Site icon বিজ্ঞান ব্লগ

বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীঃ শেষ মানুষ

২৪২০ সাল। কেন্দ্রীয় পরিচালনা অধিদপ্তরের হলরুমে কিটাকদের গুরুত্বপূর্ণ মিটিং চলছে। কিটাকদের প্রধান জিকের ভাষণে তিনি ঘোষণা দিলেন যেন পৃথিবীর শেষ মানুষটিকে চিরতরে শেষ করে দেওয়া হয়। তিনি আর অপেক্ষা করতে পারছেন না। বারবার কেন ওই দুর্বল মানুষটি কিটাকদের সাথে যুদ্ধে জিতে যাচ্ছে?

 

বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেও পৃথিবীর শেষ মানুষটিকে হত্যা করা সম্ভব হয়নি। ওই মানুষটি প্রাচীন মানুষদের মতো চালাক এবং ধুরন্ধর। সুযোগ পেলে কিটাকদের প্রধান মহামান্য জিককেও কয়েকবার বিক্রি করে দিতে পারে। এর আগে অনেকজন কিটাক সেনাকে একাই শেষ করে দিয়েছে। তাই কিটাকরা তাকে একটু ভয়ই পায়।

 

মিটিং শেষ হলে সবার শেষে কিটাকদের সেনাপ্রধান গ্যানাক দীর্ঘশ্বাস ফেলে উঠে বাইরে বেরিয়ে এলেন। আবারো তাকে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে হবে। এই পৃথিবীকে মানুষ মুক্ত করতে হবে। এই দায়িত্ব মহামান্য জিক তাকে দিয়েছেন। নিজের ঘরে ফিরে সেনাপ্রধান গ্যানাক তার টেবিলের উপরে একটি কাগজের খাম দেখতে পেলেন। তিনি একটু অবাকই হলেন। কারণ এইরকম কাগজের খাম প্রাচীন মানুষরা ব্যবহার করত। এর প্রচলন অনেকদিন আগেই বন্ধ হয়ে গেছে। এখন সবকিছুতেই প্রযুক্তির ব্যবহার করা হচ্ছে। খাম খুলে আরোও অবাক হলেন সেনাপ্রধান গ্যানাক।

 

মহামান্য জিকের সামনে বসে আছেন সেনাপ্রধান গ্যানাক। গ্যানাক ভেবে পাচ্ছেন না, ডিজিটাল মাধ্যম ছেড়ে এত পুরোনো কায়দায় মহামান্য জিক কেন তাকে ডেকে পাঠালেন।

– কি ভাবছেন গ্যানাক? আপনাকে কেন এর পুরোনো কায়দায় ডেকে পাঠিয়েছি?

– জ্বি মহামান্য জিক। ঠিক ধরেছেন।

– আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থার উপরে সাইবার হামলা করা হয়েছে। এছাড়াও আমার গতিবিধির উপর নজরও রাখা হচ্ছে।

– কিন্তু কেন? কে করছে এসব?

– সেই জীবিত শেষ মানুষটিরই কাজ এটা তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

– কিন্তু সে কিভাবে এসব করবে? তার সবধরনের ইলেকট্রনিক ডিভাইসই তো জব্দ করা হয়েছে।

– হাহ! সেনাপ্রধান গ্যানাক, আপনি মানুষদের চেনেননা! ওরা খুবই বুদ্ধিমান এবং বিচক্ষণ। আমি লাইব্রেরির ইতিহাসের বইগুলো থেকে জেনেছি।

 

কিছুক্ষণ নিরবতা।

 

– সেনাপ্রধান গ্যানাক, যত দ্রুত সম্ভব আপনাকে এই মানুষটিকে শেষ করে দিতে হবে। নাইলে কিটাক জাতির উপর এর ভয়ংকর প্রভাব পড়বে।

– মহামান্য জিক, লোকটি ধুরন্ধর এবং বুদ্ধিমান। তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এবং সেই সাথে প্রাচীন মানুষদের মতো খুব পরিশ্রমীও বটে। তবে আমি আমার সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করব।

 

কয়েক’শ বছর আগে এক ভয়াবহ ষড়যন্ত্র চলছিলো। একদল বিজ্ঞানী স্বার্থ হাসিলের জন্য একটি মরণঘাতী ভাইরাস তৈরি করে পৃথিবীতে ছড়িয়ে দেয়। এতে করে পৃথিবীর বেশিরভাগ মানুষই মারা যায়। তবে সেই স্বার্থান্বেষী বিজ্ঞানীদের সুখ দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। ভাইরাসটি নিজে থেকে ডেভেলপড হয়ে আরো ভয়ংকর হয়ে ওঠে এবং দেড়শ বছরের মধ্যেই পৃথিবী মনুষ্যবীহীন এক ধু-ধু ফাঁকা গ্রহে পরিণিত হয়। পুরো পৃথিবী জুড়ে যে কয়েকজন মানুষ ভাগ্যের জোরে বেঁচে গিয়েছিলো, তারা নতুন করে সবকিছু শুরু করে। সবকিছু ঠিকঠাকই চলছিলো। মানুষের সংখ্যা আবার আগের মতো বৃদ্ধি পাচ্ছিলো।  বিজ্ঞানের অগ্রগতিতে মানুষ মৃত্যুকে আংশিক জয় করে আয়ু বাড়িয়ে নিয়েছে। কিন্তু মানুষের সুখ বেশিদিন টিকেনি।

অ্যান্ড্রোমিডা গ্যালাক্সির ক্যাপিটাল-জেড গ্রহ থেকে আগত কিটাকরা পৃথিবীতে অতর্কিত আক্রমণ করে এবং অনেক মানুষকে হত্যা করে। এখন সারা পৃথিবী জুড়ে রুদ্রই শেষ জীবীত মানুষ। কিটাকরা অনেক চেষ্টা করেও রুদ্রকে মারতে পারেনি।

এগুলো পড়তে ভুলবেন না 

২০৫০ সালের মহাবিশ্ব:কিছু ধারণা

বাংলা সাহিত্যে সায়েন্স ফিকশন বা কল্পবিজ্ঞান

ভাবতে পারো কেমন হতে পারে ২০৫০ সালের আমাদের এ পৃথিবী ?

অন্ধকার ঘর। চেয়ারে চুপচাপ বসে আছে একজন মানুষ। রুদ্র। পৃথিবীর শেষ জীবিত মানুষ। মাঝে মাঝেই রুদ্র ভাবে সে কেন বেঁচে আছে যেখানে পুরো পৃথিবী জুড়েই কোনো মানুষ বেঁচে নেই। আর কতদিন এভাবে এই ভিনগ্রহের প্রাণিদের সাথে লড়াই করবে সে! মাঝে মাঝে মাঝে মনে হয় আত্মহত্যা করে। কিন্তু হৃদয় বলে মানুষের হয়ে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য বেঁচে থাকতে। তবে রুদ্র খুব ভালোভাবেই জানে, তাকে খুব তাড়াতাড়িই কিটাকরা মেরে ফেলবে। সেখানে প্রতিশোধ নেওয়ার চিন্তা করা নিতান্তই হাস্যকর আর অমূলক। অনের রাত হয়ে এলো। এবার ঘুমাতে হবে, যদিও কিটাকরা আসার পর রুদ্র একদিনও শান্তিতে ঘুমাতে পারেনি। প্রতিমুহূর্তেই খুব সজাগ থাকতে হয়। যেকোনো সময় কিটাকরা অতর্কিত আক্রমণ করতে পারে।

 

কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা দফতরের হলরুম।

সেনাপ্রধান গ্যানাক সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি এবং তার সৈন্যরা রাতের অন্ধকারে রুদ্রর উপর আক্রমণ করবেন। তার জন্য সব সৈন্যদের প্রস্তুতি নিতে বললেন।তিনি ইতিহাসের বইতে পড়েছেন, রাতের অন্ধকারে মানুষের উপর আক্রমণ করলে খুব সহজেই তাদের যুদ্ধে হারানো যায়।

 

রুদ্রর বাসভবন।

লেজার দিয়ে দরজা কেটে গ্যানাক তার সৈন্যদের নিয়ে ভেতরে  ঢুকে পড়লেন। নিচতলার সব ঘর খুঁজেও রুদ্রকে না পেয়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠলেন গ্যানাক এবং তার সৈন্যরা। উপরতলার কোণার ঘর থেকে অদ্ভুত নীল আলো বেরিয়ে আসছে। খুব সাবধানে শক্তিশালী লেজার অস্ত্র নিয়ে গ্যানাক সেই ঘরে ঢুকলেন। বিছানায় একটা নিথর দেহ পড়ে আছে, মুখ থেকে ফেণা বেরোচ্ছে। গ্যানাক চুপচাপ বাইরে বেরিয়ে এলেন। তিনি পৃথিবীর ইতিহাসে পড়েছেন, অনেক মানুষ বিষাক্ত পদার্থ খেয়ে মৃত্যুবরণ করত, তখন তাদের মুখ থেকে ফেণা বের হতো। মহামান্য জিককে খবরটা দেওয়ার জন্য জিকের বাসভবনে সৈন্যদের নিয়ে পৌছালেন গ্যানাক। পৃথিবীতে আর কোনো মানুষের অস্তিত্ব নেই।

 

রুদ্রর ঘরে পড়ে থাকা নিথর দেহটি উঠে বসল। নিঃশব্দে হেসে মনে মনে বলল,”বাহ! কি দারুণ অভিনয় করলাম!” একজন প্রাচীন সাহিত্যিক বলেছিলেন,”পৃথিবী এক রঙ্গমঞ্চ।”

 

 

Exit mobile version