এই মুহুর্তে যদি নবম কিংবা দশম শ্রেনীর কোন ছাত্র-ছাত্রীকে জিজ্ঞাসা করা হয়, বিজ্ঞান বিভাগের সবচেয়ে কঠিন সাবজেক্ট কোনটা?
সে ছোটখাটো একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস নিয়ে মাথাটা একটু ঝুকিয়ে হাজারটা প্রত্যাশাজড়িত কন্ঠে উত্তর দেবে “ফিজিক্স”।
কেন ফিজিক্স?
– কারন গতির সূত্র পারি কিন্তু অ্যাপ্লাই করতে পারি না
– চলতড়িৎ পড়তে মজা লাগে কিন্তু পরীক্ষার কোশ্চেনই বুঝি না! (এ লিস্টের মান হতে পারে টেন্ডস টু ইনিফিনিটি……..)
এরপর টেনেটুনে কোনমতে নবম-দশমের গন্ডি পার করে ইন্টারমিডিয়েট। সেটাও কোনমতে পার করতে পারলেই, মাফ চেয়েছি ফিজিক্সকে নমস্কার!
কিন্তু এর পরেও কিছু কিছু প্রেমিক থাকে যারা ফিজিক্সকে মন প্রান দিয়ে ভালবাসে। যতটুকু সময় ফিজিক্স পড়ে মন প্রান একসাথে লাগিয়ে পড়ে। কিন্তু সেই ফিজিক্স নিয়ে অনার্স পড়বার প্রশ্ন এলে আগে এ চিন্তাই মাথায় আসে আদৌ ফিজিক্স পড়ে আমরা করব টা কি? বাংলাদেশে থেকে ফিজিক্সের ফিউচার কি?
সঙ্গে চাচা, মামা, পাশের বাড়ীর আন্টির অপ্রত্যাশিত সুদূরপ্রসারী ভবিষদ্বানী তো আছেই।
ফিজিক্সে সম্পর্কিত চমৎকার কিছু প্লাটফর্মের সংক্ষিপ্ত বর্ননা করার চেষ্টা করছি-
#উচ্চতর_গাণিতিক_ও_কেস_সলভিং_দক্ষতাঃ
পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে পড়তে আসা স্টূডেন্টদের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ঠ হলো উচ্চতর গানিতিক দক্ষতা, উচ্চতর সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা এবং যে কোন বিষয় সম্পর্কে সহজে বুঝতে পারার ক্ষমতা, যা তাদের পরবর্তী জীবনে অত্যন্ত সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। বিশ্বের মস্ত বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এই বিভাগের শিক্ষার্থীরাই ভবিষ্যতে গিয়ে কেবল পড়াশুনাই করে নাই, শিক্ষকতাও করেছে। জগতের সবচেয়ে বড় গবেষণা সংস্থাগুলোতেও (CERN, NASA) কাজ করেছে এই বিভাগের শিক্ষার্থীরাই।
|
রসায়ন -র সাবজেক্ট রিভিউটি পড়তে ক্লিক করো |
#প্রোগ্রামিং_করার_ক্ষেত্রে_এক্সট্রা_সুবিধা –
প্রোগ্রামিং যাদের প্যাশন তারা যদি কোন কারনে প্রযুক্তিমূলক সাবজেক্ট (CSE, IT, ICT) সাবজেক্টগুলোতে চান্স না পাও তবে অনায়াসে ফিজিক্স নিয়ে পড়তে পারো। মোটামুটি ওয়েব ডেভলপিং ছাড়া অন্যান্য প্রোগ্রামিং এর ক্ষেত্রে পদার্থবিজ্ঞান ষ্পষ্টভাবে কাজে লাগবে। যদি তুমি গেইম ইঞ্জিন তৈরি করতে চাও কিংবা গেইম ডেভলপিং, রোবটিক্স নিয়ে কাজ করতে চাও তবে পদার্থবিজ্ঞান অবশ্যই কাজে দেবে। পদার্থবিজ্ঞানের কিছু কিছু অ্যালগরিদম সরাসরি কাজে লাগবে প্রোগ্রামিং এ।
এছাড়া পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্রছাত্রীদের অনেক বেশি বিশ্লেষনমূলক চিন্তা দক্ষতা (Analytical Thinking Skill) থাকে যা বলতে অপেক্ষা রাখে না যে কতটুকু প্রয়োজন হয় প্রোগ্রামারদের জন্য।
তাছাড়া পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ে প্রোগ্রামিং নিয়ে আলাদা একটা আস্ত কোর্সই থাকে।
প্রোগ্রামিং শিখে কি করবে জানতে হলে দেখে আসতে পারোঃhttps://www.sciencebee.com.bd/blogs/subject-review-iit/
#বৈজ্ঞানিক_কর্মকর্তা (Scientific Officer)
পদার্থবিদদের জন্য বিশেষভাবে বাংলাদেশে স্বপ্নের দুটি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পরমানু শক্তি কমিশন (BAEC) এবং বাংলাদেশ পরমানু শক্তি কর্তৃপক্ষ নিয়ন্ত্রন (BEARC)। এ দুটি প্রতিষ্ঠানে প্রতি বছর পদার্থবিদরা বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হচ্ছেন। তবে এ দুটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি পেতে যা দরকার হয় তা হলো SSC, HSC, স্নাতক (Honors) ও স্নাতকোত্তর (Masters) -এ প্রথম শ্রেনীর রেজাল্ট থাকতে হবে এবং “Nuclear Physics” এর উপরে থিসিস থাকতে হবে।
কিন্তু যাদের প্রথম শ্রেনীর রেজাল্ট নেই তাদের কি হবে? তাদের জন্য রয়েছে আরো বেশি সেক্টর। এগুলোর মধ্যে-
১. বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষনা পরিষদ (BCSIR)
২. মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন সংস্থা (SPARRSO)
৩. বাংলাদেশ পাট গবেষনা ইনস্টিটিউট (BJRI)
৪. বাংলাদেশ পরমানু কৃষি গবেষনা ইনস্টিটিউট (BINA) উল্লেখযোগ্য। এসব প্রতিষ্ঠানে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে পদার্থবিদরা আবেদন করতে পারবেন।
#এরোড্রম_অফিসার
বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (CAAB) প্রতিষ্ঠানে প্রতি বছর এরোড্রম অফিসার হিসেবে পদার্থবিদদের চাহিদা থাকে।
#সহকারী_কার্ট্রোগ্রাফার
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীন নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (BIWTA) এবং বাংলাদেশ অভ্যন্তরীন নৌ পরিবহন করপোরেশন (BIWTC) এ দুটি প্রতিষ্ঠানে সহকারী কার্ট্রোর্গ্রাফার হিসেবে
পদার্থবিদরা আবেদন করতে পারবেন।
#ইলেক্ট্রিকাল_পাওয়ারপ্লান্ট_এ_এক্সিগিউটিভ_ট্রেইনি (Executive Trainee)
বাংলাদেশে নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট কোম্পানী বাংলাদেশ, নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন, সামিত পাওয়ার লিমিটেড, আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন, ম্যাক্স পাওয়ার সহ আরো অনেকগুলো পাওয়ার প্লান্ট রয়েছে। এ পাওয়ার প্লান্টগুলোতে এক্সিগিউটিভ ট্রেইনি হিসেবে পদার্থবিদদের নিয়োগ দেওয়া হয়।
#Google_এ_জবের_সুযোগ–
Google এর মত স্বপ্নের সেক্টরটি সবারই প্রত্যাশার শীর্ষে থাকে। এ প্রতিষ্ঠানটিতে ডাটা সায়েন্টিস্ট হিসেবে পদার্থবিদদের নিয়োগ দেওয়া হয়ে থাকে যার জন্য অবশ্যই প্রথম শ্রেনীর রেজাল্ট প্রয়োজন হয়।
এছাড়া গুগল এ মার্কেটিং অ্যানালাইটিক ম্যানেজার, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং, অডিও সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ারিং, টাচ সেনসর হার্ডওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং ইত্যাদি পদে পদার্থবিজ্ঞান ব্যাকগ্রাউন্ডের ছাত্রছাত্রীরা অগ্রাধিকার পায়। গুগলে একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার এর মাসিক স্যালারি ৯৩ হাজার মার্কিন ডলার।
#NASA_তে_জবের_সুযোগ–
The National Aeronautics and Space Administration । বলা বাহূল্য পদার্থবিজ্ঞান নিয়ে পড়ার অন্যতম উদ্দেশ্যই থাকে NASA তে জব পাওয়া। তবে এ জন্য নিঃসন্দেহে প্রয়োজন প্রথম শ্রেনীতে প্রথম ফলাফল।
NASA তে কম্পিউটার সায়েন্স, অ্যাস্ট্রো-ফিজিক্স, ফিজিকাল সায়েন্টিস্ট, রিসার্চ কনসালট্যান্ট, কম্পিউটার সায়েন্টিস্ট, সিনিওর সায়েন্টিস্ট হিসেবে পদার্থবিদদের চাহিদা ব্যাপক।
পদার্থবিজ্ঞান থেকে স্নাতক শেষ করে#নিউক্লিয়ার_ইঞ্জিনিয়ারিং (যা বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো হয়ে থাকে) এর উপর স্নাতকোত্তর করা হলে NASA তে অগ্রাধিকার এবং বাংলাদেশের কিছু ক্ষেত্রে জবের সুযোগ বেড়ে যাবে।
#প্রোবেশনারি_অফিসারঃ (১ম শ্রেনীর অফিসার)
পদার্থবিদরা বাংলাদেশের কিছু সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংক, ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি এবং কিছু প্রতিষ্ঠানে প্রোবেশনারী অফিসার হিসেবে জয়েন করতে পারবে। এসব জায়গাতে স্বল্প-বয়স এবং সম্প্রতি গ্রাজুয়েটদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। যারা খুব সম্প্রতি গ্রাজুয়েটেড হয়েছে তাদের জন্য এটি একটি প্লাস পয়েন্ট।
#শিক্ষকতাঃ
সবচেয়ে আরামদায়ক, জনপ্রিয় ও সহজ সেক্টর হলো শিক্ষকতা। বাংলাদেশে পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষকের চাহিদা অনেক বেশি। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী মুহাম্মাদ রাশেদ নিজাম স্যারের উপাত্ত থেকে জানা যায় বাংলাদেশে প্রায় ৮২ টি বিশ্ববিদ্যালয়, ৩১৫০ টি কলেজ, ১৮৫০০ টি উচ্চ বিদ্যালয় এবং ২৭২৮ টি কারিগরী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে পদার্থবিদদের জন্য সুবিশাল সুযোগ ও সম্ভাবনা থাকে। যাদের ধ্যান জ্ঞান শিক্ষকতা, তারা খুব সহজে এসব সেক্টরে নিজের স্থান গড়ে নেয়।
#ফিজিক্স_কম্পিটিশন–
তোমরা কি সবাই ফিজিক্স কন্টেস্টগুলোর সঙ্গে পরিচিত? ফিজিক্সের কন্টেস্টগুলোর মধ্যে “প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি ফিজিক্স কম্পিটিশন” ও “ইউনিভার্সিটি ফিজিক্স কম্পিটিশন” অনেক জনপ্রিয়। প্রতি বছর নভেম্বর মাসে আন্তর্জাতিকভাবে কম্পিটিশনটি অনুষ্ঠিত হয়। এ কম্পিটিশনটি শুধুমাত্র আন্ডারগ্রাজুয়েট ছাত্রছাত্রীদের জন্য। যেখানে দুটি সমস্যার সমাধান করতে দেওয়া হয়। ৪৮ ঘন্টাব্যাপি এ প্রোগ্রামটিতে কম্পিটিশন শেষে স্বর্ন পদক, রৌপ্য পদক এবং ব্রোঞ্জ পদক বিজয়ী হিসেবে ফলাফল প্রদান করা হয়। বরাবরের মত বাংলাদেশ থেকেও পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্রছাত্রীরা অংশগ্রহন করছে এবং পদক বিজয়ী হচ্ছে। গত বছর (২০১৭) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একটা গ্রুপ সিলভার পদক, শাহাজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৮ টা ব্রোঞ্জ পদক অর্জন করেছে। এছাড়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ থেকেও ছাত্রছাত্রীরা অংশগ্রহন করেছে।
ইউনিভার্সিটি ফিজিক্স কম্পিটিশন সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ভিজিট করতে পারো-
http://www.uphysicsc.com/
|
ফার্মেসি-র সাবজেক্ট রিভিউটি পড়তে ক্লিক করো |