ছোটবেলায় যখন পরমানু চিনতে শুরু করেছি ঠিক তখন থেকে ভাবতাম
“প্রোটন ও ইলেকট্রনের তো চার্জ আছে কিন্তু নিউট্রনের তো কোনো চার্জ নেই। এরপরও এটি কেন দরকার? এটি না থাকলে কি হত? মনে হত, এটি তো অকেজো।”
এসব বিষয় মাথায় সব সময় ঘুরপাক খেত। তাই আজকের এই বিষয়টি নিয়ে কিছু লেখার চেষ্টা করবো । আশা করি যাদের মনে এই প্রশ্নটা ঘুরে তারা কিছুটা হলেও উপকৃত হবে। তাহলে শুরু করা যাক।
আমরা জানি, পরমাণুতে ইলেকট্রন, প্রোটন, নিউট্রন থাকে। এছাড়া, এতে বিভিন্ন ধরনের অস্থায়ী মূল কণিকা থাকে। যেমনঃমেসন, পাইওন ইত্যাদি।
একটি পরমাণুর স্থায়ীত্ব নির্ভর করে সবল নিউক্লিয় বল ও তড়িৎ কুলম্ব বলের উপর। সবল নিউক্লিয় বল যদি কুলম্ব বলের চেয়ে বেশি হয় তবেই পরমাণু স্থায়ী হয়।
পরমাণুতে ইলেক্ট্রনকে আবদ্ধ রাখতে দরকার হয় তড়িৎ কুলম্ব বলের। আর এই কুলম্ব বলের জোগান দেয় হল প্রোটন।
তাই মনে হতে নিউট্রন ছাড়াই পরমাণু তৈরি করা যাবে। কিন্তু বাস্তবে তা সম্ভব নয়। কারণ নিউক্লিয়াসে যে প্রোটন থাকে তার চার্জ ধনাত্বক। বেশি পরিমান প্রোটন একত্রে রাখলে এরা সমধর্মী হওয়ার কারনে একে অপরকে বিকর্ষণ করবে। যার ফলে পরমাণুর নিউক্লিয়াস ভেঙ্গে যাবে।
তাই পরমাণুর নিউক্লিয়াসে অধিক সংখ্যক পরমাণুকে ধরে রাখার জন্য প্রয়োজন আলাদা কোনো বল। এই বলই হল সবল নিউক্লিয় বল। যার ফলে প্রোটনগুলি একত্রে থাকতে পারে। এই বল তৈরি হয় নিউক্লিয়াসে থাকা কণিকাগুলির ফলে। গ্লুওন ও মেসন কণার আদান প্রদানের ফলে তৈরি হয় মহাবিশ্বের সব চেয়ে শক্তিশালী বল। যার নাম সবল নিউক্লিয় বল।
তাহলে বোঝা যাচ্ছে প্রোটনের কাজ হল ২টি। একটি হল কুলম্ব বলের প্রভাবে বিকর্ষণ ও অন্যটি হল সবল নিউক্লিয় বলের যোগান দেওয়া।
প্রোটনের সংখ্যা বাড়লে কুলম্ব বল বাড়ে কিন্তু সবল নিউক্লিয় বলের মান কমতে থাকে। কারণ সবল নিউক্লিয় বলের রেঞ্জ খুবই সামান্য। ফলে এক সময় নিউক্লিয়াসের ভাঙ্গন দেখা যায়। এখন প্রোটনের পাশাপাশি যদি নিউট্রনও থাকে তবে নিউক্লিয়াসে চার্জের বৃদ্ধি হবে না। কারণ নিউট্রনের চার্জ শূন্য। কিন্তু নিউট্রনের আছে গ্লুওন। যার ফলে নিউট্রনের উপস্থিতিতে সবল নিউক্লিয় বলের যোগান বাড়ে। ফলে পরমানু স্থায়ী হয়। এতে অনেকেই মনে করতে পারেন নিউট্রন আর প্রোটন ইচ্ছা মত বাড়ালেই পরমাণু স্থায়ী হবে। কিন্তু এরকম হবে না। কারন একসময় কুলম্ব বল এতোই বেড়ে যায় যে সবল নিউক্লিয় বল তাকে অতিক্রম করতে পারে না।
এই ব্লগগুলি পড়তে ভুলবেন না! |
অনেকে বলতে পারেন দূরত্ব বাড়লে তো কুলম্ব বল কমার কথা। কিন্তু তা হয় না, কারণ দূরত্বের সাথে সাথে চার্জও বাড়ছে। আর সবল নিউক্লিয় বল দুরত্ব বাড়ার সাথে সাথে অনেক বেশি পরিমানে কমে যায়। যদিও ধরে নেই কুলম্ব বল দুরত্ব বাড়ার সাথে সাথে কমে যায়। কিন্তু এই কমার পরিমান সবল নিউক্লিয় বল কমার তুলনায় খুবই কম। যার ফলে পরমানু তার স্থায়িত্ব হারায় ।এ জন্য দেখা যায় ৮৩ এর বেশি পারমানবিক সংখ্যা যুক্ত পরমানুগুলি তেজস্ক্রিয় হয় ও এরা ভেঙ্গে গিয়ে ছোট পরমানুতে পরিনত হয় ।
তাই বুঝা যায় পরমানু গঠনের জন্য নিউট্রনেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে।
বিজ্ঞান শিখুন , বিজ্ঞান জানুন ।