বিজ্ঞান ব্লগ

অস্থায়ী সমস্যার চিরস্থায়ী সমাধান খুঁজছেন? সেটা আত্মহত্যা?

ইচ্ছে করছে?
যাক, তাহলে আপনি একদম ঠিক জায়গায় এসেছেন। আপনাকে আমি চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে যাব ১০ টি সহজ এবং লো-বাজেটে আত্মহত্যা করার অভিনব পন্থা।

ওয়েট, বলবেন না কি জন্য আত্মহত্যা করবেন? আচ্ছা, সুইসাইড ই মনে হচ্ছে আপনার সমস্যা সমাধানের অভিনব এবং চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত? ঠিক আছে, কিন্তু সমস্যার সমাধান টা করলেন কই? সমস্যা রেখেই তো চলে গেলেন, আজব!


প্রথমত আপনার কি জানা উচিত?

মনেপ্রাণে বিশ্বাস করুন আপনি যতবড়, যত কঠিন সমস্যার মধ্যে দিয়েই যান না কেন, আপনি একা না। ৭০০ কোটি মানুষের মধ্যে বহু মানুষ একদম আপনার সমস্যাই ফেস করেছে। বিশ্বাস হলো না? কি এমন ইউনিক সমস্যার মধ্যে পড়লেন, শুনি? বাদ দেন।

সুইসাইডাল ফিলিং আসা মানে এই না যে আপনার চরিত্র বিকৃত হয়েছে, আপনি পাগল হয়ে গেছেন অথবা আপনি দুর্বল, অসুস্থ। এটা শুধু এটা মিন করে যে আপনি যে কষ্টের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন সেটার সাথে ডিল (মোকাবেলা) করার জন্য আপনি এখন প্রস্তুত না, ব্যাস৷ একবার ভাবুন তো মহাবিশ্বের কোন সমস্যার সমাধান হয়নি বা হবে না?

যখন সব আশা শেষ হয়ে যায়, যখন একাকীত্ব, বিষাদগ্রস্ততা আমাদের আঁকড়ে বসে তখন আমরা অনেকেই সুইসাইডকে সবচেয়ে সহজ এবং বুদ্ধিমান সমাধান হিসেবে ভেবে নেই। কিন্তু আমি বুঝতে পারছি না, সমাধান টা কই হলো?

বিষাদগ্রস্ততার কষ্ট অবশ্যই সারিয়ে তুলা যায় অথবা নতুন করে শুরু করা যায়। আপনি সুইসাইড করছেন, এর মানে এই না আপনি কাপুরুষ। আপনি অসীম সাহসী, আপনার সেই সাহস আছে এই দুনিয়ার সকল মায়া মহব্বত ছিন্ন করে চলে যাওয়ার। আচ্ছা আপনি এতো সাহসী তাহলে কেন সেই সমস্যা সমাধানের জন্য সাহস টা দেখাচ্ছেন না? যে সাহস মরতে লাগে, সে পরিমাণ সাহস সমস্যা ফেস করতেও লাগে না।

কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখুন –

১. আপনার ইমোশন কখনই ফিক্সড না, তারা প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল। আপনি আজ যেরকম ফিল করছেন ভেবে দেখুন তো ২/৩ দিন আগেও এমন ফিল করছেন? যদি পরিবর্তনই হয় তাহলে কেন বিশ্বাস করছেন না আগামী ২/৩ দিন পরে সেই ইমোশন টা পরিবর্তন হতে পারে ৷

২. আপনার অনুপস্থিতি আপনার প্রিয়জনদের কাঁদাবে, কিন্তু দুঃখর বিষয় হচ্ছে আপনি সেগুলো জানতেও পারবেন না, দেখতেও পারবেন না। যদি দেখতে পারতেন, তাহলে তখন মনে হবে আমি আবার ফিরে যাই। হ্যা,আপনি ফিরে যেতে চাইবেন।

৩. আপনার বয়স কত? ৭০? নাহ, এতো না সিউর৷ যুবক বয়সে আছেন আপনি। ঐ ৭০ বছর পর্যন্ত আপনার লাইফে অনেক কিছু করার আছে। ধরুন, ১০০ জন মানুষ দৌড়াচ্ছে, মাঝপথে আপনার পায়ে কাটা বিঁধল, ভাল কথা আপনি রেসটা হেরে যাবেন। বলেন তো আপনি তখনই পাশের নদীতে ঝাঁপ দিবেন? হেরেছি তাই নিজেকে হারিয়ে ফেললাম। হাস্যকর না? আরে ভাই, রেস কি জীবনে একটাই? ছোটবেলা থেকেই তো হাঁটা,দৌড়ানো শিখে আসছেন, মাঝপথে হোঁচট খেয়েছেন।

আবার ধরুন, আপনার ৩ বছরের ছোট ভাই দৌঁড়ানো শিখতে যেয়ে পড়ে গেছে, এখন যান তাকে যেয়ে বলুন সুইসাইড করতে৷ বলবেন না? ওতোটুকু বয়সে হোঁচট খাওয়াটাই তো তার জন্য বিরাট ডিপ্রেশনের কারণ। তাই না? তাহলে তাকে সুইসাইড করতে বলুন৷

৪. আপনার আনন্দানুভূতির যতটুকু সক্ষমতা রয়েছে, ঠিক ততটুকু সক্ষমতা রয়েছে কষ্টানুভূতি সহ্য করার।

কেন আপনি সুইসাইড করেন?

লক্ষ লক্ষ ভিন্ন ভিন্ন কারণ রয়েছে সুইসাইড করার, প্রত্যেকের কাছে প্রত্যেক কারণ মনে হবে ইউনিক। তা অবশ্য ঠিক, আমরা প্রত্যেকেই একে অপরের থেকে আলাদা। তারপরও উপরে যেমনটি বলেছি আমাদের প্রত্যেকেই কিছু কমন কারণ রয়েছে এই অসুন্দর কাজটি সম্পাদন করার।

যখন সুইসাইডই একমাত্র পথ

যখন আপনি মনে করেন সুইসাইড ছাড়া আর কোন উপায়ই নাই,এর মানে এই না সেই সমস্যার সমাধান নেই। এর মানে বুঝায় আপনি ঐ অবস্থায় সেই সমস্যার সমাধান পাচ্ছেন না।
এই বাজে সিচুয়েশনে আপনি তো সেই সমস্যা সমাধানের যে পথগুলো চিন্তা করবেন সেটাও আস্তে আস্তে ছোট হয়ে আসবে। এটাও ভাবতে শুরু করবেন আপনার আত্মীয়স্বজন, প্রিয়জন, থেরাপিস্ট, কাউন্সিলর কেউই আপনার সমাধান দিতে পারবে না। একটা চান্স ও দিবেন না তাদের?

একটা কথা মাথায় রাখবেন: সুইসাইড হচ্ছে কোন একটি অস্থায়ী সমস্যার চিরস্থায়ী সমাধান, যদিও সমাধান বললে ভুল হবে। কারণটা আগেই বলেছি ৷ মানুষের সমস্যা প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হয়, তার নতুন সমাধান আসে, আবার সমস্যায় পড়ে ৷ সমস্যা ও সমাধানের মাঝেই তো আমাদের জীবন।

কি রকম সমস্যায় আপনি পড়েছেন যার কোন সমাধান নাই? ডিপ্রেশন, স্কিৎসোফ্রেনিয়া এমনকি বাইপোলার ডিসঅর্ডারের সমাধান, থেরাপি, মেডিটেশন রয়েছে। যদি আপনি ট্রিটমেন্ট নিয়েও থাকেন তারপরও সমাধানের ভিন্ন রাস্তা থাকবেই, শুধু আপনাকে একটু ধৈর্য্য নিয়ে রাস্তাটা খুঁজতে হবে। @science bee

হঠাৎ করে একটা পরিসংখ্যান মনে পড়লো, শেয়ার করে দেই আপনার সাথে, কেমন?

প্রতিবছর আমেরিকায় সুইসাইড এবং সুইসাইড এটেম্পটে খরচ হয় কত জানেন?

১. প্রতি সুইসাইডে খরচ ১,৩২৯,৫৫৩ ডলার।
২. ৯৭% খরচ মুলত আপনি না সুইসাইড করলে কি পরিমাণ অর্থনৈতিক ক্যাপিটাল আসতো তার গড় হিসাব৷ বাকি ৩% হচ্ছে সুইসাইড করতে আপনি যে খরচ অথবা ট্রিটমেন্টে যে খরচ করেন।
৩. সুইসাইড এবং এটেম্ট টু সুইসাইডে মোট খরচ ৯৩.৫ বিলিয়ন ডলার।

                                                        Mean Medical and Work-Loss Costs per Injury Death by Intent – United States, 20132

বাদ দেন এগুলো,
এবার আসি সুইসাইড করার আগে যদি আপনি কয়েক মিনিট চিন্তা করেন তাহলে কী কী সেই সময়ে করা উচিত?

১. প্রতিজ্ঞা করুন ঠিক এই মুহুর্তে কিছু করবেন না

আপনার যত কষ্টই হোক, সংকল্প করুন আগামী ২৪ ঘন্টা আপনি কিছু করবেন না, আপনার চিন্তা এবং একশনের মধ্যে এই ২৪ ঘন্টা ফারাক রাখুন৷

২. ড্রাগ এবং মদ্যপান থেকে দুরে থাকুন

সুইসাইডের চিন্তা আরও বেশি জেঁকে বসে যখন আপনি এই ড্রাগ বা এলকোহল গ্রহণ করবেন৷ এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে আপনি প্রেসক্রিপশনের বাইরে একদমই কোন ড্রাগ ব্যবহার বা সেবন করবেন না।

৩. আগে থেকেই আপনার ঘর নিরাপদ রাখুন

সুইসাইডের সময় আপনার হুঁশ হারিয়ে ফেললে সমস্যা, ঠিক এই মুহুর্তে আমার লেখা পড়ার সময় আপনার রুম চেক করুন, সুইসাইড করার জন্য যন্ত্রপাতি যেমন বিষ, ছুঁড়ি, দা, ব্লেড, আগুন ইত্যাদি নিরাপদ স্থানে সড়িয়ে রাখুন।

৪. সুইসাইড ফিলিংস শুধু নিজের মধ্যে রাখবেন না

দুঃখ ভাগ করে নিলে কমে। তাই আপনার এহেন চিন্তাধারা বা কষ্টগুলো এমন একজন মানুষ খুঁজে বের করুন যার কাছে পুরো ঘটনা খুলে বলতে পারবেন। এমন একজন আপনার আত্মীয় স্বজন থেকে শুরু করে বন্ধু বান্ধবী যে কেউ হতে পারে তবে যেন বিশ্বস্ত হয়। একদম প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত তাকে সব ঘটনা খুলে বলুন। সে কোন সমাধান দিক আর না দিক দেখবেন আপনার  কিছুটা হালকা লাগছে। এই হালকা লাগাটা আপনাকে সুইসাইডের মতো এক্টিভিটি থেকে অনেক দূরে নিয়ে আসতে পারে।

৫. আশা রাখতে দোষ কই?

আপনি যে সমস্যার মধ্যে যাচ্ছেন পৃথিবীর অনেক মানুষই সেসবের ভেতর দিয়ে গিয়েছে, আগেই বলেছি। নিজেকে একটু সময় দেন। কথায় আছে “Time Heals” কান্না করতে করতে তো একসময় চোখের পানিও ফুরিয়ে যায়, ফুরানোর আগেই নিজেকে শেষ করে দিবেন? @science bee

৬. অন্যের কাছে সাহায্য চান

বাংলাদেশে বর্তমানে বহু প্রতিষ্ঠান আছে যারা আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য, সুইসাইড এক্টিভিটি নিরোধ ইত্যাদি নিয়ে কাজ করছে, এমনকি তারা ফ্রিতে কাউন্সিলিং করছে, সাইকোলজিস্টের সাথে যোগাযোগ করিয়ে দিচ্ছে। মাথায় কয়েকটির নাম আসছে , যেমনঃ মনের স্কুল, কান পেতে রই , হাল ছেড়ো না বন্ধু, সাইকিউর অর্গানাইজেশন , আঁচল ফাউন্ডেশন ইত্যাদি।

আমি আর নিতে পারছি না“, “I’m Done” এগুলো না বলে ডিরেক্ট তাদের কাছে বলুন “আপনি সুইসাইড করতে যাচ্ছেন“। এরপর দেখেন তারা কি সমাধান দেয়। সাধারণ মানুষ আপনাকে মোটিভেশান দিয়ে ভরিয়ে ফেলতে পারে কিন্তু একজন সাইকোলজিস্ট যখন আসল ঘটনা জানবে তাহলে সে ইনজেকশন টা ঠিক জায়গায় দিতে পারবে৷ আপনার তো দিন শেষে ইনজেকশন টাই দরকার তাই না? নাকি মৃত্যু? এখানে ইনজেকশন বলতে বুঝাচ্ছি ” সমস্যার সমাধান”!

এতসব আয়োজন থাকতেও নিজেকে নিঃশেষ করে দিবেন কোনকিছুর জন্য বা কারও জন্য? সেই কোনকিছু বা কেউ আপনি মরলে আপনার কাছে ফিরে আসবে না। মামলার ভয়ে সে আপনার কবরে হয়তো মাটিও দিতে আসবে না। আরও বেশি ঘৃণা করা শুরু করবে।

আমি শেষ করলাম আজকের মতো, আমার জীবনেও একবার ছাঁদ থেকে লাফ দিয়ে মারা যাওয়ার মতো চিন্তাভাবনা আসছিল, কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে, “আমি আমার জীবনকে খুব ভালবাসি” একবার মরলে যদি জানতে পারতাম আমার রেখে আসা পৃথিবী কেমন চলছে বা আবার ফিরে আসতে পারতাম তাহলে না একবার ট্রাই করতাম, হাহাহা।

সর্বশেষ, নিজেকে মন থেকে সুস্থ রাখার চেষ্টা করুন, খুব বেশি আশাবাদী, অকল্পনীয় চিন্তায় ডুবে যাবেন না, পরে সেটা না পেলে নৈরাশ্যের সাগরে ডুবে যেতে পারেন। মনে রাখুন “পৃথিবীর সবকিছুই ক্ষণস্থায়ী

Exit mobile version