বিজ্ঞান ব্লগ

ঘূর্ণিঝড় কীভাবে হয় !

ঘূর্ণিঝড়- বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকার মানুষের জন্য এক আতঙ্কের নাম। আজকের আলোচনা ঘূর্ণিঝড় কীভাবে হয়, ঘূর্ণিঝড়ে Coriolis Effect এর প্রভাব এবং ঘূর্ণিঝড়ের প্রকারভেদ নিয়ে।
• মহাসাগরে উচ্চ আর্দ্রতা এবং ২৭৹ সে. এর বেশি তাপমাত্রা ঝড় সৃষ্টির জন্য আদর্শ। পানি খুব ভালো তাপ ধরে রাখতে পারে। অর্থাৎ একে উত্তপ্ত করতে যেমন সময় লাগে, তেমনি উত্তপ্ত পানিকে ঠান্ডা করতেও সময় লাগে। এছাড়া পানিতে তাপ ছড়াতেও পারে দ্রুত। সূর্যের তাপে পানি উত্তপ্ত হলে তার সংলগ্ন বাতাসও গরম হয় এবং উপরের দিকে উঠে যায়। তখন বায়ুচাপের তারতম্য দেখা যাওয়ায় আশেপাশের উচ্চচাপ এলাকা হতে বায়ু ঐ স্থানে ধাবিত হয়। পৃথিবীর ঘূর্ণন গতির কারণে সৃষ্ট Coriolis Effect এর জন্য বায়ুর এই প্রবাহ একটি স্তম্ভের মতো কাল্পনিক অক্ষকে কেন্দ্র করে ঘুরতে ঘুরতে অগ্রসর হয়। বাইরে থেকে যতো বাতাস অক্ষের দিকে যেতে থাকে ততোই ঘূর্ণন বৃদ্ধি পায়। একই সাথে উচ্চ আদ্রর্তাবিশিষ্ট বাতাস উপরে উঠলে ঠান্ডা হয়ে ঘনীভবন প্রক্রিয়ায় মেঘের সৃষ্টি করে। এই মেঘ আবার তার মধ্যে থাকা তাপ ছড়াতে শুরু করে। ক্রমেই ঘূর্ণিঝড় শক্তিশালী হতে থাকে। সাথে সমুদ্রের ঢেউ তীব্র হয়। এই ঢেউ ঘূর্ণি এলাকা হতে বেড়িয়ে ঘূর্ণির বেগ থেকে ৩-৪ গুন বেশি দ্রুতিতে আগাতে পারে। ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রকে বলা হয় Eye of the Storm, এতে বায়ুচাপ খুব কম থাকে।
• Coriolis Effect- একদম সহজভাবে বললে এটা হলো এমন একটা অবস্থা যাতে প্রবাহী চলার সময় বেঁকে যায়। পৃথিবী গোলাকার এবং বিষুবীয় অঞ্চল বেশি প্রশস্ত। তাই ঘোরার সময় বিষুবীয় অঞ্চল অন্যান্য এলাকার তুলনায় জোরে ঘোরে। উদাহরণস্বরূপ আপনি যদি বিষুবরেখায় থেকে উত্তর আমেরিকার দিকে একটি বস্তু ছুড়ে মারেন তা কখনোই সোজাসুজি গিয়ে পড়বেনা বরং বেঁকে যাবে (To be exact ডানে যাবে) কারণ আমেরিকা আস্তে ঘুরলেও বস্তুটি তার ছোঁড়ার জায়গার ঘূর্ণন গতি ধরে রাখবে। এই সূত্র মতে উত্তর গোলার্ধে বাতাস ডানে ও দক্ষিণ গোলার্ধে বাতাস বামে যাবে। এই কারণে উত্তর গোলার্ধে ঘূর্ণিঝড়ের ঘূর্ণি হয় ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে যেখানে দক্ষিণ গোলার্ধে ঘূর্ণিঝড়ের ঘূর্ণি হয় ঘড়ির কাঁটার দিকে। আরও ভালোভাবে বোঝার জন্য: https://youtu.be/bFp3Q7LivJA
জানতে ক্লিক করো
(এখানে অনেকের confusion হয় যে উত্তর গোলার্ধে বাতাস ডানে গেলেও ঘূর্ণি counter clock-wise হয় কেন?! এর কারণ ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রে বায়ুচাপ কম, তাই আশপাশ থেকে বাতাস সেদিকে যেতে চাইবে। আশেপাশের বাতাসের আগমনকে সরলরেখা দিয়ে চিহ্নিত করলে উপরের কথা অনুযায়ী সরলরেখাগুলো ডানে সরে যাবে আর ঘড়ির কাঁটার বিপরীতে ঘূর্ণির সৃষ্টি হবে [ নীচের ছবিটি লক্ষ্য করুন]। একইভাবে দক্ষিণ গোলার্ধের ব্যাখ্যা দেওয়া যায়)
• সাইক্লোন মোরা বা হারিকেন ফ্লোরেন্স এর কথাতো আমরা শুনেছি। কিন্তু বাংলাদেশে কখনো হারিকেন বা টাইফুন আঘাত করেনি কেন? সাইক্লোন, হারিকেন আর টাইফুনের মাঝে পার্থক্যটাই কোথায়? সহজ উত্তর: কোনো পার্থক্যই নেই। এগুলো সবই অঞ্চলভেদে ঘূর্ণিঝড়ের পৃথক পৃথক নাম:
1. সাইক্লোন- মূলত দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত মহাসাগর, বঙ্গোপসাগর এবং আরব সাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়।
2. হারিকেন- প্রশান্ত মহাসাগরের উত্তর-পূর্ব অংশ এবং উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়। অর্থাৎ উত্তর আমেরিকার উভয় পাশে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়।
3. টাইফুন- প্রশান্ত মহাসাগরের উত্তর-পশ্চিম অংশে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়। মূলত পূর্ব এশিয়ায় হয়ে থাকে।
তথ্যসূত্র:
1. Wikipedia 
2. Quora
3. reflectiveteens.com 
4. bbc.co.uk
Exit mobile version