বিজ্ঞান ব্লগ

“১৯৬” : যে সংখ্যা কাজী নজরুল ইসলামের মতই বিদ্রোহী!

প্যালিনড্রোম

এই নামটির সাথে আমরা কমবেশি সবাই পরিচিত। প্যালিনড্রোম সংখ্যা হচ্ছে এমন একটি সংখ্যা, যাকে শুরু থেকে লিখলে যা হয়, শেষ থেকে লিখলেও তাই হয়।

যেমন: ১১, ১৩১, ৩৩৩, ২৪৪২ ইত্যাদি। এই সংখ্যাগুলোকে শেষ থেকে লিখে দেখো, যা আছে তাই থাকবে। কোনো পরিবর্তন হবে না।

শুধু যে প্যালিনড্রোমিক সংখ্যা আছে তাই না, প্যালিন্ড্রোমিক শব্দও আছে। যেমনঃ মিমি, চামচা, নতুন, সন্ন্যাস ইত্যাদি। শ্রদ্ধেয় চমক হাসান ভাইয়া তো প্যালিনড্রোমিক শব্দ দিয়ে আস্ত একটা গানও লিখে ফেলেছেন! বিশ্বাস না হলে উনার চ্যানেল চেক করে দেখতে পারো!

______________________________________________________

যাই হোক, আমাদের আজকের আলোচনা হচ্ছে প্যালিনন্ড্রোমের মজার একটা জিনিস নিয়ে। একটা উদাহরণ দিয়ে শুরু করি।

উদাহরণ ১ঃ

ধরা যাক, ২৩।

step 1: ২৩+৩২ = ৫৫ (এটা একটা প্যালিনড্রোমিক সংখ্যা!)

আমরা যেটা করছি তা হচ্ছে, একটা সংখ্যা নিয়ে তাকে তার উল্টানো সংখ্যার সাথে যোগ করছি। যা পাচ্ছি, তা হচ্ছে ৫৫ , যেটা একটা প্যালিনড্রোমিক নাম্বার।

উদাহরণ ২ঃ

ধরা যাক, “২৫৪”

Step 1: ২৫৪ + ৪৫২ = ৭০৬ (এটা প্যালিনড্রোম সংখ্যা নয়, তাই আবার সেইম কাজ রিপিট করি, কি বলো?)

Step 2: ৭০৬ + ৬০৭ = ১৩১৩ (না, এটাও না!)

Step 3: ১৩১৩ + ৩১৩১ = ৪৪৪৪ (হুম, এটা প্যালিনড্রোমিক সংখ্যা, দেখেই বোঝা যাচ্ছে!)

তাহলে ব্যাপারটা কি দাঁড়াচ্ছে? একটা সংখ্যা নিবো, তাকে উল্টিয়ে যোগ করবো, করতে করতে একসময় নিশ্চিতভাবেই প্যালিনড্রোমিক সংখ্যা পেয়ে যাবো। প্রথম উদাহরণে এক ধাপেই কাজ শেষ, দ্বিতীয় উদাহরণে তিন ধাপে!

বেশিরভাগ সংখ্যাই এরকম শান্তশিষ্ট, তিন-চার ধাপেই আমাদের প্যালিনড্রোম দিয়ে দেয়।

এগুলো পড়তে ভুলবেন না!

আইকিউ (IQ):মেধা যাচাইয়ের উপায় নাকি কিছু সংখ্যা?

মৌমাছি এর নৃত্যের পিছনে লুকিয়ে থাকা রহস্য

দ্যা ইমিটেশন গেমঃ বিখ্যাত গণিতজ্ঞ যখন রূপালি পর্দায়

______________________________________________________

ঝামেলাটা হয় ১৯৬-এ গিয়ে।

এই সংখ্যাটাকে উপরের নিয়মে যতবারই ফেলা হয় না কেন, কোনোভাবেই সেটা প্যালিনড্রোম দেয় না। ম্যাথমেটিশিয়ানরা এটা অলরেডি মিলিয়ন-বিলিয়ন সংখ্যকবার চেক করে দেখেছেন, এখনো অব্দি তারা এটার প্যালিনড্রোম বের করতে পারেন নি।

এ যেন কাজী নজরুল ইসলামের মতই বিদ্রোহী, জ্বালাময়ী। মানবে না কোনো নিয়ম, চলবে তার নিজের মত করে!

শুধু কি ১৯৬?

না, শুধু ১৯৬ না, আরো অনেক সংখ্যা আছে যেগুলো এমন নিয়মের বাইরে চলে।

যেমনঃ ১৯৬, ২৯৫, ৩৯৪, ৪৯৩, ৫৯২, ৬৮৯, ৬৯১ ইত্যাদি। এর মাঝে ১৯৬ হচ্ছে সবচেয়ে ছোট। আর ফ্যামিলির ছোট সদস্যকে নিয়ে সবাই একটু বেশি মাতামাতি করবে, এটাই তো উচিত, তাই না?

গণিতের ভাষায় এই সংখ্যাগুলোর খুব সুন্দর একটা নাম আছে, “Lychrel Number“। অর্থাৎ যে সংখ্যাগুলো আমাদের এরকম প্যালিনড্রোম দেয় না, তাদের Lychrel Number বলা হয়।

____________________________________________________

যে সকল সংখ্যা তিন-চার ধাপে না দিয়ে একটু দেরি করে দেয়, তাদের বলা হয় “Delayed Palindrome

যেমন, ৮৯ সংখ্যাটা ২৪টা ধাপের পর আমাদের প্যালিনড্রোম দেয়। তাই গণিতের পরিভাষায় ৮৯ সংখ্যাটি “A delayed palindrome”.

তোমাদের মনে প্রশ্ন আসতে পারে, ‘কোন সংখ্যার ক্ষেত্রে তাহলে সবচেয়ে বেশি ধাপ লাগে?

উত্তরটা আমি দিয়ে দিচ্ছি। 1,186,060,307,891,929,990 সংখ্যাটি ২৬১ টা ধাপের পর প্যালিনন্ড্রোম সংখ্যা দেয়। এখন পর্যন্ত এটিই রেকর্ড হোল্ডার সংখ্যা। তোমরা চাইলে প্রোগ্রাম-টোগ্রাম করে দেখতে পারো, এরচেয়ে বড় কোনো সংখ্যা আছে কি না!

আজ এইটুকু অব্দিই থাক। নেক্সট পর্বে নিয়ে আসবো নতুন কোনো সংখ্যা, নতুন কোনো মজার বৈশিষ্ট্য। ততদিন পর্যন্ত ভালো থেকো! শুভকামনা রইলো!

Exit mobile version