বিজ্ঞান ব্লগ

রহস্যে ঘেরা ৫ ভয়ংকর শক্তিশালী বজ্রপাত

বজ্রপাত! এই শব্দটির সাথে আমরা কম বেশি সকলেই পরিচিত৷ শব্দটি শোনা মাত্রই কিন্তু আমাদের  মনে একটা বোল্ট ইমুজির (⚡) আকৃতি ভেসে উঠে। তবে আপনি কি জানেন এর বাহিরেও বজ্রপাতের আরো বিভিন্ন রূপ রয়েছে। কিছু বজ্রপাত আছে যেগুলো সাধারণ বজ্রপাত থেকে অনেকাংশে ভয়ংকর হয়ে থাকে।
আজ আমরা বেশ কিছু ভয়ংকর ও রহস্যময় বজ্রপাত সম্পর্কে জানবো। চলুন জেনে নেওয়া যাক –
১. বল লাইটনিং
বল লাইটনিং দেখতে অনেকটা জাম্বুরার মতো। আকাশে বিজলী চমকানোর দশ সেকেন্ড পর এর শব্দ ভূমিতে পতিত হয়। অনেকেই জানিয়েছেন যে তারা ঝড়ের সময় বল আকৃতির ঘূর্ণায়মান বজ্রপাত দেখতে পেয়েছেন।
প্রশ্ন জাগতে পারে এরূপ হওয়ার কারণ কি? বিগত কয়েক দশক পর্যন্তও বিজ্ঞানীদের এটা সম্পর্কে পর্যাপ্ত ধারনা ছিলো না। ২০১২ সালে প্রথম বারের মতো এই বজ্রপাতটি ক্যামেরার জালে ধরা পড়ে এবং এরপর থেকেই এটি নিয়ে বিজ্ঞানীরা নানান গবেষণা করেন। সাম্প্রতিক সময়ে অপটিক জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে এসেছে যে গোলাকৃতির এই শেল অত্যন্ত সংকুচিত বাতাস দ্বারা পরিপূর্ণ থাকে যার কারণে সাদা আলো সমস্ত দিক দিয়ে ঘূর্ণায়মান হয়ে যায়। এ কারণেই অনেকের কাছে মনে হয় যে আকাশে কোন বল দোল খাচ্ছে। গবেষকরা লক্ষ্য করেছে যে এই বিদ্যুতের তীব্রতা প্রায় এক বিলিয়ন গুণ বেশি।
২. স্প্রাইটস
রূপকথার গল্পের রহস্যের মতই এই বজ্রপাতটি রহস্যে ঘেরা। স্প্রাইট লাল রংয়ের হয়ে থাকে এবং এটি দেখতে অনেকটা জেলী ফিসের মতন। স্প্রাইটের (SPRITE) পরিপূর্ণ রূপ হলো, “Stratospheric Perturbations Resulting from Intense Thunderstorm Electrification.”
এই বিদ্যুতের বিস্ফোরণ দেখে অনেকের মনে হতে পারে যেন বজ্রপাতের উপর কিছু নাচানাচি করছে। এর কারণ হলো এটি বল আকৃতির আলো হিসেবে শুরু হয় এবং পরে নিচের দিকে প্রবাহিত হয়। বিজ্ঞানীরা এই অদ্ভুত বজ্রপাতটি আবিষ্কার করেছিলেন ৮০’র দশকের শেষ দিকে এবং ৯০ দশকের শুরুর দিকে। তবে উড়োজাহাজের পাইলটরা এটি বিজ্ঞানীদের আবিষ্কারের কয়েক দশক পূর্বেই অবলোকন করেছিলেন যদিও তারা কেউই এ বিষয়ে কিছু বলেননি।
আলাস্কা বিশ্ববিদ্যালয়ের গভেষক হান্স স্টেইনবেক নীলসেন লাইভসায়েন্সকে জানিয়েছেন, যদি আপনি চোখের পাতা ফেলেন তবে স্প্রাইটসকে দেখতে পাবেন না কারণ এরা মাত্র দশ মিলি সেকেন্ডের মতো স্থায়ী থাকে।

৩. এলভাস
এলভাস স্প্রাইট থেকে খুব একটা আলাদা নয়। এগুলো অতি উজ্জ্বল ও অতি দ্রুত হয়ে থাকে। স্প্রাইটের মত এলভাসকেও দিনের আলোয় মেঘের উপর দেখা যায়। তবে স্প্রাইটসে যেমনটি দেখা যায় যে মেঘের উপরে কিছু একটা দোল খাচ্ছে, এলভাস ঠিক তেমন নয় বরং এটি দেখতে অনেকটা হ্যালো বা রিং আকৃতির হয়ে থাকে। এলভাস খুব বৃহৎ আকৃতির হয়ে থাকে। এটি প্রস্থে প্রায় ১৮৫ মাইল তথা ৩০০ কিলোমিটারের মত হয়ে থাকে।
আবহাওয়াবিদ ওয়াল্ট লায়ন্স এলভাস ও স্প্রাইটের  নামগুলো দিয়েছেন এবং এদের পরিপূর্ণ রূপ রয়েছে। এলভাসের (ELVES) পরিপূর্ণ রূপ হলো, “Emissions of Light and VLF perturbations from EMP events.”
৪. ডার্ক লাইটনিং
এই অদ্ভুত ধরনের বজ্রপাতটি খুব বেশি একটা দৃশ্যমান আলো উৎপন্ন করেনা। বজ্রপাত সাধারণত ধীরগতির ইলেকট্রন দ্বারা গঠিত থাকে তবে ডার্ক লাইটনিং উচ্চ শক্তির ইলেকট্রন দ্বারা গঠিত যা বায়ু কণার সাথে সংঘর্ষিত হয়ে ক্ষতিকর গামা রশ্মি তৈরি করে। এই গামা রশ্মি পৃথিবীতে প্রাকৃতিকভাবে ঘটে যাওয়া সর্বাধিক শক্তির আলোগুলির মধ্যে একটি। এরা এতটাই শক্তিশালী যে কয়েকশ মাইল দূরের স্যাটেলাইটগুলোকেও পর্যন্ত নিষ্ক্রিয় করে দিতে পারে।
ঝড়ের দিনে যখন পাইলটরা বিমান চালায় তখন মাঝ আকাশে এদের দেখা যায়। এর থেকে উৎপন্ন গামা রশ্মির তীব্রতা অনেকটা সিটি স্ক্যানের উচ্চমাত্রার রেডিয়েশনের মতো। তবে অনেক বিজ্ঞানীই মনে করেন, এটি খুব বেশি ঝুকিপূর্ণ নয় যে ঝড়ের দিনে ফ্লাইট বন্ধ রাখতে হবে।

৫. পজিটিভ লাইটনিং
আমরা ইতিমধ্যেই জেনেছি যে বিজ্ঞানীদের কাছে বজ্রপাত এখনো খানিকটা রহস্যময় বস্তু। বর্তমানে বজ্রপাত নিয়ে অনেকগুলো থিওরি বিদ্যমান থাকলেও সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য থিওরি হচ্ছে বরফের কণা মেঘের চারপাশে কড়া নাড়ানোর ফলে এটি ইলেকট্রন হারাতে পারে আবার অর্জনও করতে পারে।
আকাশে যে বজ্রপাত আমরা দেখতে পাই অধিকাংশই কিন্তু নেগেটিভ হয়ে থাকে। অপরদিকে পজেটিভ লাইটনিং খুব কমই হয়ে থাকে। যে বজ্রপাতগুলি আমরা দেখি এর ৫ থেকে ১০ শতাংশ হচ্ছে পজেটিভ লাইটনিং।
শক্তিশালী ঝড়ের সময় এই বজ্রপাত ভূমিতে আঘাত হানতে পারে। একে ‘Bolt from the blue’ বলা হয় এর কারণ হলো পজেটিভ লাইটনিং শুধুমাত্র পরিষ্কার আকাশে দেখা যায়। নেগেটিভ লাইটনিংয়ের মত পজিটিভ লাইটনিংয়ও যথেষ্ট শক্তিশালী। নেগেটিভ লাইটনিং যেখানে ৩০০ মিলিয়ন ভোল্ট ও ৩০,০০০ এম্পস তৈরি করে, সেখানে পজিটিভ লাইটনিং প্রায় এক বিলিয়ন ভোল্ট ও ৩,০০,০০০ এম্পস তৈরি করতে সক্ষম। সচরাচর এই বজ্রপাত দেখা না গেলেও এর থেকে সাবধানে থাকা উচিত কারণ এটি বেশ ভয়ংকর।
 
Exit mobile version