Site icon বিজ্ঞান ব্লগ

ফটোগ্রাফির অন্যতম উপকরণ: লেন্স এর যত কার্যকারিতা

পূর্বের ফটোগ্রাফি বিষয়ক লেখাটির মাধ্যমে নিশ্চয়ই সুন্দর ছবির পেছনের কথাগুলো কিছুটা হলেও জানতে পেরেছেন, এবার বলবো লেন্স এর কথা। অবশ্যই সত্য যে, ভালো ফটোগ্রাফির পুরো কৃতিত্ব ক্যামেরার নয়। ফটোগ্রাফারদের হতে হয় প্রতিভাবান, পরিশ্রমী ও ধৈর্যশীল। তবে ধীরে ধীরে যখন আপনার ছবি তোলার দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে আপনি অবশ্যই চাইবেন যাতে আপনার তোলা ছবি আরো সমৃদ্ধ হোক। এজন্য ছবি তোলার সরঞ্জাম এর পেছনে কিছুটা বিনিয়োগ করে আপনার দক্ষতার পরিবর্তন আনতে হবে। ক্যামেরার সাথে বিভিন্ন লেন্সের সংমিশ্রণ আর আপনার অভিজ্ঞতায় ছবি অনেক বেশি জীবন্ত হয়ে উঠবে।

লেন্স কী?

 এক ধরণের সমসত্ব আলোকীয় যন্ত্র, যার মাধ্যমে আলোর প্রতিসরণ ঘটে। এক অথবা উভয় আবরণ বিশিষ্ট লেন্স আলো সংগ্রহ করে এবং পরিবর্তন করে অন্যদিকে আলোর প্রতিফলন ঘটায়।

ক্যামেরা লেন্স হলো একটি অপটিক্যাল লেন্স বা লেন্সের সমাবেশ যা ক্যামেরার বডি ও মেকানিজম এর সাথে সংযোগ ঘটিয়ে কোন বস্তুর চিত্র তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। ফটোগ্রাফিতে এটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এবং আপনি কি ধরনের ছবি তুলতে চাচ্ছেন সেটা এর সাথে অনেক বেশি সম্পৃক্ত। ক্যামেরা লেন্সের মূল কাজ হলো নির্বাচিত বস্তু থেকে আলো সংগ্রহের মাধ্যমে সেগুলো একটি কেন্দ্রবিন্দুতে একত্র করা।

লেন্সের সাথে ফোকাল লেন্থ ব্যাপারটি বেশ ভালোভাবেই জড়িত। বিষয়বস্তুকে ফোকাসে রাখলে লেন্স এবং ইমেজ সেন্সর এর মধ্যবর্তী যে দূরত্ব সেটাই হলো ফোকাল লেন্থ। এ দূরত্ব সাধারণত পরিমাপ করা হয় মিলিমিটার (mm) এককে।

ফোকাল লেন্থ ও ছবি তোলার বিষয়বস্তুর ওপর নির্ভর করে লেন্সকে বিভিন্ন ভাবে ভাগ করা যায়:

১. স্ট্যান্ডার্ড লেন্স:

যেসব লেন্সে সাধারণত মিড রেঞ্জের (35mm-85mm) ফোকাল লেন্থ থাকে সেগুলোই স্ট্যান্ডার্ড লেন্স। অন্যসব লেন্সের তুলনায় এই লেন্সের ছবি আরো প্রাকৃতিক লাগে।বিভিন্ন ডকুমেন্টারি প্রজেক্ট যেমনঃ স্ট্রিট, পোর্ট্রেইট এবং ট্রাভেল ফটোগ্রাফিতে এটি ব্যবহৃত হয়।

২. প্রাইম লেন্স:

  প্রাইম লেন্স 50 mm ফোকাল লেন্থ বিশিষ্ট। মানুষের দৃষ্টিসীমা 50 মিলিমিটার এর কাছাকাছি হওয়ায় প্রাইম লেন্সের ছবি খুব বেশি জীবন্ত মনে হয়। পেশাদার ফটোগ্রাফারদের কাছে এটা ‘Nifty-Fifty‘ নামেও পরিচিত। প্রাইম লেন্সএ সর্বাধিক অ্যাপারচার থাকে ফলে শাটার খোলার সময় বেশি আলো প্রবেশে আইএসও (ISO) বৃদ্ধি না করে বা শাটার এর গতি না কমিয়ে প্রয়োজনীয় এক্সপোজারটি নেওয়া যায়।

৩. টেলিফটো লেন্স:

টেলিফটো লেন্স থাকে দীর্ঘতর ফোকাল লেন্থ যা 85 mm থেকে শুরু হয়। এগুলো অন্যসব লেন্সএর চেয়ে ভারী ও বড় হয়। শর্ট টেলিফটো (85mm-135mm) লেন্স সাধারণত পোর্ট্রেট, স্ট্রিট, ফ্যাশন ফটোগ্রাফিতে ব্যবহৃত হয়। মিডিয়াম টেলিফটো (135mm+) লেন্সটি স্পোর্ট, ওয়াইল্ড লাইফ, অনুসন্ধানমূলক সাংবাদিকতা ও একশন ফটোগ্রাফিতে ব্যবহৃত হয়। এদের ফোকাল লেন্থ দীর্ঘ হওয়ায় ডেপথ্ খুব কম ।

৪. ওয়াইড অ্যাঙ্গেল লেন্স:

 সাধারণত (14mm- 35mm) ফোকাল লেন্থ বিশিষ্ট হয়। এসব লেন্সের সাহায্যে বৃহত্তর গভীরতার ক্ষেত্র (Fields of greater depth) তৈরি করা হয়। বেশিরভাগ তীক্ষ্ণ দৃশ্যধারণে এ লেন্সটি খুবই উপকারী। এদের ফোকাল লেন্থ কম হওয়ায় আমাদের চোখে চিত্রগুলো কিছুটা বিকৃত মনে হতে পারে। ওয়াইড অ্যাঙ্গেল সাধারণত ফটোসাংবাদিকতা, ল্যান্ডস্কেপ, আর্কিটেকচার বিষয়ক ফটোগ্রাফিতে ব্যবহৃত হয়।

এগুলো পড়তে ভুলবেন না !!! 

ফটোগ্রাফি সম্পর্কিত বৈজ্ঞানিক খুঁটিনাটিঃ সুন্দর ছবির ভেতরের কথা

HIV ভাইরাসের যাত্রাঃ শেষ হয়েও হইলো না শেষ

ডিস্লেক্সিয়া : শিখতে না পারা যখন লার্নিং ডিজঅর্ডার!

৫. ম্যাক্রো লেন্স: 

 এর ফোকাল লেন্থ (35 mm-200 mm) এর মধ্যে থাকে। ম্যাক্রো লেন্সের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ও পরিচ্ছন্ন ছবি তোলার বিশেষ ক্ষমতা থাকে। বিভিন্ন প্রাকৃতিক ছবি এবং বিশেষ ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রোডাক্ট ও চারুকলার ছবি তোলায় ম্যাক্রো লেন্সটি ব্যবহৃত হয়।

৬. ফিশআই লেন্স:

ফিশআই  হলো অতি প্রশস্ত ওয়াইড অ্যাঙ্গেল লেন্স যার ফোকাল লেন্থ (4mm – 14mm) এর মধ্যে থাকে।  নামটির পেছনের মজার ব্যাপার হলো, মাছ যেমন তার লেজ দেখতে পায় ফিশআই লেন্সও তেমনি 180° কোণ পর্যন্ত দেখতে পায়। এই লেন্সের সাহায্যে অ্যাবস্ট্রাক্ট, সৃজনশীল এবং বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক ও স্থাপত্য বিষয়ক ছবি তোলা হয়।

বিভিন্ন লেন্সের মধ্যে তুলনামূলক বৈশিষ্ট্য:

আমরা যদি প্রাইম ও জুম লেন্সের মধ্যে তুলনা করি, প্রাইম লেন্সে একটি ফিক্সড ফোকাল লেন্থ দেখা যায় যেখানে জুম লেন্সে একটি নির্দিষ্ট পরিসরে ফোকাল লেন্থ কমানো বাড়ানো যায়। আবার প্রাইম লেন্সে অপটিক্যাল কোয়ালিটি জুম লেন্স এর চেয়ে উন্নত। তবে জুম লেন্স বেশি নমনীয় (flexible)।

লেন্সের স্পিড নির্ধারিত হয় এর অ্যাপারচার দ্বারা। যেগুলো দ্রুততর স্পিড বিশিষ্ট লেন্স তাদের অ্যাপারচার অনেক প্রশস্ত এবং তারা মৃদু আলোতে ভালো পারফরম্যান্স দেয়। ফটোগ্রাফিতে ভালো ফলাফল পেতে হলে অবশ্যই দ্রুততর স্পিড বিশিষ্ট লেন্সটি আবশ্যক।

অবশেষে বলবো, ভালো ফটোগ্রাফি করতে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে না পরে লেন্স সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন তাহলেই বুঝতে পারবেন কোনটি আপনার জন্য উপযুক্ত। আশা করছি আপনার সৃজনশীলতা ও ক্যামেরার যুগলবন্দীতে সবাইকে উপহার দিতে পারবেন অসাধারণ আলোকচিত্র।

Exit mobile version