আমাদের সবারই নিজস্ব একটা নাম আছে, যা আমাদের নিজের পরিচয় বহন করে। পাশাপাশি নিজের ব্যক্তিত্ব প্রকাশেও সহায়তা করে এবং ভবিষ্যৎ জীবনকেও প্রভাবিত করে।
আচ্ছা, আপনি কি কখনো ভেবেছেন, আপনার যদি কোনো নাম না থাকতো তাহলে মানুষ আপনাকে কি বলে ডাকতো বা কিভাবে শনাক্ত করতো? আপনার হয়তো মনে হতে পারে, নাম এটা আবার কি এমন গুরুত্বপূর্ণ জিনিস!! যেকোনো একটা নাম হলেই তো হয়! কিন্তু আসলেই কি তাই?
ব্লগটি পড়লে আপনি নিশ্চয়ই অবাক হবেন। কারণ, আপনার নাম আপনার সম্পূর্ণ ব্যক্তিসত্ত্বার পরিচয় বহন করে!
শেক্সপিয়ার বলেন, “গোলাপ ফুলের নাম যদি গোলাপ না হয়ে অন্য কিছু হতো, তাহলে হয়তো এমন মিষ্টি গন্ধ পাওয়া যেত না!” কথাটির যদিও কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নেই, তবুও তিনি উপমা হিসেবে কথাটি বলেন।
শেক্সপিয়ারের উপমাটির মতো ধরে নিন, আপনার যে নাম রয়েছে সেই নাম না হয়ে যদি অন্য কোনো নাম হতো তাহলে আপনার ব্যক্তিত্ব ও অন্যরকম হতো!
আপনি কি জানেন, আপনার কোন জিনিসটি মানুষ সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করে?
উত্তর: আপনার নাম! কারণ, আমরা নিজেরা আমাদের নাম যতটা না ব্যবহার করি, তার চেয়ে মানুষ বেশি ব্যবহার করে, আমাদের নাম ধরে ডাকার মাধ্যমে! সম্প্রতি এই বিষয়ে ২টি ভিন্ন দেশে ৮ টি গবেষণা করা হয়। গবেষণায় দেখা যায়, “একজন ব্যক্তি ভবিষ্যৎ এ দেখতে কেমন হবে সেই বিষয়টির সাথেও তার নামের সম্পর্ক রয়েছে!”
একটি শিশু জন্মের পরে দেখতে একরকম লাগে এবং পরবর্তীতে দেখতে অন্যরকম একই বয়সে পুরুষদের তুলনায় নারীদের বয়সে বেশি দেখায় কেন? হয়। কিন্তু জন্মের পরে যে নাম দেওয়া হয় তা কিন্তু তাকে ভবিষ্যৎ এ চিনতেও সহায়তা করে। অর্থাৎ শিশুটির ছোটবেলার চেহারার সাথে বর্তমান চেহারার মিল না থাকলেও তার শৈশবকালে দেওয়া নাম এখন ও তার পরিচয় বহন করে।
একজন নির্দিষ্ট নামের অধিকারী ব্যক্তির প্রত্যাশিত আচার-আচরণ, ব্যক্তিত্ব, মুখের ভাব,চেহারা, অবস্থান, ভঙ্গি, হাঁটা প্রভৃতি একটি নির্দিষ্ট প্যার্টান অনুসরণ করে। তার এই সব বৈশিষ্ট্য উপলব্ধি করার মাধ্যমে অপর একজন মানুষ তার উপস্থিতি উপলব্ধি করতে পারে!
কোনো একজন মানুষের অনুপস্থিতিতেও তার নাম স্মরণ করার মাধ্যমে আমরা তার বৈশিষ্ট্য অনুধাবন করতে পারি। আমরা উপলব্ধি করতে পারি, তিনি যদি উপস্থিত থাকতেন তাহলে কি কি হতো বা হতে পারতো বা তার বৈশিষ্ট্য গুলো কেমন হতো!
আপনি খেয়াল নিশ্চয়ই দেখবেন, অনেক সময় যখন আমরা বন্ধুরা কোথাও ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা করি এবং ঘুরতে যাওয়ার সময় যদি কেউ অনুপস্থিত থাকে, তখন তার অনুপস্থতিতে তার নাম স্মরণ করে আমরা অনেক রকম কথা বলি! যেমন-আজ সে থাকলে কেমন হতো, তার রিয়্যাক্ট কেমন হতো প্রভৃতি। অর্থাৎ এইক্ষেত্রে ও তার অনুপস্থিতিতে তার নাম স্মরণ করে আমরা তার বৈশিষ্ট্য অনুধাবন করতে পারি।
শৈশবকালে আমাদের যেসব নাম দেওয়া হয়, সেগুলো বর্তমানেও আমাদের ব্যক্তিত্ব, চরিত্র এবং মনস্তাত্ত্বিক বিষয়ের সাথে সম্পর্কযুক্ত! ১৯৪৮ সালের একটি গবেষণায় দেখা যায়, শৈশবকালে আমাদের যে নাম দেওয়া হয় তা আমাদের ভবিষ্যৎ জীবনেও কার্য সম্পাদন করতে প্রভাবিত করে।
সম্প্রতি স্নাতক ডিগ্রি সম্পন্ন করেন এমন ৩৩oo জন পুরুষকে নিয়ে একটি গবেষণা করা হয়! গবেষণার বিষয়বস্তু ছিলঃ তাদের নামের সাথে তাদের একাডেমিক পারফরম্যান্স সম্পর্কযুক্ত কি না! গবেষণায় দেখা যায়, যেসব মানুষের স্বাভাবিক নামের তুলনায় কিছুটা অস্বাভাবিক নাম রয়েছে, তাদের ব্যক্তিগত এবং একাডেমিক জীবনেও কিছুটা নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে। কারণ, স্বাভাবিক নাম একজন ব্যক্তিকে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে উৎসাহিত করে।
ধরুন, আপনার নামের সাথে কোনো একজন সেলিব্রেটির নামের মিল রয়েছে এবং সেই সেলিব্রেটি যদি কোনো কাজ করে থাকে, হোক সেই টা ভালো বা খারাপ! তখন কিন্তু সেখানে আপনার বন্ধুবান্ধব বা পরিচিত কেউ আপনাকে মেনশন করে!! আপনি যদি কখনো খেয়াল করে থাকেন, দেখবেন বিষয়টি আপনার সাথে বা আপনার বন্ধুদের সাথেও প্রতিনিয়ত ঘটে!
একটি গবেষণায় দেখা যায়, আমাদের প্রদত্ত নামগুলো আমাদের একাডেমিক রেজাল্ট, ভবিষ্যৎ পেশা, ভৌগলিক অবস্থান এবং আর্থিক বিনিয়োগকে প্রভাবিত করে।
জন্মের পরে আমাদের যে নাম দেওয়া হয়, এটিই মূলত সামাজিকভাবে পরিচিত হওয়ার প্রথম উপায়! প্রতিটি নির্দিষ্ট নামের অধিকারী ব্যক্তির নিজস্ব কিছু বৈশিষ্ট্য, আচরণ এবং শারীরিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে।
সন্তান জন্মের পরে সন্তানের সঠিক নাম বাছাইকরণের ক্ষেত্রে অনেক বাবা -মায়ের মাঝে উদ্বেগ দেখা যায়।কারণ,বাবা-মা প্রথমত বুঝতে পারেন না, তাদের সন্তানের জন্য কোন নামটি উপযুক্ত এবং ভবিষ্যৎ এ সে কোন নামে পরিচিতি লাভ করবে। সঠিক নাম বাছাই করাটাও বাবা-মা এর জন্য একটি সৃজনশীল পরীক্ষা! কারণ, তাদের দেওয়া নামের মাধ্যমে তাদের সন্তান নিজস্বসত্ত্বা বা পরিচয় বহন করবে।
অ্যারিজেনো বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড.ডেভিড জু বলেন, “নাম আমাদের আত্মপ্রকাশের মূল ভিত্তি! কারণ,নামের মাধ্যমে আমরা পরস্পরকে চিনতে পারি এবং যোগাযোগ করতে পারি।” মনোবিজ্ঞানের আরেকজন অধ্যাপক গর্ডন অলপোর্ট বলেন, “আমাদের সারাজীবনের নিজস্ব পরিচয় বহনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নোঙ্গর হলো আমাদের নিজস্ব নাম!”
মার্কিন মনোবিজ্ঞানী জিন টোয়েঞ্জের নেতৃত্বে ২ooo সালে একটি গবেষণা করা হয়। সেখানে দেখা যায়, কিছু মানুষ পারিবারিক পটভূমি বা নিজের জীবনের প্রতি অসন্তুষ্ট এবং আত্মবিশ্বাসের অভাবে নিজের নাম পছন্দ করেন না। তাদের কাছে মনে হয়, তাদের নামই তাদের জীবনের অসন্তুষ্টির অন্যতম কারণ!
আপনি যদি একজন সম্ভাব্য পিতা-মাতা হয়ে থাকেন, তাহলে আপনি অবশ্যই আপনার সন্তানের নাম বাছাই করার ক্ষেত্রে সচেতন হবেন। এমন কোনো অস্বাভাবিক নাম বাছাই করবেন না, যা আপনার সন্তানের জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে! সন্তানের নাম রাখার ক্ষেত্রে অবশ্যই মাথায় রাখবেন, সন্তানকে একটি সুন্দর, মার্জিত এবং রুচিসম্পন্ন নাম প্রদান করতে হবে! যা তাকে ভবিষ্যৎ তে ও নিজস্বসত্ত্বা বজায় রাখতে সহায়তা করবে।
2/https://www.bbc.com/future/article/20210525-how-your-name-affects-your-personality