আচ্ছা! কখনো ভেবেছেন কি? মেঘ কেন ভিন্ন ভিন্ন স্তরে থাকে! ছোট্ট একটি মেঘ হয়তোবা একদম নীচে, আবার দলবেধে আকাশ ভরে আসা মেঘ, কেন-ই বা বহু দূরে?
অথবা মেঘ সাদা, কেন-ই বা ধুসর , কখনোবা কালো, বা কাশফুলেরই মতো? চলুন উত্তর গুলো খুঁজি এবং মেঘের দেশে হারাই আনমনে।
এই উত্তর গুলো জানতে হলে প্রথমেই আমাদের বুঝতে হবে মেঘ কি?
আমাদের পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে অবস্থিত জলীয়বাষ্প ঘনীভূত হয়ে খুবই ছোট ছোট জলকণা অথবা বরফের স্ফটিক হয়ে একটা দৃশ্যমান রূপ নেয়, যেটাকে আমরা মেঘ বলেই চিনি।
তাহলে এটি কিভাবে তৈরি হয়?
সূর্যের প্রখর তাপে ভূপৃষ্ঠের পানি বাষ্পীভূত (তাপের কারণে তরল পদার্থের গ্যাসে রূপান্তর হওয়া) হয়ে, তা আকাশে উঠে আসে। এরপর ভূপৃষ্ঠ থেকে এই জলীয়বাষ্প যত উপরে উঠতে থাকে, তার Pressure তত কমতে থাকে, এবং এটি Adiabatically (গ্যাসের সূত্র অমান্য করে যা খুবই দ্রুত ঘটাতে পারে এমন process) হয়ে থাকে।
যখন এই জলীয়বাষ্প নির্দিষ্ট উচ্চতায় যথেষ্ট ঠাণ্ডা হয়ে আসে, ঠিক তখনই ঘনীয়ভবন ঘটতে থাকে। অর্থাৎ গ্যাস তরলে পরিণত হয়ে ছোট ছোট জলকণায় রূপ নিয়ে মেঘ তৈরী করে।
আচ্ছা, তবে মেঘ কেনো সাদা, কালো, ঘন কিংবা ফ্যাকাশে হয়?
এটা নির্ভর করে ঐ এলাকার Moisture মানে আদ্রতা বা জলকণার ধরণ এবং presence of condensation nuclei অর্থাৎ কি ধরনের জলকণা গুলো ঘনীভূত হচ্ছে তার উপর। দুই ধরনের Nuclei আছে যা ঘনীয়ভবন হয়। একটি মিশে যায় যেমন H2SO3, SO2, H2SO4, NaCl, MgCl2 থাকে এবং অন্যটি মিশে যায় না যেমন Soil Particles, Organic Particles and Micro Particles থাকে।
এবার তাহলে উচ্চতার ব্যাপারে আসা যাক!
মেঘে সাধারণত প্রতি কিউবিক মিটারে জলকণা থাকে (প্রতি একক আয়তনে, সংখ্যাটা অনেক বেশি), এদের আকৃতি গোল এবং ব্যাসার্ধ প্রায় ১ থেকে ২০ অথবা ৩০ মাইক্রো মিটার। অর্থাৎ অত্যন্ত ছোট, গড়ে, কিন্তু সংখ্যার ঘনত্ব সে তুলনায় বেশ আছে!
ভাবছেন, উচ্চতার সাথে সাইজের সম্পর্ক কী?
সম্পর্ক আছে। বায়ুমন্ডল এর প্রতিটি কণাকেই Gravity নীচের দিকে টানে। কোনো বস্তু, যে গতিতে নীচের দিকে পড়ে তা নির্ভর করে ঐ বস্তুর ভর এবং তার পৃষ্ঠতলের ক্ষেত্রফলের উপর, আর ঠিক এই কারণেই একটি পালক, একটি পাথরের তুলনায় ধীরে পড়ে।
গোলাকার বস্তুর ক্ষেত্রে, ভর তার ব্যাসার্ধের ঘনকের সমানুপাতিক, এবং ক্ষেত্রফলের বর্গের ব্যস্তানুপাতিক। যেটার মানে দ্বারায়, পানিকণা গুলো যত বৃদ্ধি পাবে, সেখানে ভর আকারের তুলনায় বেশি important হয়ে দাঁড়ায়। অতএব ভর যত বাড়বে বেগ তত বাড়বে, আয়তন যত বাড়তে থাকবে তত বেগ কমবে! অপরদিকে, ঠিক একই কারণে যে কণা গুলো বরফের স্ফটিক বা মিছরি-র রূপ নিয়েছে, সেগুলোর পতন বেগ কম হয়ে থাকে!
তবে মেঘ ভাসছে কেন?
মেঘ ভাসার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখে বাতাসের উর্ধমূখী বল। এই উর্ধমূখী বল মহাকর্ষ বলকে balance করে এবং জলকণা গুলোকে একটি নির্দিষ্ট গতিকে বজায় রেখে চলতে সাহায্য করে। এই বেগকে Terminal Velocity বলা হয়।
উপরোক্ত উচ্চতার প্যারাটুকুর ইতি টানলে এমন দ্বারায় যে,
সবচেয়ে ছোট জলকণা গুলো সবার উপরে থাকে, এরপর এর Growth যত বাড়তে থাকে ফলে জলকণা গুলো বড় হতে থাকে, যে কারণে মহাকর্ষের টান ওই জলকণার উপর বাড়তে থাকে, এবং তা বৃষ্টি হিসেবে নিচে নেমে আসে।
আবার Particle যত বড় হবে তার Terminal Velocity তত বাড়তে থাকে, আর এইভাবে মেঘ ভিন্ন ভিন্ন স্তরে ভাগ হয়ে যায়। যখন আরও জলকণা বাড়ে এবং বাতাসের উর্ধমূখী বল আর ধরে রাখতে পারেনা, তখন তা বৃষ্টি হয়ে মাটিতে পড়তে থাকে, এই ছোট ব্যাসার্ধের জলকণার বেশিরভাগের গতি প্রতি সেকেন্ডে মাত্র ৫ সে.মি.।
এখন হয়ত ভাবছেন, আচ্ছা, এই ভিন্ন মেঘ গুলোকে কিভাবে চিনতে পারব!?
মেঘকে সাধারণত ৪ ভাগে ভাগ করা যায়।
১. High Clouds – এর অবস্থান ২০ হাজার থেকে ৪০ হাজার feet হয়ে থাকে। Cirrus (Ci), Cirrocumulus (Cc), and Cirrostratus (Cs) মেঘ গুলো এই স্তরে অবস্থিত।
২. Mid Clouds – ৬.৫ হাজার থেকে ২০ হাজার উচ্চতায় অবস্থিত। Altostratus (As), Altocumulus (Ac) এর অবস্থান এখানে।
৩. Low Clouds – একদম ভূপৃষ্ঠ থেকে ৬৫০০ পর্যন্ত অবস্থিত। Stratus (St), Stratocumulus (Sc), Cumulus (Cu) মেঘগুলোর অবস্থান।
৪. Vertical Clouds– এই মেঘ গুলো সাধারণত ১৬০০ ফিট থেকে ২০হাজার ফিটের উপর পর্যন্ত হয়ে থাকে। Cumulus (Cu), Cumulonimbus (Cb) মিক্সড হয়ে Vertical Clouds তৈরি হয়ে থাকে, এখানে থেকে ভারী ধরনের বৃষ্টি হয়ে থাকে।
ছবি সহ নীচে এদের কিছু বৈশিষ্ট্য দিলাম,
From: conor app
High Clouds
Cirrus (Ci) – সবার উপরে এর অবস্থান, এটায় বৃষ্টির সম্ভাবনা একদম নেই বললেই চলে। এদের আকৃতি সাধারণত ধবধবে সাদা, মিছরি-র মত, সূক্ষ্ম হয়ে থাকে, এবং একদম নীল আকাশের বিপরীতে উঠে।
Cirrocumulus (Cc) – এগুলো খুবই ঠাণ্ডা জলকণার সমন্বয়ে গঠিত হয়, সমুদ্র সৈকতে যেমন বালির ঢেউ থাকে তেমনি ঢেউ খেলে এদের বুকে।
Cirrostratus (Cs) – মাঝে মধ্যে সূর্য অথবা চাঁদের চারপাশে যে বলয় দেখা যায়, তা এই মেঘই তৈরি করে।
Mid Clouds
Altocumulus (Ac) – এই স্তরের রঙ হয় হাল্কা ধূসর, এবং গুচ্ছ গুচ্ছ আকারে থাকে। এই স্তরে পানির ফোটা এবং বরফ কণা দুই–ই থাকে। বৃষ্টিপাত এই স্তরে হতে পারে, তবে তা মাটিতে পৌছানোর আগেই উবে যায়।
Altostratus(As) – এই মেঘ ধূসর অথবা ধূসরনীল হয়। এটির বেশির ভাগ জলকণা দিয়ে তৈরী তবে বরফের সাথে সংমিশ্রণও হয়। এ থেকে হাল্কা এবং বিরতিহীন বৃষ্টি হতে পারে।
Low Clouds
Stratocumulus (Sc) – আর্দ্র আবহাওয়ায় এই মেঘ বেশি দেখা যায়। নিজেই হাল্কা পাতলা বৃষ্টি ঘটাতে পারে।
Cumulus (Cu) – এগুলো দেখতে খুবই চ্যাপ্টা ধরনের। এই থেকে বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
Stratus (St) – এটি সবচেয়ে নীচের স্তরের, আর এই থেকেই আমাদের কুয়াশার সৃষ্টি হয়।
This photo was taken by PiccoloNamek
Vertical Clouds
Cumulonimbus (Cb) – এটি দেখতে টাওয়ারের মতো বা উচু চূড়ার মত হয়ে থাকে। এটি সাধারণত ভারী, গাঢ় ধুসর বা প্রায় কালোও হয়। বজ্রঝড়, ভারী বৃষ্টি, বজ্রপাত, শিলাবৃষ্টি, তুষারবৃষ্টি, টর্নেডো এবং অন্যান্য গুরুতর আবহাওয়ার তৈরী করে থাকে।
এখানে ভালো করে খেয়াল করলে দেখবেন এখানে বৃষ্টি হচ্ছে, এবং মেঘের উচ্চতা অনেক বেশি।
Nimbostratus (Ns) – একদম মাটির সাথে লেগে থাকে, সাধারণত নীচের ঘন হয়ে যাওয়া Altostratus (As) মেঘ থেকে সৃষ্টি হয়। এই মেঘ কে সাধারণত Rain Clouds বলা হয়। এদের রঙ সাধারণত ধূসর কালো হয়ে থাকে। এটি এতই মোটা হয় যে সূর্যের আলোও পৌছায় না।
এই ছিলো মেঘতত্ব। বায়ুমন্ডলের অর্ধেক জায়গা নিয়ে, এই মেঘের ভিন্নতা এবং পরিবর্তন আমাদের নীল আকাশ কে দিয়েছে পূর্ণতা, বিজ্ঞানী ও গবেষককে দিয়েছে Nephrology, কবি–লেখক কে দিয়েছে গদ্য–পদ্য, গায়কের গান, আর আমাদের দিয়েছে, মেঘের পানে চেয়ে হাসি–কান্না, সুখ–দুঃখ ও একাকিত্বের ভাগ!
Source:
1. Meteorology Today
AN INTRODUCTION TO WEATHER, CLIMATE, AND THE ENVIRONMENT – C. Donald Ahrens, Emeritus, Modesto Junior College
2. A Short Course in Cloud Physics – R. R. Rogers, M. K. Yau
3. Meteorology: Understanding the Atmosphere – Steven A. Ackerman, John A. Knox
4. https://www.
5. https://www.