টাইটেল দেখে অনেকেই ভাবতে বসেছেন প্রজাপতির মতো শান্ত-শিষ্ট একটি প্রাণি আবার কি দোষ করলো! না প্রজাপতি মহাশয় কিছু করেননি৷ কিন্তু আমাদের চারপাশে ঘটে যাওয়া ছোট ছোট ঘটনাগুলিকে এক সুতোয় বাধতে এবং সুন্দর ভাবে বর্ণনা করতে প্রজাপতি মহাশয়ের এই ইফেক্টের আগমণ। আজকে মজায় মজায় বাটারফ্লাই ইফেক্ট সমন্ধে জানবো। ব্লগের পুরোটা জুড়ে থাকলে নতুন কিছু শিখবেন বলেই আশা করি৷
বাটারফ্লাই ইফেক্ট আসলে কী?
ইতিহাস কমই বলবো। তাও যে এটা সবার আগে নিয়ে আসছে তার নাম না বললেই নয়। এডওয়ার্ড লরেঞ্জ সর্বপ্রথম এই ইফেক্টটি সমন্ধে বলেন৷ ১৯৬১ সালে আবহাওয়া সম্পর্কিত একটি কম্পিউটার প্রোগ্রাম লেখার সময় তিনি যখন কমান্ডে ০.৫০৬১২ এর বদলে ০.৫০৬ লেখেন, তখন সম্পূর্ণ ফলাফল তাই পরিবর্তন হয়ে যায়।আবহাওয়া রিপোর্ট আগে যা এসেছিল এবার সম্পূর্ণ তার ভিন্ন রিপোর্ট আসলো ৷ তিনি এই বিষয় টা থেকেই পরবর্তিতে ১৯৬৩ সালে বাটারফ্লাই ইফেক্টের ধারণা টা নিয়ে আসেন।
তো এত গেলো পিছনের কথা। এখন আসি আসলে জিনিস টা কী সেটা নিয়ে। ধরুন আপনি এবং আপনার টিম কে বলা হল যে আপনাদের অতীতে পাঠানো হবে৷ কিন্তু শর্ত হল আপনাদের চলার জন্য যে রাস্তা থাকবে সেটা বাদে অন্য কোন কিছু স্পর্শ করা যাবে না। আপনারা গেলেন এবং কোন কিছু স্পর্শ না করেই ফিরে এলেন৷ কিন্তু এসে দেখলেন পুরা বিশ্ব টাই পরিবর্তন হয়ে গেছে৷ এ যেন আজন এক দুনিয়া! আপনার ভালোবাসার মানুষগুলো আর নেই। চারিদিকে নির্জনতায় ছেয়ে গেছে!
আপনার পরিচিত জায়গাগুলোও যেন পাল্টে গেছে৷ যেন এক যুদ্ধ ক্ষেত্রে দাঁড়িয়ে আছেন আপনি! কিন্তু কোনো যোদ্ধা নেই! কারণ টা কী? আপনি তো কোনো কিছুই স্পর্শ করেন নি। তাহলে সবকিছু পরিবর্তন হলো কীভাবে? তখনি আপনি দেখলেন আপনার পায়ে একটা প্রজাপতি লেগে আছে।। তাতে কি আসে যায়?
মজার বিষয় হল এই প্রজাপতি তাই পুরা বিশ্বটাকে পরিবর্তন করে দিয়েছে৷ কেনো? কারণ এটার ডানা না ঝাপটানোর কারনেই হয়তো কোন একটা ঝড় শুরু হতে পারেনি। তার ইফেক্টই এটা। কি অবিশ্বাস্য ঠেকছে? তাহলে আরো সহজ করে বলি। কিভাবে একটা ছোটো ঘটনাও অনেক বড় কিছু করতে পারে।
ধরুন আপনি আমার এই লেখাটি এখন পড়ছেন, আপনার সময় নষ্ট হচ্ছে। ধরুন আপনি এই সময়ে লেখাটা না পড়ে আপনার বই এরই কোনো একটি টপিক পড়তে পারতেন। কিন্তু আপনি আপাতত সেটা করছেন না। দূর্ভাগ্যবশত ধরুন সেই টপিক থেকেই একটা প্রশ্ন আপনার ভর্তি পরীক্ষায় আসলো৷ আর আপনি সেটা পারলেন না। আর সেই এক মার্ক এর জন্যই আপনার উক্ত ভার্সিটিতে চান্স হল না এবং আপনি ডিপ্রেশনে চলে গেলেন এবং সুইসাইড করলেন ৷ আপনার গার্লফ্রেন্ড এটা মেনে নিতে পারলো না এবং সে পাগল হয়ে গেল। তার বাবা তার মেয়ের কষ্ট সহ্য করতে না পেরে শিক্ষা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে আন্দোলনে চলে গেলেন৷ এই সুযোগে কিছু মহল অপতৎপরতা চালালো।
এগুলো পড়তে ভুলবেন না !!! মিথ্যা শনাক্তকরনের কিছু পদ্ধতি : দেহের ভঙ্গিমা ও প্রতিক্রিয়া ডিপ্রেশনঃ একটি মানসিক ব্যাধি; কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা (২য় পর্ব) |
দেশে বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়ল। এরই মধ্যে মারামারিতে ভুলে পাকিস্তানের এম্বাসেডর মারা গেলেন৷ পাকিস্তান বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চাইল। ভারত বাধ সাধল। ২ দেশে চরম উত্তেজনা। এমন অবস্থায় চীন পাকিস্তানের পক্ষ নিল৷ আমেরিকা ভারতের। মাঝখান থেকে রাশিয়া ও যোগ দিল৷ শুরু হয়ে গেল তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ। এখন পিছনে ফিরে আসুন, সবকিছু কেন হল? শুধুমাত্র আপনি এই পোস্ট টা পড়ছেন বলে ৷
আচ্ছা অনেক মজা হলো। এবার বাটারফ্লাই ইফেক্ট সমন্ধীয় কিছু সিনেমা নিয়ে কথা বলা যাক ৷ সবার আগে যেই সিনেমাটার নাম না বললেই নয় সেটা হচ্ছে ‘ The Butterfly Effect ‘ নামক সিনেমাটি। ২০০৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমাটি এই বাটারফ্লাই ইফেক্ট কনসেপ্টের ওপরই নির্মিত। এছাড়াও ২০০৬ ও ২০০৯ সালে ‘ The Butterfly Effect ‘ নামক সিনেমাটির দুইটি সিকুয়েল মুক্তি পায়। কিন্তু সেগুলো প্রথমটার মত এতটা জনপ্রিয় হতে পারেনি।
এছাড়াও বাটারফ্লাই ইফেক্ট সমন্ধে সবচেয়ে সুন্দর ধারণা পাবেন ব্রাড পিট এবং কেট ব্লানচেট অভিনীত‘The Curious Case of Benjamin Button’ মুভিটিতে। যদিও এই মুভির কনসেপ্ট সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়ের ওপর। কিন্তু এর ছোট্ট একটি সিনে বাটারফ্লাই ইফেক্ট কে সবচেয়ে সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়। চাইলে এই মুভিটি দেখতে পারেন। একদমই হতাশ হবেন না৷
তাহলে আজ বিদায় নিলাম। আর এখন থেকে কোনো কিছু করার আগে ১০০ বার ভাববেন। অবশ্য ভাবলেও লাভ নেই। আপনার ভাবার কারনেই আবার লেগে যেতে পারে আরেকটি বিশ্বযুদ্ধ।