ট ইন পিস্ ম্যাসেজ রইল।
মানুষের মধ্যে মানবিকতার বোধন বাঁশি বেজে উঠুক। গুড লাক!

(সমাপ্ত)

Exit mobile version