বিজ্ঞান ব্লগ

মঙ্গল-আমাদের পরবর্তী গন্তব্য? সুবিধা, অসুবিধা আর পরিকল্পনা

মঙ্গল গ্রহ- যা নিয়ে আমাদের কল্পনার শেষ নেই। এমন কোনো মানুষ বোধহয় পাওয়া যাবেনা যে লাল গ্রহে যাওয়ার স্বপ্ন দেখেনি। কিন্তু কখনো কী ভেবে দেখেছি এতো গ্রহ থাকতে মঙ্গলেই কেনো মানুষ যেতে চাচ্ছে? সেটা নিয়েই আজকের আলোচনা।

মঙ্গল বাদে অন্য গ্রহ এবং চাঁদকে কম বিবেচনা করার কারণগুলো:

1. বুধ খুবই গরম। তাছাড়া বায়ুমন্ডল অনেক পাতলা এবং পরিবর্তনশীল।

2. শুক্রে এসিড বৃষ্টি হয়। পৃষ্ঠের তাপমাত্রা এতোই বেশি যে এই বৃষ্টি মাটিতে পড়ার আগেই বাষ্পে পরিণত হয়।

3. চাঁদে অভিকর্ষজ ত্বরণ এতোই কম যে তা বায়ুমন্ডল আটকে রাখতে পারেনা বললেই চলে। ক্ষতিকর radiation থেকে বাঁচার উপায় নেই। তাছাড়া solar panel চালানোর জন্য পর্যাপ্ত সৌরশক্তি নেই। এছাড়া natural resource ও কম। তবুও অনেকের মতে আগে চাঁদে colony করি উচিত।

4. বৃহস্পতি হল গ্যাসপূর্ণ গ্রহ। গ্যাসের উপর তো আমরা দাঁড়াতে পারবোনা। এছাড়াও radiation এতোই বেশি যে মনে হবে আমরা ওভেন এর ভিতরে।

5. এরপরের গ্রহগুলো সূর্য থেকে এতোই দূরে যে তারা প্রচন্ড ঠান্ডা। যদিও কম radiation আর পুরু বায়ুমন্ডল থাকায় অনেকে শনির চাঁদ টাইটানকে prefer করেন।
গল্পে গল্পে ব্ল্যাকহোলের বিস্তারিত জানতে ক্লিক করো এখানে
এবার মঙ্গল গ্রহের ক্ষেত্রে যে সুবিধাগুলো পাওয়া যাবে তা বিবেচনা করা যাক:

• মঙ্গলের ১ দিন= ২৪ ঘন্টা ৩৯ মি. ৩৫ সে.। তাই মানিয়ে নেওয়া সহজ হবে।

• মঙ্গলের অক্ষীয় ঢাল ২৫.১৯৹ যা পৃথিবীর প্রায় সমান (২৩.৪৪৹)। তাই মঙ্গলেও পৃথিবীর মতো ঋতু পরিবর্তন হয়।

• মঙ্গলে বৃষ্টি হয়না, মেঘও নেই (অনেক সময় dust storm মেঘ এর মতো অবস্থার সৃষ্টি করে), তাই ঠান্ডা আবহাওয়াতেও সূর্যের আলো আসে। সেজন্য solar panel ব্যবহার করার জন্য যথেষ্ট সৌরশক্তি পাওয়া যায়।

• মঙ্গলের ভূমিপৃষ্ঠের আয়তন পৃথিবীর শুষ্ক ভূমির প্রায় সমান।

• মঙ্গলের প্রাকৃতিক সম্পদের মধ্যে আছে: সৌরশক্তি, CO2, পানি(মূলত Polar Ice Cap এ থাকা বরফ এবং ড্রাই আইস), লোহার আকরিক।

• মঙ্গলে প্রাণের অস্তিত্ব খুঁজে পাবার জন্য আজো বিজ্ঞানীরা আশাবাদী। আর একই সৌরজগতের দুটি গ্রহে প্রাণের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া জীববিজ্ঞানের জন্য হবে আশীর্বাদ, মঙ্গলে বসবাস সেই গবেষণার পথকে আরো সুগম করবে সন্দেহ নেই।

• মঙ্গল পৃথিবীর থেকে অপেক্ষাকৃত কাছে হওয়ায় যাতায়াত খরচ কম পড়বে (ব্যতিক্রম-শুক্র, চাঁদ)।

• অপেক্ষাকৃতভাবে তাপমাত্রা সহনীয় (মঙ্গলের গড় তাপমাত্রা -৬৩৹ সে. যা এন্টার্টিকার গড় তাপমাত্রার কাছাকাছি)

তবে মঙ্গল গ্রহের ক্ষেত্রেও কিছু অসুবিধা আছে:

• প্রথমত মঙ্গলের বায়ুমন্ডল খুবই পাতলা আর বায়ুচাপ খুব কম, যা মোকাবিলা করার জন্য শক্তিশালী প্রযুক্তির দরকার।

• মঙ্গলের নিজস্ব চৌম্বকক্ষেত্র নেই বললেই চলে, তার সাথে উল্লেখিত বায়ুমন্ডলের জন্য radiation অনেক বেশি। তাই মঙ্গলে স্থায়ী বসবাস শুরুর আগে অবশ্যই radiation shield তৈরী করতে হবে।

• মঙ্গলের বায়ুতে ৯৫.৩২% কার্বন ডাই অক্সাইড, ২.৭% নাইট্রোজেন, ১.৬% আর্গন, ০.১৩% অক্সিজেন(space.com)। তাই স্থায়ী বসতি গড়ার আগে বায়ুমন্ডলে যথেষ্ট পরিবর্তন আনতে হবে।

• মঙ্গলে আছে শক্তিশালী ধূলিঝড়।

• মঙ্গলের মাটি বিষাক্ত হওয়ায় তা চাষাবাদের জন্য উপযুক্ত নয়।

• মঙ্গলের মধ্যাকর্ষণ শক্তি পৃথিবীর ৩৮%, তাই মানুষের শরীরে বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। তবে কিছু বিজ্ঞানীর মতে পর্যাপ্ত ব্যায়াম করলে এর সাথে মানিয়ে নেওয়া সম্ভব।

সমস্যা দূরীকরণের জন্য যেসব উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে:
• মঙ্গলের মাটিতে আছে পারক্লোরেট নামক বিষাক্ত যৌগ, যা থেকে শ্বসনের জন্য অক্সিজেন তৈরী করা যেতে পারে। (তবে এর সংস্পর্শে আসলে শরীরে নানা রোগ হতে পারে।)

• পানি থেকে ইলেকট্রোলাইসিস পদ্ধতিতে অক্সিজেন এবং হাইড্রোজেন আলাদা করার কথাও ভাবা হচ্ছে।

• এছাড়াও কার্বন ডাই অক্সাইড এ বেঁচে থাকতে সক্ষম এক ধরণের উদ্ভিদ ব্যবহার করে মাটি থেকে অক্সিজেন অবমুক্ত করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

• মঙ্গলে একটি ছোট colony তৈরীর পর পুরোপুরিভাবে সহনীয় স্থায়ী আবাস গড়ার জন্য Terraforming একটি আশাবাদী শব্দ। সহজ ভাষায় মঙ্গলে Global Warming এর concept কাজে লাগানো হবে। এতে করে বায়ুমন্ডল অধিক তাপ ধরে রাখবে এবং বরফ গলে যাবে। পরবর্তীতে মেঘ সৃষ্টি হবে। সময়ের পরিক্রমায় একসময় মঙ্গলে পৃথিবীর মতো পরিবেশের সৃষ্টি হবে। তবে এটি একটি জটিল ও সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া। NASA-র মতে Terraforming এর জন্য বর্তমান প্রযুক্তি যথেষ্ট নয় (Tech Times, Aug 02, 2018)।

• মঙ্গলের কক্ষপথে বিশাল আয়না বসানোর কথা ভাবা হচ্ছে, যা দ্বারা সূর্যের আলো প্রতিফলিত করে গ্রহের তাপমাত্রা বাড়ানো সম্ভব।
ক্লাউড কম্পিউটিং-আদ্যোপান্ত পেয়ে যাবে এখানে

এখন আসা যাক মঙ্গল নিয়ে মানুষের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার মাঝে:

• Mars One- অনেকেই এই প্রজেক্টের কথা শুনেছি। Mars One ২০১১ সাল থেকে পরিকল্পনা করছে। পরিকল্পনা মতে ২০২৪ সালে একটি communication satellite উৎক্ষেপণ করা হবে। আর ২০৩১ সালে মানুষ মঙ্গলের উদ্দেশ্যে রওনা হবে। তবে কম ফান্ডিং, স্পেস হার্ডওয়্যার নিয়ে পর্যাপ্ত জ্ঞান না থাকা, space radiation এর ঝুঁকি- এসব কারণে Mars One Project কে অনেক জায়গায় suicide mission বলা হয়েছে।

• NASA- অনেক আগে থেকেই NASA মঙ্গলে বিভিন্ন rover আর spacecraft এর সাহায্যে পরীক্ষা চালিয়ে আসছে। তার সর্বশেষ সংযোজন ২৬ নভেম্বর, ২০১৮ তে মঙ্গলে InSight অবতরণ করানো। এছাড়া, ২০৩০ এর আশেপাশে NASA মঙ্গলে মানুষ পাঠানোর পরিকল্পনা করছে। উল্লেখ্য, বর্তমান NASA-র পরিকল্পনা অনেকক্ষেত্রে ট্রাম্প প্রশাসনের উপর নির্ভরশীল।

• SpaceX- ২০২২ সালে কার্গো এবং প্রয়োজনীয় উপাদান মঙ্গলে নিয়ে যাবার জন্য দুটি mission পরিচালনা করবে SpaceX। সব ঠিকভাবে গেলে ২০২৪ এ মঙ্গলে মানুষ অবতরণ করানোর আশা রাখেন SpaceX CEO Elon Musk (Business Insider, Nov02, 2018)।
এছাড়াও Roscosmos, CNSA, Boeing সহ বিভিন্ন কোম্পানির মঙ্গল গ্রহ নিয়ে বিভিন্ন পরিকল্পনা আছে।

মঙ্গল যাত্রায় মানুষ কতোটুকু সফল হবে তা সময়ই বলে দিবে। কিন্তু, যেদিনই মানুষ মঙ্গলের বুকে প্রথম পা দিবে, সেদিন থেকেই মানুষ বহুজাগতিক প্রজাতি হবার পথে শতভাগ এগিয়ে যাবে, সন্দেহ নেই।

তথ্যসূত্রঃ
1. Wikipedia
2. space.com
3. businessinsider.com
4. mar-one.com
5. nasa.gov
6. techtimes.com
Exit mobile version