বিজ্ঞান ব্লগ

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা টেকওভার – মানব সভ্যতার হুমকি?

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা টেকওভার – কী হবে যদি পরদিন সকালে উঠে দেখতে পান আপনার ফোন আর আপনার কথায় আনলক হচ্ছে না, আপনার কম্পিউটার নিজের মতো কাজ করা শুরু করেছে, অ্যালেক্সা কিংবা গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট পর্যন্ত আপনার আদেশ অমান্য করছে। এমনকি আপনার গাড়িও নিজের মতো একাকী ঘুরে বেড়াচ্ছে। এমন সময় আপনার প্রতিক্রিয়া কেমন হবে?

হ্যাঁ, বলছি এ.আই. টেকওভারের কথা বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা টেকওভার। এ.আই. বা আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স হচ্ছে কম্পিউটার প্রোগ্রাম বা অন্যান্য যন্ত্রের সমন্বয়ে বানানো এক প্রকার বুদ্ধিমত্তা। একটি যন্ত্র নিজ উদ্যোগে সাধারণত মানুষের দ্বারা সম্পন্ন কোনো কাজ করতে পারে তবে সেটিকে এ.আই. বলা যেতে পারে। যতই দিন যাচ্ছে এই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজন্স উন্নত থেকে উন্নততর হচ্ছে।


টেক জায়ান্ট কোম্পানি গুলো প্রতিনিয়ত সেলফ লার্নিং এ.আই. এর দিকে ঝুঁকছে। এরা বর্তমানে ব্যাংক পরিচালনা, হোটেল সামলানো, অপারেশন থিয়েটারে ডাক্তারকে সহযোগিতা করা, ট্রাফিক কন্ট্রোল, ঘর গোছানো, ড্রাইভিং সহ অজস্র কাজে পারদর্শী হয়ে উঠেছে। কিছু কিছু এ.আই. নিজেরাই পরস্পরের বুদ্ধিমত্তার বিকাশ ঘটাতে সক্ষম। রোবট সোফিয়ার মতো কিছু রোবটকে অনেক দেশ জাতীয়তা পর্যন্ত দিয়ে দিচ্ছে। আপাত দৃষ্টিতে এসব ব্যাপার হুমকি স্বরূপ না হয়ে ঠিকঠাকই লাগে। তবে বিশেষজ্ঞরা ইতোমধ্যেই রোবট অভ্যুত্থানের ভয়াবহতা সম্পর্কে সতর্ক করেছেন।

আরও পড়ুনঃ জেনোবট আবিষ্কার: কোষ এবং রোবটিক্স এর মিশ্রন!

এ বিষয়ে লেখক লুইস ডেল মন্টি বলেন, “স্বাভাবিক পর্যায়ে এ.আই. এর উত্থানে মানব সভ্যতার ক্ষতি না করলেও এর বিভীষিকাময় অবস্থা শুরু হবে যখন এরা মানুষকে অবর্জনা কিংবা নিজেদের পথের কাঁটা হিসেবে ধরে নিবে। এখন প্রশ্ন আসে, এ.আই. আমাদের জন্য কী ধরনের বিপদ ডেকে আনতে পারে? আলাদা আলাদা গ্যাজেট ও রোবট ভিন্ন ধরনের সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।”

ইন্ডাস্ট্রিয়াল রোবটঃ
ইন্ডাস্ট্রিয়াল রোবট খুব শক্তিশালী হলেও এরা প্রত্যেকেই ফ্যাক্টরির মধ্যে আবদ্ধ এবং বাইরের কোনো ক্ষতি সাধন করতে পারবে না। তবে এরা সবাই-ই কম্পিউটার নিয়ন্ত্রণাধীন থাকায় বিদ্রোহকারী প্রধান এই.আই. বা এর দল ইন্টারনেটের সাহায্যে এদের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আরো রোবট, এমনকি অস্ত্রসস্ত্র তৈরির কাজেও ব্যবহার করতে পারে।

ল্যাবে থাকা এক্সপেরিমেন্টাল রোবটঃ
রিসার্স ল্যাবের এক্সপেরিমেন্টাল রোবট সাধারণত কঠোর নিরাপত্তায় রাখা হয়। এজন্য এরা সহজে ল্যাবের গণ্ডির বাইরে বের হতে পারবে না। ফলে এদের নিয়ে খুব একটা ক্ষতির সম্ভাবনা নেই।

সেল্ফ ড্রাইভিং কারঃ
আত্ম নিয়ন্ত্রণ সম্পন্ন গাড়ি চাইলেই আপনাকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিতে পারে। এজন্য ইচ্ছাকৃত বিস্ফোরণ বা সংঘর্ষ সহ নানা পন্থা আছে। কিন্তু আপনার গাড়ি কোথাও পার্কিং করা থাকলে চাবি ছাড়া স্টার্ট নিতে পারবে না। আবার চলন্ত অবস্থায় কিছু ঘটলেও হার্ড ব্রেক কষে গাড়ি থামিয়ে দিতে পারবেন।

7,300 Self Driving Car Stock Photos, Pictures & Royalty-Free Images - iStock

মিলিটারি রোবটঃ
যুদ্ধে ব্যবহৃত রোবট কিংবা ড্রোন এক্ষেত্রে সবথেকে বেশি ক্ষতি সাধন করতে পারে। কেননা এদের মধ্যে মানব হত্যায় বাধা প্রদানে কোনো প্রটোকল থাকে না। ফলস্বরূপ এরা অতিবিলম্বে মানব সভ্যতার বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে যেতে পারবে। কিন্তু কিছুক্ষনের মধ্যেই এগুলো পাওয়ার সোর্সের অভাবে অকেজো হয়ে যাবে।

এ. আই. কর্তৃক পারমাণবিক হামলাঃ
পারমাণবিক বোমা উৎক্ষেপণে অসংখ্য বাধা থাকলেও কম্পিউটার কোড ম্যানিপুলেশন এর সাহায্যে এটা অসম্ভব কিছু না। তবে এক্ষেত্রে মানুষের পাশাপাশি রোবোটিক মেশিনারিজেরও ক্ষয়ক্ষতি হবে। রেডিয়েশনের ফলে আইসি নষ্ট হয়ে এদের অভিযানই ব্যহত হতে পারে।

এতো কিছু পড়ার পর সার সংক্ষেপ দাড়ায়, বর্তমান সময়ে কোনো এক সেক্টরের রোবট বা এ.আই এককভাবে চাইলেই মানব সভ্যতার নিয়ন্ত্রণ হাসিল করতে পারবে না। তবে এর মানে এই নয় যে তা ভবিষ্যতেও কোনোদিন সম্ভব না। এলোন মাস্ক, স্টিফেন হকিং, জেফ বেজসের মতো বড় বড় ব্যক্তিত্বরা অযথাই সুপার ইন্টেলিজেন্ট এ.আই. টেকওভার সম্পর্কে সতর্ক করেননি। এজন্য অবশ্যই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সকে যথাযথ প্রটোকল দ্বারা নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। অন্যথায় তা মানবজাতির জন্য কাল ডেকে আনতে পারে।


Exit mobile version