বিজ্ঞান ব্লগ

ইয়ারওর্য়াম: মস্তিষ্কে যখন সুর এর ঘূর্ণিঝড় !

মিতু : দোস্ত বিয়া খামু, দাওয়াত দে কেউ !  

মিল্টন : চুপ কর! আমার ৫০ তম ক্রাশের বিয়ে হয়ে গেল, কষ্টে আছি।   

ইভা :  আহারে কী দুঃখ। মমতাজ বেগমের ‘বুকটা ফাইট্টা যায়’ শুন ।  

মিল্টন : তোর মাথায় তো খালি ‘সাইয়া সুপারস্টার’ ঘোরে।  

মিতু : আবার শুরু করলো। জানিস কাল রাত থেকে আমার মাথায় খালি ‘দুলহে কা সেহেরা’ ঘুরতেছে?

ইভা : মানে কী? বিয়ে করতে চাওয়া মিতুর মন ! বলতে পারেনা তাই খালি বিয়ার গান শুনে।

মিতু : কিছু না, জাস্ট কালকে একটু বেশি এক্সাইটেড হয়ে বিয়ের গানগুলি শুনতেছিলাম।   

মিল্টন : এতো যখন বিয়ে খাইতে সখ, বিয়ে কর না নিজে! নিজেও খাবি আমাদেরও খাওয়াবি।

রমন : ওয়েট ওয়েট, কী বললি মিতু? গান ঘুরতেছে কাল থেকে?   

মিতু : হ্যাঁ । তুই এতো অবাক হচ্ছিস কেন ??   

রমন : জানিস, তুই জানিস ?  

মিতু : কী জানব ?   

রমন : তুই  ইয়ারওর্য়াম (Earworm) নামক রোগে আক্রান্ত !  

মিতু :  মানে কী ?  আর ‘ইয়ারওয়ার্ম’ না ‘কানের পোকা’র মানে কী ?    

রমন: আরে…… কানের পোকা না এটা কানের পোকা না, ইহার নাম  ‘ইয়ারওয়ার্ম ‘ ! ইহা একটি মানসিক রোগ।

মিতু : কী ! মানসিক রোগ ? মিল্টনের ক্ষেত্রে ঠিক আছে তাই বলে আমরা? এটার সমাধান কী?

মিল্টন : যত দোষ নন্দ ঘোষ ।

মিতু : আরে রাগ করলি নাকি?  

মিল্টন : না।   

ইভা : মিল্টুর ভাব দেইখ্যা মরি মরি।   

মিতু : রাগ করে না। 

ইভা : দাড়া কিছু খাবার নিয়ে আসি, তারপর শুরু কর।   

রমন : ওকে।  

মিল্টন : চল ছাদে যাই । আমেজ করে বসে তোর লেকচার শুনি।  

রমন: লেকচার? যা বলবই না! 

মিতু : আরে ওর কথা বাদ দে চল ছাদে যেয়ে ইভা বাবুর চায়ের অপেক্ষা করি।  

ইভা : এইতো এসে গেছি। আমারে ছাড়া শুরু করছিলি? অসুবিধা নাই আবার প্রথম থেকে শুরু কর।   

মিল্টন : আইছে নবাবজাদি তে।   

ইভা : কী জানি ছিল ?   

মিতু : ইয়ারওয়ার্ম ।   

ইভা : ও হ্যাঁ । ইয়ারওয়ার্ম । শুরু কর।

রমন:  ইয়ারওর্য়াম কী? ইয়ারওর্য়াম বা ব্রেইনওর্য়াম যাই বলি না কেন এটি হল একটি মানসিক রোগ। এই রোগে মানুষ উৎস ছাড়া গান শুনে।  

ইভা : উৎস ছাড়া গান শুনে? কেমনে সম্ভব?  

মিল্টন : সবই যদি জাইনা ফেলতি , তাইলে তো তোর নামের পাশে ডাক্তার ট্যাগ থাকত।  

ইভা : হ ভাই হ, আমি গাধা । হয়ছে। রমণ তুই বল উৎস ছাড়া গান কেমনে শুনে? 

রমন: আসলে আমরা যখন বেশি আবেগী হয়ে যাই তখনি এই ধরনের ঘটনা ঘটে। 

মিতু : যেমন ?  

রমন: যেমন একজন যখন খুব একাকিত্ব ফিল করে বা অতিরিক্ত একসাইটেড হয়ে যায় তখনি ঘটনা ঘটে। যেমন পরীক্ষার খাতায় মনোযোগের চূড়ান্ত দিয়ে লেখা।  

মিল্টন : ম….  

রমন: এটা আবার জিজ্ঞাসা করিস না, এক্সাইটেড মানে কী ?  

ইরা : এক্সাইটেড মানে যখন কেউ একটু বেশি আবেগী হয়, লাইক অনেক দিন পর স্কুল কলেজ বা গ্রামের বাড়িতে গেলে বা বেস্টফ্রেন্ড কে দেখলে । যেমন আমি এখন যে অবস্থায় আছি ।  

মিতু : কোন দিক দিয়ে আসলি তুই?  

ইরা : কেন সিড়ি ঘর দিয়ে । সিড়ি ছাড়া আর কোনো ওয়ে আছে নাকি ?  

ইভা : আমি ভয় পাইছি। কেউ এসে চুপ করে থাকে ? আমারে ধর।  

মিল্টন : আরে বিলাই মামা ।  

ইরা : হাই দেবদাস ।  

ইভা : চা না ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে, খা সবাই। মা’কে বলতেছি আরেক কাপ বানায়া আনতে । 

ইরা : দরকার নাই । আমি কেবল খেয়ে আসছি ।  

ইভা : সত্যি ? তাইলে ঠিক আছে। 

ইরা : কি জানি  বলতেছিলি  ইয়ারওর্য়াম নিয়ে   ।  

রমন : হ্যা। আমরা যখন ঐরকম অবস্থায় কোনো ইমোশোনাল বা ঐ টাইপের গান শুনি তখন একপর্যায়ে সেই গানগুলি কারণ ছাড়া মাথায় অটো বাজতে থাকে। আর এই সমস্যাকে ইয়ারওর্য়াম বা স্টিকি মিউজিক ( sticky music ) বলে ।

মিল্টন : আমার মগজে গান না তবে সবসময় অন্য কিছু চলে ।  

ইভা : জানি , জানি কী চলে।  

ইরা : সকল প্রকার চিন্তা, যেমন : ছবি বা শব্দ ,লাইক কড়াইতে তেল গরম করা বা ট্রাফিক জ্যামের শব্দ বা অন্য যেকোনো কিছু যার কথা চিন্তা করতেছিস কিন্তু সেটা ঐসময় শারীরিকভাবে উপস্থিত নেই সেই সবই ইয়ারওর্য়াম নামে পরিচিত।  

রমন : ভালই তো সম্পর্ক আছে ইয়ারওর্য়াম আর শব্দের সাথে।  

ইরা : হ্যাঁ সম্পর্ক তো অনেক পুরানো, স্পেশালি পরীক্ষার সময় তো আমার আর কানের পোকার ( ইয়ারওর্য়াম ) পিরিত দেখলে তোরা সবটি জ্বলবি আর লুচির মত ফুলবি।  

মিতু : তোরাই সব পারস, তোরা সবাই ব্রিলিয়ান্ট ।  

ইভা : তোমার পিরিত দেখার দরকার নাই , পরীক্ষার সময় আমার আর তার রোমান্স দেখার মত।  

মিল্টন : ভীষন প্যারাময় লাইফ। আচ্ছা ব্রেকআপ করতে পারব?  

রমন : কিরে ইরা উত্তর দিস না কেন?  

ইরা : আমাকে অ্যান্সার দিতে হবে ?  

রমন : আমার মনে হয় তুই ভাল অ্যান্সার দিতে পারবি।  

ইরা : ওয়েট, পয়েন্ট টু পয়েন্ট মনে নাই তো, একটু দেখে বলি?

ইভা : দেখে বলতে হবে না । আমাদের দিবি।  

ইরা : আচ্ছা 

ইভা : এটা কী করলি ?  

মিতু : আমি কী করলাম? জাস্ট ফোন টা নিছি । হিহিহি ..  

ইভা : আমাকে দে বলছি।

মিতু : ওয়েট আমি পড়তেছি ।   ‘ইয়ারওর্য়াম থেকে কীভাবে মুক্তি পাওয়া যায় ?’ – এ বিষয়ে  মনোবিজ্ঞানী ড্যানিয়েল ওয়েনগার এর মতে “মস্তিষ্ককে চলমান গানকে কখনো অবরোধ করা উচিত নয় । কেননা অবরোধ করার চেষ্টা করলে মস্তিষ্ক গানটি বন্ধ করার জায়গায় বারবার বাজিয়েই যাবে। এজন্য যে গানটি চলতেছে সেটি অবরোধ না করে মেনে নিলে গানটি চলা বন্ধ হয়ে যাবে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে অন্যমনস্ক হওয়াও ইয়ারওর্য়ামকে নিষ্ক্রিয় করতে সাহায্য করে।”  

এগুলো পড়তে ভুলবেন না !! 

ইনসাইড দ্য অ্যাপ্লিকেশন: কোরা এর আদ্যপান্ত

প্রবলেম সলভিং শুরু কিভাবে করবঃকিছু টিপস এন্ড ট্রিকস

ডিএনএ কম্পিউটার:ভবিষ্যতের কম্পিউটার প্রযুক্তি

মিল্টন : অন্য সহজ কোনো উপায় নেই?  

মিতু : আছে । থমাস আর্নে’র “গড সেভ দা কুইন” ( God Save The Queen ) আর কালচার ক্লাবের “কারমা ক্যামেলিয়ন” ( karma chameleon)  গান ইয়ারওর্য়াম সারাতে সহায়ক। এছাড়া ইয়ারওর্য়ামের সময় চুইংগাম চাবানো একটা কার্যকারী প্রতিরোধ । আর ইয়ারওর্য়ামকে “মানসিক রোগ না একটা সাধারন জিনিস” ভাবলে ইয়ারওর্য়ামটা অনেকটা স্বাভাবিক হয়। অনেক ক্ষেত্রে ডাক্তারের প্রেসক্রাইব ঔষধ খাওয়া উচিত। 

রমন (হেলান দিয়ে) : ইয়ারওর্য়াম আসলে একটা গানের কিছু অংশবিশেষ। তাই ঐ গানটা ফুল শুনলেও অনেক ক্ষেত্রে কাজ দেয়।  

মিল্টন : ইয়ারওর্য়াম কী ভাল?  

ইরা : একটা কথা যদি বারবার মাথায় চলতে থাকে তাহলে ঐটা কী ভাল?  

মিল্টন : বাচ্চা বাচ্চা মনে হবে, নিজেকে পাগল মনে হবে।  

ইভা : পাগল মনে হবে কেন তোর? তুই তো একটা পাগল ।  

ইরা : কিছুটা সমস্যা হয় আমাদের তবে জানিস ইয়ারওর্য়াম এর  কারণে আমাদের মানসিক কার্যক্রমের ক্ষমতা বাড়ে। তাছাড়া ক্রিয়েটিভ চিন্তা ভাবনা আসে। আর কিছু বিষয়ে ভাল আর সুস্পষ্ট ধারনা তৈরি হয় ।  

ইভা : একটা কয়েনের দুটো অংশ আছে।  তো এটার  খারাপ প্রভাব কী কী ?  

রমন : মাইগ্রেন প্রব্লেম ,অবসেসিস – কমপালসিভ ডিসঅর্ডার , সাইকোটিক সিন্ড্রোমস, মৃগী রোগীর মত অস্বাভাবিক ব্যবহার, প্যালিনাকোউসিস (Palinacousis) ইত্যাদি হয়। 

ইভা : অ্যা!  

ইরা : ইভা তুই কী জানিস, একটা গান শোনার পরও যদি ২৪ ঘন্টা ইয়ারওর্য়ামের মত চলে তাহলে জানিস ঐটার মানে কী ?  

মিল্টন : মানে কী ? 

রমন : তার মানে হচ্ছে তোর মস্তিষ্কে ক্যান্সার আর স্ট্রোকের মত বিভিন্ন রকমের কঠিন  রোগ ছড়াচ্ছে।

ইভা : কী বলিস?  লেডি গাগার ” ব্যাড রোমান্স ” টা কাল থেকে মাথায় চলতেছে।

রমন : “ব্যাড রোমান্স”, “কান্ট গেট আউট অফ মাই হেড” আর “ডোন্ট স্টপ বিলিভিন” এগুলো কমন ইয়ারওর্য়াম । তবু ডাক্তার দেখাইস। কারন একজন ডাক্তার এই ব্যাপারে ভাল বলতে পারবেন।

মিতু : আচ্ছা এটা কী বিংশ শতাব্দীর আইটেম ?

রমন : না । ১৮৭৬ সালে মার্ক টুইান   ‘এ লিটারেরি নাইটমেয়ার‘- এ্  সর্বপ্রথম ইয়ারওর্য়াম শব্দটি ব্যবহার করেন।  সেখানে তিনি ইয়ারওর্য়ামকে জিংগেল – ভাইরাস হিসেবে আখ্যায়িত করেন ।

মিতু : তার মানে এটি অনেক পুরানো একটা রোগ? 

রমন : হ্যাঁ।

মিল্টন : তাহলে আইনস্টাইন, শেক্সপিয়ার ওনারাও কী এই রোগের রোগী ছিল? 

রমন : হ্যাঁ।  ইয়ারওর্য়াম একটি বেসিক মানসিক রোগ আর প্রতি সপ্তাহে প্রায় ৯০% কোনো না কোনো ভাবে ইয়ারওর্য়াম রোগে আক্রান্ত। 

ইরা : ঐ দেখ ১ টা বেজে গেছে বাসাই যাই । 

ইভা : মানে কী? এখনি না আসলি আরেকটু বস। 

ইরা : নারে, বিকালে আসবো নি।  

রমন : ইরা চল , আগাই দিয়ে আসি ।  

ইভা : তুই ও যাবি?

রমন : হ্যা একটু কাজ আছে রে।  

মিল্টন : আমি থেকে কী করব? আমিও যাই। 

ইভা : হ, তুই যাগা !

মিল্টন : খ্যাদায়া দিছসিস? চা ভাল ছিল না। 

ইভা : ছ্যাঁকা খাওয়ার অভ্যাস থাকলে যা হয় আরকি । 

রমন : ইরা চল, আমরা আগাই ওরা ঝগড়া করুক। 

ইরা : চল। আসি ইভা।

রমন : ও এখন ঝগড়া মুডে আছে। অ্যান্সার দিবে না।

ইরা : চল তাহলে।

মিতু : আমারেও নিয়া যা।  ওদের মাঝখানে ফালাইস না।  

ইরা : চলে আয়।

Exit mobile version