বিজ্ঞান ব্লগ

মহাকর্ষীয় তরঙ্গ-অস্তিত্ব

মহাকর্ষীয় তরঙ্গ হলো স্থান-কালের আন্দোলনজনিত বিশেষ প্রকারের তরঙ্গ। এ তরঙ্গের প্রকৃতি জানা যায় আলবার্ট আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্ব থেকে।যে কোনো ধরণের ত্বরিত,স্পন্দিত এবং আন্দোলিত ভর মহাকর্ষীয় তরঙ্গ সৃস্টি করতে সক্ষম।

প্রায় একশত বছর আগে বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন তার সাধারণ আপেক্ষিক তত্ত্বে বলেছিলেন স্থান-কাল বাঁকিয়ে দেওয়া এক তরঙ্গের কথা।
সেই তরঙ্গই হলো মহাকর্ষীয় তরঙ্গ, যার অস্তিত্ব শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে।
মহাকার্ষীয় তরঙ্গের বিষয়টা বুঝতে হলে প্রথমে স্থানকালের ব্যাপারে একটু ধারনা থাকা দরকার।আমরা জানি মহাবিশ্বের একটি বস্তু অপর বস্তুকে সর্বদা আকর্ষন করে (নিউটনের সূত্র)।কেন করে এটা কিন্তু কারো জানা ছিলনা।
এর উত্তর দেয়ার জন্যে আইনস্টাইন বলেন,আমাদের সমগ্র মহাবিশ্ব আসলে একটা বিশাল চাদরের উপর অবস্থান করছে।সেই চাদরটা হল স্থানকাল এর।এখন আমরা স্বাভাবিকভাবেই রোজকার জীবনে দেখি যে কোন ভারি বস্তু যখন চাদরের উপর পরে,চাদরটি একটু নিচে দেবে যায়।
একই ঘটনা ঘটে মহাজাগতিক কোন বস্তু আর স্থানকালের চাদরের সাথেও।এখন চাদরের যে জায়গাটা দেবে যাবে,তারপাশ দিয়ে কোন বস্তু জোরে ঘুরিয়ে ছেরে দেই তাহলে কি ঘটবে?
মার্বেলটা ঐ ভারি বস্তুটার চারপাশ দিয়ে ঘুরতে থাকবে,আর দেখা যাবে যে ভারি বস্তুটা মার্বেলটাকে আকর্ষণ করছে।
সূর্য আর পৃথিবীর ক্ষেত্রেও কিন্তু একই ঘটনা ঘটছে!আর আমরা সেজন্যেই ভাবি সূর্য পৃথিবীটাকে টেনে যাচ্ছে।
পৃথিবীর সবচাইতে শক্তিশালী ধাতু সম্পর্কে জানতে ক্লিক করো
এই মহাকর্ষীয় তরঙ্গ শনাক্তের জন্য বিজ্ঞানীরা লেজার রশ্মি ভ্রমণ করতে পারে এমন চার কিলোমিটার দীর্ঘ টানেল তৈরি করেন।
LIGO(Laser Interferometer Gravitational -wave Observatory)নামে পরিচিত এই সিস্টেম একটি পরমাণুর ব্যাসের ১০ হাজার ভাগের এক ভাগ পর্যন্ত সূক্ষ্ম দৈর্ঘ্য পরিমাপ করতে পারে। 
২০১৭ সালের ১৪ ই জুন এই LIGO এর মাধ্যমে মহাকর্ষীয় তরঙ্গ শনাক্ত করেন পদার্থবিদ Rainer Weiss,Kip Thorne এবং Barry Barish.তাদের এই সাফল্যের জন্য ২০১৭ সালে তারা পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেন।
এই তরঙ্গের অস্তিত্ব সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ায় মহাবিশ্ব সৃষ্টির ক্ষেত্রে জনপ্রিয় ‘মহাবিস্ফোরণ’ বাবিগ ব্যাং তত্ত্ব আরও দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হলো। পৃথিবী থেকে শত কোটি আলোকবর্ষ দূরে সূর্যের চেয়ে প্রায় ৩০ গুণ ভারী দু’টি কৃষ্ণ গহ্বরের (Black hole) সংঘর্ষ থেকে সৃষ্টি এই মহাকর্ষীয় তরঙ্গ(Gravitational wave ) শনাক্ত করা হয়েছে।
Exit mobile version