বিজ্ঞান ব্লগ

কোয়ান্টাম কম্পিউটিং-আদ্যোপান্ত

আমরা যেসকল ট্রেডিশনাল কম্পিউটার ব্যবহার করে থাকি সেগুলো বাইনারি এর মাধ্যমে অপারেট করে থাকে। বাইনারি এর ০ আর ১ আমাদের কাছে খুবই পরিচিত।
০ আর ১ কে বিট ও বলা হয় যা বাইনারী ডিজিট এর সংক্ষিপ্ত রূপ। কম্পিউটার এর যাবতীয় সকল কাজ বাইনারীর যোগ, বিয়োগ এর মাধ্যমেই হয়ে থাকে। ছোট ছোট এসকল যোগ বিয়োগের প্রসেসের মাধ্যমেই অ্যাস্ট্রোফিজিক্স বা গণিতের বড় বড় সমাধান করে ফেলা যায়। 

দুই বিটের বাইনারী সংখ্যা ৪ ভাবে লিখা যেতে পারে যেমন: 00,01,10 এবং 11।
সাধারণ কোন কম্পিউটারকে যদি বলা হয় এই দুই বিটের চারটি সংখ্যা থেকে 10 কে ডিটেক্ট করতে তাহলে কম্পিউটার ৪ টি সংখ্যাকেই অ্যানালাইজ করে দেখবে যে সেটি 10 কিনা এরপর সে ফলাফল প্রকাশ করবে। বড় বড় ক্যালকুলেশন বা ডেটাবেজ সার্চিং ইত্যাদি ক্ষেত্রে এটা বেশ সময়সাধ্য ব্যাপার। আর এখানেই বিপ্লব ঘটাতে আসছে কোয়ান্টাম কম্পিউটিং।

কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এ বিট এর পরিবর্তে ব্যবহার করা হয় কিউবিট (Qubit) যা একই সাথে 0 আবার 1 ও হতে পারে। বিষয়টিকে বোঝার জন্য আমরা একটি কয়েনের কথা চিন্তা করতে পারি যেটায় একটি হেড ও একটি টেল রয়েছে। কয়েনটিকে যদি টস করা হয় তাহলে মাটিতে পড়ার আগ পর্যন্ত এটি হেড বা টেল যেকোন একটি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। 
একটু আগেই বলেছি সময়ের ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন আনবে কোয়ান্টাম কম্পিউটিং।
কিন্তু কিভাবে? ধরুন আপনি একটি ৮ বিটের হিডেন নাম্বার ক্র‍্যাক করতে চাচ্ছেন। তাহলে আপনাকে ২৫৬ (২^৮) টা বাইনারী ডিজিট থেকে সঠিক নাম্বারটি বের করতে হবে। আপনি সবগুলো বাইনারী ডিজিট রিভিউ করবেন এবং ফাইনালি হিডেন নাম্বার টি পেয়ে যাবেন।
ধরে নেই এটি করতে আপনার ৫ মিনিট লাগল। 
গল্পটি পড়তে এখনই ক্লিক করো এখানে
কিন্তু একটি কোয়ান্টাম কম্পিউটার এই কাজটি করতে মাত্র কয়েক ন্যানোসেকেন্ড সময় নেবে। কারন কিউবিটে একই সাথে সবগুলো ফলাফলই থাকবে। ৮ কিউবিট একই সাথে ২৫৬ ধরনের বাইনারি ডিজিটকেই রিপ্রেজেন্ট করছে এবং বিট গুলো উলটে পালটে নিলেই হিডেন নাম্বারটি বেরিয়ে আসবে। 
ফেসবুক, গুগলে ব্যবহার করা পাসওয়ার্ড গুলি অ্যালগরিদম এর মাধ্যমে এনক্রিপ্ট করা হয় এবং সেগুলো ডিক্রিপ্ট একে একে করতে গেলে শত শত বছর পর্যন্ত লাগতে পারে যা কোয়ান্টাম কম্পিউটার মূহুর্তেই করে ফেলবে। গ্র‍্যাডিয়েন্ট অপারেটর নামক একটি টুল সঠিক সংখ্যাটি ছাড়া বাকি সবগুলো নাকচ করে দেয় এবং এভাবেই সমস্যার সমাধান করা হয় চোখের পলকে।
কোড ব্রেকিং, রিসার্চ ইত্যাদি বিভিন্ন কাজে গুগল, ইন্টেল তাদের ডেভেলপ করা কোয়ান্টাম কম্পিউটারের প্রসেসিং পাওয়ার ক্লাউডের মাধ্যমে ভাড়া দেয়। তবে কোয়ান্টাম কম্পিউটার যে নরমাল কম্পিউটার কে রিপ্লেস করবে তা নয়। কিছু কিছু কাজ সাধারণ কম্পিউটার দ্রুততার সাথে করে থাকে কোয়ান্টাম কম্পিউটারের থেকে তার ফিজিক্যাল অ্যাডভান্টেজ এর জন্য। কোটি কোটি সংখ্যা থেকে একটি সংখ্যা বের করতে সাধারণ কম্পিউটার এর প্রচুর সময় লাগলেও ৫০ বার ৯৯ যোগ করতে সাধারণ কম্পিউটারেই অপেক্ষাকৃত কম সময় লাগবে। তবে কম্পিউটিং দুনিয়াকে যে এই দ্রুতগতির কম্পিউটার পালটে দেবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা।
Exit mobile version