অনেক গুরুত্বপূর্ণ, এর অনেক ডিমান্ড, ক্লাউড কম্পিউটিং শিখলে এই হবে সেই হবে – এর কারণ আসলে কি? কেন ক্লাউড নিয়ে এত হৈচৈ? কেন এতে এতো টাকা। কারণটা একটু জানার চেষ্টা করি-
আমি খুব নিখুঁতভাবে লিখবো না, আমার এই লেখার উদ্দেশ্য যারা এই বিষয়ে একদমই জানে না বা বুঝে না তাদের কিছু প্রাথমিক ধারণা দেয়া। তাই আমি তাদের জন্য সহজভাবে বিষয়টি তুলে ধরবো, অনেক কিছু হয়ত একটু অন্যভাবে তুলে ধরবো যেটা যারা এই বিষয়ে অভিজ্ঞ তাদের জন্য উপযুক্ত নাও হতে পারে। কাজেই পড়ার সময় মনে রাখবেন এই লেখার পাঠক যারা ক্লাউড কম্পিউটিংএ নতুন তারা।
তো শুরু করা যাক –
প্রথম কথা হচ্ছে ক্লাউড কম্পিউটিং কেন এত দামি?
কারণ হোল ডিমান্ড। আমরা জানি যে জিনিসের ডিমান্ড বেশি সেটার দাম বেশি।
এখন কথা হচ্ছে ডিমান্ড কেন বেশি? কারণ বহু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এই প্রযুক্তি ব্যাবহার করে অনেক অনেক টাকা মুনাফা করতে পারে। তাদের ব্যয় কমে যায় আর আয় বেড়ে যায়। মনে করুন কেউ যদি আপনাকে বলে যে আপনি যদি তার জন্য ১ কোটি টাকা মুনাফা বৃদ্ধি করতে পারেন, তাহলে সে আপনাকে ১ লক্ষ টাকা দিবে, তাহলে বিষয়টি কি যুক্তিযুক্ত? অবশ্যই। আর সেটাই ঘটছে এখানে। আমরা জানবো যে কিভাবে সেটা হচ্ছে।
আমরা জানি যে কোন একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যদি সফটওয়্যার ব্যাবহার করা যায় তাহলে মুনাফা বৃদ্ধি করা সম্ভব। সফটওয়্যার অনেক মানুষের কাজ কমিয়ে দিতে পারে। অনেক ভুল কম হয়। আরও অনেক সুবিধা। আবার যেসব প্রতিষ্ঠান ব্যবসাই করে সফটওয়্যার এর মাধ্যমে যেমন ই-কমার্স, তাদের তো সফটওয়্যার এর উপর নির্ভরশীলতা আরও বেশি। সফটওয়্যার বন্ধ তো ব্যবসা বন্ধ। কাজেই সফটওয়্যার যাতে সব সময় কর্মক্ষম থাকে তা অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
এখন মনে করুন একটি ই-কমার্স ওয়েবসাইট ভালো মত চলছিল। লাভও হচ্ছিল, কিন্তু আস্তে আস্তে ব্যাবহারকারী বাড়তে শুরু করলো। আর এক সময় সেটি আর ঠিকমত কাজ করতে পারলো না, তাহলে স্বভাবতই সেই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক চিন্তিত হয়ে পরবেন। তিনি চাইবেন না বিক্রি বন্ধ হয়ে যাক, বা তার ব্যবসার সুনাম নষ্ট হোক। ব্যাবহারকারীরা বিরক্ত হয়ে গেলে ব্যবসা নষ্ট হয়ে যাবে। তাই এর জন্য যেকোনো ব্যবস্থা নিতে তিনি রাজি থাকবেন।
এখন কথা হোল, তিনি কিভাবে এই সমস্যার সমাধান করতে পারেন? একটি ওয়েবসাইট একটি সার্ভারে থেকে কাজ করে। সার্ভার দুর্বল হলে অনেক ব্যাবহারকারীকে সার্ভিস দেয়া সম্ভব হয় না, তখন সমস্যা দেখা দেয়। যেমন ওয়েবসাইট স্লো হয়ে যায় বা একদমই কাজ করা বন্ধ করে দেয়।
এমন পরিস্থিতিতে আরও উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন সার্ভার ব্যাবহার করে সমস্যার সমাধান করা যেতে পারে। কিন্তু এতে খরচ আরও বেড়ে যাবে। কথা হোল, এরপর আবার ব্যাবহারকারী বাড়তে পারে আর তখন আবার একইভাবে আরও ক্ষমতাসম্পন্ন সার্ভার ব্যাবহার করতে হবে। এভাবে কয়েকবার ক্ষমতা বাড়ানোর পর দেখা যাবে খরচ এতো বেড়ে যাচ্ছে যে ব্যবসা থেকে আর কোন লাভ করা যাচ্ছে না। কারণ সার্ভার যত বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন করা হবে, তার খরচ তত বেশি হারে বাড়তে থাকবে। যেমন সার্ভারের ক্ষমতা যদি দ্বিগুণ করা হয় দেখা যাবে খরচ বাড়বে তিনগুন, আবার ক্ষমতা ৩গুন করলে খরচ পাঁচগুণ, ক্ষমতা পাঁচগুণ করলে খরচ বিশগুণ। কাজেই এভাবে ক্ষমতা বাড়াতে গেলে লাভের লাভ কিছুই হবে না। আর একটা সময় গিয়ে যখন আর উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কোন সার্ভার বাজারে পাওয়া যাবে না তখন ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে।
এটা হোল একধরনের সমস্যা যেটাকে আমরা বলি স্কেলিং এর সমস্যা। এই স্কেলিং এর সমস্যার সমাধানের জন্য আমরা একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন সার্ভার ব্যাবহার না করে কয়েকটি মোটামুটি ক্ষমতাসম্পন্ন সার্ভার ব্যাবহার করতে পারি যদি আমরা ব্যাবহারকারীদের সার্ভারগুলোতে ভাগ করে দিতে পারি। কিন্তু এই কাজটি করতে গেলে আর আগের মত করে সার্ভার ব্যাবহার করা যাবে না। এখন দেখতে হবে, যখন একজন ব্যাবহারকারী ওয়েবসাইটে ঢুকার চেষ্টা করে তখন তাকে কোন সার্ভারে পাঠাতে হবে সেটা কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এখানে তখন রাউটিং এবং লোড ব্যালেন্সার বলে একটি ফিচার নিয়ে আসতে হবে যেটা এই বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণ করবে।
এখন মনে করুন সেই মালিক যার ব্যবসা বন্ধ হতে বসেছিল, লাভের থেকে খরচ বেশি হয়ে গেছিল, আর সার্ভার কাজ করছিল না, এখন আপনি এসে যদি তাকে এইভাবে সমস্যার সমাধান করে দিতে পারেন, আবার ওয়েবসাইট কাজ করতে শুরু করে, খরচ অনেক কমে যায়, তাহলে কি সেই মালিক খুশি হবেন না? তিনি তো তখন আপনাকে অনেক বেতন দিয়ে চাকরি দিতে চাইবেন। এর উপর যদি আপনি তাকে বলেন যে কোন দিন আর তাকে এই সমস্যায় পরতে হবে না, ব্যাবহারকারী যতই বাড়ুক, লাভও বাড়তে থাকবে, সার্ভারও বন্ধ হবে না, তাহলে তো সেই মালিকের খুশিতে আত্মহারা হবারই কথা। এখনতো সে খালি চোখে টাকা দেখতে থাকবে, আর আপনাকে এর ভাগ দিতে তার কোন খারাপই লাগবে না।
ঠিক আছে, আমরা লাভ আর টাকার বিষয়টি বুঝতে পারলাম কিছুটা। কিন্তু এটার থেকেও বড় লাভ আছে যেটা আমরা এখন আলাপ করবো-
মনে করুন যে ওয়েবসাইট মালিকের কথা আলোচনা করছিলাম, তিনি যখন ব্যবসা শুরু করেন তখন ২ লক্ষ টাকা দিয়ে একটি সার্ভার কিনে ব্যবসা শুরু করেন। কিন্তু তার বিজনেস অনেক দ্রুত বাড়তে থাকে আর ৬ মাসের মধ্যেই তার আরও ক্ষমতাসম্পন্ন সার্ভার (অথবা আরও একটি সার্ভার, যেটাই হোক) কেনার প্রয়োজন পরে। তাই তাকে আরও ২ লক্ষ টাকা দিয়ে সেটা কিনতে হোল। এভাবে মনে করি ২ বছরের মধ্যে তার ১০ টি সার্ভার হয়ে গেল আর তিনি ২৫ লক্ষ টাকা এই সার্ভারের পিছনে খরচ করে ফেললেন। কিন্তু ২ বছর পরে তার টিম সফটওয়্যারটিতে কিছু পরিবর্তন আনার ফলে সার্ভারের উপর চাপ অর্ধেক হয়ে গেল, আর এজন্য তিনি টিমকে অনেক পুরস্কারও দিলেন। কিন্তু এখন সার্ভার লাগবে অর্ধেক। তাহলে এই যে তিনি এতো টাকা বিনিয়োগ করলেন, সেটা কিন্তু পানিতে গেল। কারণ এমন হতে পারে যে এরপর আর ব্যাবহারকারী বাড়ল না। কাজেই এই টাকা তুলে আনতে তার অনেক বছর লেগে যাবে অথচ তিনি এই টাকা অন্য কাজে বিনিয়োগ করতে পারতেন।
|
কোয়ান্টাম কম্পিউটার সম্পর্কে জানতে এখনই ঘুরে আসো |