বিজ্ঞান ব্লগ

হেক্সাঃ দ্যা আম্যাজিং স্পাইডার রোবট

‘আর্টিফিসিয়াল ইন্টিলিজেন্স’ এই শব্দটির সাথে কম বেশি আমরা সকলেই পরিচিত। কিন্তু প্রকৃতঅর্থে কতখানি এর সম্পর্কে আমরা জানি তা সন্ধিহান। অনেকেই মনে করেন যে আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স শুধুমাত্র সায়েন্স ফিকশন মুভিতেই দেখানো সম্ভব, বাস্তবে এর কোন প্রয়োগ নেই। আবার অনেকে মনে করেন ভবিষ্যতে হয়তো এরকম কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন রবোট পাওয়া যেতে পারে।

তাদের জন্য রয়েছে সুখবর, রোবট নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ভিনক্রস নিয়ে এসেছে কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন স্পাইডার রবোট যার নাম রাখা হয়েছে হেক্সা।
হেক্সা ছয় পা বিশিষ্ট একটি মাকড়সা আকৃতির রোবট। এর তিনটি চোখ একে অনবদ্যভাবে সামনের দিকে চালিত করে। চলার পথে সমস্ত বাধা অতিক্রম করে এটি তার মনিবের জন্য কাংখিত জিনিসটি নিয়ে ফিরে আসে।
যদিও অন্যান্য ড্রোনের মতো হেক্সা উড়তে পারে না, তবে আপনি চাইলে এটা দিয়ে মজাও করতে পারবেন। রাতের বেলায় যখন আপনার বন্ধুরা ঘুমে বিভোর থাকবে, তখন একে বিছানায় ছেড়ে দিয়ে খানিকটা ভয় দেখাতে পারবেন, সঙ্গে পুরোনো প্রতিশোধও মিটে যাবে। 
এই আর্টিকেলে আমরা হেক্সা সম্পর্কে আরো বিস্তারিত তথ্য জানবো। চলুন জেনে নেওয়া যাক-

হেক্সার মডেলটি নির্মাণ করা হয়েছে ছয় পা বিশিষ্ট পতঙ্গের অনুকরণে। ছয়টি পা থাকার কারণে এটি যেকোন জায়গা দিয়েই চলতে পারে। চালনাশক্তির প্রতি গুরুত্ব দিয়ে নির্মাণকারীরা এর এমন ডিজাইন দিয়েছেন কারণ পূর্বে নির্মিত রবোটগুলি সব জায়গায় চলতে পারতো না।  
আপনাদের মাথায় হয়তো ইতিমধ্যে  ঘুরপাক খাওয়া শুরু হয়ে গেছে যে  কি কি থাকতে পারে এই অদ্ভুত রবোটটির শরীরে। চলুন জেনে নেই। এর শরীরে রয়েছেঃ

প্রযুক্তির বরপুত্রঃনতুন পৃথিবী আনছেন এলন মাস্ক-Click Here

হেক্সা এমনসব জায়গা দিতে চলাচল করতে পারে যেখানে হয়তো মানুষের পক্ষে যাওয়া সম্ভব না। এর এই মাকড়সারূপী আকৃতি একে সর্বোচ্চ মোবিলিটি ও ডেক্সারিটি এনে দিয়েছে।
ইনফ্রারেড ট্রান্সমিটারঃ এই রবোটটিতে ইনফ্রারেড লাইট ব্যবহার করা হয়েছে যার কারণে এটি ঘরে অবস্থিত যেকোন ইলেকট্রনিকস যেমন: টিভি, এসি প্রভৃতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
সেন্সরঃ রবোটটিকে আরো উন্নত করার জন্য এতে পরিমাপ করতে পারার সেন্সর দেওয়া হয়েছে। এতে করে এটি সামনে অবস্থিত যেকোন দেয়াল বা যেকোন বাধাকে নিরূপণ করতে পারে। এই সেন্সর ৪ ইঞ্চি থেকে ৬০ ইঞ্চি সমমানের বাধাকে নিরূপণ করতে পারে।
চোখঃ রবোটের চোখ! কি অবাক হয়ে গেলেন? এখানে চোখ বলতে আসলে বুঝানো হয়েছে ক্যামেরাকে। এ রবোটে তিনটি উচ্চ মেগাপিক্সেলসম্পন্ন ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। মজার বিষয়  হচ্ছে হেক্সা তার মনিবকে অপরিচিত ব্যাক্তি থেকে পৃথক করতে পারে। ব্যাপারটা কিন্তু আসলেই দারুণ!
ব্রেইনঃ হেক্সাতে অত্যন্ত উন্নতমানের প্রসেসর ও কো-প্রসেসর ব্যবহার করা হয়েছে যা একে অন্যান্য রবোট থেকে আরো বেশি কার্যকরী করে তুলেছে। এর মূল প্রসেসরটি ইমেজ, ভিডিও, ফেইস, ভয়েস রি-কগনিশন এবং মেশিন লার্নিং এলগরিদমকে সাপোর্ট করে। অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করার কারণে এটি সব পরিবেশের সাথে ভালো ভাবে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে। ছয় পা বিশিষ্ট এ রবোটটির বড় গুণ হলো একে নিজের মতো করে শেখানো যায়। কেউ চাইলে একে নিজের মতো করে ট্রেইন করাতে পারবে।
হেক্সা রবোটটির নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান ভিনক্রসের ডেভেলপারদের মতে, আধুনিক বিশ্বে রোবোটিক্সের মূল সমস্যা হলো বাজারে যে রবোটগুলি ছাড়া হয় এগুলোর দাম সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাহিরে থাকে, পাশাপাশি এগুলো চালনা করাও বেশ কষ্টসাধ্য। অপরদিকে কমদামি রবোটগুলি অনেকটা খেলনা পর্যায়ের মধ্যে পড়ে যায়। ভিনক্রসের ডেভেলপাররা দাবি করেন, তাদের এই রবোট বাজারের বাজেট সাশ্রয়ী রবোটগুলোর মধ্যে একটি। 

ছয় পা ও তিন চোখ বিশিষ্ট এই রবোট মাকড়সাটির মূল্য মাত্র ৫০০ ইউএস ডলার। হেক্সা লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেমে পরিচালিত হয় বিধায় একে চালনা করা বেশ ইউজার ফ্রেন্ডলি। এ রবোটটি পরিচালনা করার জন্য এক্সপার্ট হওয়ার প্রয়োজন নেই, শুধু কিছু প্রোগ্রামিং স্কিলস থাকলেই একে চালনা করা যাবে।
ভিনক্রেসের প্রতিষ্ঠাতা সান তিয়ানকি জানান, হেক্সা রবোটটি ইতিমধ্যে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। এই উদ্ভাবনের মধ্য দিয়ে রবোটিক্সের এক নতুন অধ্যায় শুরু হয়েছে যা এই ইন্ডাস্ট্রির উন্নয়নকে আরো ত্বরান্বিত করেছে।   
Exit mobile version