বছরের পর বছর ধরে চর্বি শব্দটি ডায়টেরি পৃথিবীতে ঋণাত্মকতা প্রকাশ করছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিশাল গবেষনায় চর্বি আর হৃদরোগের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করা হয়েছিল। সাধারনত হৃদরোগ এবং চর্বির মধ্যে সরাসরি কোন সংযুক্ততা নেই। কিন্তু বেশিরভাগ ডায়েট বিশেষজ্ঞ চর্বি কমাতে বলেন এর কারন হচ্ছে চর্বিতে প্রোটিনের থেকে বেশি ক্যালরী ও প্রচুর কার্বোহাইড্রেট থাকে। কার্বোহাউড্রেট অর্থাৎ শ্যুগার মানুষকে ওভারওয়েট করে দেয়। যার কারনে মানুষ ফুলে যায়।
একসময় নিজের প্রতি একরকম বিরক্ত হয়েই আমরা চর্বি খাওয়া একেবারেই বন্ধ করে দিই। কিন্তু তখন আমাদের শরীরের ঘাটতি পূরনের জন্য যেসব উপকারী চর্বি প্রয়োজন হয় তাও বাদ পরে যায়। ফলে হয়ে যায় হিতে-বিপরীত
মনে রাখতে হবে সব চর্বি একরকম নয়। দুগ্ধজাতীয় খাবার এবং মাংসে যে চর্বি থাকে তাকে বলা হয় স্যাচুরেটেড চর্বি। এ ধরনের চর্বি ধমনীতে প্লাক জমতে সাহায্য করে যার ফলে হার্টঅ্যাটাক, হৃদ দুর্বলতা, হার্টফেইল সহ আরো বিশেষ কিছু কার্ডিওভাস্কুলার রোগ দেখা দিতে পারে।
অন্যদিকে বিভিন্ন উদ্ভিদ ও স্বাস্থ্যকর তেলে থাকে মনো-স্যাচুরেটেড এবং পলি-আন-স্যাচুরেটেড চর্বি যা আমাদের কোলেস্টেরল লেভেলে সমতা রেখে আমাদের স্বাস্থ্যরক্ষা করে। ওমেগা-৩ আন-স্যাচুরেটেড গ্রুপের চর্বি আমাদের শারীরবৃত্তিও বিভিন্ন ক্রিয়াকলাপের জন্য প্রচন্ড দরকারি। আমাদের শরীর কখনই এ চর্বি নিজ থেকে উৎপন্ন করতে পারে না। এটি বিভিন্ন খাবারের মধ্যে পাওয়া যায় বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছ (স্যামন, টুনা, সারডিন), বাদাম, ভেজিটেবল ওয়েল, অলিভ ওয়েল, গম, আনহাইড্রোজেনেটেড সয়াবিন ইত্যাদিতে। ছেলেদের ক্ষেত্রে প্রতিদিন প্রায় ৬১০ মিলিগ্রাম এবং মেয়েদের ক্ষেত্রে ৪৩০ মিলিগ্রাম ওমেগা ৩ চর্বি দরকার। সপ্তাহে অন্তত দুইদিন সামুদ্রিক তেলযুক্ত মাছ খান।
Note: বাজারে ওমেগা ৩ এর ক্যাপসুল পাওয়া যায়। যা হৃদরোগের রুগীর জন্য খুবই উপকারি। কিন্তু গর্ভবতী মহিলাদের এই ক্যাপসুল গ্রহন করা উচিত নয়।
রক্তের কোলেস্টেরলের প্রায় এক তৃতীয়াংশ বহন করে হাই-ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন (High Density Lipoprotein-HDL)। একে বলা হয় “The Good Cholesterol” । কারণ ক্ষতিকর কোলেস্টেরল অপসারণে সহায়তা করে HDL । তাই ধমনীর দেয়ালে এটি জমা হবার সুযোগ পায়না। HDL এরমান যত উঁচু তত ভালো। যাদের রক্তে HDL খুব কম এদের হৃদরোগ হবার সম্ভাবনা বেশি। অলিভ ওয়েল, শিমের বিজ, হাই ফাইবার ফ্রুট (আম, আপেল, কলা, স্ট্রবেরী, কমলা, পেয়ারা), চর্বিযুক্ত মাছ, চিনা বাদাম, শষ্যদানা, সয়াসস, অ্যাভোক্যাডো ইত্যাদিতে প্রচুর HDL Cholesterol থাকে।
২০ বছরের বেশি বয়স হলে কোলেস্টেরল চেক্ করানো উচিত এবং পাঁচ বছরে একবার করে টেস্ট করানো ভালো। টেস্টের নাম হলো ফাস্টিং লিপিড প্রোফাইল। এ টেস্টে ৯-১০ ঘন্টা উপবাস থাকার পর দেখা হয় শরীরে কতটুকু কোলেস্টেরল আছে। এবং এটিই প্রকৃত পরিমাপ।
চর্বির আরো কিছু উপকারী দিক হল, চর্বি ব্লাড শ্যুগার লেভেল বৃদ্ধিতে খুবই সামান্য অবদান রাখে। চর্বিই আমাদের দেহের শক্তির প্রধান উৎস। চর্বিই আমাদের দেহের পুষ্টি উপাদান এবং ভিটামিনসমূহ শোষন করতে সাহায্য করে। সুতরাং পরিমিত পরিমানে চর্বি গ্রহন স্বাস্থ্যের জন্য শুধু উপকারিই নয় দরকারীও বটে।