ভাইরাস (Virus)!!!
শব্দটির সাথে বর্তমান সময়ে আমরা সবাই বেশ পরিচিত। তবে এটি কিন্তু সেই ভাইরাস নয় যা করোনা ভাইরাস এর মতই মানুষের মাঝে ছড়িয়ে পড়বে কিংবা এটি কোনো অনুজীব নয় যা জীবকুলের মাঝে ছড়িয়ে পরবে।
তাহলে এটি আবার কেমন ভাইরাস? শিরোনাম পড়ে অবশ্যই বুঝেছেন এখানে কোন ভাইরাস নিয়ে কথা বলা হচ্ছে তাই না! – জ্বি হ্যাঁ ; এখানে কম্পিউটার ভাইরাসের কথাই বলা হচ্ছে।
বর্তমান কম্পিউটার ভাইরাস সম্পর্কে আমরা কম বেশি অনেকেই অনেক কিছু জানি আবার বলতে গেলে হয়তো অনেক কিছুই জানিনা। বর্তমান বিশ্বে কম্পিউটার ব্যবস্থা প্রযুক্তির জন্য অনেক বড় সাফল্য নিয়ে এনেছে যা অত্যন্ত গর্বের বিষয়। আমরা দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি স্তরে কম্পিউটারের সাহায্য নিয়ে থাকি। গুগল, ফেসবুক, ইমেইল, টুইটার, ইউটিউবসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে আমরা নিজেদের বিস্তার ঘটিয়ে থাকি।
এছাড়া বিভিন্ন কাজের জন্য কিংবা দরকারের ক্ষেত্রেই আমরা বিভিন্ন ওয়েবসাইট ভ্রমণ করে থাকি। কিন্তু প্রায়শই আমরা ভুলবশত কিংবা মনের অজান্তেই ভুল কয়েকটি ওয়েবসাইটে ভ্রমণ করি অথবা অপরিচিত কয়েকজনের কাছ থেকে মেইল পেয়ে থাকি যা ওপেন করার মাধ্যমে আমাদের কম্পিউটার ভাইরাসের ঝুঁকিতে পড়ে যায়।
তেমনি কিছু আছে ভাইরাস আছে যা এখন পর্যন্ত সবচেয়ে মারাত্মক কম্পিউটার ভাইরাস হিসেবে গণ্য করা হয় কারণ ভাইরাসগুলো এখন পর্যন্ত বিশ্বে অনেক বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি সাধন করেছে। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু ভাইরাস রয়েছে যেগুলো সম্পর্কের না জানলেই নয়।
১. দ্য মেলিসা ভাইরাস (The Melissa Virus)
ভাইরাসটি এক ধরনের ই-মেইল ভাইরাস যা ১৯৯৯ সালের ২৬শে মার্চ প্রথম মুক্তি পায়। ভাইরাসটি মূলত ই-মেইলের মাধ্যমে ছড়িয়ে পরে। এক্ষেত্রে রিসিভারের কাছে একটি মেইল আসবে যেখানে লিখা থাকবে “Here is the document you asked for…don’t show anyone else”। অতঃপর আপনি যদি ডকুমেন্ট ওপেন করেন তৎক্ষনাৎ ভাইরাসটি আপনার কম্পিউটার বা ল্যাপটপ ইনফেক্টেড (Infected) করে ফেলবে। আরেকটি বিষয় হলো, যখনই আপনি ডকুমেন্ট ওপেন করবেন তখনই ভাইরাসটি আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস বুকে অবস্থিত প্রথম ৫০ জনের এ্যাড্রেসে এই ডকুমেন্টটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে কপি হবে এবং তাদের এ্যাড্রেসে প্রেরিত হবে।
তবে যারা “Microsoft Outlook 97” কিংবা “Microsoft Word 2000” ব্যবহার করেন তাদের কম্পিউটারই এই ভাইরাস দ্বারা অ্যাটাক হবার সম্ভাবনা বেশি। এই ভাইরাসের আবিষ্কারক কে আমেরিকার নিউজার্সিতে খুঁজে পাওয়া যায়, যার নাম “ডেভিড এল স্মিথ”। এই সাইবার ক্রাইমের জন্য তাকে কারাগারে ২০ মাস থাকতে হয়েছিল এবং ৫০০০ ডলার জরিমানা করতে হয়েছিল। ভাইরাসটি মুক্তি পাওয়ার প্রায় এক ঘণ্টার মধ্যে প্রায় ৮০ মিলিয়ন ডলার ক্ষতিসাধন হয়েছিল।
২. আই লাভ ইউ ভাইরাস (I Love You Virus)
এটিও অনেকটা মেলিসা ভাইরাসের মতই। এটিও ই-মেইলের মাধ্যমে আসে এবং ডিভাইসকে ইনফেক্টেড করে। এক্ষেত্রে ভাইরাসের অ্যাটাচমেন্ট (attachment) যখন ই-মেইলে আসবে তখন সাবজেক্টে “I Love You” লিখা থাকবে। পরবর্তীতে মেইলটি ওপেন করলে একটি ডকুমেন্ট থাকবে। যেমন “Love-Letter-For-You.txt” নামক অ্যাটাচমেন্ট আসবে যেটি ক্লিক করলে ভাইরাসটি আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস বুকে অবস্থিত সবার ইমেইল এ্যাড্রেস কপি করবে এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবে সবার এ্যাড্রেসে অ্যাটাচমেন্টটি চলে যাবে।ভাইরাসটি খুব দ্রুত কম্পিউটারে ছড়িয়ে পড়বে এবং হার্ডডিস্কের ক্ষতিসাধন করবে।
এগুলো পড়তে ভুলবেন না !! |
ভাইরাসটি একধরনের “VBS” অর্থাৎ “Visual Basic Scripts” যেটি কম্পিউটারের প্রোগ্রামগুলোতে নতুন করে বিভিন্ন নির্দেশনাবলী প্রদান করে থাকে।ফলে কম্পিউটারে অবস্থিত যাবতীয় ফাইল,ছবি, এমপিথ্রি (mp3) ইত্যাদি সহ বিভিন্ন সফটওয়্যার ডিলিট হয়ে যেতে পারে। তাই আপনার ফাইল/ডকুমেন্টস গুলোর ব্যাকআপ কপি না থাকলে অনেক বড় ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে। ভাইরাসটি মাত্র ২ দিনে প্রায় ৪৫ মিলিয়ন কম্পিউটারের পাশাপাশি ১০ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি সাধন করেছিল। ২০০৩ সালের ২৫ জানুয়ারি সকাল ৬ টার মধ্যে (গ্রিনিচ মান) ইন্টারনেট ব্রেকডাউন ঘটেছিল যার ফলে সাউথ কোরিয়া যেমন ইন্টারনেট ও সেল ফোন সার্ভিস হারিয়েছিল তেমনি পর্তুগালে প্রায় ৩ লক্ষ মানুষ ইন্টারনেটের সংযোগ পায়নি।
৩. চেরনোবিল ভাইরাস (Chernobyl Virus)
এই কম্পিউটার ভাইরাসটি ‘CIH’ নামেও পরিচিত। ভাইরাসটি ‘Windows-95, 98’ ভার্সনের মারাত্মক ক্ষতিসাধন করেছিল। “মাইক্রোসফট উইন্ডোজ বেইজড অপারেটিং সিস্টেম” কে ইনফেক্টেড করার জন্য ভাইরাসটি তৈরি করা হয়েছিল। চেরনোবিল ভাইরাস কম্পিউটারের বায়োস তথা বেসিক ইনপুট/আউটপুট সিস্টেম (BIOS) এর উপর প্রভাব ফেলে যার কারণে অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রোগ্রাম ফাইল গুলো ধ্বংস তথা নষ্ট করে ফেলে।
অবাক করার বিষয় হলো চেরনোবিল পারমাণবিক বিপর্যয়ের ১৩ তম বার্ষিকীর দিনে ১৯৯৮ সালে কাকতালীয়ভাবে ভাইরাসটি আবিষ্কৃত হয় যেখান থেকে এই ভাইরাসের নামের উৎপত্তি।চেরনোবিল ভাইরাসটি মূলত “Portable Executable” ফাইল ফরম্যাটগুলোর মাধ্যমে “Windows 9x-based operating system” তথা Windows-95,98 এবং ME তে ছড়িয়ে পরে।
৪. কোড রেড (Code Red)
‘কোড রেড’ একটি কম্পিউটার ওয়ার্ম তথা ম্যালওয়্যার প্রোগ্রাম যা নিজের প্রতিরূপ বা অসংখ্য কপি তৈরির মাধ্যমে কম্পিউটার সিস্টেমে প্রবেশ করে। ২০০১ সালের ১৫ই জুলাই ম্যালওয়্যারটি প্রথমে ইন্টারনেটে পর্যবেক্ষণ করা হয়। এটিও ই-মেইলের মাধ্যমে আসে এবং একটি ডকুমেন্টে /ফাইলে পাঠানো হয়। ফাইলটি ওপেন করার সাথে সাথে ম্যালওয়্যারটি কম্পিউটারে ছড়িয়ে পরে যা ‘Buffer Overflow‘ নামে পরিচিত।
‘Buffer Overflow’ এর জন্য তথা ছড়িয়ে পরার জন্য ম্যালওয়্যারটি কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ‘N’ অক্ষরের একটি দীর্ঘতম সারির সৃষ্টি করে। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ম্যালওয়্যারটি বিস্তৃতি লাভ করে। এই ম্যালওয়্যার ব্লক করার পদ্ধতি প্রথম আবিষ্কার করেন কেনেথ ডি. আইচম্যান নামক একজন ব্যক্তি। তার এই আবিষ্কারের জন্য তাকে হোয়াইট হাউসে নিমন্ত্রণ জানানো হয়।
এই ভাইরাসগুলো যেমন বিলিয়ন ডলারের পাশাপাশি লক্ষাধিক কম্পিউটারের ক্ষতিসাধন করেছে তেমনি মানুষের মাঝে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করেছে। শুধু এই ভাইরাসগুলোই নয়, আরও অনেক ভাইরাস রয়েছে যেগুলো খুবই বিপজ্জনক।
তাই আমাদের বর্তমান প্রজন্মের উদ্দেশ্যে একটি কথাই বলব এবং তা হলো অপ্রয়োজনীয় ওয়েবসাইটে কিংবা কোনো লিংকে প্রবেশ না করাটাই শ্রেয়। সেই পাশাপাশি অপরিচিত কারো কাছ থেকে মেইল আসলে সেই ডকুমেন্ট কিংবা অ্যাটাচমেন্টটি তে ক্লিক না করাটাই হয়তো আপনার কম্পিউটারের জন্য উত্তম।