বিজ্ঞান ব্লগ

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে করোনা ভাইরাস (পর্ব ১)

‘করোনা’ একটি আতংকের নাম। এ ভাইরাসটি মার্স গোত্রীয় ভাইরাস যেটি পরবর্তীতে মিউটেশন ঘটিয়ে আরও শক্তিশালী হয়েছে। বর্তমানে উন্নত দেশ যত আছে (চায়না কিছুটা পেরেছে) তারাও করোনাকে কাবু করতে পারছেনা। অথচ আমাদের দেশে একদম ভিন্ন চিত্র।

একেকজনের করোনার প্রতি ধারণঅ একেকরকম। আসলে করোনা ভাইরাস কতটা মারাত্মক? বিভিন্ন সোস্যাল মিডিয়াতে করোনাকে নিয়ে সঠিক/ভুল ইত্যাদি বিভিন্ন তথ্যের ছড়াছড়ি, যা মানুষকে বিভ্রান্ত করে তুলেছে।
কোনটা সঠিক এবং কোনটা ভুল মানুষ এখন তা বুঝতে পারছেনা। আজ আমি আলোচনা করবো করোনা আসলে কতটা মারাত্মক এবং আমাদের দেশের জন্য কি প্রভাব ফেলতে পারে।

আলোচনার শুরুতে বলে নিচ্ছি আমি কোন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার নই, আমি নির্ভরযোগ্য বিভিন্ন সোর্স থেকে (যা অবশ্যই বিশ্বাসযোগ্য) তথ্যগুলো সাজিয়ে তুলে ধরেছি। তো, আল্লাহ্’র নামে শুরু করা যাক।

করোনার প্রকৃত উৎস উহান, চায়না হলেও বর্তমানে এটি একটি মহামারীতে পরিণত হয়েছে। মহামারী আসলে কি? মহামারী (Epidemic)হলো এমন রোগ যেটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে অল্প সময়ের মধ্যেই।
যখন এই মহামারী (Epidemic) পৃথিবীর বিভিন্ন বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে তখন সেটাকে বলে প্যানডেমিক (Pandemic)। করোনা বর্তমানে প্যানডেমিক (Pandemic) পর্যায়ে রয়েছে। এখন প্রশ্ন আসে প্যানডেমিক কতটা ভয়াবহ?

এটা বুঝতে হলে একটা সাধারণ উদাহরণের সাহায্য নিই:

করোনা ভাইরাসের সকল আপডেট

ধরুন, বড় একটা পুকুর। কিছুদিন পর পুকুরে একটি কচুরিপানা উদ্ভিদের জন্ম হলো। এখানে শর্ত হলো, কচুরিপানা প্রতিদন তার সংখ্যা দ্বিগুন করতে পারে। সুতরাং, প্রথমদিন কচুরিপানার সংখ্যা ১টি হলে, দ্বিতীয়দিন হবে এর দ্বিগুন অর্থ্যাৎ ২টি। ৩য় দিন? ২ এর দ্বিগুন অর্থ্যাৎ ৪ টি।
৪র্থ দিন? ৪ এর দ্বিগুন, অর্থ্যাৎ ৮টি। এভাবে চলতে থাকবে। সংখ্যাটি কিন্তু নেহাতই কম। আচ্ছা যাইহোক, ধরা যাক, পুকুরটি সম্পূর্ণ কচুরিপানা দিয়ে ভর্তি হতে যদি ৬০ দিন লাগে তাহলে এখন বলুন তো, পুকুরটির অর্ধেক ভর্তি হতে কয়দিন লাগে? কি মনে হয়? ৩০ দিন?

নাহ্, সঠিক উত্তরটি হবে ৫৯ দিন! আমি আগেই বলেছি যতটা সংখ্যা আছে তার দ্বিগুন সংখ্যক, সুতরাং যদি পুকুরের অর্ধেক সংখ্যক কচুরি পানা থাকে তাহলে পুরোটি ভর্তি করতে ১ দিন লাগবে মাত্র।
এধরণের সংখ্যাবৃদ্ধিকে পরিসংখ্যান এর ভাষায় বলে, এক্সপোনেনশিয়াল গ্রোথ (Exponential Growth)। এখন বুঝতে পেরেছেন? প্যান্ডেমিক কতটা ভয়াবহ হতে পারে?

করোনার ক্ষেত্রেও বিষয়টি একই। প্রথমে এটা ধীরে ধীরে ছড়াতে শুরু করবে, তখন কিন্তু প্রভাব তেমন বুঝা যাবেনা। ধরুন, ১ম মাসে ১০ জন লোক আক্রান্ত হয়েছে। ২য় মাসে ১০০০ জন আক্রান্ত হয়েছে।

এরপর? এরকম চলতে চলতে এতটাই সংখ্যা বাড়বে যে তখন, ১ দিনেই লক্ষ লক্ষ লোককে আক্রান্ত করে ফেলবে। এখন বুঝতে পেরেছেন এত উন্নতদেশগুলো করোনা নিয়ে এত চিন্তিত কেনো?

এখন বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আসি। আমাদের দেশ পৃথিবীর সবথেকে ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। এছাড়া এদেশে নেই কোন ভালো চিকিৎসা, বাসস্থান, শিক্ষা ইত্যাদি। করোনা ভাইরাসের বিস্তারের সবথেকে আদর্শ দেশগুলোর মধ্যে একটি হলো বাংলাদেশ।

শক্তিশালী চিকিৎসা ব্যবস্থা থাকার পরও, যেখান অন্যদেশগুলো বেসামাল হয়ে পড়েছে সেখানে আমাদের দেশ করোনা প্রতিরোধ করতে পারবে – এটা অনেকটা স্বপ্নের মত। সুতরাং আমাদের সবার উচিত করোনা যাতে না ছড়ায়, যদি ছড়ানো শুরু করে, তাহলে কিন্তু আমাদের পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে। কিন্তু আমরা তা করছি?

প্রতিনিয়ত নিউজে দেখছি, বিদেশ ফেরত নবাবজাদারা (প্রবাসীরা) দেশে এসে একদম খোলাখুলি ভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এরকম ভয়ংকর পরস্থিতিতে তাদের কোন চিন্তাই নেই।

এরা ছাড়াও, অনেক মানুষই সচেতন নয়। তারা বিষয়টিকে গুরুত্বই দিচ্ছেনা। করোনা সম্পর্কে সঠিক ধারনা আছে মাত্র অল্পকিছু সংখ্যক মানুষের। তো বুঝতেই পারছেন, বাংলাদেশ কতটা বেশি ঝুঁকির মধ্যে আছে?
আমি, আপনারা যারা ইয়ং জেনারেশন আছেন, মনে করছেন আপনাদের কিছুই হবেনা, ভুল ভাবছেন!

এটা ঠিক যে, করোনাতে কম বয়সীদের মৃত্যুর হার কম, কিন্তু না মরলেও আপনাকে যথেষ্ট নাকানি চুবানি খাইয়ে ছাড়বে এ করোনা ভাইরাস। আপনি ছাড়া, আপনার বাসায় যেসকল বয়স্করা থাকে (বাবা, মা, দাদা, দাদী ইত্যাদি) তাদের কি হবে?

করোনা ভাইরাসের সকল আপডেট

আপনার এরকম ডোন্ট কেয়ার মনোভাবের ফলে, আপনি নিজের অজান্তেই করোনা ভাইরাস ছড়াচ্ছেন, যার ফলে প্রাণ হারাচ্ছেন বয়স্করা। তাদের মৃত্যুর দায়ভার আপনি এড়াতে পারবেন?
[চলবে]

@Abdullah AL Araf


করোনাভাইরাস প্রসঙ্গ-

১।রক্তের গ্রুপ ‘A’ হলে করোনা ঝুঁকি বেশি, ‘O’ হলে সবচেয়ে কম – বলছে চীনা গবেষণা

২।লবণ মেশানো গরম পানি কি করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ করে ?-না

৩।করোনা যেভাবে আপনার শরীরের নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছে !(ইন্টারেক্টিভ ডিজাইনসহ)


৪।ফ্যাক্ট চেক: (মিথ্যা) এক টুকরা লেবুতেই ধ্বংস হবে করোনাভাইরাস

৫।আমেরিকা বা চীনের ষড়যন্ত্র নয়।করোনাভাইরাস এসেছে প্রকৃতি থেকেই-গবেষণা

Exit mobile version