বিজ্ঞান ব্লগ

ব্ল্যাকহোলের আদ্যোপান্ত-পর্ব ৫

খাবার প্রতিযোগিতার খাদকদের দেখলে আমার যে জিনিসটার কথা মনে পড়ে তা হচ্ছে ব্ল্যাকহোল। এখন প্রশ্ন হচ্ছে ব্ল্যাকহোল কি শুধু খেয়েই যায় নাকি কিছু বেরও করে দেয়? কি বের করে কোত্থেকেই বা তাদের বহির্গমন হয়? এই গুলো নিয়েই থাকছে আজকের এই লেখা।
আচ্ছা আচ্ছা প্রশ্নগুলোর উত্তর আগে দিয়ে নিচ্ছি। 
ব্ল্যাকহোল শুধু যে রাক্ষসের মত খেতেই থাকে ব্যাপারটা কিন্তু এমন নয়। এরা কিছু রেডিয়েশনও বের করে আর যেই রেডিয়েশন এরা বের করে তাদের বলা হয় হকিং রেডিয়েশন (Hawking radiation)। তবে এই রেডিয়েশন মোটেও কিন্তু ব্ল্যাকহোলের ভিতর থেকে আসে না। কারন আমরা তো এখন জানি যে এর গ্রাভিটি এতই বেশি যে আলো পর্যন্ত বেরোতে পারে না। এর জন্য আমাদের যা জানতে হবে তা হচ্ছে “ইভেন্ট হরাইজন” (Event horaizon)
কোনো এলাকার প্রভাবশালীদের কথাই চিন্তা করা যাক। তারা তাদের এলাকায় যতটা প্রভাব দেখাতে পারে অন্য এলাকায় কিন্তু ততটা পারে না। ঠিক একই শর্ত ব্ল্যাকহোলের জন্যও প্রযোজ্য। এদেরও নিজস্ব একটা এরিয়া থাকে। যার বাইরের কোনো কিছুকে এরা টানতে পারে না। এই বর্ডার টাকেই বলা হয় “Event horaizon”. এই Event horaizon কে তথ্য ভাণ্ডারও বলা হয়। সেটা নিয়ে আরেকদিন গল্প করা যাবে।
এই Event horaizon কিন্তু খাওয়া-দাওয়ার ফলে কখনও কমে না। হয় এটি সমান থাকবে অথবা আগের চেয়ে বেড়ে যাবে। এই জিনিসটা তাপগতিবিদ্যার ২য় সুত্রের মত অনেকটা। যেখানে বলা আছে যে কোনো বস্তুর এন্ট্রপি কখনও কমে না বরং বাড়তেই থাকে। উফফ!! এই এন্ট্রপি জিনিসটা আবার কি? এন্ট্রপি মানে হচ্ছে “বিশৃঙ্খলা”। এইটা নিয়ে কথা বলে মাথা ভার করব না। একটু গুগল অথবা একাদশ-দ্বাদশ বই ঘাটাঘাটি করলেই জানা যাবে।
এই এন্ট্রপির সাথে কিন্তু তাপের খুব সুন্দর একটা সম্পর্ক আছে। আবার তাপের সাথে আমরা জানি আলো/রেডিয়েশন এর অনেক ঘনিষ্ট সম্পর্ক আছে। তার মানে ব্ল্যাকহোল এর সাথেও তাপের সম্পর্ক আছে। কিন্তু এর মানে তো ব্ল্যাকহোল রেডিয়েশন ছড়ায় যেটা কিনা অসম্ভব। এইসব চিন্তাই বিজ্ঞানী হকিং করছিলেন। কিন্তু তাপ যেহেতু আছে রেডিয়েশন তো ছড়াবেই তবে এই রেডিয়েশন ছড়ায় ব্ল্যাকহোলের Event horaizon এর আসেপাশে থাকা “ফাকা স্পেস” হতে। এইবার আমি সবাইকে একটু কোয়ান্টম ফিজিক্স এর গোলকধাঁধায় নিতে চাই।
কোয়ান্টম ফিজিক্স অনুযায়ী ফাকা স্পেস বলতে টোটাল ফাকা জায়গা কিন্তু বুঝায় না। এখানে ম্যাটার এবং এন্টি ম্যাটার জোড়ায় জোড়ায় তৈরি হয় এবং কিছুক্ষনের জন্য আলাদা হয়ে একে অপরের সাথে ধাক্কা খেয়ে আবার নিউট্রাল হয়ে যায়। এদেরকে “ভার্চুয়াল পার্টিকেল” বলা হয় যেহেতু পার্টিকেল ডিটেক্টর দিয়ে এদের ডিটেক্ট করা যায় না।
যেহেতু বর্ডার এর আশেপাশে পার্টিকেল তৈরি হয় তাই নেগেটিভ পার্টিকেল গুলো গ্রাভিটির প্রভাবে পড়ে ব্ল্যাকহোলে চলে যায় আর পজিটিভ পার্টিকেল এর এনার্জি একটু বেশি থাকায় তা নিজেকে ব্ল্যাকহোল এর হাত থেকে বাচাতে পারে। আর এইটাই রেডিয়েশন আকারে বের হয়।
ব্ল্যাকহোলের আদ্যোপান্ত-পর্ব ৪/ ক্লিক করো এখানে
ভার্চুয়াল পার্টিকেল ব্ল্যাকহোলের মধ্যে ঢুকলে কিন্তু তা “রিয়াল পার্টিকেল” এ পরিণত হয়ে যায়। আর যেই ব্ল্যাকহোলের সাইজ যত কম হয় সেখানে রিয়াল পার্টিকেল তত তারাতারি তৈরি হয়। আর তখন ব্ল্যাকহোলের ভর ধীরে ধীরে কমতে থাকে এবং ভর কমলে যেহেতু তাপমাত্রা বাড়ে তাই তখন বেশি বেশি রেডিয়েশন হতে থাকে। আর এইটাই হচ্ছে সেই “হকিং রেডিয়েশন”।
তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে এই হকিং রেডিয়েশন কিন্তু ডিটেক্ট করা অতটা সোজা না। কারন ঐ যে, ভর বেশি তো রেডিয়েশন কম। তাই এটমিক পর্যায়ের ব্ল্যাকহোলের দিকে তাকালে হয়ত এটা ভালভাবে দেখা যাবে।
অনেকের মন হয়ত এখন শুরুর দিকের সেই তথ্যভাণ্ডার এর গল্পটা শোনার জন্য উকুশ-পুকুশ করছে। সেটা নিয়েই থাকছে আমাদের পরের পর্ব (To be continued..)
Exit mobile version