বিজ্ঞান ব্লগ

ক্রমবর্ধমান কার্বন ডাইঅক্সাইড নিঃসরণ মানুষের বিচারবুদ্ধি হ্রাস করছে

আপনি কি জানেন যে উচ্চ মাত্রার কার্বন ডাইঅক্সাইড (CO2) আমাদের বিচারবুদ্ধি কমিয়ে দিতে পারে?

একবিংশ শতাব্দীর অগ্রগতির সাথে সাথে আমাদের বায়ুমণ্ডলের কার্বন ডাইঅক্সাইড (CO2) গ্যাসের ঘনত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে। ৮০০,০০০ বছর ধরে বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাইঅক্সাইড এর ঘনত্ব ১৮০ থেকে ২৭০ পিপিএমের মধ্যে ছিল, শিল্প বিপ্লব ঘটার আগে প্রায় ১০,০০০ বছর ধরে এই ঘনত্ব ২৮০ পিপিএমের মধ্যে ছিলো। শিল্প বিপ্লবের পর থেকে বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাইঅক্সাইড এর মাত্রা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখন বাতাসে কার্বন ডাই অক্সাইডের মাত্রা ৪০০ পিপিএম এরও বেশি।

কয়েক বছর আগে পর্যন্ত আমরা জানতাম যে কার্বন মনোক্সাইড এবং অন্যান্য VOC (Volatile Organic Compounds) গুলো হাঁপানির মতো রোগ সৃষ্টি করে। কার্বন ডাইঅক্সাইড কে ক্ষতিকর গ্যাস হিসাবে বিবেচনা করা হয়নি। কিন্তু বর্তমানে পরিবর্তিত জীবনযাত্রার সাথে আমরা আমাদের ৯০% সময় বাড়ির ভিতরেই কাটাই, পর্যাপ্ত তাজা বাতাস ও বায়ুচলাচল ব্যবস্থা নেই এমন বাড়িতে।

ঘরের ভেন্টিলেটর সাধারণত ঘরের কার্বন ডাইঅক্সাইড এর মাত্রাকে কমিয়ে রাখে। কিন্তু এমন পরিস্থিতি হতে পারে যখন ঘরে অনেক লোক আছে এবং কার্বন ডাইঅক্সাইড এর মাত্রা কমানোর জন্য পর্যাপ্ত তাজা বাতাস নেই। দীর্ঘ সময় ধরে পর্যাপ্ত বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা না থাকায় এমন জায়গায় অত্যধিক মাত্রার কার্বন ডাইঅক্সাইড জমা হয়ে যেতে পারে। তাছাড়া রাতে যখন আমরা দরজা জানালা বন্ধ করে ঘুমাই তখন পর্যাপ্ত বায়ু চলাচল এর ব্যবস্থা না থাকায় ঘরে কার্বন ডাইঅক্সাইড এর মাত্রা বেড়ে যায়।

তাই বাসার ভিতরে পর্যাপ্ত বায়ুচলাচলের ব্যবস্থা আছে কিনা এবং কার্বন ডাইঅক্সাইড এর মাত্রা কত পিপিএম তা নিশ্চিত করা আগের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। গবেষকদের মতে প্রতিদিন বেশ কয়েকবার আমাদের ঘরে কার্বন ডাইঅক্সাইড এর মাত্রা ১০০০ পিপিএমের বেশি হয়ে যায়, এটি প্রকৃতপক্ষে উদ্বেগের বিষয়।


চিকিৎসকদের ভাষ্যমতে, যখন আমরা উচ্চ মাত্রার কার্বন ডাইঅক্সাইডসহ বায়ুতে শ্বাস নেই তখন আমাদের রক্তে কার্বন ডাইঅক্সাইড এর মাত্রা বৃদ্ধি পায়। রক্তে কার্বন ডাইঅক্সাইড এর মাত্রা বৃদ্ধি পেলে অক্সিজেনের সেরিব্রাল বিপাক হ্রাস পায়। মস্তিষ্কে পর্যাপ্ত অক্সিজেন না পৌঁছালে তা আমাদের চিন্তাভাবনা করার ক্ষমতার উপর প্রভাব ফেলে।

তাছাড়া কার্বন ডাইঅক্সাইড আমাদের রক্তে দ্রবীভূত হয়ে যায় এবং আমাদের রক্তে উপস্থিত পানি (H2O) এর সাথে বিক্রিয়া করে কার্বনিক অ্যাসিড তৈরি করে। এটি পরবর্তিতে হাইড্রোজেন এবং বাইকার্বোনেটের আয়নগুলিতে দ্রবীভূত হয়। যদি আমাদের রক্তে হাইড্রোজেন আয়নগুলির ঘনত্বের বৃদ্ধি ঘটে তাহলে আমাদের রক্তে অ্যাসিডিটির মাত্রা বেড়ে যাবে, ইলেক্ট্রোলাইট ভারসাম্যহীনতা তৈরি হবে যার ফলে বুদ্ধিগত ক্রিয়া হ্রাস পাবে। পরীক্ষা করে দেখা গেছে, এর ফলে ঘুমে ব্যাঘাত ঘটবে, উদ্বেগ বৃদ্ধি পাবে এবং এটি মানুষের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা, জটিল কৌশলগত চিন্তাভাবনা করার ক্ষমতা হ্রাস করে দিবে।

Have you read?


পৃথিবীতে মানুষ গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ বন্ধ না করে বরং দিন দিন আরো বেশি পরিমাণে গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ করছে। আমরা আদৌ জলবায়ু রক্ষায় কোনো ভূমিকা রাখতে পারছি না। বছর বছর কার্বন ডাইঅক্সাইডের মাত্রা ক্রমান্বয়ে বাড়তির দিকেই যাচ্ছে। কার্বন ডাইঅক্সাইড বৃদ্ধির এই অনুপাত স্থিতিশীল করা দরকার। গবেষকরা পূর্বাভাস দিয়েছে, ২১০০ সাল পর্যন্ত আমাদের বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাইঅক্সাইডের মাত্রা হবে ৯৩০ পিপিএম এবং শহরাঞ্চলে আরো ১০০ পিপিএম বেশি কার্বন ডাইঅক্সাইড থাকবে। এটি আমাদের এখনকার বায়ুমণ্ডলের কার্বন ডাইঅক্সাইড এর মাত্রার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি।

যদি আমাদের পরিবেশে কার্বন ডাইঅক্সাইড এর ঘনত্ব ৯৩০ পিপিএম পর্যন্ত বৃদ্ধি পায় তবে ঘরের ভিতর কার্বন ডাইঅক্সাইড এর ঘনত্ব হবে ১৪০০ পিপিএম। মানুষের এই বিরূপ পরিবেশে থাকার অভিজ্ঞতা নেই ফলে এটি আমাদের মস্তিষ্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। প্রকৃতপক্ষে, কার্বন ডাইঅক্সাইড এর মাত্রা ১৪০০ পিপিএম হলে আমাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা ২৫ শতাংশ এবং জটিল কৌশলগত চিন্তাভাবনা করার ক্ষমতা প্রায় ৫০ শতাংশ হ্রাস পাবে।


Exit mobile version