বিজ্ঞান ব্লগ

সব গুজব একসাথে : বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস

বিশ্বজুড়ে করোনা ভাইরাসের কারণে চলছে এক সংকটময় পরিস্থিতি। ইতালি, স্পেন, যুক্তরাষ্ট্রের মত শিল্পোন্নত দেশগুলো ইতোমধ্যেই ব্যর্থ হয়েছে এর সংক্রমণ প্রতিহত করতে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মহামারী হিসেবে ঘোষনা করা এই করোনা ভাইরাসে এই মুহুর্তে সংক্রমিত ৪,২২,৯৫৯ জনের মধ্যে মৃত্যুবরণ করেছে ১৮,৯০৭ জন(https://www.worldometers.info/coronavirus/)

ভাইরাসটিকে মোকাবেলা করতে গিয়ে যখন পুরো বিশ্বেরই স্বাস্থ্য ও গবেষণা খাতের দুর্বল দিকগুলো দিনের আলোর মত স্পষ্ট হয়ে উঠছে ঠিক তখন কোথায় আমাদের বাংলাদেশের অবস্থান ?

যেহেতু এই ভাইরাস প্রতিরোধের জন্য এখনো কোন কার্যকরী ভ্যাকসিন তৈরী হয়নি তাই এর সংক্রমণ প্রতিরোধে প্রতিকারই হলো সর্বোত্তম পন্থা। কিন্তু সেই প্রতিকারগুলো নিয়েও নান মহলে চলছে মনগড়া কথাবার্তা এবং ছড়িয়ে পড়ছে নানা ভ্রান্ত ধারণা। তাই এই লেখায় করোনা ভাইরাস নিয়ে মানুষের মাঝে থাকা ভ্রান্ত ধারণাগুলো ভাঙিয়ে দেয়ার চেষ্টা করব।

করোনা ভাইরাসের সকল আপডেট

কোয়ারেন্টাইন

অনেকেরই ধারণা কোয়ারেন্টাইন হল অনেকটা জেলখানায় বন্দি করে রাখার মত ব্যবস্থা । কিন্তু বিষয়টি মোটেও সেরকম নয়। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ কোন উপসর্গ দেখা দিলে নিশ্চিত লক্ষণ প্রকাশ না পাওয়া পর্যন্ত ১৪ দিন পর্যন্ত নিজেকে আলাদা একটি ঘরে আলাদা করে রাখা হল কোয়ারেন্টাইন।

১৪ দিনের মধ্যে বা এরপর লক্ষণ প্রকাশ না পেলে ব্যক্তি করোনা আক্রান্ত নয়। কিংবা যদি সংক্রমণ হয়েও থাকে তা যেন অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেজন্য হলেও কোয়ারেন্টাইন মেনে চলা উচিত।


ভিটামিন-সি

ভিটামিন- সি আমরা সাধারণত সাপ্লিমেন্ট হিসেবে নিয়ে থাকি। এটি এন্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে আমাদের শরীরে। এন্টিবডি উৎপাদন বাড়িয়ে দিয়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। সুনির্দিষ্টভাবে করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করে কিনা এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত নির্ভরযোগ্য কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।
তাই ভিটামিন-সি বেশি বেশি খেলে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ হবে এমন কথা এড়িয়ে চলা উচিত। বরং অতিরিক্ত ভিটামিন-সি শরীর বাইরে বের করে দেয়।

করোনা ভাইরাস ৪ দিন পর্যন্ত গলায় বসে থাকে

কোন ভাইরাস কখনো কোথাও গিয়ে বসে থাকে না। প্রতিটি ভাইরাসের পোষক দেহে প্রবেশের সুনির্দিষ্ট পথ রয়েছে। সেইসব পথ দিয়ে প্রবেশ করে ভাইরাস মূলত সুনির্দিষ্ট অঙ্গের সুনির্দিষ্ট কোষকে সংক্রমিত করার মধ্য দিয়ে রোগ সৃষ্টি করে।
করোনা ভাইরাস আমাদের নাক, মুখ ও চোখ দিয়ে প্রবেশ করে সরাসরি ফুসফুসকে সংক্রমিত করে তার লক্ষণ সমূহ প্রকাশ করে থাকে। তাই করোনা ভাইরাস গলায় ৪ দিন পর্যন্ত গলায় বসে থাকে এবং লবণ পানি দিয়ে কুলি করলে ধ্বংস হয়ে চলে যায় এমন সব কথায় গুরুত্ব না দেয়াই শ্রেয়।

পাকস্থলির এসিডে করোনা ভাইরাস ধ্বংস হয়ে যায়

বিশ্বজুড়ে করোনা ভাইরাস আক্রান্ত বিভিন্ন রোগীর স্টুলে এই ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া গিয়েছে। সেই সকল ব্যক্তি ডায়রিয়া আক্রান্ত ছিল একই সাথে। তাই গবেষকগণ ধারণা করছেন ভাইরাসটি কোনভাবে যদি ক্ষুদ্রান্ত্রে গিয়ে থাকে তবে তা ক্ষুদ্রান্ত্রকে সংক্রমিত করে রোগীকে ডায়রিয়া আক্রান্ত করে থাকে।

কেননা সার্স গোত্রের ভাইরাস হওয়ায় এর সেই সক্ষমতা থাকার বিষয়টি একেবারে ফেলে দেয়া যাচ্ছে না। যদিও পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়ার জন্য গবেষকরা এখনো গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে। যদি পাকস্থলির এসিডে এটি ধ্বংস হয়ে যেত তবে রোগীর স্টুলে এর অস্তিত্ব পাওয়া যেত না।

গরম পানিতে করোনা ভাইরাস মরে যায়

উচ্চ তাপমাত্রায় করোনা ভাইরাস ধ্বংস হয়। কিন্তু তার অর্থ এই না যে গরম পানি খেলে করোনা ভাইরাস ধ্বংস হবে। করোনা ভাইরাস ধ্বংস করতে প্রয়োজন ৫৬ ডিগ্রী সেলসিয়াসের অধিক তাপমাত্রা।

আর সেখানে শরীরের তাপমাত্রা ৩৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস। গরম পানি খেলেও শরীরের তাপমাত্রা এর উপরে উঠে না। বরং অতিরিক্ত গরম পানি খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

তরুণেরা করোনায় আক্রান্ত হয় না

শিশু এবং বৃদ্ধদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তরুণদের চেয়ে তুলনামূলক কম হওয়ায় করোনা ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হলে তাদের শারীরিক অবস্থার অবনতি দ্রুত হয়ে থাকে। কিন্তু তার অর্থ এই না যে তরুণরা এর দ্বারা সংক্রমিত হয় না একদম।

দ্য গার্ডিয়ানে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে একটি হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ৫০৮ জন করোনা আক্রান্ত রোগীর মধ্যে ৩৮% এরই বয়স ছিল ২০-৫৪ বছর। এদের মধ্যে আবার ১২১ জনকে ইন্টেন্সিভ কেয়ারে নেয়ার প্রয়োজন হয়েছে। তরুণদের মধ্যে উপসর্গ কম দেখা দিলেও তারা এর বাহক হিসেবে কাজ করে এর সংক্রমণ দ্রুত এবং ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে দিতে ভূমিকা রাখতে পারে।

তাই এটি স্পষ্ট যে করোনা ভাইরাসের মত এমন প্রাণঘাতি ভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ে মনগড়া কথা বার্তা বলা আমাদেরকেই আরো বেশি ঝুকির দিকে ঠেলে দিতে পারে। তাই এমন ধরনের কথা কেউ বললে আমাদের উচিত কোন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বা লাইফ সায়েন্স নিয়ে পড়ালেখা বা গবেষণা করে এমন কারো সাথে পরামর্শ করে ধারণা পরিষ্কার করে নেয়া। আর নইলে গুগল তো আছেই।

করোনা ভাইরাসের সকল আপডেট

ভাল থাকুন । সুস্থ থাকুন। সুস্থ রাখুন আপনার আশপাশের মানুষকে । আমাদের সচেতনতাই পারে এই পরিস্থিতি থেকে আমাদের বের করে নিয়ে আসতে।


@Navid Mahmmod,

 University of Chittagong 

করোনাভাইরাস প্রসঙ্গ-

১।রক্তের গ্রুপ ‘A’ হলে করোনা ঝুঁকি বেশি, ‘O’ হলে সবচেয়ে কম – বলছে চীনা গবেষণা

২।লবণ মেশানো গরম পানি কি করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ করে ?-না

৩।করোনা যেভাবে আপনার শরীরের নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছে !(ইন্টারেক্টিভ ডিজাইনসহ)

৪।ফ্যাক্ট চেক: (মিথ্যা) এক টুকরা লেবুতেই ধ্বংস হবে করোনাভাইরাস

৫।আমেরিকা বা চীনের ষড়যন্ত্র নয়।করোনাভাইরাস এসেছে প্রকৃতি থেকেই-গবেষণা

Exit mobile version