বিজ্ঞান ব্লগ

ওয়ার্নার হাইজেনবার্গ -অনিশ্চয়তাই কোয়ান্টামের নিশ্চয়তা।

ধরা যাক আপনি একটা বিশাল পাথর খন্ডের ভর মাপতে চান। কি করবেন? টনের হিসাব করবেন! কত টন তার ভর সেটাই আপনার কাছে বড় বিষয়।একটু সূক্ষ্মভাবে হিসাব করতে চাইলে হয়তো কেজি বা গ্রামে হিসাব কষবেন।(হাইজেনবার্গের)হয়তো সেটির ভর দাঁড়াবে ২০ টন ২ কিলোগ্রাম ৩৫০ গ্রাম। এর চেয়ে ক্ষুদ্র হিসাব করার চিন্তাও হয়তো করবেন না।তাই আপনার ভর মাপার যন্ত্রটি শতভাগ শুদ্ধ হিসাবটা যে দেয়নি সে কথা আপনার ভাবনাতেই আসেনি। ধরা যাক যন্ত্রটির যান্ত্রিক ত্রুটি ছিলো ২০ মাইক্রো গ্রাম।২০ টনের একটু বস্তুর ভর মাপ্তে গিয়ে ২০ মাইক্রো গ্রামের হিসাব নিয়ে কে মাথা ঘামায় বলুন।এইটুকু ত্রুটি গণনায় না ধরলেও আপনার হিসাব মিলে যায়। বস্তু খুব ক্ষুদ্র হলে তখন আর ক্ষুদ্র অবহেলা করার জো থাকেনা। ধরা যাক, এবার খুব ক্ষুদ্র একটি বস্তু নিলেন। সেটা হতে পারে একটা চিনির দানা।সেটার রাসায়নিক বিশ্লেষণ করতে চান। এজন্য ওটার ভর জানা জরুরি। কিন্তু তখন তো মাইক্রো গ্রাম ভরকে অবহেলা করলে চলবেনা। নিতে হবে আরো সূক্ষ্ম মাপ। তবে মাপ যতো সূক্ষ্মই হোক শেষ পযর্ন্ত কিছুটা ত্রুটি রয়েই যাবে।
এই ত্রুটি পাথরের ভর মাপার যন্ত্রের ত্রুটির মতো অতো বড় নয়। তবুও ত্রুটি। তবে সেই ত্রুটিটাকে আপনি বাদ দিয়েই হিসাবটি করে ফেলতে পারেন।তেমন কোনো সমস্যা এখানে দেখা দিবেনা। পারমানবিক কণাদের ভর,আকার অত্যন্ত ক্ষুদ্র। তাদের ক্ষেত্রে অতি সামান্য ত্রুটিও তাই হিসেবে গোলমাল পাকিয়ে বসবে। ইলেকট্রনের মতো হালকা কণিকার ক্ষেত্রে ত্রুটি থাকলে সমস্যা আরো প্রকট হয়ে উঠে। তাহলে উপায়? সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম মাপ নিতে হবে। এক চুল এদিক ওদিক হলে চলবেনা। কিন্তু যান্ত্রিক ত্রুটি যে ঝামেলা বাধাঁবে। হুম যান্ত্রিক ত্রুটি কে মেনে নিয়েই হিসাব কষতে হবে। কীভাবে?অনিশ্চয়তার সূত্র দিয়ে। চিরায়ত বলবিদ্যায় বস্তুর পরিমাপের ছোটোখাটো বিচ্যুতিকে আমরা সহজেই অবহেলা করতে পারি। কিন্তু ইলেকট্রনের ক্ষেত্রে এটা খাটবে না। ইলেকট্রনের অবস্থান আর ভরবেগ একই সাথে নিখুঁতভাবে মাপা সম্ভব নয়। ইলেকট্রনের অবস্থান বা ভরবেগ মাপতে হলে ইলেকট্রনকে আমাদের দেখতে পেতে হবে।

নিজেরা যদি দেখতে নাও পাই এমন যন্ত্র দরকার হবে, যেটা ইলেকট্রনকে শনাক্ত করতে পারবে। সে জন্যে দরকার হনে আলোর। ইলেকট্রনের অবস্থান কোথায় সে খবর এনে দেবে যন্ত্র থেকে ছুড়ে মারা কোনো আলোক রশ্মি। অর্থাৎ ফোটন কণা। ফোটন কণার শক্তি তো আর চুপচাপ বসে থাকবে না। হালকা পাতলা ইলেকট্রন কে বেশ ভালোভাবেই আঘাত করবে। ইলেকট্রন সেই আঘাত পুরোপুরি হজম করতে পারবে না। হয় তার অবস্থান বদলে যাবে নইলে বদলে যাবে ভরবেগ। হাইজেনবার্গ বললেন যত সূক্ষ্মভাবেই মাপি না কেন আমরা একই সাথে ইলেকট্রনের ভরবেগ ও অবস্থান দুটোই পরিমাপ করতে পারব না৷ তিনি আরো বললেন যে মুহূর্তে আমরা ইলেকট্রেনের সঠিক অবস্থানটা মাপছি,তখন তার ভরবেগের ত্রুটি অসীম হয়ে যাচ্ছে।অসীম ত্রুটিকে তো আর মূল মানের সাথে বিয়োগ করে ত্রুটিমুক্ত করা যায় না।সেই ধরণের হিসাবই অবান্তর।তাই যে সময় অবস্থান আমরা সূক্ষ্মভাবে মাপছি, সেই মুহূর্তে ভরবেগের মান পরিমাপ করা অসম্ভব।সুতরাং ইলেকট্রনের অবস্থান এবং ভরবেগ একই সাথে একটা অনিশ্চয়তার মধ্যে পরে গেল। এটিই পদার্থবিজ্ঞানে হাইজেনবার্গের অনিশ্চয়তা নীতি নামে পরিচিত।
Exit mobile version