বিজ্ঞানের প্রতিটি শিক্ষার্থীরই জানা যে এই মহাবিশ্বে ৪ প্রকারের মৌলিক বল আছে। যার মধ্যে একটি হল দূর্বল নিউক্লীয় বল। একে দূর্বল বলার কারণ হল ৪ প্রকার বলের মধ্যে এটি খুবই দুর্বল। এর চেয়ে দূর্বল বল হল মহাকর্ষ বল। আজ চেষ্টা করব এই বল নিয়ে কিছু লিখার। তাহলে শুরু করা যাক?
তেজষ্ক্রিয় বিটা ক্ষয়ের জন্য দায়ী হল এই বল। এতে যা হয় তা হল একটি অস্থিতিশীল পরমাণুকেন্দ্র আয়নিত কণিকা নিঃসরণ করে শক্তিক্ষয় করে। বিটা ক্ষয়ের ক্ষেত্রে পরমাণুকেন্দ্রে অবস্থানকারী একটি নিউট্রন পরিণত হয় একটি প্রোটনে ও একটি ইলেকট্রনে এবং একটি ইলেকট্রন এ্যান্টি-নিউট্রিনোতে পরিণত হয়। প্রোটনটি পরমাণু কেন্দ্রে থেকে যায় এবং ইলেকট্রন ও নিউট্রিনো পরমাণু থেকে নিঃসরিত হয়। নিউট্রিনো পদার্থের সাথে খুবই দুর্বলভাবে বিক্রিয়া করে থাকে এবং এটিও ভর প্রায় শূণ্য। আর সেজন্য মনে হয় পরমাণু বা পরমাণুকেন্দ্র থেকে নেগেটিভ বিটা কণিকা অর্থাৎ ইলেকট্রনের নিঃসরণ হচ্ছে–আর সেজন্যই এর নাম দেওয়া হয় বিটা ক্ষয়।
একটি নিউট্রন গঠিত একটি আপ কোয়ার্ক এবং দুইটি ডাউন কোয়ার্ক দিয়ে। দুর্বল ক্রিয়া হল একমাত্র বিক্রিয়া যা কোয়ার্কের অবস্থা বদলাতে সক্ষম অর্থাৎ এটি একটি আপ কোয়ার্ককে একটি ডাউন কোয়ার্কে রূপান্তরিত করতে পারে। বিপরীত প্রক্রিয়াও সম্ভব। বিটা ক্ষয়ে নিউক্লিয়াসে অবস্থিত একটি নিউট্রনের মধ্যকার একটি ডাউন কোয়ার্ক নেগেটিভ চার্জযুক্ত একটি ডব্লিউ বোসোন নিঃসরণের মাধ্যমে একটি আপ কোয়ার্কে পরিণত হয় এবং নিউট্রনটি পরিণত হয় একটি প্রোটনে। এর কারণ, প্রোটন গঠিত একটি ডাউন কোয়ার্ক এবং দুইটি আপ কোয়ার্ক দিয়ে।
এখন প্রশ্ন হল নিঃসরিত ডব্লিউ বোসোনটির কি হয়? এটি একটি ইলেকট্রন এবং একটি এ্যান্টি-নিউট্রিনোতে পরিণত হয়।
বিটা তেজষ্ক্রিয়তা বিজ্ঞানীদের জন্য একটি চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ালো। অন্য সব ধরণের তেজষ্ক্রিয়তাতে নিউক্লিয়াসের হারানো শক্তি তেজষ্ক্রিয় রশ্মি কর্তৃক প্রবাহিত শক্তির সমান। বিটা ক্ষয়ের ক্ষেত্রে কিন্ত ঠিক উল্টোটি ঘটে। বিভিন্ন পরীক্ষণে দেখা যায় যে, নিউক্লিয়াস থেকে বিটা ক্ষয়ে বিভিন্ন পরিমাণ শক্তি বহন করছে। এই ক্ষয় হল একঝাক ইলেকট্রনের নিঃসরণ এবং প্রতিটি ইলেকট্রন কর্তৃক বাহিত শক্তির পরিমাণ এক নয়।
এ প্রসঙ্গে বিশ্বখ্যাত পদার্থ বিজ্ঞানী উলফগ্যাং পাউলি বললেন যে বিটা রেডিয়েশনে নিঃসরিত ইলেকট্রনগুলোর শক্তি সবসময়ই একই, ভিন্ন ভিন্ন নয়। ভিন্ন ভিন্ন শক্তি দেখানোর কারণ হল অতিরিক্ত শক্তি একটি নতুন ধরণের কণিকা বহন করে নিয়ে যায়। পরবর্তীকালে আরেক বিজ্ঞানী ফার্মি এটির নাম দেন “নিউট্রিনো”। কণিকাটির স্পিন ১/২, ইলেকট্রিক চার্জ শুন্য এবং ভরও প্রায় শুন্য।
কাজেই পাউলির ব্যাখ্যানুসারে পরীক্ষণের সাহায্যে প্রকৃত শক্তির মাত্র অংশবিশেষ পরিমাপ করা সম্ভব। এটি বিটা ক্ষয়ে ইলেকট্রনের শক্তির পরীক্ষণলব্ধ পর্যবেক্ষণকে পরিপূর্ণভাবে ব্যাখ্যা করে।
সবল নিউক্লীয় বলের ক্রিয়াতে নিউট্রন এবং প্রোটনসমূহ একত্রিত হয়ে পরমাণুকেন্দ্র বা নিউক্লিয়াস গঠন করে, তড়িৎ-চুম্বকীয় বলের ক্রিয়াতে অণু-পরমাণু গঠিত হয়, মহাকর্ষ ক্রিয়ায় গঠিত হয় গ্রহ-নক্ষত্র। কিন্তু দুর্বল বলের ক্রিয়ায় এমন কিছুই তৈরি হয়না। এর কারণ কি?
এই ব্লগ পড়তে ভুলবে না! |
এর কারণ হল এর অস্বাভাবিকভাবে ক্ষুদ্র দূরত্বের ভেতর এই বল ক্রিয়াশীল। প্রায় ১০^-১৮ মিটার। আর সেজন্যই আমরা দুর্বল বলের প্রভাবকে সরাসরি বুঝতে পারিনা।
এর আরেকটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল এটিকে বহনকারী গেজ-বোসোন কণিকা বেশ ভারী। অন্য তিনটি বলবাহী কণিকার (তড়িৎ-চুম্বকীয় বল বা ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ফোর্সের ক্ষেত্রে ফোটন, স্ট্রং নিউক্লীয়ার ফোর্স বা সবল বলের ক্ষেত্রে গ্লুওন এবং মহাকর্ষ বা গ্রাভিটির ক্ষেত্রে গ্রাভিটন) প্রত্যেকটি ভর শুণ্য এবং আলোর গতিতে চলে।
বিজ্ঞান শিখুন , বিজ্ঞান জানুন ।