বিজ্ঞান ব্লগ

“সূর্য লকডাউনে” শুনে সূর্য নিজেই হতাশ,ভয়ের কিচ্ছু নেই-জানিয়েছেন তিনি

১৬ মে, ২০২০, “লকডাউনে যাচ্ছে সূর্য” এই শিরোনামে নিউইয়র্ক পোস্ট নামক খ্যাতনামা আন্তর্জাতিক চ্যানেলে করা একটি নিউজ রাতারাতি ভাইরাল হয়ে যায় আমাদের দেশে৷ মেইনস্ট্রিম নিউজপেপারগুলো রঙচঙে হেডলাইন দিয়ে তৈরি করে জনমনে আতঙ্ক, এই বুঝি সূর্য নিভে গেল। মহামারী করোনার এই সময়ে আমরা এমনিতেই আতঙ্কিত, তার উপর এমন নিউজ দেখলে যে কারও মনে ভয় আসা স্বাভাবিক।

আচ্ছা, এবার আসা যাক কেন এই নিউজ ছড়ালো? এটি সত্য, সূর্য একটি নির্দিষ্ট সময় পর পর সোলার মিনিমা বা ম্যাক্সিমাতে পৌঁছায়। মোটামুটি ১১ বছর অন্তর অন্তর সোলার মিনিমা হয়ে থাকে। এটি একদমই স্বাভাবিক বিষয়, ভয়ের বিন্দুমাত্র কারণ নেই, এতটুকু সিউর৷

ঝামেলার সূত্রপাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী ড. টনি ফিলিপস এর ভয়ঙ্কর বাণী থেকে। ড. টনি ফিলিপস বলেন, “আমরা এমন গভীরতম সময়ের ভেতরে প্রবেশ করতে যাচ্ছি, যে সময়ে সূর্যের আলো কার্যত অদৃশ্য হয়ে যাবে। সূর্যের সোলার মিনিমা চলছে। এটি অত্যন্ত গভীর। সানস্পট গণনা থেকে বোঝা যাচ্ছে এটি বিগত শতাব্দীর সবচেয়ে গভীরতম অবস্থানে রয়েছে। সূর্যের চৌম্বকীয় শক্তি দুর্বল হয়ে পড়েছে। এর মানে হলো সৌরজগতে অতিরিক্ত মহাজাগতিক শক্তি প্রবেশের আভাস পাওয়া যাচ্ছে।”

এদিকে নাসার বিজ্ঞানীরা আগেই ধারণা করে রেখেছিলেন ২০২০ সালের এপ্রিল মাসের দিকে সোলার মিনিমা হতে পারে। এখান থেকেই টনি ফিলিপস এর বাণীর সাথে মিলে যায়, সবাই বিশ্বাস ও করতে শুরু করেন, আর দেশের খ্যাতনামা নিউজপেপার যদি নিউজ করে তবে বিশ্বাস কেনই বা করবো না?


সোলার মিনিমা কি তাহলে?
সূর্যে প্রচুর কালো স্পট রয়েছে, যেগুলোকে ডাকা হয় ‘সানস্পট’ নামে, এখানে তাপমাত্রা তুলনামূলক কম। যদিও খালি চোখে দেখা যায় না এদেরকে। প্রায় ১১ বছর পর পর এ সানস্পট সংখ্যা পরিবর্তনের চৌম্বকীয় ঘটনাকে বলা হয় এক ‘সোলার সাইকেল’। সানস্পট ছাড়াও আরও যা যা পরিবর্তন হয় তার মাঝে আছে করোনা লুপের সংখ্যা। এই করোনার সাথে অবশ্য আমাদের বর্তমান ভাইরাসের কোন মিল নেই। এখানে করোনা হলো “সূর্যের পৃষ্ঠের আবহমণ্ডল “।
সোলার মিনিমা সম্পর্কে বিস্তারিত লেখা রয়েছে নাসার সায়েন্স ওয়েবসাইটে

(এ সোলার উইন্ড যখন পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্রে আঘাত হানে তখন ওপরের দিকের বায়ুমণ্ডলে প্রভাব ফেলতে পারে। মাঝে মাঝে জিওম্যাগনেটিক ঝড় হয় যার ফলশ্রুতিতে দেখা যায় অরোরা, আর তাছাড়া টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটতে পারে। কক্ষপথের ‘স্পেস জাংক’ বা আবর্জনাগুলো স্বাভাবিকভাবে পৃথিবীতে এক সময় পড়লেও, সোলার মিনিমা–এর সময় পড়ে না।

 এই ব্লগগুলোও পড়তে পারেন-

সূর্যের চৌম্বকীয় ক্ষমতা কম থাকায় এ সময় বহির্জাগতিক ক্ষতিকর কসমিক রশ্মির হাত থেকে রক্ষা পাবার ঢালটুকু আর থাকে না, তাই সোলার মিনিমা–এর সময়টা নভোচারীদের জন্য বিপজ্জনক, তবে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের স্তরগুলোর হেরফের বেশি না হওয়াতে তেমন বেশি কোনো ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে না। গত ১১,৪০০ বছরের সোলার সাইকেলের রেকর্ড বের করা গিয়েছে। সপ্তদশ শতকের শেষ দিক থেকে ফরমালি সোলার সাইকেল রেকর্ড করা শুরু হয়, বর্তমানে সম্ভবত ২৪ অথবা ২৫ তম সোলার মিনিমা চলছে। – আবদুল্লাহ ইবনে মাহমুদ)

কি ক্ষতি হতে পারে?
তেমন কিছুই না। সূর্যের তাপমাত্রা কিছুটা কমে যেতে পারে এবং ফেব্রুয়ারি মাসেই এই ক্ষতির প্রভাব নিয়ে নাসা একটি পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট তৈরি করেছিলো। বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন আসন্ন কয়েক যুগের মধ্যে গ্রান্ড সোলার মিনিমা হতে পারে, এটিও খুব বেশি ভয়ংকর নয়।

জলবায়ু পরিবর্তন হতে পারে, এবং যে পরিমাণ পরিবর্তন হবে তা আমাদের বর্তমান পৃথিবীতে কার্বন ডাই-অক্সাইড ৩ বছর যাবৎ যতটুকু ক্ষতি করে ঠিক ততটুকু। মানুষ জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর মাধ্যমে যে পরিমান গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গত করে তা এই গ্রান্ড সোলার মিনিমা থেকে ৬ গুন বেশি। তাহলে একটা গ্রান্ড সোলার মিনিমা আর কি বা করবে?

লকডাউনের এই সময়ে আতঙ্কিত আমাদের রঙচঙে হেডলাইন দ্বারা খুব সহজেই ভয় দেখানো যায়। তাই NASA অথবা NOAA যতদিন না পর্যন্ত কোন সতর্কবার্তা পাঠাচ্ছে ততদিন আমরা নিশ্চিন্তেই থাকতে পারি।

কোন ভুলভ্রান্তি থাকলে এখুনি কমেন্টে জানিয়ে দিন । ঘরে থাকুন, নিরাপদে থাকুন, সুস্থ থাকুন৷


Exit mobile version