বিজ্ঞান ব্লগ

বাংলাদেশে সাইবার হামলা এবং অনলাইন জালিয়াতি: প্রেক্ষাপট ও ঝুঁকি

দিনে দিনে বিশ্বের যত উন্নয়ন হচ্ছে তার সাথে তাল মিলিয়ে বাড়ছে বিভিন্ন কাজে ইন্টারনেটের ব্যবহার। সরকারি কিংবা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সকলেরই ইন্টারনেট ব্যবহারের প্রয়োজন হয়। আমাদের এই ইন্টারনেট ব্যবহারের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশে সাইবার হামলা এবং সাইবার অপরাধও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু আমাদের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান বা সরকারি প্রতিষ্ঠান গুলোর সাইবার নিরাপত্তা কি এতটা শক্তিশালী যে তা আমাদের প্রতিষ্ঠান সমূহকে সাইবার আক্রমণ বা সাইবার অপরাধের থেকে রক্ষা করতে পারে? আসলে এর উত্তর হলো – না। 

বাংলাদেশে সাইবার হামলা এবং অনলাইন জালিয়াতির সংখ্যা এবং এর মাধ্যমে হওয়া ক্ষয়ক্ষতি:

আমাদের দেশে সাইবার নিরাপত্তা সম্পর্কে সরকারি কিংবা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান উভয়ই অনেক উদাসীন। যার ফলে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে সাইবার হামলা-র সংখ্যা আশংকাজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রনালয়ের তথ্যমতে, বাংলাদেশে ২০১৬ সালে সাইবার হামলার সংখ্যা ছিলো ৩৮৯ টি। এরপরের বছর ২০১৭ সালে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৬৮৩ টি এবং ২০১৮ সালে সাইবার হামলার সংখ্যা গিয়ে দাড়িয়েছে ৮৭০ টিতে অর্থাৎ বাংলাদেশে সাইবার হামলার সংখ্যা বছরান্তে প্রায় দ্বিগুণ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
শুধু তাই নয় ২০১৬ সালের ৫ই ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সার্ভার দূর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে হ্যাকাররা প্রায় ৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার হাতিয়ে নেয়। যদিও পরবর্তীতে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক আর কোনো তথ্য প্রকাশিত হয়নি। কিন্তু বাংলাদেশে বর্তমানে সাইবার হামলার সংখ্যা আশংকাজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। যেমন সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ পুলিশের অফিশিয়াল ফেসবুক আইডি হ্যাক হয়ে যায় এবং যা প্রায় ১ সপ্তাহ হ্যাকারদের কবলে ছিলো।

সাম্প্রতিক সময়ে বহিঃবিশ্বে সাইবার হামলার সংখ্যা ও এর দ্বারা হওয়া ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ:

ইংল্যান্ডের বিখ্যাত সাময়িকী ইকোনমিস্টের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,
“উন্নত দেশ গুলোতে সাম্প্রতিক সময়ে অন্যান্য অপরাধের হার তুলনামূলক কম হলেও সাইবার অপরাধের হার ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে”।
যুক্তরাজ্যের ব্যাংক সমূহের ট্রেড অর্গানাইজেশন ইউকে ফাইনান্স (UK finance) এর মতে, গত কয়েক বছরে কর সংগ্রহকারীর নাম উল্লেখপূর্বক ফোন প্রতারণার হার দ্বিগুণ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যান্য স্বল্পোন্নত দেশেও এ ধরনের প্রতারণার হার নাটকীয়ভাবে বেড়ে গেছে। একটি পরিসংখ্যান অনুযায়ী বিশ্বে প্রতি ঊনচল্লিশ সেকেন্ডে প্রায় ১টি এবং ২৪ ঘন্টায় প্রায় ২২০০ টি সাইবার হামলা হয়।
বাংলাদেশে সাইবার হামলা Science Bee
ক্রাইম সার্ভে অব ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলসের তথ্যানুযায়ী, যুক্তরাজ্যে ২০১৯ সালে প্রায় ৩৮ লাখ অনলাইন জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে, যা দেশটিতে মোট অপরাধের এক-তৃতীয়াংশ। ২০১৭ সালে দেশটি এ ধরনের তথ্য প্রথম সংগ্রহ শুরু করার পর থেকে প্রতিবছর সাইবার জালিয়াতির ঘটনা আশংকাজনক হারে বেড়ে গিয়েছে। সেখানে দেশের প্রায় ৭ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ এ ধরনের জালিয়াতির শিকার হন। ভুক্তভোগীদের মধ্যে ১৫-১৬ শতাংশের বেশি মানুষ এক হাজার ডলারের বেশি অর্থ খুইয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থাও প্রায় একই। গত বছর দেশটিতে ইন্টারনেটে ভিত্তিক জালিয়াতি গড়ে ৬৯ শতাংশ বেড়েছে। দেশটিতে ইন্টারনেটে প্রতারণায় গত বছর মোট লোকসান হয়েছে ৪২০ কোটি ডলার অর্থাৎ বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ৪ হাজার ৪৯৪ কোটি ৭৩ লক্ষ ৯২ হাজার টাকা, যা ২০১৭ সালের তুলনায় প্রায় তিন গুণ বেশি।

সাম্প্রতিক সময়ে সাইবার হামলার জন্য অপরাধীদের পছন্দের মাধ্যম সমূহ:

বিশ্বে হ্যাকাররা যতো সাইবার হামলা করে তার মধ্যে ৯৩ শতাংশই ম্যালওয়্যার এর মাধ্যমে করা হয়। নিম্নে কয়েকটি ম্যালওয়্যার সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হলো।
এসকল ম্যালওয়্যার ব্যবহার করে হ্যাকাররা যে মুক্তিপণ নেয় তা তারা বিটকয়েনের মাধ্যমে নেয়। তাই তাদের খুঁজে বের করা অনেক কঠিন হয়ে যায়। কারণ বিটকয়েন এমন একটি ব্যাংক সিস্টেম যার কোনো তথ্য সংরক্ষিত থাকেনা।

বর্তমানে প্রচলিত কিছু সাইবার ক্রাইম:

সর্বশেষে আসা যাক সাইবার হামলা থেকে নিরাপদ থাকার উপায়:

আপনার আমার সচেতনতাই সাইবার ক্রাইম এর বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় প্রতিরোধ। আমাদের উচিত ব্যক্তিগত কিংবা আর্থিক প্রতিষ্ঠান সব ক্ষেত্রে সাইবার ক্রাইম সম্পর্কে সর্বোচ্চ সচেতন থাকা। আমাদের সচেতনতাই বাংলাদেশে সাইবার হামলা-র ঝুঁকি কমাবে ও আমাদেরকে নিরাপদ থাকতে সাহায্য করবে।
তথ্যসূত্র: প্রথম আলো, উইকিপিডিয়া-সাইবার অ্যাটাক, লিফ-ইট.কম, ফাইন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস, টেকটার্গেট-সাইবার ক্রাইম, টেকটার্গেট-ম্যালওয়্যার অ্যাটাক, উইকিপিডিয়া-আইডেন্টিটি থেফট, টেকটার্গেট-সাইবার টেরোরিজম, উইকিপিডিয়া-সাইবার স্টকিং
Exit mobile version