এই মহামারীতে আমরা অনেকেই নানারকম অনলাইন কোর্স, ওয়েবিনার ও ওয়ার্কশপ করে নিজের প্রয়োজনীয় স্কিল ডেভেলপ করার চেষ্টা করেছি, যা যা জানার ইচ্ছা ছিলো, তবে সুযোগ ছিলোনা, তা জানার চেষ্টা করেছি, সার্টিফিকেট জোগাড় করেছি। বিশেষত, উডেমি– কোর্সেরা–গুগলের সাহায্যে অনেকেই অনেক ফিল্ডে অনেক কোর্স করেছি। এর পাশাপাশি সফট স্কিলের জন্য ওয়েবিনার থেকে শুরু করে ইন্টার্ণশিপ- ক্যাম্পাস এম্বাসেডর – সব জায়গায়ই এখন আমাদের অনেক অনেক সার্টিফিকেট।
সার্টিফিকেট এর কাজ কী? সহজ কথায়, একটা তথ্যের প্রমাণ দেয়া। আমি একটা কোর্স করেছি কিনা, কেমন মার্কস বা পারফরমেন্স – এটা জানাবে। আমি ইন্টার্ণশিপ করলাম, এটার প্রমাণ- এমন। ভালো ভালো কোর্স, ইন্টার্ণশিপ বা কাজের সার্টিফিকেট ক্যারিয়ারে অনেক ভ্যালু যোগ করতে পারে। আর, সেজন্য একটা সার্টিফিকেট সঠিকভাবে ব্যবহার করা জানতে হবে।
ফেসবুকে-লিংকডইনে একটা পোস্ট দিলাম – “View my verified achievement” এখানেই শেষ? না। এটা কোনো ভ্যালুই যোগ করবেনা আমার ক্যারিয়ারে। ক্যারিয়ারে ভ্যালু যোগ করতে হলে, আমাকে যে কোর্স বা কাজটা ভালোভাবে করতে হবে আগে, তারপর কাজের পরে পাওয়া সার্টিফিকেট টাও সঠিকভাবে ব্যবহার করতে হবে।
তাহলে, কীভাবে একটা সার্টিফিকেট এর সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে হয়?
১। অন্যদেরকে দেখাও। শেয়ার করোঃ
সার্টিফিকেট পেলে তা সবাইকে দেখাও, নিজের সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করো। কেউ যদি না-ই জানে যে, তুমি একটা কাজ করেছো, বা পড়াশোনা করেছো; তাতে আসলে কোনো লাভ হলোনা। অনেকে অনেক কথা বলবে, তবে তোমার পরিশ্রম আর তোমার পরিশ্রমের ফল– তোমার কাছেই আসবে। তাই এ নিয়ে মাথা ঘামানোর দরকার নেই। হয়তো তোমাকে দেখে অনেকে ইন্সপায়ারড হয়ে নিজেও কিছু শিখবে। এভাবে একটা ভালো সোশ্যাল ইমপ্যাক্টও তৈরি হতে পারে।
তাই, ব্র্যান্ড ইয়োরসেলফ।
২। নিজের প্রোফাইলে যোগ করোঃ
সার্টিফকেট গুলো গুছিয়ে নিজের প্রোফাইলে এড করো, বিশেষত লিংকডইনে। ডেট, আইডি, লিংকসব গুছিয়ে সবকিছু এড করো। তবে, হ্যা, এক্কেবারে যা-ই পেলাম সবউ এড করবো? না। যেটার দাম বেশি, যেটায় বেশি শ্রম দিইয়েছি, যেটা যোগ করলে আমার প্রোফাইলের মূল্য আসলেই বাড়বে- সেগুলো এড করো। বিশেষজ্ঞরা বলেন, নিজের ক্যারিয়ার বা ফিল্ডের উপযোগী সার্টিফিকেট এড করতে, এডভান্স লেভেলের সার্টিফিকেট এড করতে, নিজের ভবিষ্যত লক্ষ্য ও ইন্ডাস্ট্রি কে টার্গেট করে সার্টিফিকেট এড করতে।
যেমন আমি ওয়েব ডেভেলপার হতে চাইলে, এ রিলেটেড সার্টিফিকেট এড করবো, পাশাপাশি প্রোগ্রামিং নিয়েও যোগ করতে পারি। হয়তো আমি কাজে চাপ নিতে পারি, বোঝাতে স্ট্রেস ম্যানেকজমেন্টের উপর করা একটা ওয়েবিনারের সার্টিফিকেটও এড করলাম, কিন্তু “Purpose of your life” –এর সার্টিফিকেট এখানে এড করাটা মোটেও মানানসই হবে না।
৩। কি কি শিখেছো, তা লিখোঃ
সার্টিফিকেট নিশ্চয়ই কোনো কাজের জন্যই দেয়া হয়েছে, হোক কোনো কোর্স, ওয়েবিনার, ইন্টার্ণশিপ। এসব থেকে কি শিখছো, এবং তোমার অন্য প্রতিযোগীরা, যারা এটা করেছে, তাদের থেকে শিক্ষার দিক দিয়ে তুমি কেনো আলাদা – এসব দেখাতে হবে ক্যাপশনে। কি কি শিখেছো, কীভাবে শিখেছো এসপব যোগ করো পোস্টে। শুধুই – “View my verified achievement” ভুলেও না।
৪। ইন্সট্রাকটর/কো-অর্ডিনেটরকে ট্যাগ করোঃ
সার্টিফিকেট শেয়ারের সময় ইন্সট্রাকটর/কো-অর্ডিনেটর এর নাম লিখো, পারলে ট্যাগ করো। এতে করে সুবিধা হলো, অই কোর্স বা এই ইন্সট্রাকটরের আন্ডারে যারা যারা কাজ করেছে, বা কোর্স করেছে, তাদের কাছে পৌছে যাবে এটা। নিজের প্রফেশনাল ক্যারিয়ারে হেল্প করতে পারে এমন কাউকে এখানে সহজেই পেয়ে যেতে পারি আমরা। পাশাপাশি অই টিচারও জানলো যে, তুমি তার কোর্স করেছো।
৫। একটা ভালো ফিডব্যাক দাওঃ
যে কোর্স বা কাজ করেছো, তার একটা ভালো ফিডব্যাক দাও। তবে, খুব খারাপ বা খুব ভালো কোনোটাই না, ক্রিটিক্যালি ফিডব্যাক দাও। যেটায় মানুষের ও অই ইন্সট্রাকটর দুই পক্ষেরই উপকার হবে। ভালো ফিডব্যাক দিলে তুমি সে ইন্সট্রাকটরের পাশাপাশ সে বিষয়ে দক্ষ এমন আরো মানুষের সাথে দেখা পেতে পারো। যেটা প্রফেশনালি খুব হেল্প করবে।
৬। একটা পার্সোনাল টাচ এড করোঃ
সার্টিফিকেট শেয়ারের সময় পোস্টে অই কোর্স-সেমিনার থেকে নিজের পছন্দের কিছু কথা, লাইন বা ঘটনা এড করো। হয়তো ইন্সট্রাকটরের কোনো কথা, যেটা তোমাকে মোটিভেট করে, বা কোর্সের একটা দিক যেটা অনেক ভালো লেগেছে, বা এনার্জেটিক কিছু – সহজ কথায়। এই এনার্জিটা সবার মধ্যেই একটা পজেটিভ ভাইব নিয়ে আসতে সাহায্য করে, চোখে পড়তে সাহায্য করে।
৭। ঠিকভাবে সিভিতে এড করোঃ
সার্টিফিকেট বা কোর্সের কথা সিভিতে যোগ করো, তবে অবশ্যই কিছু জিনিস ভেবে নিতে হবে তার আগে। এটা যোগ করলে ভ্যালু বাড়বে কিনা? সে কাজের সার্টিফিকেট সেটা আমি আসলেই ভালোভাবে করেছি কিনা? আমি অই টপিকে সার্টিফিকেটে যা বলা আছে, তা ঠিকভাবে পারি কিনা?
যদি এমন হয় যে, একটা সার্টিফিকেট আছে, বাট সে রিলেটেড স্কিল নাই, আর সেটা ভাইভায় ধরা পরে, তাহলে রিক্রুটার ভাববে, আমার সব সার্টিফিকেট ভুয়া– এক কথায়।
৮। কোথা-হতে এ কোর্স/ইন্টার্ণর্শিপ/ওয়েবিনার করা যায় তার লিংক দিয়ে দাওঃ
সার্টিফিকেটটি শেয়ারের সময় পোস্টে বা কমেন্টে অই কোর্স/ইন্টার্ণর্শিপ/ওয়েবিনার এর লিংক দিয়ে দাও, যাতে অন্যান্য আগ্রহীরাও এ কোর্স করতে পারে। কারো কমেন্টের অপেক্ষায় বসে থেকো না।
৯। কখন সার্টিফিকেট ব্যবহার করবোনাঃ
এটা সর্বশেষ ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পার্ট। যদি সার্টিফিকেটে যা বলা আছে, তা সঠিক না হয়, বা সে বিষয়ে তোমার প্রোপার নলেজ না থাকে, তাহলে এটা প্রোফাইল-সিভিতে এড করোনা। সোশ্যাল মিডিয়াতে পোস্টও দিবে না। এমন অনেক টপিক আছে, যেখানে আমার সার্টিফিকেট আছে, কিন্তু সত্যি বলতে আমি কিছু জানিনা-পারিনা। এমন হলে তা শেয়ার করা উচিত না, সিভি-প্রোফাইলেও এড করা উচিত না। এতে হীতে-বিপরীত হতে পারে। একটা সার্টিফিকেট এর জন্য বাকিসবগুলোর দাম ধুলোয় মিশানোর কোনো প্রয়োজন নেই।