বিজ্ঞান ব্লগ

বাংলা সাহিত্যে সায়েন্স ফিকশন বা কল্পবিজ্ঞান

ইংরেজিতে যা সায়েন্স ফিকশন, বাংলায় সেটাই কল্পবিজ্ঞান।

ইংরেজি সাহিত্যের অনেক অনেক বিখ্যাত সায়েন্স ফিকশনের কথা আমরা জানি। এক্ষেত্রে ফ্রাঙ্কেস্টাইনঃ অর দ্য মডার্ন প্রমিথিউস, ওয়ার অব দ্য ওয়ার্ল্ড, দ্য টাইম মেশিন, টোয়েন্টি থাউজেন্ড লিগস আন্ডার দ্য সি, মিস্টোরিয়াস আইল্যান্ড ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

আর লেখকদের তালিকায় মেরি শেলি, জুল ভার্ন, এইচ জি ওয়েলস তো অগ্রপথিক।

 

আচ্ছা! আমাদের বাংলা সাহিত্যে কল্পবিজ্ঞানের অবস্থা কেমন? বাংলা ভাষায় প্রথম সার্থক কল্পবিজ্ঞান কাহিনীর লেখক হিসেবে আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু সর্বত্র গ্রহণযোগ্য।

১৮৮৯ সালে জগদীশচন্দ্র বসু লিখেন ‘নিরুদ্দেশের কাহিনী’ নামক একটি কল্পগল্প। এই একই গল্প অব্যক্ত নামক গ্রন্থে ‘পলাতক তুফান’ নামে প্রকাশিত হয়।

 

তবে এরও আগে ১৮৫৭ সালে অধ্যাপক জগদানন্দ রায় লিখেন ‘শুক্র ভ্রমণ’ নামক একটি সায়েন্স ফিকশন। যেটি ১৮৭৯ সালে প্রকাশিত হয় শান্তিনিকেতন থেকে। আর, ১৮৮২ সালে মাসিক বিজ্ঞান দর্পণ পত্রিকায় দুই কিস্তিতে প্রকাশিত হয় হেমলাল দত্তের লেখা কল্পবিজ্ঞান কাহিনী ‘রহস্য’।

 

বেগম রোকেয়ার লেখা ‘Sultana’s Dream’ বা ‘সুলতানার স্বপ্ন’ও কিন্তু একটি বিজ্ঞান কল্পবিজ্ঞান। ১৯৩০ সালে প্রেমেন্দ্র মিত্র লিখেন ‘পিঁপড়ে পুরাণ’ নামক একটি কল্পবিজ্ঞান। এই সময় বাংলা সাহিত্যে সংযোজিত হয় ‘মামাবাবু’ সিরিজ। প্রেমেন্দ্র মিত্রের ‘কুহকের দেশে’ ছিলো এই কল্পবিজ্ঞান সিরিজের প্রথম উপন্যাস। তারপর ১৯৪৮ সালে দ্বিতীয় বই ‘ড্রাগনের নিঃশ্বাস’ প্রকাশিত হয়। 

 

বাংলা সাহিত্যের পোকা, অথচ ‘প্রোফেসর শঙ্কু’, এই নামটি শোনেননি এমন পাঠক পাওয়া মুশকিল। ষাটের দশকে সত্যজিৎ রায় ‘ব্যোমযাত্রীর ডায়েরি’ নামে প্রকাশ করেন বাংলা সাহিত্যের সবচাইতে জনপ্রিয় চরিত্র ‘প্রোফেসর শঙ্কু’ কে নিয়ে লেখা প্রথম গল্প। তবে সমালোচকদের অনেকেই প্রোফেসর শঙ্কু সিরিজকে কল্পবিজ্ঞান মানতে রাজি নয় এখন পর্যন্ত। 

এগুলো পড়েছেন তো

প্লানচেট যুগে যুগে : হুতোম প্যাচা থেকে সুশান্ত সিং রাজপুত?

গ্র্যান্ডির সিরিজ: একটি রহস্যময় সিরিজের গল্প  

 

 


হুমায়ুন আহমেদের লেখা প্রথম বিজ্ঞান কল্পকাহিনীর নাম ‘তোমাদের জন্য ভালোবাসা’। এছাড়াও লিখেছেন ‘ফিহা সমীকরণ’, ‘শূন্য’, ‘নিউটনের ভুল সূত্র’, ‘অনন্ত নক্ষত্রবীথি’ সহ আরোও অনেক কল্পবিজ্ঞান।
এরপর আসে বিমল করের লেখা ‘মন্দারগড়ের রহস্যময় জ্যোৎস্ন্যা’। তারপর বাংলা সাহিত্যে আরো অনেকেই কল্পবিজ্ঞান লিখে গেছেন। সমৃদ্ধ করেছেন সাহিত্য ভাণ্ডার। কিন্তু, সত্যজিৎ রায়ের পর বৃহৎ পরিসরে কল্পবিজ্ঞান লিখেছেন হুমায়ুন আহমেদ এবং একইসাথে তাঁর অনুজ মুহম্মদ জাফর ইকবাল।

একসময় আরোও অনেক সমৃদ্ধ হবে বাংলা সায়েন্স ফিকশন তথা কল্পকাহিনীর ঝুলি, এমনটা আমরা আশা করতেই পারি। কারণ, বর্তমানে নতুন লেখকেরা যেমন আগ্রহী হচ্ছেন, ঠিক তেমনিভাবে পাঠক সংখ্যাও বাড়ছে আশানুরূপভাবে।

Exit mobile version