আপনি জীবনের কোনো না কোনো পর্যায়ে হয়তো “ডিটেকটিভ শো” বা “গোয়েন্দা সিরিজ” দেখেছেন। কিংবা শার্লক হোমস বা ফেলুদা সমগ্র পড়ে থাকলে আমি নিশ্চয়ই জানেন এখানে প্রধান চরিত্রগুলো খুব সহজেই একটি মানুষের ভাবমূর্তি দেখে বলে ফেলতে পারে মানুষটি সত্যি বলছে কি মিথ্যা বলছে।
প্রকৃতপক্ষে একজন গোয়েন্দার মধ্যে একধরনের আধ্যাত্মিক শক্তি থাকে যা ব্যবহার করে সে একজন ব্যক্তির বাহ্যিক আচার-আচরণের মাধ্যমে ব্যক্তিটির প্রকৃত রূপ সম্পর্কে অবগত হতে পারে। মিথ্যা সবসময় প্রকাশিত হয় না কিন্তু বিভিন্ন ‘অমৌখিক সূত্র’ (Non-verbal clue) এর মাধ্যমে মিথ্যা শনাক্ত করা যায়। অর্থাৎ ব্যক্তির বাহ্যিক চালচলন বা ‘Body Language’ এর মাধ্যমে উপলব্ধি করা যায় সে মিথ্যা বলছে কিনা।
পৃথিবীতে অনেক ব্যক্তি আছে যারা মিথ্যার আড়ালে নিজেদের গুটিয়ে রাখে। কিছু ব্যক্তি থাকে যারা তাদের মিথ্যার হাতিয়ার ব্যবহার করে আপনাকে তাদের ফাঁদে ফেলানোর প্রচেষ্টায় থাকবে। তবে তাদেরকে বোঝার বেশ কয়েকটি উপায় আছে যা আপনার জানা আবশ্যক। তাই আপনি আপনার পঞ্চইন্দ্রিয়ের সাহায্য নিন। বিশেষত চোখের মাধ্যমে আপনার চারপাশের পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করুন। সবচেয়ে প্রধান যে বিষয়টি আছে সেটি হলো “ব্যক্তির অভিব্যক্তি” তথা “Facial Expression” যা আপনাকে তার মিথ্যা বুঝতে সহায়তা করবে। তাহলে চলুন বিষয়গুলো সম্পর্কে জেনে আসা যাক!
১. লক্ষ্য করুন কথা বলার সময় ব্যক্তিটি তার চোখ কিংবা মুখ লুকোচ্ছে কিনা
যারা মিথ্যা বলে তারা সচরাচর আপনার কাছ থেকে তাদের চোখ কিংবা মুখ লুকোতে চাইবে। আপনি লক্ষ্য করলেই দেখতে পাবেন তারা আপনার চোখে চোখ রেখে কথা বলবে না। অপরভাবে তারা তাদের মুখের উপর হাত দিয়েও কথা বলতে পারে যা মিথ্যা ধরার সহজ উপায়। প্রকৃতপক্ষে তারা তাদের মুখ কিংবা চোখ পরিপূর্ণভাবে না লুকিয়ে শুধু একটি হাত মুখের কোনায় রেখে কথা বলতে পারে। একইভাবে তারা ঠোঁটের উপরও হাত রেখে কথা বলতে পারে।
২. যেন একটি মিথ্যা হাসি
একজন অনৃতভাষিণী ( যিনি মিথ্যা বলে) তার ঠোঁট একসাথে চেপে ধরে খুবই কঠোর এক হাসি প্রদর্শন করে থাকে। মূলত তার মুখের আসল অভিব্যক্তি কিংবা ভঙ্গিমা লুকোনোর জন্যই সে এমন হাসি প্রদর্শন করে। তবে একটি সত্যিকারের হাসি সেই ব্যক্তির চোখে ও মুখে ভেসে উঠে যা ব্যক্তিটিকে দেখতে আরও আকর্ষনীয় করে তুলে।
৩.যখন ঘন ঘন চোখের পলক পড়ছে
কিছু গবেষক দাবি করেন, সত্য বলার সাথে চোখের সংস্পর্শতা জরুরি নয় কিন্তু তার মানে এই নয় যে আপনি সেই ব্যক্তিকে চোখের মাধ্যমে তার মিথ্যা যাচাই করতে পারবেন না। এটি অবশ্যই সম্ভব। যখন কেউ মিথ্যা বলে তখন খেয়াল করলে দেখা যায় সেই ব্যক্তিটি মুহূর্তের মধ্যে খানিকবার চোখের পলক ফেলছে যা আপনাকে তার মিথ্যা যাচাইয়ে সহায়তা করবে।
৪. ঠোঁট কামড়ে ধরছে না তো
যখন কোনো ব্যক্তি মিথ্যা বলবে তখন প্রথমতই সে নিজের প্রতি আত্নসচেতন বোধ করতে পারে। পাশাপাশি সে অনেক সংবেদনশীল (Nervous) হয়ে যেতে পারে। তথাপি এরূপ সংবেদনজনিত কারনে মনের ভুলবশত ব্যক্তিটি তার নিজের ঠোঁট কামড়িয়ে ধরতে পারে। অতঃপর তার এরূপ আচরণের জন্য আপনি বুঝে উঠতে পারবেন তিনি মিথ্যা বলছে কিনা।
৬. আবহাওয়া উষ্ণ নয় তবুও ক্রমাগত ঘামছে
একজন ব্যক্তি মিথ্যা বলার সময় তার দেহ থেকে প্রায়ই ঘাম নির্গত হয়। তাই তার কপাল, ঠোঁটের উপর নিচ এবং বগলের নিচে লক্ষ্য করুন। সেই সাথে কথা বলার সময় তিনি ঘামছে কিনা তা দেখুন।
৭. চুলের সাথে খেলা
আপনি কোনো না কোনো অবশ্যই দেখেছেন একজন মানুষ আপনার সাথে অথবা আশেপাশের কারো সাথে কথা বলার সময় নিজের চুল নিয়ে খেলা করছে। তথা ব্যক্তিটি তার হাতের আঙুলের সাহায্যে মাথার চুল প্যাচাচ্ছে। আপনার সন্দেহেজনক কারও মধ্যে এই আচরনগুলো প্রদর্শিত হলে আপনি ব্যক্তিটির মিথ্যা সম্পর্কে অবগত হতে পারবেন।
এগুলো পড়তে ভুলবেন না !!! |
৮. হাত কেন লুকোচ্ছে
কোনো ব্যক্তি যখন মিথ্যা বলে তখন পর্যবেক্ষণ করে দেখুন সে তার হাত কিভাবে রেখেছে। অনেক সময় দেখা যাবে ব্যক্তিটি তার হাত প্যান্টের পকেটের ভিতর গুটিয়ে রাখছে। আবার কিছু কিছু ব্যক্তি দু’হাত পেছনে রেখে কথা বলে যা মিথ্যা বলার একটি লক্ষন। তবে অনেকেরই আবার সাধারণতভাবে হাত পিছনে রেখে কথা বলার অভ্যাস থাকতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ব্যক্তিটি যখন মিথ্যা বলে তখন তার হাত কাপঁতে থাকে যার ফলে সে পকেটের ভিতর হাত গুটিয়ে রাখতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে।
৯. কথা বলার সময় ইতস্তত বোধ
একজন ব্যক্তি মিথ্যা বলার সময় হয়তো খুব ধীরে ধীরে কথাটি বলবে কারন এটা বলার সময় তার ভাবতে হয় সে কি বলবে। কিংবা এমনও দেখা যেতে পারে ব্যক্তিটি স্বাভাবিকের চেয়ে খুব দ্রুত কথা বলছে কারন সে যখন একটি মিথ্যা অনেকের কাছে বলে তাই সেটি পুনরায় বলার জন্য সে অনেক প্রবল থাকে। অর্থাৎ যখন সে একটি গল্প বানিয়ে বানিয়ে খুব দ্রুত বলতে থাকবে তখন আপনি যদি সেই গল্পের ভিতর থেকে তাকে কোনো প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেন তবে দেখবেন সে খুব ধীরে ধীরে উত্তর দিবে কারন তার ভাবতে সময় লাগবে।
১০. পুনরায় জিজ্ঞাসা
আচ্ছা এমন কি কখনো হয়েছে যে আপনি কাউকে একটি প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেছেন কিন্তু সে উত্তর দেওয়ার পরিবর্তে আপনার কাছে প্রশ্নটি পুনরায় বলার অনুরোধ জ্ঞাপন করেছে? ব্যক্তিটি যদি কথার মাঝে বারবার একই প্রশ্ন পুনরায় বলার অনুরোধ করে তবে এটি তার মিথ্যা ধরার আরেকটি কৌশল হতে পারে। কারন মিথ্যাটি বলার জন্য তার সময়ের প্রয়োজন এবং আপনি যদি প্রশ্নটি পুনরায় করেন তাহলে সে হয়তো উত্তরটি ভাবার জন্য কিছু সময় পেয়ে যায়। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে স্পষ্টভাবে প্রশ্ন না করলে ব্যক্তি আপনার কাছে পুনরায় প্রশ্নটি জিজ্ঞাসা করার অনুরোধ করে থাকে।