বিজ্ঞান ব্লগ

বিগ ব্যাং এর মাধ্যমেই কী মহাবিশ্বের সূচনা হয়েছিল?

বিগ ব্যাং থিওরি ঈশপের রূপকথার মতোই সকলের কাছে পরিচিত ও জনপ্রিয়। বিগ ব্যাং থিওরি অনুযায়ী, বহু বছর আগে আমাদের এই মহাবিশ্ব একক, অসীম ছোট ও অনেক বেশি ঘনত্বের একটি বিন্দু ছিলো।

তারপর? মহাবিস্ফোরণ! এক সেকেন্ডের এক ট্রিলিয়ন ভাগের এক ভাগ সময়ের মধ্যে এই বিস্ফোরণ হয় এবং আলোর গতির চেয়ে দ্রুত প্রসারিত হতে থাকে মহাবিশ্বের আজকের অবস্থায় আসতে। তবে জনপ্রিয় এই মহাজাগতিক গল্পটির বোঝাপড়া কিন্তু পুরোপুরি সত্য নয়। হতে পারে সেখানে কোনো একক বিন্দু ছিলো না?

হতে পারে মহাবিশ্বের এই সম্প্রসারণ বিগ ব্যাংয়ের আগেই শুরু হয়েছিল এবং তা শামুক গতিতে? হ্যাঁ, বিগ ব্যাংয়ের আগেই সম্প্রসারণ শুরু হয়েছিল। এর মানে কী বিগ ব্যাং মহাবিশ্বের সূচনা নয়?
অধিকাংশ বিজ্ঞানী বিগ ব্যাং তত্ত্বকে সমর্থন করেন এবং খুব সম্ভবত বিগ ব্যাং সংঘটিত হয়েছিল। সর্বপ্রথম বিগ ব্যাংয়ের ধারণা দেন এডইউন হাবল। যদিও তার আগে জর্জেস লেমেট্রে নামক এক জাজক ও জ্যোতির্বিজ্ঞানী বিগ ব্যাং তত্ত্ব উপস্থাপন করেন। এই তত্ত্ব সকলের কাছে আরও গ্রহণযোগ্য হয় ১৯২০ সালে যখন বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারেন যে আমাদের দূরবর্তী ছায়াপথগুলো কাছের ছায়াপথের চেয়ে দ্রুত সরে যাচ্ছে।

বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারেন ছায়াপথগুলো সরে যাচ্ছে না বরং প্রসারিত হচ্ছে। পুরো মহাবিশ্বই প্রসারিত হচ্ছে। আর যদি প্রসারিতই হয় তাহলে কোনো এক সময় তা অবশ্যই সংকুচিত ছিলো! আরো কিছু পরীক্ষা বিগ ব্যাং তত্ত্বকে প্রমাণ করে যেমন- বিগ ব্যাংয়ের সময়টাতে মহাবিশ্ব যতটা সংকুচিত ও ঘন ছিল তেমন এক ধরনের প্লাজমা তৈরির মাধ্যমে এবং সেই প্লাজমায় যে কণাগুলো ছিলো তা আমাদের পরিচিত কণা। কারণ আমরা জানি যে সেখানে কোন ধরনের কণা থাকার কথা ছিল যা বর্তমান মহাবিশ্বে রয়েছে।
তবে এর মাঝেও কিছু জিনিস আছে যা এই তত্ত্বের ধাঁধাটা পূরণ করতে পারে না।
মহাজাগতিক তরঙ্গের পটভূমি থেকে প্রাপ্ত তথ্য প্রমাণ করে এই মহাবিশ্ব সমতল। কিন্তু বিগ ব্যাং তত্ত্ব অনুযায়ী মহাবিশ্বকে কিছুটা বাঁকা হওয়া উচিৎ।
এছাড়া মহাবিশ্বের সব জায়গায় তাপমাত্রা সমান মনে হলেও এমন কিছু অংশও রয়েছে যেগুলো এতো দূরবর্তী যে সেখানে আদৌ তাপমাত্রা রয়েছে কিনা তা নিয়ে বিজ্ঞানীরা সন্দিহান। সবশেষে যদি বিগ ব্যাংই মহাবিশ্বের সূচনা হয় তাহলে বিস্ফোরণের পরে চৌম্বকীয় মনোপল নামক অতি উচ্চ শক্তির কণা সৃষ্টি হওয়ার কথা যার অস্তিত্ব আজও পাওয়া যায়নি।
তবে মহাবিশ্ব যদি বিগ ব্যাংয়ের মাধ্যমে সৃষ্টি না হয় তাহলে আসলে কী ঘটেছিল?
ইনফ্লেশন বা স্ফীতি তত্ত্ব নামক আরেকটি তত্ত্ব অনুসারে, মহাবিশ্ব মহাকাশের শূণ্য স্থানের মধ্যে ওঠানামা থেকেই সৃষ্টি হয়েছিল। ইনফ্লেশন তত্ত্বটি নির্ভর করে ভ্যাকুয়াম বা মহাবিশ্বের শূন্য স্থানের শক্তির উপর। ইনফ্লেশন তত্ত্ব দ্বারা যখন কোনো বস্তু এমনকি বিকিরণের অস্তিত্ব ছিল না তখনও যে মহাবিশ্বের শূন্যস্থান আসলে শক্তিতে ভরা ছিল তা কোয়ান্টাম কণার মাধ্যমে অবিচ্ছিন্নভবে প্রমাণ করে।

মহাকর্ষীয় তরঙ্গ-অস্তিত্ব-বিস্তারিত জানতে চাও ,ক্লিক করো এখানে

ইনফ্লেশন তত্ত্ব বিগ ব্যাং থিওরির মূলের অনেক সমস্যার সমাধান করে। ইনফ্লেশন তত্ত্ব সমতল মহাবিশ্বের পূর্বাভাস দেয় এবং এটি যে গতিবেগে ঘটেছিল তা মহাবিশ্বের সব স্থানের তাপমাত্রা যে একই তা প্রমাণ করে। কারণ ইনফ্লেশন তত্ত্ব দ্বারা মহাবিশ্বের প্রতিটি পয়েন্টের মধ্যে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়েছিল। ইনফ্লেশন তত্ত্বআরও বলে যে চৌম্বকীয় মনোপোলগুলি প্রসারণের আগেই থাকতে পারে, তবে তাদের ঘনত্ব পরে অন্বেষণযোগ্য স্তরে নেমে যেত।
এছাড়াও, শূণ্যস্থানের শক্তির ঘনত্বের সেই ওঠানামাগুলি সুন্দরভাবে ব্যাখ্যা করে যে কীভাবে তারা, গ্যালাক্সি এবং গ্যালাক্সি ক্লাস্টার তৈরি হয়েছিল। যদি এটি অতিরিক্ত শক্তির এলোমেলো ক্লাম্প না হয় তবে মানব সমাজ কখনই অস্তিত্ব লাভ করতে পারত না।
পরিশেষে, বিগ ব্যাং সম্পর্কে আপনার জ্ঞান যদি এককথায় শুরু হয় তবে সেই পুরানো কল্পকাহিনীটি সংশোধন করার সময় হয়তো এখনই। এক্ষেত্রে হয়তো ঈশপের রূপকথার গল্পটি এমন হবেঃ অনেক অনেক বছর আগে, পদার্থ বা বিকিরণের অস্তিত্বের আগে, শূণ্যস্থানের মধ্যে আবদ্ধ শক্তি চোখের পলকের চেয়ে কম সময়ে ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন গুন প্রসারিত হয়েছিল।

শীঘ্রই, সেই শক্তি পদার্থ এবং বিকিরণে পরিণত হয়েছিল, যা শেষ পর্যন্ত তারা এবং ছায়াপথগুলিতে গিয়ে মিলিত হয়েছিল এবং —বাকিটি ইতিহাস!
Exit mobile version