আত্মভোলা বিজ্ঞানীদের নাম নিলে যে মানুষটির নাম সবার প্রথমে আসবে তিনি হলেন আলবার্ট আইনস্টাইন। তাঁর নাম এখন ইতিহাসে সমাদৃত বিশ্বের সেরা প্রতিভার একজন হিসেবে! এই আইনস্টাইনের জীবনে কেবল গণিত, পদার্থবিদ্যা আর খটোমটো সমীকরণেই ভরা ছিল না, আইনস্টাইন ছিলেন এক মজার মানুষ! কেমন মজার?
কথোপকথন
আইনস্টাইন তো তাঁর জীবনের প্রথম তিন বছর কোনো রকম কথাবার্তা বলা ছাড়াই পার করে দিয়েছিলেন! পরবর্তী জীবনেও তিনি খুব ধীরগতিতে কথা বলতেন। স্টানফোর্ডের অর্থনীতিবিদ ড. থমাস সোয়েল এটাকে আইনস্টাইন সিনড্রোম হিসেবে আখ্যা দিয়েছিলেন!
কম্পাস
যখন আইনস্টাইনের বয়স পাঁচ বছর তখন তার বাবা তাকে একটি পকেট কম্পাস দিয়েছিলেন। আইনস্টাইন কম্পাসটি দেখে খুবই বিস্মিত হয়েছিল এবং ভাবতে শুরু করল কি কারণে কম্পাসটি একটি ছোট নিডলের ওপর এক বিন্দুতে স্থির থাকে আর সবসময় কেনই বা একই পথে চলে? এই প্রশ্নটি তাঁর মনে বেশ কয়েক বছর ছিল। তাঁর এই কৌতুহলউদ্দীপক প্রশ্নটিকেই বিজ্ঞানের সাথে তাঁর মুগ্ধতার সূচনা হিসেবে ধরা হয়!
আইনস্টাইনের মা পাওলিন একজন ভালো পিয়ানোবাদক ছিলেন। তিনি সবসময় চাইতেন তার ছেলেও তার মতো গানকে ভালোবাসবেন। তাই তিনি ছোটকালেই আইনস্টাইনকে ভায়োলিন বাজানো শিখাতে শুরু করেছিলেন। প্রথম দিকে আইনস্টাইন তো ভায়োলিন বাজানো অপছন্দ করেছিলেন কিন্তু তের বছর বয়সে মোজার্ট এর সুর শুনে খুব দ্রুত বেহালা সম্পর্কে তার মানসিকতার পরিবর্তন করেন এবং বেহালাকে ভালোবাসতে শুরু করেন! জীবনের শেষ দিনগুলি তিনি বেহেলা বাজিয়েই কাটিয়ে দিয়েছিলেন!
প্রেসিডেন্ট আইনস্টাইন
৯ নভেম্বর, ১৯৫২ সালে জিওনিস্ট লিডার এবং ইসরায়েলের প্রথম রাষ্ট্রপতি কাইম ওয়াইজম্যানের মৃত্যুর পর আইনস্টাইন জিজ্ঞেস করা হয় তিনি কি ইসরায়েলের দ্বিতীয় প্রেসিডেন্ট হবেন কি না। ৭৩ বয়সী আইনস্টাইন এই প্রস্তাবটি প্রত্যাখ্যান করেন এবং চিঠিতে লিখে দেন তাঁর মানুষের সাথে মোকাবিলা করার স্বাভাবিক দক্ষতার ও অভিজ্ঞতার অভাব রয়েছে!
নাবিক আইনস্টাইন
আইনস্টাইন নৌকা চালাতে খুবই ভালোবাসতেন! যদিও তিনি এতে খুব বেশি পারদর্শী ছিলেন না। লং দ্বীপের তাঁর প্রতিবেশিরা তাকে প্রায়শ নৌকা দিয়ে সাহায্য করত। জীবনে কখনো সাতার কাঁটতে না শেখা আইনস্টাইনের শখ ছিল তিনি নাবিক হবেন এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি এ শখ লালন করেছিলেন!
মোজা
আইনস্টাইনের সবচাইতে আকর্ষনীয় দিক ছিল তাঁর চেহারা! তাঁর আগোছালো চুল ছাড়াও তাঁর কাছে আরো একটি দুষ্প্রাপ্য অভ্যাস ছিল। আর তা হলো তিনি কখনোই পায়ে মোজা পড়তেন না! মোজা পড়াটা তাঁর কাছে খুবই বিরক্তিকর ছিল কারণ প্রায়শ মোজাগুলো ছিদ্র হয়ে যায়!
টেলিফোন নাম্বার
এক সহকর্মী এসে আইনস্টাইনের কাছে তাঁর টেলিফোন নাম্বারটা চাইলেন। তিনি একটি টেলিফোন গাইড থেকে নিজের নাম্বারটা বের করার চেষ্টা করলেন। এদিকে সময় নষ্ট হচ্ছে দেখে সহকর্মী বিরক্ত হয়ে বললেন, ‘কী ব্যাপার, নিজের টেলিফোন নাম্বারটা মনে নেই আপনার!’ এক কথায় আইনস্টাইন পাল্টা যুক্তিতে বলেছিলেন, ‘না তো, তার দরকারই বা কি? যেটা টেলিফোন গাইডে লেখা আছে, সেটা আমি অযথাই মুখস্থ করে মস্তিষ্ক খরচ করবো কেন?’
কী ঘটবে যদি ৫ সেকেন্ডের জন্য কোনো মহাকর্ষ বল না থাকে? জানতে ক্লিক করো এখানে
ধূমপান
আইনস্টাইন ধূমপান করতে খুব ভালোবাসতেন ১৯৫০ সালে তিনি মন্ট্রিল পাইপ স্মোকার্স ক্লাব এর আজীবন সদস্যপদ নিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন “আমি বিশ্বাস করি পাইপ ধূমপানের মাধ্যমে মানবীয় সম্পর্কগুলিকে শান্ত রাখতে অবদান রাখে”।
মেয়ের বিয়ে
আইনস্টাইনের মেয়ের বিয়ে উপলক্ষে সবাই চার্চে যাচ্ছিলেন। যেতে যেতে হঠাৎ তিনি তাঁর মেয়েকে বললেন, ‘তুমি চার্চের দিকে যাও; আমি ল্যাবে গিয়ে আমার এই কলমটি রেখে আসছি’। মেয়ে মানা করা সত্ত্বেও তিনি ৩০ মিনিটের কথা বলে ল্যাবে গেলেন কলম রাখতে। অনেক সময় অতিক্রম হবার পরেও যখন আইনস্টাইন ফিরলেন না তখন আত্মীয়-স্বজন তাঁকে ছাড়াই বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সেরে ফেলেন। সাতদিন পর তাঁর মেয়ে বাসায় এসে দেখে বাবা তখনো ফেরেননি! তারপর মার কথা শুনে বাবার খোঁজে মেয়ে গেলেন ল্যাবে। গিয়ে দেখলেন বাবা আইনস্টাইন একটি কলম হাতে নিয়ে বোর্ডের সামনে দাঁড়িয়ে কী যেন ভাবছেন! মেয়ে জিজ্ঞাসা করেন, এখানে কী করো তুমি? পরক্ষণে আইনস্টাইন উত্তর দেন, ‘মা তুমি চার্চে যাও, আমি এই কাজটি ১০ মিনিটের মধ্যে শেষ করে আসছি তোমার বিয়েতে’!
আত্মভোলা আইনস্টাইন
আইনস্টাইন প্রায় তার বাসার ঠিকানা ভুলে যেতেন। ট্রেনে উঠার পর তার গন্তব্য কোথায় তাও ভুলে যেতেন! আইনস্টাইন একদিন ট্রেনে উঠার পর টিকেট হারিয়ে ফেলেছিল। টিকিট চেকার তার কাছে টিকিট চাইলে তিনি বিপদে পড়ে যান। টিকিট চেকার তাকে ছাড় দিলেও তিনি পড়ে যান খুব টেনশনে। কারণ তিনি কোথায় কোন স্টেশনে যাচ্ছিলেন সেটাই ভুলে গিয়েছিলেন!