বর্তমান সময়ে আমরা মোবাইল ফোন নিয়েই দিনের বেশিরভাগ সময় কাটিয়ে দেই। আর আমাদের তরুণদের দিনের এক তৃতীয়াংশ কেটে যায় মোবাইল ফোনের স্ক্রিণে। কেমন হতো যদি আমরা মোবাইল ফোন ব্যবহার করেই প্রোডাক্টিভ কিছু করতাম? অযথা ফেসবুকে সময় নষ্ট না করে পার্সোনাল ডেভেলপমেন্ট নিয়ে কাজ করতাম?
ইনসাইড দ্য অ্যাপ্লিকেশনে আমি আলোচনা করবো এমনই কিছু অ্যাপ্লিকেশন নিয়ে, যা আপনার মূল্যবান সময়টুকু কে কিছুটা হলেও প্রোডাক্টিভ করতে সাহায্য করবে। আমি চেষ্টা করবো বিস্তারিত ভাবে প্রত্যেকটি অ্যাপ্লিকেশন ব্যাখা করে আপনাকে ধারণা দেয়ার যে, কিভাবে আপনি সেটাকে আপনার পার্সোনাল ডেভেলপমেন্টে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারবেন। তো চলুন শুরু করি আজকের পর্ব।
স্বাগতম। আজকের বী ব্লগে আমি আলোচনা করবো Quora (কোরা) অ্যাপ্লিকেশনটি নিয়ে। অনেকেই হয়তো জানেন অথবা অনেকেই জানেন না কোরা কি? তাই আমি চেষ্টা করবো আপনাদের সবাইকে একটা বিস্তারিত ধারণা দেয়ার।
Quora কি?
কোরা হলো একটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। কি অবাক হচ্ছেন? তাহলে ফেসবুকের সাথে কোরার পার্থক্য কোথায়? পার্থক্য হলো, এটি এমন একটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যেখানে আপনি জানতে ও জানাতে পারবেন যেকোনো বিষয়। Gaining and Sharing Knowledge হলো এর মূল লক্ষ্য। হোক সেটা সাহিত্য, হোক সেটা বিজ্ঞান, হোক নৃত্যকলা। সবকিছুর জন্য জায়গা আছে কোরা তে। আপনি যতোই স্ক্রল করবেন আপনার জ্ঞানের ভান্ডার হবে ততই সমৃদ্ধ।
Quora কিভাবে শুরু?
Quora প্রতিষ্ঠা লাভ করে জুন ২০০৯ এ এবং ওয়েবসাইট পাবলিশ করে ২১ জুন ২০১০ সালে। মজার ব্যাপার হলো Quora প্রতিষ্ঠা করেন দুই প্রাক্তন ফেসবুক কর্মকর্তা অ্যাডাম ডি এংগেলো আর চার্লি শিভার। তারা প্রথমে এটিকে উইকিপিডিয়া আদলে রাখতে চাইলেও মূল চেষ্টা ছিলো প্রশ্নকর্তা এবং উত্তরদাতার সরাসরি অংশগ্রহণ। সেই থেকে আজকের কোরার জন্ম।
কিভাবে কাজ করে Quora?
কোরা কাজ করে প্রশ্ন আদান-প্রদানের ভিত্তিতে। ধরুন, আপনি একটি বিষয় সম্পর্কে জানতে ইচ্ছুক। আপনি কোরা অ্যাপ্লিকেশনের সার্চবক্সে টাইপ করে ফেলতে পারেন আপনার প্রশ্নটি। হয়তো দেখবেন, আপনার আগেই সেটি অন্য কেউ করে গেছে এবং সেটির উত্তর দেয়াও হয়ে গেছে। যদি সে সম্পর্কিত কোনো প্রশ্ন না-ও পান, অ্যাপ্লিকেশনের নিচে ডানপাশে একটি যোগ আইকনে চাপ দিয়েই করে ফেলতে পারেন আপনার প্রশ্ন। উত্তর পাওয়ার জন্য অবশ্যই সুন্দর ও গঠনমূলক প্রশ্ন করতে হবে। নাহলে কোরা মডারেটরেরা সেটি ডিলিটও করে দিতে পারেন। এছাড়া আপনি আপনার প্রশ্নের উত্তর দেয়ার জন্য কোরার সাজেস্টেড লিস্ট থেকে উত্তরকারী বাছাই করে উত্তরের আবেদনও করতে পারেন।
কোরা কোন ভাষায়?
কোরার মূল আকর্ষণটাই এখানে। ভাষাভেদে কোরা ভিন্ন ভিন্ন। আপনি একই প্রোফাইলে ইংরেজি কোরার সাথে বাংলা কোরা ও চালাতে পারবেন এবং দুটো প্লাটফর্ম একে অপরের তুলনায় একেবারেই আলাদা হবে। প্রত্যেক ভাষার মডারেটর টিমও আলাদা এবং আপনি চাইলেই যখন যেটা ইচ্ছা সুইচ করে ভিন্ন ভাষার ভিন্ন ভিন্ন কন্টেন্ট দেখতে পাবেন।
কোরায় প্রোফাইল:
প্রত্যেক ব্যবহারকারীর জন্যেই কোরা এক একটি প্রোফাইল সংরক্ষণ করে থাকে। যেখানে আপনি আপনার সম্পর্কে তথ্য যুক্ত করতে পারেন, ছবি দিতে পারেন ফেসবুকের মতো করেই। তাছাড়া আপনার ফীডে আপনি পাবেন আপনার করা সকল প্রশ্ন/উত্তর পোস্ট সহ আরও অনেক কিছু।
এগুলো পড়তে ভুলবেন না !! প্রবলেম সলভিং শুরু কিভাবে করবঃকিছু টিপস এন্ড ট্রিকস |
কোরায় অনুসরণ করা:
কোরায় আপনি চাইলে উত্তরদাতা কে অনুসরণ করতে পারেন যদি তার উত্তর আপনার ভালো লেগে থাকে। উত্তরদাতার নামের পাশেই অথবা প্রোফাইলেই আপনি পেয়ে যাবেন অনুসরণ এর (Follow) বাটন। এছাড়া উত্তরদাতার উত্তর অনুসরণ করে চাইলে Notify Me বাটনটিও ক্লিক করে দিতে পারেন উত্তর আসলে নোটিফাই করার জন্য। এছাড়া আপনি More অপশনে প্রোফাইল শেয়ার করা/ব্লক করা ইত্যাদি অপশন ও পেয়ে যাবেন।
উত্তরে আপভোট/ডাউনভোট মন্তব্য এবং বুকমার্ক:
ফেসবুকে যেমন আপনি লাইক আর রিয়েক্ট করেন সেরকম কোরায় আছে আপভোট এবং ডাউনভোট বাটন। উত্তরের নিচে আপ অ্যারো কি টা আপনার আপভোট এবং এর পাশেই ডাউন অ্যারো কি টা আপনার ডাউনভোট। আপনার কোনো উত্তর ভালো লাগলে আপনি সেটিকে আপভোট করতে পারেন বা খারাপ লাগলে সেটিকে ডাউনভোট করতে পারেন এবং সাথে মন্তব্য ও করতে পারেন চাইলে।
এছাড়া উত্তর শেয়ার করার অপশনও আছে কোরায়। তাছাড়া আপনি চাইলে কোনো উত্তর বুকমার্কও করতে পারেন মেন্যু বাটন থেকে বুকমার্ক অপশনে ক্লিক করে।
কোরায় Spaces/মঞ্চ:
ফেসবুক গ্রুপের মতোই মূলত Spaces/মঞ্চ। আপনি চাইলেই বিভিন্ন বিষয় যেমন তথ্য-প্রযুক্তি, ইতিহাস/ঐতিহ্য, ভাষা ইত্যাদি যেকোনো বিষয়ের মঞ্চে যুক্ত হতে পারেন। এখানে প্রত্যেকটা মঞ্চ এক এক বিষয়ের প্রতিনিধিত্ব করে।
কোরায় মেসেজিং:
হ্যাঁ। কোরায় আপনি চাইলে মেসেজ করতে পারবেন যেকোনো ব্যবহারকারীকে।
কোরা Stats/পরিসংখ্যান:
আপনি গত ত্রিশ দিনে কয়টি প্রশ্ন করেছেন, উত্তর দিয়েছেন এবং আপভোট পেয়েছেন তা দেখাবে কোরা Stats/পরিসংখ্যান।
কোরা Drafts/খসড়া:
কোনো উত্তর/প্রশ্ন আপনি খসড়া করে রাখতে পারেন পরে উত্তর দিতে অথবা প্রশ্ন করতে। যাদের সময়ের অভাব তারা এই দারুণ ফিচারটি যথাযথ ভাবে কাজে লাগাতে পারবেন।
কোরা এফিলিয়েট প্রোগ্রাম:
আপনি চাইলে কোরা ব্যবহার করেই টাকা আয় করতে পারেন। জ্বি হ্যাঁ। আপনার উত্তর যদি নান্দনিক হয় এবং বৃহত্তর ব্যবহারকারীর মাঝে আপনি পৌছাতে পারেন এবং ভালো সংখ্যক আপভোট পান তাহলে কোরা আপনাকে এফিলিয়েট প্রোগ্রাম মার্কেটিং এর সাথে যুক্ত করবে যার মাধ্যমে আপনি অর্থ উপার্জন করতে সক্ষম হবেন।
এই ছিলো আজকের পর্ব। এই পর্বে আমি আলোচনা করেছি কোরার বিস্তারিত নিয়ে। জানার এবং শেখার আগ্রহ অশেষ। আপনি যদি জানতে এবং জানাতে আগ্রহী হন তাহলে আপনাকে স্বাগতম কোরা-র পৃথিবীতে। আবারও আপনাদের কাছে নতুন কোনো প্রোডাক্টিভ অ্যাপ্লিকেশন নিয়ে আলোচনা করবো ইনসাইড দ্য অ্যাপ্লিকেশন এর দ্বিতীয় পর্বে। ততোদিন সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন। সময় নিয়ে পড়ার জন্যে ধন্যবাদ। লেখাটি ভালো লেগে থাকলে শেয়ার করুন আর নিচের আপভোট প্রেস করতে ভুলবেন না যেনো! দেখা হচ্ছে পরের পর্বে, সাথেই থাকুন সায়েন্স বী ফ্যামিলির সাথে।