বিজ্ঞান ব্লগ

কাঁদলে কি আসলেই মন হালকা হয়?

কান্নাকাটি মানুষের অনুভূতির একটি প্রাকৃতিক প্রতিক্রিয়া যা দুঃখ, শোক, আনন্দ এবং হতাশাসহ একাধিক অনুভূতি প্রকাশ করে। কিন্তু কান্না করা কি স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী?
কান্না করা অস্বাভাবিক কিছু নয় এবং উভয় লিঙ্গের মানুষই তাদের ধারণার চেয়ে বেশি কাঁদে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি গবেষণায় দেখা গেছে মহিলারা গড়ে প্রতি মাসে ৩.৫ বার কাঁদে এবং পুরুষরা গড়ে প্রতি মাসে ১.৯ বার কাঁদে।

মানুষের অশ্রুকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়।
১. Basal Tears : Basal tears এর বাংলা অর্থ মৌলিক অশ্রু। এই ধরণের অশ্রু প্রোটিন সমৃদ্ধ এবং এতে অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল তরল আছে যা চোখকে আর্দ্র রাখতে সহায়তা করে, চোখে ভিটামিন আর পুষ্টি সরবরাহ করে, ক্ষতিকর ব্যাক্টেরিয়ার হাত থেকে চোখকে রক্ষা করে। Basal tears এর মাধ্যমে চোখ পিচ্ছিল থাকে যা আপনার চোখের পাতা ওঠা নামা করতে সাহায্য করে।

২. Reflex Tears : এই অশ্রুতে পানির পরিমাণ থাকে প্রায় ৯৮%। সাধারণত চোখে কোনো প্রকার আঘাত লাগলে বা ক্ষতিকর কোনো গ্যাস চোখের সংস্পর্শে আসলে এটি নিঃসৃত হয়। ক্ষতিকর জীবাণু থেকে রক্ষার জন্য এই অশ্রুতে অধিক পরিমাণে এন্টিবডি থাকে।

৩. Emotional Tears : Emotional tears এর আরেক নাম Psychic Tears। কারণ আবেগজনিত কারণ ছাড়া এই অশ্রু নিঃসৃত হয় না।
এই অশ্রুতে অনেক বেশি মাত্রার stress hormone (যেমনঃ ACTH = Adrenocorticotropic hormones) থাকে। এছাড়াও থাকে লিউসিন, এনকেফালিনের মতো রাসায়নিক পদার্থ যা ব্যথানাশক হিসেবে কাজ করে। তাই কষ্ট পেয়ে বা মনের দুঃখে কান্না করার পর আপনি বেশ স্বস্তি অনুভব করেন।

Related Article :সংবাদপত্র থেকে গাছ? অবিশ্বাস্য নয় সত্যি 

গবেষণা মতে, কান্না মন ও শরীর দুইয়ের জন্যই ভালো। তাই কান্না পেলে তা না আটকিয়ে কেঁদে নেওয়াই ভালো। মানব শরীরে অনেক উপকারিতা রয়েছে। যেমনঃ-

১. কান্না করার ফলে মনে একটি প্রশান্তিপূর্ণ প্রভাব সৃষ্টি হয়। এর মাধ্যমে অনুভূতি নিয়ন্ত্রন এবং হতাশা, দুশ্চিন্তা দূর করা সম্ভব।
২০১৪ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে কান্না মানুষের উপর প্রত্যক্ষ প্রভাব ফেলে এবং এটি আবেগকে প্রশমিত করতে পারে। সমীক্ষায় ব্যাখ্যা করা হয়েছে যে কান্নাকাটি কিভাবে Parasympathetic Nervous System (PNS) সক্রিয় করে, যা মানুষকে relax করতে সহায়তা করে।

২. কান্নাকাটি মূলত একটি সংযুক্ত আচরণ, কারণ এটি আমাদের চারপাশের লোকজনের সমর্থন পেতে সাহায্য করে। খুশির কান্না অনেক সময় সামাজিক বন্ধন দৃঢ় করার জন্য হয়ে থাকে। এটি আন্তঃব্যক্তিক বা সামাজিক সুবিধা হিসাবে পরিচিত।

৩. গবেষণায় দেখা গেছে যে, ইমোশনাল টিয়ার্স oxytocin এবং endorphins নিঃসরণ করে। এই রাসায়নিকগুলি মানুষের শারীরিক এবং মানসিক ব্যথা উভয়ই কমিয়ে দেয়। তাই কান্নাকাটি করার ফলে মন হালকা হয়।

৪. মানুষ যখন মানসিক চাপে বা গাঢ় বিষাদের ভিতর থাকে তখন কান্না করে। তাদের অশ্রুতে স্ট্রেস হরমোন এবং অন্যান্য রাসায়নিক পদার্থ থাকে। গবেষকরা বিশ্বাস করেন যে, কাঁদলে শরীরের এই রাসায়নিকগুলির মাত্রা হ্রাস হয় এবং স্ট্রেস কমে যায়।

৫. গবেষণায় দেখা গেছে যে কান্নাকাটির পর শিশুরা ভালোভাবে ঘুমাতে পারে। বড়দের উপর কান্নার এই একই প্রভাব রয়েছে কিনা তা নিয়ে এখনও গবেষণা করা হচ্ছে।
তবে এটি প্রমাণিত যে কান্নার ফলে মন শান্ত হয়, মানসিক চাপ কমে এবং ব্যথা উপশম হয় যা একজন ব্যক্তিকে ঘুমিয়ে যেতে সহায়তা করতে পারে।

৬. কান্না করার ফলে চোখ পরিষ্কার হয় এবং চোখে ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণ কমায়। কারণ অশ্রুতে লাইসোজাইম নামে একটি তরল থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে যে লাইসোজাইমের শক্তিশালী অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা এটি অ্যানথ্রাক্সের মতো বায়োটেরর এজেন্টদের দ্বারা সৃষ্ট ঝুঁকি হ্রাস করতে সহায়তা করে।

৭. ন্যাশনাল আই ইনস্টিটিউট ব্যাখ্যা করেছে যে, Basal tears এর লুব্রিকেটিং প্রভাব মানুষকে আরও স্পষ্টভাবে দেখতে সহায়তা করে। চোখের ঝিল্লিগুলো শুকিয়ে গেলে, দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যেতে পারে। Basal tears চোখকে আর্দ্র রাখে এবং ঝিল্লি শুকিয়ে যেতে দেয়না।

কান্না করার ফলে মন হালকা হয়, কাজে উদ্যম ফিরে আসে। এর মাঝে অস্বাভাবিক কিছু নেই। তাই মন খারাপ হলে আবেগকে চেপে না রেখে মন খুলে কান্না করবেন।

Exit mobile version